Alapon

ধর্মের আলোকে বিজ্ঞানের ঝলকে...


নবম শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগ নিলাম।আশার বুক দুই ইঞ্চি পরিমাণ ফুলে উঠল।একদিকে সায়েন্সের ছাত্র হওয়ার সবার কাছে আলাদা সম্মান অন্যদিকে ঝকঝকে ক্যারিয়ার যেন হাতছানি দিচ্ছে।কেউ কখনো ঐসময় চিন্তা করতে পারিনি আসলে এসব ছেলে ভুলানোর মত।কারণ সায়েন্সের সাবজেক্টগুলো ভালো বুঝতে ভালো গাইডলাইন দরকার।যেটা আমাদের ছিল না।হুজুগে বিষয়ের মত অধিকাংশ ছাত্রই বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি নিল।একটুও চিন্তা আসেনি দাবাড়ে খেলার তাস ছিলাম আমরা।সায়েন্সের টিচারদের এক্ষেত্রে লাভই হলো।সত্যিই হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালাদের উজ্জ্বল ক্যারিয়ারের সুরে আমরা মোহমুগ্ধ হয়ে ছিলাম।

অধিকাংশ ছেলের ফেণাতুলানো মুখস্ত অভ্যাস যেন আমাকেও ঘিরে ধরল।রাতভর ফিজিক্স-ক্যামিস্ট্রি-বাইলজি মুখস্ত কর আর হলে গিয়ে কলমের মাধ্যমে বমি কর, এই পলিসিতে পুরো নবম শ্রেণী কাটালাম।মুখস্ত কর আর খাতায় লেখ আর ভুলে যাও এটাই ছিল স্বাভাবিক।একজন ছাত্রেও মাথায় আসেনি আসলে বিজ্ঞান হলো প্রাকৃতিক অবজারভেশন।আসবেই বা কিভাবে সিস্টেমটাই আসলে ঐরকম ছিল।তবে আমার এক্ষেত্রে খটকা লাগলো।আম্মা বলত বিজ্ঞান হলো প্রশ্নের মাধ্যমে বুঝার জিনিস, এভাবে মাথাঝুকিয়ে ঝুকিয়ে পড়াতে ফায়দা নেই।দশম শ্রেণীতে উঠে আমি অন্যধাঁচে পড়তে শুরু করলাম।রসায়ন সাবজেক্টটা আনোয়ার স্যার নামে একজনের কাছে ব্যাচে পড়তাম।স্যারকে আমি প্রচুর প্রশ্ন করতাম।প্রশ্নের তোড়ে স্যারও দিকবিদিকশুন্য হয়ে যেতেন।আউটটফিক প্রচুর প্রশ্ন আসত আমার পক্ষ থেকে,আর অন্যরা শুধু হাঁ করে আমার দিকে তাঁকিয়ে থাকত।পিপড়া প্রানী না উদ্ভিদ এসব অদ্ভুত টাইপের প্রশ্ন আমার পক্ষ থেকে আসত।একরাম স্যার নামে একজনের কাছে ম্যাথ পড়তাম।স্যারের মারের অত্যচারের ভয়ে স্যারকে কিছুই জিজ্ঞেস করতাম না।তবুও অনেক প্রশ্ন আমার মনে আকুপাকু করত।তবে ইন্টারমেডিয়েটে ফিজিক্সের ইসমাঈল স্যারকে প্রচুর প্রশ্ন করে বহুত জ্বালাইছি।তবে সহ্য না করতে পেরে আমাকে ডাকাত নাম দিলেন।তবুও আমি ক্ষান্ত হইনি।আমার উদ্দেশ্য ছিল বইয়ের টফিকস বাস্তবিকই উপলব্ধি করা।আমি আবিষ্কার করলাম বিজ্ঞান পড়া আর বিজ্ঞান জানা একবিষয় না।

বিজ্ঞানের বাস্তবিকতার উপলব্ধিটা আমাকে কুরআন সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে।শুধু গুণগুণ করে কুরআন পড়ব কিন্তু দেখব না এটি সত্যি না মিথ্যা।হোক না এটা আমার ধর্মগ্রন্থ। একজন হিন্দু,বৌদ্ধ,খ্রিষ্টান, জিউস ও বলে তাদের ধর্মগ্রন্থ সত্যি।তাহলে এত ধর্মের মাঝে কোনটা আসল সত্যি।বিজ্ঞান পড়ে এটা অনুভব করলাম,প্রকৃতিতে কোন দ্বৈত আচারণ নেই,সত্য একটাই,সূর্য সবসময় পূর্বে উঠে আর পশ্চিমে অস্ত যায়।তাহলে আমি ইসলামি অনুসারী হলে কি হবে,আমি কি সত্যকে আঁকড়ে আছি নাকি মিথ্যা নিয়ে সুখ স্বপ্নে বিভোর আছি,এ চিন্তাটা বারবার ঘুরপাক খেয়েছে।

পৃথিবীতে যারাই প্রকৃতির পিছনে লুকানো সত্যকে খুঁজেছে তারাই সত্যকে আবিষ্কার করেছে।বিজ্ঞানী নিউটন গ্র‍্যাবিটি সত্যকে আবিষ্কার করেছেন এই মহাবিশ্বের সম্পর্ক খুঁজতে গিয়ে।আইনেস্টাইনও ন্যারাচাল বিজ্ঞানের যে সত্য তাকে অন্যমাত্রায় নিয়ে গেছেন।অর্থ্যাৎ যারাই সত্যকে খুজেছে তারাই সত্যকে পেয়েছে।প্রপেট ইব্রাহিম (আঃ) তো প্রকৃতিক সত্যের পিছনে যে মহান সত্য-স্রষ্টাকে আবিষ্কার করে ফেলেছেন।

আমিও নিরন্তর খুঁজেছি সেই সত্যকে। অবশেষে সত্য আমার কাছেও ধরা দিয়েছে।

লিখেছেন: নাজিম উদ্দিন

পঠিত : ১৪৪২ বার

মন্তব্য: ০