Alapon

অনিক, খায়রুল থেকে আবরার এবং অপ্রিয় কিছু কথা...


প্রথম আলোর এই ঘটনার পর থেকে ২০১১ সালের সেই অনিক খায়রুলের ঘটনা মনে পড়ছে খুব। ২০১১ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর সাস্টের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থী অনিক এবং খায়রুল আরো কয়েকজন বন্ধুসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকটবর্তী একটা জায়গায় ঘুরতে যান। নদীতে ট্রলারে থাকা অবস্থায় বখাটেদের হামলার শিকার হয়ে তারা লাফ দিয়ে নদীতে পড়েন। কিন্তু তারা সাঁতার জানতেন না।

তখন সাস্ট ক্যাম্পাসে চলছিলো বিজয় দিবসের কনসার্ট। ফোনে এই হামলার কথা প্রক্টর থেকে শুরু করে চেতনার উজির ড. জাফর ইকবাল সাহেবকেও জানানো হয়। কিন্তু তিনি তারা কনসার্ট নিয়ে ব্যস্ত। কনসার্ট চলতে থাকে। কনসার্ট শেষে তারা খোঁজখবর নিতে যান। ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়। নদী থেকে অনিক খায়রুলের লাশ উদ্ধার করা হয় পরদিন। এই ঘটনায় প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়ে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে। শিক্ষার্থীরা এতটাই ক্ষিপ্ত হয়েছিলো যে, তারা কর্তৃপক্ষকে জুতা প্রদর্শন করে। এমনকি গোল চত্ত্বরের পাশে জাফর ইকবালের স্ত্রী ইয়াসমিন হকের একদম গালের কাছে জুতা নিয়ে যায়।

আজকে যখন এত বছর পর এই ঘটনার কথা বলছি, অনিক খায়রুলের অনেক বন্ধুকে পাবেন তারা হয়ত অনিক খায়রুলকে ভুলে গেছে। হয়ত তারা আবার ইকবাল সাহেবের লেখা শেয়ার দেয়।
কিছুদিন আগে ইয়াসমিন হক "সাস্টে ২২ বছর" নামে একটা বই লেখছেন। যেখানে অনিক খায়রুল নিয়ে তিনি বেশ আবেগঘন বক্তব্য দিছেন। তিনি কতোটা কষ্ট পাইছিলেন ইত্যাদি ইত্যাদি। লল।

কালকের ঘটনা সবারই জানা। একটা পয়েন্ট খেয়াল করেন। ছেলেটা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হইছে। মারা গেছে। খবর গোপন। কনসার্ট থামে নি। অর্ণব আর তাহসানের গানের সুরে তখনও নাচানাচি করছে কিশোর বন্ধুরা। এমনকি 'কিশোর আলো'র পেইজে তাহসান অর্ণবের গানে কেমন আনন্দ হইছে সেইটা নিয়া পোস্টও দেওয়া হইছে। অতঃপর পোস্টে যখন গালিগালাজ শুরু হইছে তখন, মানে মৃত্যুর প্রায় ৬ ঘন্টা পর শোক প্রকাশ করে আবেগঘন পোস্ট দিছেন আনিসুল হক!

আনিসুলের এই কান্নাকাটি 'বিশ্বাস' করার মতো ছেলেপেলেরও অভাব নাই। কয়েকজনরে দেখলাম, "থ্যাংক্স স্যার" লিখে আনিসুলের পোস্ট শেয়ার দিছে।
.... রানা প্লাজা ধ্বসে এত এত মানুষ মারা গেছে। বাঙ্গালি সাময়িকভাবে হলেও সেইদিন কাঁদছে।
কিন্তু প্রথম আলো সন্ধ্যায় তাদের পূর্বনির্ধারিত কনসার্ট ঠিকই করছে। তারা যুক্তি দেখাইছিলো, এই কনসার্ট বন্ধ হইলে স্পন্সর থেকে টাকা পাবে না। কনসার্টে যে টাকা আয় হবে সেই টাকা দিয়ে নাকি তারা নিহতদের পরিবারকে সাহায্য করবেন। হা হা হা।

প্লিজ বন্ধুরা, প্রথম আলোর প্রতি তোমাদের ঈমান নড়বড়ে করো না। এসব তো বিচ্ছিন্ন ঘটনা। প্রথম আলো খুব ভালো, এধরনের দুয়েকটি ঘটনা দিয়ে তাদেরকে বিচার করো না৷ ঠিক যেভাবে অনিক খায়রুলের ঘটনা বিচ্ছিন্ন। জাফর ইয়াসমিন খুব ভালো। ইত্যাদি।

যাই হোক, প্রথম আলো বন্ধুসভা কিংবা "কিশোর আলো" আসলে কী করে? টিনেজারদের কাছে প্রিয় কেন?
এককথায় এটা 'জাস্টফ্রেন্ড' তৈরীর কারখানা । উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েরা আসলে যা 'চায়' প্রথম আলো তা-ই দেয়। এখানে অবাধে ছেলেমেয়ে মিলে হাসাহাসি বন্ধু আড্ডা গান করা যায়।

কিশোর আলোর একটা প্রচ্ছদের ব্যাপারে দুই বছর আগে লিখেছিলাম। যেখানে দেখা যায় গেঞ্জি পরা ১৪/১৫ বছরের দুইটা মেয়ে আরও দুই তিন ছেলেবন্ধুর সাথে রঙ মাখামাখি করছে। অনেকের কাছেই এটা একটা 'ইনোসেন্ট' ব্যাপার, তারুণ্যের উচ্ছলতা!
.....তরুন প্রজন্মের মাঝে এধরনের কালচার প্রমোট করা দারুণ ব্যাপার। উইন উইন সিচুয়েশন। টিনেজাররাও খুশি, প্রথম আলোও খুশি। কৈশোরে পদার্পণ করার পর ছেলেরা মেয়েদের সাথে মেয়েরা ছেলদের সাথে একটু কথা বলা একটু হাসাহাসি করতে পারলে জীবন ধন্য মনে করে। তারপর আসে কথা বলা হাসাহাসির পরের পর্ব। কিশোর আলোতে কিংবা MUN এ গেলে 'বৈধ' পথে এগুলো হাতের মুঠোয় আসে। 'জাস্ট ফ্রেন্ড' পাওয়া যায়।

নাহ, শুধু মাত্র জাস্টফ্রেন্ড দিয়ে অবশ্যই একবিংশ শতাব্দীর তরুনদের ধরে রাখা যায় না। মানুষ পশু নয়৷ সে তার সকল কাজকর্মের একটা 'মোরাল' স্বীকৃতি চায়। বিজ্ঞান চায়।
এজন্যে আছে সহীহ প্রথম আলো রেসিপি। তাদের আদর্শ হিশাবে এক চিমটি কৃকেট দুই চিমটি মুক্তিযুদ্ধ, আর বছরে একবার পথশিশুদের খিচুরি খাওয়ানো! ব্যাস...

আনিসুল হক গং শিশুদের আজীবন শিশু বানিয়ে রাখে। এরা এমন প্রজন্ম তৈরী করে যারা হবে রাজনৈতিক ভাবে দেওলিয়া চরম স্বার্থপর। যারা দেশের হাজারও সংকটে উটপাখির মতো বালির মাঝে মুখ গুঁজে রাখে। গুম খুন অপহরণ কিংবা পিঁয়াজের দাম বৃদ্ধিতে তাদের কিচ্ছু যায় আসে না। তারা বিজ্ঞান শিখে অলিম্পিয়াড করে জাস্টফ্রেণ্ড করে খিচুরি খাওয়াইয়া মানবতা করে আর কি চাই?

এনিওয়ে আজকে রাহাতের ঘটনায় রাহাতের বন্ধুরা হয়ত আনিসুলদের আসল রুপ সাময়িক সময়ের জন্যে হলেও বুঝতে পারছে। কিন্তু বছরের পর বছর প্রথম আলো যেভাবে তিলকে তাল করে তালকে তিল করে শাদাকে কালো বানায় কিংবা অদৃশ্য করে দেয়, সেটা কিন্তু সুশীল তরুনদের চোখ এড়িয়ে যায়। কিংবা প্রথম আলোতে ছাপানো রাজনৈতিক বক্তব্য এরা ঐশী বাণীর মতো বিশ্বাস করে!

জানি দুদিন পরই রাহাতকে সবাই ভুলে যাবে। প্রথম আলো খুব ভালো, এটা জাস্ট একটা এক্সিডেন্ট বলে যুক্তি দেওয়া শুরু হবে। আবার রাজিব হাসান শরীফুল হাসান শিমু নাসের এবং আনিসুলিদের ফাঁদে ঘুরপাক খাবে এরাই। প্রচুর জাস্টফ্রেণ্ড খেলবে আই হেইট পলিটিক্সরা। সুতরাং রাহাতের জন্য সমবেদনা ছাড়া আমার আর কিছুই বলার নাই। কোনো প্রতিবাদ করছি না, কারো বিচার দাবি করি না।

আপনার সন্তানকে কী আনন্দ করতে দিন। বিজ্ঞান করুক মানবতা করুক গণিত করুক জাস্টফ্রেণ্ড করুক কনসার্ট করুক বেলি ড্যান্স করুক মুক্তিযুদ্দ করুক ক্রিকেট করুক। বদলে যাক বদলে দিক।

copy from: কাউসার আলম

পঠিত : ৮৩৩ বার

মন্তব্য: ০