Alapon

বাংলাদেশ ফুটবল এবং একজন জামাল ভুঁইয়া...



বাংলাদেশ বনাম কাতার বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের খেলা। ক্রিকেটের মতো ফুটবলে এদেশে এতো উন্মাদনা নেই। নেই তেমন পরিচিত মুখ।
তবে একজন ব্যতিক্রম।দশ অক্টোবর খেলা, আট অক্টোবর ফেসবুক লাইভে আসলেন ক্যাপ্টেন জামাল ভুঁইয়া। দর্শকদের বা সমর্থকদের খুবই অনুনয় বিনয় করে মাঠে গিয়ে খেলা দেখার অনুরোধ করলেন।
আমি আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম খেলা দেখতে যাব।বাংলাদেশের ম্যাচ থাকলে সুযোগ পেলেই বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে যায়।দুজন রুমমেট সাথে চলে গেলাম স্টেডিয়ামে। তখনও খেলা শুরু হতে এক ঘণ্টা বাকী। তিনটা ভিআইপি গ্যালারীর টিকেট কাটলাম কিন্তু ভাবলাম এতো তাড়াতাড়ি গিয়ে কী আর করব?
আধা ঘণ্টা পর স্টেডিয়ামে ঢুকে আমি প্রথম বারের মত অবাক হলাম। গ্যালারী ততোক্ষণে অর্ধেকের বেশি পূর্ণ। এর আগে এতো দর্শক বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে আমি দেখিনি। কোন রকম সিট ম্যানেজ করে বসে গেলাম। খেলা শুরু হতে হতে গ্যালারী ফুল।দর্শকদের মুহুর্মুহু করতালি আর চিৎকারে ততক্ষণে চারিদিকে ছেয়ে আছে। বাংলাদেশ অসাধারণ খেললেও ভাগ্য আর কাতারের গোলরক্ষকের কাছে হেরে গিয়েছে। তবে ক্যাপ্টেন জামাল ভুঁইয়ার নেতৃত্ব এবং অসাধারণ নৈপুণ্য সবাইকে মুগ্ধ করেছে।
জামাল ভুঁইয়া ডেনমার্কে জন্ম নিলেও বাংলাদেশী বংশদ্ভূত হওয়ায় দেশের হয়ে খেলার জন্য বাংলাদেশে চলে আসেন।।এটা সহজ কথা নয়।জামাল ভুঁইয়ার মত আরও অনেক ভালো খেলোয়াড় থাকলেও তারা যখন ভালো ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বাংলাদেশে আসেনি ততদিনে জামাল ভুঁইয়া সমর্থকদের মন জিতে নিয়েছেন।

কাতার ম্যাচের শেষের একটা ঘটনা শেয়ার করি-
খেলা শেষে দুই দলের খেলোয়াড় কোচিং স্টাফ ততক্ষণে ড্রেসিংরুমে চলে গিয়েছে। এক মাত্র জামাল ভুঁইয়া তখনও মাঠে আছেন।হাজার হাজার দর্শক তখনও মাঠ ছেড়ে যায় নি শুধু এই জামাল ভুঁইয়ার কারণে। জামাল ভুঁইয়া দর্শকদের নিরাশ করেন নি। গ্যালারীর চারিদিকে ঘুরে ঘুরে প্রায় ত্রিশ মিনিট ধরে দর্শকদের সাথে হাত মেলালেন, সেলফি আর অটোগ্রাফ দিয়ে দর্শকদের আবদার মেটালেন। তখনও তার শরীর সম্পূর্ণ ঘামে ভেজা ছিল।এরই মধ্যে এক দর্শক রেলিং টপকে মাঠে ঢুকে পড়ে জামাল ভুঁইয়াকে জড়িয়ে ধরে।যেটা আমাদের ক্রিকেটে৷ সচরাচর দেখা যায়,যদিও ইউরোপের ফুটবলে মাঠে দর্শক ঢুকে পড়া নতুন কিছু নয়।শেষ বারের মত সবাইকে হাত নেড়ে অভিবাদন বিদায় নিলেন।
গত এক দশক ধরে বাংলাদেশের সমর্থকরা যেখানে ক্রিকেটে বুদ,ফুটবলে ঠিক তার উল্টোটা।খেলার মান গাণিতিক হারে কমতে থাকে আর সমর্থক কমতে থাকে জ্যামিতিক হারে।

গত এক বছর ধরে অবস্থার পরিবর্তন শুরু হয়েছে। কোচ জেমি ডে এবং অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়া খেলোয়াড়দের এক সুতোয় গেঁথে সমর্থকদের ভালো খেলা উপহার দিতে সক্ষম হন একই সাথে মাঠে দর্শক টানতে সমর্থ হন।এই ম্যাচে দর্শক ছিল কানায় কানায় ঠাসা এছাড়া অনেক দর্শক টিকেট না পেয়ে ফিরে গিয়েছেন। এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী দুই তিন বছর পরে হয়ত ক্রিকেট খেলা দেখার জন্য দর্শকদের টিকেটের জন্য যে হাহাকার দেখা যায় ফুটবলেও তেমনটা হবে।ক্রিকেটে যেমন মাশরাফি কিংবদন্তি এই জামাল ভুঁইয়াও একদিন কিংবদন্তি হবে। একজন ক্রিকেটার সবকিছু যত সহজে পেয়ে থাকে এবং তারা যতটুকু মিডিয়ার নজরে আসে ফুটবলে তার ছিটেফোঁটাও নেই। তাই জামাল ভুঁইয়া এদেশের ফুটবলকে এগিয়ে নেয়ার জন্য এবং দর্শককে মাঠে টানার জন্য যতটুকু করেছেন এমনটা খুব কম খেলোয়াড় করেন।এই ধারা চলতে থাকলে এবং খেলোয়াড়েরা শতভাগ দিতে পারলে বাছাইপর্বের বাকী ম্যাচগুলো জিতলে অবাক হব না।

এতোকিছুর পরও মাঠ এবং গ্যালারীর সুযোগ সুবিধা নিয়ে দর্শকদের মধ্যে হতাশা ঝরল।আমি দেখলাম ভিআইপি গ্যালারীতে অনেক জায়গায় সিট ভাঙ্গা, আবার অনেক স্থানে সিট উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। উপরে যে ফ্যানগুলো ছিল দুই একটা ছাড়া বাকীগুলো ঘোরার শক্তি ছিল না।আর দর্শকদের সবচেয়ে বড় অভিযোগ স্টেডিয়ামে দুটো জায়ান্ট স্কিন থাকলেও একটাও সচল না।কত বছর আগে এগুলো সচল ছিল তারও ঠিক নেই। এটা পরবর্তী আন্তর্জাতিক খেলার আগে ঠিক করা খুবই জরুরি, কেননা মেসির আর্জেন্টিনা আগামী মাসেই এই স্টেডিয়ামে ম্যাচ খেলবে।
আর একটা বিষয় দৃষ্টিকটু লাগল, পুলিশের সামনে টিকেট কালোবাজারি হচ্ছে অথচ তারা দেখেও নিরব।আবার স্টেডিয়ামে ঢুকতে যে গেট পার হতে হয় তার কেঁচি গেটটার নাজেহাল অবস্থা এবং সিঁড়িতে আলোর ব্যবস্থা না থাকায় দর্শকদের বের হওয়ার সময় কেউ কেউ সমস্যায় পড়েছেন।

অনেক না থাকা আর অভিযোগ থাকলেও এই দলটা ফুটবলে আবার নতুন দিগন্ত সৃষ্টি করবে এই বিশ্বাস রাখি।একই সাথে দল এবং মাঠের সার্বিক ব্যবস্থাপনার প্রতি বাফুফে আরও গুরুত্বসহকারে নজর দিবে এটাই একজন সমর্থক হিসেবে আমার চাওয়া।

Mostofa Zaman

পঠিত : ১০৩৫ বার

মন্তব্য: ০