Alapon

অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া ব্যক্তকরণ প্রবণতা এবং কিছু কথা...


ভূমিকা:

প্রত্যেকটি মানুষের কিছু নিজস্ব চিন্তা-চেতনা থাকে। সেই চিন্তা চেতনা থেকে জীবন-যাপন করে। নিজের জীবনের সংজ্ঞা নির্ধারণ করে। আবার সেই চিন্তা চেতনা থেকেই দেশ, জাতি এবং রাজনীতি নিয়ে ভাবনা জাগ্রত হয়। আর সেই ভাবনার বহিঃপ্রকাশ ঘটে ফেসবুক টাইম লাইনে। ফেসবুক যেহেতু সিটিজেন জার্নালিজমের পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছে, তাই সকলেই এই সুযোগ গ্রহণ করেছে; তা সচেতনভাবেই হোক আর অসচতেনভাবেই হোক। ভাবনার বহিঃপ্রকাশে কখনো আবেগ অনুভূতি প্রকাশ পায়, আর কখনো প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পায়। তবে একবারেই আত্মকেন্দ্রীক ব্যক্তিরা ছাড়া প্রায় সকলেই নিজের ফেসবুক টাইম লাইনে দেশ, জাতি এবং রাজনীতি নিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে।

প্রতিক্রিয়া:
খুব সম্ভবত আমরা জাতি হিসেবেই প্রতিক্রিয়াশীল। সর্ব বিষয়ে আমরা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করি। হোক তা ভালো অথবা মন্দ; প্রতিক্রিয়া থাকবেই। প্রথমত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করাকে আমি ইতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখি। কারণ, প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে সেই ব্যক্তিই যে সেই বিষয় নিয়ে সচেতন ছিল।

ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া:
মনে করুন, অতি সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে গিয়ে একটি পানি চুক্তি করে এসেছেন। ভারত এখন থেকে ফেনী নদী থেকে পানি গ্রহণ করতে পারবে। অথচ প্রধানমন্ত্রীর ভারত যাওয়ার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের তিস্তার পানি প্রাপ্তি নিশ্চিত করা। কিন্তু তিনি না করে উলটো পানি দিয়ে এসেছেন। এই ঘটনার দিকে আর সবার মত সচেতন দৃষ্টি রেখেছিল বুয়েটের আবরার ফাহাদ। যার কারণে, সে এরূপ একটি চুক্তি হওয়ার পর নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত না করে থাকতে পারেনি। কারণ, সে দেশের স্বার্থের বিষয়ে অত্যন্ত সচেতন ছিল।

নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া:
কিন্তু আবরারে প্রতিক্রিয়ার বিপরীতে ছাত্রলীগের প্রতিক্রিয়া ছিল, নেতিবাচক ও জঘণ্য। তারা নিজেদের বিবেক বুদ্ধি দিয়ে বিবেচনা না করে, দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। যার কারণে, তারা আবরার ফাহাদের মত একজন মেধাবী শিক্ষার্থীকে হত্যা করেছে এবং নিজেরাও জেলে পঁচতেছে। তাদের এই নেতিবাচক ও উগ্র প্রতিক্রিয়ার কারণে দেশ আবরারকে হারাল। আর তারা নিজেদের জীবন নষ্ট করল। তাই সব প্রতিক্রিয়াই আসলে মঙ্গলজনক নয়। তাই প্রতিক্রিয়ার লাগাম টানা অত্যাবশ্যক।

বোবা প্রতিক্রিয়া:
প্রত্যেক ব্যক্তিরই প্রতিক্রিয়া হয়। কেউ তা প্রকাশ করে আর কেউ তা প্রকাশ করে না। অনেকেই ভাবে আমার প্রতিক্রিয়া প্রকাশে কার কি এসে যায়! মাঝখান দিয়ে আমি আবার কোন ঝামেলায় পড়ে যাই। তার চেয়ে বরং আমি চুপচাপ থাকি। কারও সাথেও নেই পাছেও নেই। এই প্রতিক্রিয়াকে আমি বোবা প্রতিক্রিয়া বলে নির্দেশ করি।

আর আমাদের দেশে এই বোবা প্রতিক্রিয়া ধারণকারী মানুষের সংখ্যাটাই বেশি। বাঙালী বাবুরা কোনো বিষয়ক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার আগে, নিজের কথা চিন্তা করে। যেমন, ভারতের সাথে চুক্তিই ধরুন না। এই চুক্তি নিয়ে আবরারের মত ছোট্ট একটি ছেলে কলম ধরল, কিন্তু দেশের বড় বড় বুদ্ধিজীবিরা চুপচাপ থাকল। আবার তাদের দেখাদেখি বেশিরভাগ আম জনতাও এই ঘটনাকে আর ৮-১০ টা ঘটনার মত চুপচাপ মেনে নিলো। কিন্তু এক আবরারের মৃত্যু সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিলো। যদি আবরারের মৃত্যুর মত ঘটনা না ঘটত, তাহলে এই পানি চুক্তি নিয়ে যতোটা কথা হয়েছে, সেটুকুও হতো না।

দেশের স্বার্থেও আমরা কথা বলতে রাজি নই। তবে আমরা কোন ক্ষেত্রে কথা বলব?

অনর্থক বিষয়েই যেন আমাদের প্রতিক্রিয়াগুলো খরচ হয়ে যাচ্ছে। সাকিব আল হাসানের কী হলো, কোন খেলোয়াড় কি করল এসব কিছুতেই যেন আমাদের প্রতিক্রিয়াগুলো আটকা পড়ে আছে। এই আটকে পড়াটা একটি জাতির জন্য অশনি সংকেত! সেই জাতি জানে না, কোন বিষয়টি তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ আর কোন বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাই আসুন, নিজেদের প্রতিক্রিয়া প্রকাশে সচেতন হই। খামোখা বিষয় নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে দেশের মৌলিক বিষয় নিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করি এবং অন্যদের সচেতন করে তুলি।

পঠিত : ৮৩৯ বার

মন্তব্য: ০