Alapon

বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য এ এক ভয়ংকর অশনি সংকেত।



ঝড় শুরু হয়েছে গত ২১ অক্টোবর। ১১ দফা দাবি তুলে ধর্মঘটের ডাক দেন ক্রিকেটাররা। সংকটের শুরু তখন থেকেই। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) পরে ক্রিকেটারদের বেশির ভাগ দাবি মেনে নেওয়ায় ধর্মঘট তুলে নেন তাঁরা। কিন্তু পরিস্থিতি এরপরও শান্ত হয়নি। ভারত সফর সামনে রেখে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচে দলের সঙ্গে ছিলেন না টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। ছিলেন না দলীয় অনুশীলনেও।

ক্রিকেটারদের বেশির ভাগ দাবিদাওয়া ছিল ঘরোয়া ক্রিকেটে পারিশ্রমিক ও নানা সংস্কার নিয়ে। জাতীয় দলে চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড়ের সংখ্যাও বাড়ানোর দাবি জানানো হয় সাকিবের নেতৃত্বে। বাংলাদেশি কোচদের গুরুত্ব দেওয়া ও ক্রিকেটারদের প্রাপ্য সম্মানটুকু দেওয়ার দাবিও জানান তাঁরা। এসব দাবি না মানা পর্যন্ত সব ধরনের ক্রিকেটীয় কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকার ঘোষণা দেন ক্রিকেটাররা। এ দিকে খেলোয়াড়দের ধর্মঘট নিয়ে ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা কিছুই জানতেন না। সেদিন রাতেই এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে তা জানান মাশরাফি।

পরদিন সাকিবদের ধর্মঘট নিয়ে দুপুরে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বিসিবিতে। সেদিন বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান ক্রিকেটারদের ধর্মঘটকে ‘ষড়যন্ত্রের অংশ’ বলে মন্তব্য করেন। বেশ উত্তেজিত কণ্ঠেই তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ক্রিকেটকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চলছে। ওরা এখন চায় ভারত সফরে যদি না যায়, তাহলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। এটা ষড়যন্ত্রের অংশ। কিছুদিনের জন্য সময় চাইছি। সবকিছু প্রকাশ করা হবে।’ ভারত সিরিজ যথাসময়েই অনুষ্ঠিত হবে, এমন আশাও প্রকাশ করেন বিসিবি সভাপতি।

এর পরের দিন সকালে বিসিবি প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন, ধর্মঘট ডাকা ক্রিকেটারদের সঙ্গে তাঁরা বসতে রাজি। দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে ক্রিকেটারদের ধর্মঘট নিয়ে কথা বলে আসেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান ও পরিচালক নাঈমুর রহমান। বিকেলে বিসিবির মিডিয়া কমিটির প্রধান জালাল ইউনুস জানান, আলোচনায় বসতে তাঁরা ক্রিকেটারদের জন্য অপেক্ষা করছেন। সেদিন সন্ধ্যায় গুলশানে এক সংবাদ সম্মেলনে আগের ১১ দফা দাবির সঙ্গে নতুন আরও ২টি দফা যোগ করেন ক্রিকেটাররা। বোর্ডের সঙ্গে আলোচনায় বসতেও তাঁরা প্রস্তুত, জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। সেদিন রাতেই বিসিবির সঙ্গে বৈঠক শেষে ধর্মঘট তুলে নেন ক্রিকেটাররা। তাঁদের বেশির ভাগ দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান।

পরদিন ২৫ অক্টোবর ভারত সফরের জন্য জাতীয় দলের অনুশীলন ক্যাম্প শুরু। সেখানে যোগ দেননি সাকিব আল হাসান। স্পিন কোচ ড্যানিয়েল ভেট্টরির দায়িত্ব গ্রহণ।

২৬ অক্টোবর আন্দোলনের জের ধরে সাকিবকে শাস্তি দিতে দিয়েছে বোর্ড প্রেসিডেন্ট পাপন। একটি টেলিকম কোম্পানির সঙ্গে সাকিব আল হাসানের ব্যক্তিগত চুক্তি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে বিসিবি। বোর্ড প্রধান জানান, চুক্তির ধারা ভঙ্গ করেই এ চুক্তি করেছেন সাকিব। জাতীয় দলের অলরাউন্ডারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়েও বলেন তিনি। জাতীয় দলের ক্যাম্পে যোগ দেন সাকিব। কিন্তু অর্ধেক সেশন থেকেই চলে যান।

২৮ অক্টোবর মিডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানের মন্তব্য, ‘ভারত সফরের এখনো আপনারা কিছুই দেখেননি। দেখেন না কী হয়। আমি যখন বলেছি, এটার মধ্যে একটা ষড়যন্ত্র আছে...। আপনারা আমাকে এত বছর ধরে চেনেন, কখনো ভুল বা মিথ্যা বলেছি? এ রকম কথা যদি আমি বলে থাকি, নিশ্চয়ই এটার মধ্যে কিছু একটা আছে।’ ভারত সফরে খেলোয়াড়দের যাওয়া নিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘আমার তো বদ্ধমূল ধারণা যাবে না এবং এমন এক সময় বলবে, যখন আমাদের কিছু করার থাকবে না।’ কে করতে পারে—এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সাকিবকে ডেকেছি আজ (গতকাল)। দেখি ও কী বলে। আরও অনেকে হতে পারে। আমি জানি না কারা। তবে তথ্য ছিল ওরা যাবে না।’

আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট হার নিয়েও মন্তব্য করেন বিসিবি সভাপতি, ‘বিশ্বাস করুন, আমার মনে হয় অনূর্ধ্ব-১৯ দল দিয়ে খেলালেও আফগানিস্তানের সঙ্গে টেস্ট জিততে পারতাম। আফগানিস্তানের সঙ্গে আমরা হারব, তাও বাংলাদেশে! আমাদের যা যা পরিকল্পনা ছিল, সব উল্টে দিল কে? কেন?যে উইকেট আমরা বানালাম, সেই উইকেটে খেলা হয়নি কেন? সাকিব বলেছে এটা বাজে উইকেট। কিন্তু অন্যরা বলেছে, সাকিব নিজেই নাকি বল করে উইকেট বাছাই করেছে। যাকেই জিজ্ঞেস করি, বলে সাকিব এই উইকেটে খেলতে চেয়েছে।মুশফিককে দিয়ে ওপেনিং করাল, আমরা তো কেউ কিচ্ছু জানি না! ও (সাকিব) নাকি এটাও বলেছে, পারলে মোসাদ্দেককে দিয়ে ওপেন করাত। সংবাদমাধ্যমে আবার বলছে, সব ওপর থেকে করা হয়। আমি সারা জীবন পেশাদার ছিলাম। আমি চেষ্টা করি একটা নিয়মের মধ্যে চলতে।’ সাকিবের ভারত যাওয়া নিয়ে ধোঁয়াশা।

পুরো এক সপ্তাহ জুড়ে ক্রিকেটে চলছে চরম অস্থিরতা। তামিম ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ভারত সফরে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। মুশফিক মেজাজের ভারসাম্য হারিয়ে দর্শকের সাথে বাজে আচরণ করেছে এবং ভারত সফরে কিপিং করতে সম্মত হচ্ছে না। সাকিবের জন্য অপেক্ষা করছে ১৮ মাসের আইসিসি নিষেধাজ্ঞা। সব মিলে ক্রিকেটে চলছে এক ভয়ংকর অস্থিরতা। বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য এ এক ভয়ংকর অশনি সংকেত।

পঠিত : ১৪১২ বার

মন্তব্য: ০