Alapon

চিন্তার দাসত্ব...


ভাষা হল চিন্তা, মনন বা জ্ঞান প্রকাশ এবং সংরক্ষণের একটা মাধ্যম। তবে ভাষা নিজে কিছু না। বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় কয়েকটি ভাষা জানা আবশ্যক। ইউরোপের ছেলে-মেয়েরা ৩/৪ টা ভাষা শেখে। এখানে আসার সুবাদে আমারও কয়েকটি ভাষা শিখতে হচ্ছে। আমাদের দেশের অন্ততঃ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ৩/৪ টি ভাষা শেখার ব্যবস্থা থাকা দরকার। কিন্তু বাংলাদেশে, বাঙালির সাথে কথা বলার সময় ইংরেজি বাক্য বা বাক্যাংশ ব্যবহার করা এবং এই ইংরেজি ব্যবহারের জন্য নিজেকে উৎকৃষ্টতর ভাবা সম্পূর্ণভাবে উপনিবেশিক গোলামী।

আমাদের দক্ষিন এশিয়ায় ইংরেজি জানাকে কৃতিত্বপূর্ণ হিসেবে ভাবা হয়। কিছু আরব এবং উত্তর আফ্রিকার দেশ যেমন আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, মরোক্কোর মানুষেরা ফেঞ্চ ভাষা জানাকে আভিজাত্য মনে করে। কারন ওরা ছিল ফ্যান্সের উপনিবেশ। ভাবের প্রকাশে কিছু ইংরেজি শব্দ আসবেই কিন্তু বাংলাদেশে, বাংলা ভাষা-ভাষীদের জন্য কোন অনুষ্ঠানে ইংরেজি ব্যবহার করা কিংবা সমার্থক শক্তিশালী বাংলা শব্দ জানার পরেও কথায় ইংরেজি শব্দ ব্যবহার একটা দৈন্যতা, একটা লজ্জা, এটা গোলামী। আরো বড় সমস্যা হল তারা জানেও না যে ইংরেজদের ২০০ বছরের গোলামি করার জন্য সে এমন ভাবে ভাবছে বা এভাবে ইংরেজি ব্যবহার করছে।

সমাজবিজ্ঞানে এই প্রবণতাকে অবিহিত করা হয় "Colonized mind" বা মনের দাসত্ব হিসেবে। এর মানে এটা না আমি ভাষা শেখার বিরোধী। এই বিষয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে আমি জানি ইংরেজি খুবই সহজ ভাষা।আরবি অসম্ভব বাগ্মী ভাষা৷ এই ভাষাতে ভাব খুবই জোরালো এবং গভীরভাবে প্রকাশ করা যায়। ফেঞ্চ ভাষায় দ্ব্যার্থবোধকতা একদম কম, ভুল বোঝাবুঝি বা কথার ভিন্নার্থ করা যায় না খুব একটা।

কিন্তু সমাধান কি? উত্তর আমি জানি না। তবে আমি খুব দৃঢ়ভাবে এই তত্ত্বে মানি সময়ই একদম সমাধানে পৌঁছানোটা জরুরী না। আমাদের দেশের কিছু মানুষ খুবই গুরুত্বের সাথে এটা অনুধাবন করতে পারে যে ব্রিটিশদের গোলামি আমরা এখনো মন-মগজে ধারণ করছি, যার প্রকাশ হচ্ছে ভাষার ব্যবহারে। তাহলে কাল অথবা পড়শু কেউ না কেউ সমাধানও বের করে ফেলবে। সমস্যা উপলব্ধি করাই সমাধানের প্রথম ধাপ।

লিখেছেন: মির সালমান সামিল

পঠিত : ১৩৭২ বার

মন্তব্য: ০