Alapon

কেমন আছে আমাদের বিশ্ব?



পুরো বিশ্ব কেমন যেন একটা অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। গোটা দুনিয়া জুড়ে কেবল বিক্ষোভ, সংঘর্ষ আর লাশের খবরে সংবাদপত্রগুলো ছেয়ে যাচ্ছে।

আপনি সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক খবরগুলোর উপর নজর রাখলে দেখবেন চারদিকে মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ছে, শ্লোগান দিতে দিতে জীবন দিচ্ছে সরকারী বাহিনীর হাতে।

১.
শুরুতে ইরানের দিকে নজর দেয়া যাক- সর্বশেষ খবর অনুযায়ী ইরানে জ্বালানি মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে গত শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত দুই শতাধিক বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে, যদিও সরকারি হিসাব অনুযায়ী ১০৬ জন বলা হচ্ছে। আহতের সংখ্যাটা নিজেই কল্পনা করুন।

আমার রুমমেট ইরানিয়ান, সে তার দেশে আজ ৪দিন কথা বলতে পারে না, ২১টা শহরে নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে। হেলিকপ্টার থেকে স্নাইপার পর্যন্ত গুলি চালাচ্ছে আন্দোলনকারীদের উপর।

২.
ইরাকের অবস্থা তো আরও ভয়াবহ, এক মাসেরও অধিক সময় ধরে চলছে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ। এখানেও সরকারি বাহিনীর গুলিতে ৩১৯ জন নিহত হয়েছে। ১৫ হাজারের অধিক আহত। ও হ্যাঁ, এই হত্যাকাণ্ডকে আবার সমর্থন দিয়েছে ইরান সরকার।

৩.
এ দিকে লেবাননে অর্থনৈতিক সঙ্কটের প্রতিবাদে চলা সরকারবিরোধী ভয়াবহ বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত পদত্যাগ করেছে। বিক্ষোভ এখনো শেষ হয়নি, সেনাবাহিনী একজনকে গুলি করে হত্যা করেছে।

৪.
মধ্য এশিয়া ছেড়ে এবার পূর্ব এশিয়ায় আসি। এখানেও শান্তি নেই। হংকং-এ চলছে চীনাদের খরবদারীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ। যে আইন নিয়ে বিক্ষোভের সূত্রপাত সে আইন বাতিল করলেও গণতন্ত্রপন্থী হংকংয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা বেশ কিছুদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে, পুলিশের সাথে দফায় দফায় সংঘর্ষ জড়াচ্ছে। এখনো চলছে বিক্ষোভ। ইতিমধ্যে চার শতাধিক বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে।

৫.
এবার আসি চীনের লাগোয়া আরেকমৃত্যুপুরী কাশ্মীরে। গত ১০৯ দিনে কাশ্মীরকে গোরস্থান বানিয়ে রেখে ভারতে বিজেপি শাসিত সরকার। নেই বিদ্যুৎ, নেই ইন্টারনেট, খুলছে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস, দোকানপাট। দেখা দিয়েছে খাদ্যাভাব। রয়টার্সের তথ্যমতে গত তিনমাসে ৭৬৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যদিও সংখ্যাটা আরও অনেক বেশি বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, আর ক্ষতি হয়েছে মাত্র(?) ১০০ কোটি ডলার।

৬.
এবার আসি আমেরিকায়, শুনে অবাক লাগলেও এখানেও শান্তি নেই। বলিভিয়ায় তুমুল বিক্ষোভের মুখে প্রেসিডেন্ট মোরালেস পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পরেও থামেনি রাজনৈতিক অস্থিরতা। সরকার ও বিরোধীপক্ষের মাঝে এখনো চলছে সংঘর্ষ। এখন পর্যন্ত ২৩ জন জীবন দিয়েছে এই বিক্ষোভে।

৭.
ল্যাটিন আমেরিকার আরেক দেশ চিলিতে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ হয়ে গেলো কয়েকদিন আগে। ১০ লাখেরও বেশি মানুষ টানা ৩ সপ্তাহ সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে গলা ফাটিয়ে বিক্ষোভ করেছে, জীবন দিয়েছে ১৭ জন। যার ফলশ্রুতিতে সরকার সংবিধান সংশোধন করতে বাধ্য হয়।

৮.
এই তো অক্টোবরে ল্যাটিন আমেরিকার আরেক দেশ ইকুয়েডরে জ্বালানি তেলে সরকারি ভর্তুকি নিয়ে বিক্ষোভ থামাতে সরকারকে 'জরুরী অবস্থা' পর্যন্ত ঘোষণা করতে হয়। ৪৫ জনকে গ্রেপ্তারও করে পুলিশ।

৯.
আফ্রিকার কথা বলতে গেলে তো সবার আগে মালির নাম আসে। পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশে দীর্ঘদিন ধরে উগ্রবাদী গ্রুপ ও সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ চলে আসছে। এই সপ্তাহেও চলমান সংঘর্ষে ২৪ জন সেনা ও ১৭ জন উগ্রবাদী নিহত হয়েছে।

১০.
সিরিয়া, ইয়েমেন তো দীর্ঘদিন ধরেই অচল। ফিলিস্তিনে ইসরায়েলী হামলা অব্যাহত আছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন হামলার খবর আসছে। আফগানিস্তানে প্রায়ই জঙ্গী হামলার খবর ভেসে আসে। রোহিঙ্গা সমস্যা তো শেষ হবার নয়। এখন বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বলতে গেলে পুরো পৃথিবী জুড়ে অশান্তির দাবানল ছড়িয়ে আছে। কিন্তু এই দাবানল থামাবে কে? কেনইবা মানুষ এত ক্ষুব্ধ হয়ে যাচ্ছে? দিন দিন কেন বিক্ষোভ, সহিংসতা বাড়ছে?

এসবের সমাধানইবা কি? জাতিসংঘ থেকে শুরু করে বিশ্বনেতারা এত শান্তির বুলিয়ে আওড়ায়, কিন্তু কোথায় গেলো সে কাঙ্ক্ষিত শান্তি? মোটাদাগে আপনি এসব সমস্যাগুলোর প্রধান কারণ কি বলে মনে করেন?

ও হ্যাঁ এটা মাথা রাখবেন, বেশির ভাগই সমস্যাই কিন্তু মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে কিংবা মুসলমানদের নিয়ে এবং মানুষের মৌলিক অধিকার সম্পর্কিত।

পঠিত : ৭১২ বার

মন্তব্য: ০