Alapon

ভুবনখ্যাত মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমির জীবনের গল্প...


জালাল উদ্দীন রুমি প্রথম জীবনে ছিলেন এক জাদরেল মওলানা। কোরান হাদীস ফিকাশাস্ত্র বয়ানে তার জুড়ি ছিল না। তিনি ছিলেন দেশের আলেমকুল শিরোমণি। এ নিয়ে তার অহমিকা ছিল। শ্রেষ্ঠ আলেম হবার অহংকারে তিনি মগ্ন ছিলেন। ভাবলেন তিনি দুনিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বিখ্যাত কেতাব লিখবেন যেখানে ধর্মের সবকিছু লেখা থাকবে। দীর্ঘ ত্রিশ বছর পরিশ্রম করে তিনি বইটির পান্ডুলিপি লিখলেন। গর্বে তিনি আরো স্ফীত হলেন। এমন বই তো সমসাময়িক কেউ লিখতে পারেনি।

একদিন ওযুখানার পাশে বসে রুমি সে বইয়ের পান্ডুলিপি উল্টেপাল্টে দেখছিলেন। এমন সময় জীর্ণবস্ত্রে এক পাগল এসে হাজির হলো। মওলানা জিজ্ঞেস করলেন, "কি চাও?" পাগল পাল্টা প্রশ্ন করল, "তোমার হাতে ওটা কি?" মওলানা তাচ্ছিল্যের সঙ্গে জবাব দিলেন, "তুমি বুঝবে না, এটা হলো কাল (জ্ঞান)।" অসতর্ক মুহূর্তে মওলানার হাত থেকে বইটি তুলে নিয়ে পাগল সেটি ফেলে দিল ওজুর পানিভর্তি চৌবাচ্চার মধ্যে! মওলানা ভীষণ খেপে গেলেন। রাগতস্বরে বললেন, "একি করলে তুমি, জ্ঞানের শ্রেষ্ঠ বইটি তুমি নষ্ট করে ফেল্লে!" পাগল পানির মধ্যে হাত ডুবিয়ে বইটি তুলে এনে রুমির হাতে রাখল। বইটি এতটুকু ভিজেনি! মওলানা অবাক বিস্ময়ে জিজ্ঞেস করলেন, "এটা কি?" পাগল "এটা আমার হাল (অবস্থা)" বলেই দৌড়ে প্রস্থান করলো। রুমি হতচকিত হয়ে পেছন পেছন দৌড়াতে লাগলেন। কিছু দূর গিয়ে ধরে ফেল্লেন পাগলকে। রুমি এ ঘটনায় প্রচন্ড ধাক্কা খেয়ে বল্লেন, "আপনার গভীর জ্ঞানের কাছে আমার সঞ্চিত জ্ঞান তুচ্ছ- আমি আপনার কাছে দীক্ষা নিতে চাই।"

শিক্ষার যেখানে শেষ, দীক্ষার সেখানে শুরু। এতক্ষণ বুঝে গেছেন, ওই পাগল ছিলেন সাধক শামসেত তাবরেজি!

তাবরেজি প্রত্যাখ্যান করলেন রুমির প্রস্তাব। বললেন, "তুমি বড় মওলানা- তোমাকে কি শেখাব?" রুমি নাছোড়বান্দা - মাফ চাইতে লাগলেন আর অনুনয় বিনয় করতে লাগলেন। সুফির মন গলল। সুফি শর্ত দিলেন, "ঠিক আছে, তুমি যদি বাজারের মধ্য দিয়ে দু'হাতে দু'বোতল মদ উঁচু করে দেখাতে দেখাতে নিয়ে আসতে পার- তাহলে বিবেচনা করা যেতে পারে।" মওলানার অন্তশ্চক্ষু খুলছে- তিনি অগত্যা রাজি হলেন। বাজারের মধ্য দিয়ে দু'হাতে দু'বোতল মদ নিয়ে আসলেন। দুপাশের লোকজন ছি ছি করতে লাগলো। এত বড় মওলানা কি শেষতক মদাসক্ত হলো!

রুমি কর্ণপাত করলেন না। তিনি মদ স্পর্শও করেননি। কিন্তু এ ঘটনায় তার দর্পচূর্ণ হলো। তিনি বিনয়ী হলেন। তাবরিজ তাকে দীক্ষা দিলেন। শুরু হলো রুমির নতুন জীবন। ধীরে ধীরে হয়ে উঠলেন মরমী সাধক। রচনা করলেন মসনবী। আপনারা জানেন, এ কেতাবটিকে ফারসি ভাষার কোরান বলা হয়ে থাকে। কিন্তু তাবরিজ কর্তৃক ফেলে দেয়া পুস্তকের জন্য রুমি পরিচিত নন- সারা দুনিয়ায় তার পরিচিতি মসনবীর রচয়িতা হিসাবে!

লিখেছেন: দেলোয়ার জাহান

পঠিত : ২০১৪ বার

মন্তব্য: ০