Alapon

গ্লোবাল ওয়ার্মিং নিয়ে অসচেতনতা এবং আমাদের পরিণতি...


গ্লোবাল ওয়ার্মিং- এই শব্দটির সঙ্গে পরিচয় দির্ঘদিনের হলেও, এ ব্যাপারে খুব বেশি জানা ছিল না। বা এখনো যে জানি তাও কিন্তু নয়।

টেলিভিশন খুললেই দেখতাম, উন্নত বিশ্বের দেশগুলো গ্লোবাল ওয়ার্মিং নিয়ে ভীষণ চিন্তিত। আর সেই চিন্তা থেকে বিভিন্ন দেশ কনফারেন্স করেছে, মিটিং করেছে কখনো জাতিসংঘে এ নিয়ে বিভিন্ন প্রস্তাব পাশ হয়েছে। কখনো কখনো গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের দরুন উন্নত দেশগুলো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে অর্থ সহায়তা প্রদান করছে।

গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর প্রভাব আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশেও পড়েছে। যেমন, বাংলাদেশকে বলা হয় নাতিশীতোষ্ণ- এর দেশ। অথচ এই নাতিশীতোষ্ণ দেশে ইদানিং তাপমাত্রা এতো বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে যে, বিগত কয়েক বছরে হিটস্ট্রোক করে মৃত্যুবরণ করা রোগির সংখ্যা নেহায়েত কম নয়।

এতো বিষয় থাকতে আজ হঠাৎ গ্লোবাল ওয়ার্মিং নিয়ে লিখতে বসলাম কেন?

কারণ, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ভারত সফরকে কেন্দ্র করে দিল্লীর আবহাওয়া নিয়ে বেশ কিছু সংবাদ দেখলাম। সেখানে বায়ুদূষণের মাত্রা এতো বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে যে, সেখানে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। স্কুল গুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এমনকি বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সদস্যরা মাস্ক পরে প্রাকটিস করতে বাধ্য হচ্ছে।

আসুন প্রথমেই জেনে নেই, গ্লোবাল ওয়ার্মিং বিষয়টা কী?

গ্রীন হাউস প্রভাব, ওজোন স্তরের ক্ষয়, অরণ্যচ্ছেদন প্রভৃতি কারণে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে । বিগত ৮০০০ বছর ধরে এই তাপমাত্রা প্রায় স্থির ছিল । কিন্তু গত ১০০ বছরের হিসেবে প্রমাণিত যে এই তাপমাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে । গবেষণা করে দেখা গেছে, বিগত ১০০ বৎসরে পৃথিবীর তাপমাত্রা ০.৫° C বৃদ্ধি পেয়েছে ।

বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ১.৫°-২.০° C পর্যন্ত এবং ২১০০ সালের মধ্যে ১.৮°C থেকে ৬.৩° C এর মতো বৃদ্ধি পেতে পারে । সারা পৃথিবী জুড়ে উষ্ণতার এই ক্রমবর্দ্ধমান বৃদ্ধিকেই বিজ্ঞানীরা বিশ্ব উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং (Global Warming) নামে অভিহিত করেছেন ।

দিল্লীর বায়ু দূষণ সমস্যা নতুন কিছু নয়! বেশ কয়েকবছর থেকেই দিল্লীতে বায়ু দূষণের মাত্রা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে, সেই সাথে তাপমাত্রাও। তাই ভারত সরকার নাকি দেশের রাজধানী অন্যত্র পরিবর্তন করার কথা ভাবছে।

একটি দেশের সিংহভাগ শিল্প কারখানা ও বাণিজ্যকেন্দ্র রাজধানী শহরকে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠে। যার দরুন রাজধানীর জলবায়ুর উপর বেশ ভালোই প্রভাব পড়ে। আর এই চাপ কমানোর জন্য ভারত সরকার হয়তো দিল্লী থেকে রাজধানী স্থানান্তর করবে। ভারত সরকারের হাতে রাজধানী স্থানান্তর করার মত যথেষ্ঠ জায়গা বা শহর রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের কি সেই সুযোগ রয়েছে?

বাংলাদেশের প্রায় সিংহভাগ ব্যবসা বাণিজ্য কলকারখানা রাজধানী কেন্দ্রীক। আর এ কারণে, রাজধানীর ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত মানুষ এ শহরে বসবাস করে। একই শহরে এত্তো কলকারখানা এবং এত্তো বেশি মানুষের বসবাসের দরুন, পরিবেশের অবস্থা কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে তা নিশ্চয়ই আমরা আঁচ করতে পারি।

বাংলাদেশের গ্রামগুলোতে শীত প্রায় শুরু হয়ে গেছে। সেখানে দুপুর বেলা গোসল করতেই শীতে হাত পা জমে যাচ্ছে। আর ঢাকায় ঠিক আমার মাথার উপরে ফুল স্প্রীডে ফ্যান ঘুরছে। এটাই গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর প্রভাব। এর কারণে, ছয় ঋতুর বাংলাদেশে এখন সর্বসাকুল্যে তিনটি ঋতুর অস্তিত্ব অনুভব করা যায়। বাদ বাকি তিন ঋতু বাংলাদেশ থেকে বিদায় নিয়েছে।

ভারত বিশাল একটি দেশ। তাই তাদের জন্য রাজধানী স্থানান্তর করা তেমন কোনো বিষয় না। কিন্তু ৫৬ হাজার বর্গমাইলের ছোট্ট এই বাংলাদেশের রাজধানী পরিবর্তন করবে কোথায়? রাজধানী পরিবর্তন করে আমরা যাবোই বা কোথায়?

তাহলে এই গ্লোবাল ওয়ার্মিং থেকে মুক্তির উপায় কি?

উপায় একটাই, বনভূমি উজাড় না করে বনভূমির পরিমাণ বৃদ্ধি করা। অধিকাংশ আমজনতাই জলবায়ু কেন্দ্রীক বিষয় নিয়ে আগ্রহ দেখায় না। অথচ জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রথম স্বীকার আমরা আম জনতাই হয়ে থাকি। আর তৃতীয় বিশ্বের নাগরিক হিসেবে আমাদের আরও বেশি সচেতন হওয়া দরকার।

পঠিত : ১৫৪০ বার

মন্তব্য: ০