Alapon

নৌকার জন্ম ইতিহাস, নামকরণ ও উৎস সন্ধান...


পৃথিবীতে সর্বপ্রথম নৌকা কে বানিয়েছিলেন? সর্বপ্রথম নৌকা বানিয়েছিলেন যিনি, তার নামেই নামকরণ হয়েছে নৌকার। আর তা বানানো হয়েছিল টিক উড বা সেগুন কাঠ দিয়ে, সেটাও আমরা আজ জানি।

মানব ইতিহাসে সর্বপ্রথমবারের মতো নৌকা বানিয়েছিলেন আল্লাহর নবী হযরত নুহ আ:। তার আগে মানুষ নৌকা চিনতো না বানাতেও পারতেও না। তারা কখনও তা দেখেও নি। এ কথার প্রমাণ আমরা পাই কুরআনে করিম থেকে। কুরআনে বলা হয়েছে; আমাদের ত্বত্তাবধানে (আমাদের চোখের সামনে) তুমি নৌকা নির্মাণ করো (আল কুরআন. ১১:৩৭)।

নুহ আ:কে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে তাকে দেখানো মতো বা নির্দেশ দেয়া মতো করে নৌকা বানাতে। এবং তা বানাতে বলা হচ্ছে প্রত্যক্ষ ত্বত্তবধানে। অর্থাৎ আল্লাহর ফেরেশতা জিবরাইল আ: (হয়তো আরও কোন ফেরেশতা, বা ফেরেশতাদের দল ছিলেন তাঁর সাথে, আল্লাহই একমাত্র ভালো জানেন)।

এর আগে যে মানব সমাজের কাছে নৌকার ব্যাপারে কোনরকম ধারণা ছিল না, তার সমর্থনে আমাদের দুইটা বিষয় ভাবতে হবে।

প্রথমটা হলো; নুহ আ: সহ মানুষের কাছে যদি নৌকা নিয়ে কোন জ্ঞান; তথা সেটা কি জিনিস? কি দিয়ে কিভাবে বানাতে হয়? তার কোন জ্ঞান বা প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থাকতো, তা হলে স্বয়ং ফেরেশতাকে দাঁড়িয়ে থেকে তাকে নির্দেশনা দেয়া লাগতো না। নৌকা নির্মাণের ব্যাপারে আল্লাহর একটা নির্দেশই যথেষ্ট ছিল, নির্দেশ পাওয়া মাত্র আল্লাহর নবী তা পালন করতেন। কিন্তু সেটা হয়নি কারণ, নুহ আ: সহ কোন মানব সন্তানের সামনে নৌকার কোন ধারণা, চিত্র ও অভিজ্ঞতা ছিল না।

আর দ্বিতীয় যে বিষয় সেটা হলো; এমন এক অদ্ভূত জিনিস বানাতে দেখে নুহ আ: এর জাতির লোকজন অবাক হয়ে দেখতো আর হাসাহাসি করতো। এটা আমার কথা নয়, খোদ আল্লাহ পাকই জানান দিচ্ছেন আল কুরআনের মাধ্যমে। যেমন তিনি বলছেন;

আর নুহ নৌকা তৈরি করছিল আর যখনই তার জাতির প্রধান ব্যক্তিরা তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিল, তারা তাকে ঠাট্টা করছিল- (আল কুরআন. ১১:৩৮)

এই ঠাট্টা বিভিন্ন কারণে হতে পারে, তবে এক্ষেত্রে আগাগোড়া বিবেচনা করলে যে জিনিসটা আমাদের সামনে পরিস্কার হয়ে যায়, সেটা হলো, একটা অদ্ভুত জিনিস যা ঐ সমাজের লোকজন বাপ দাদার আমলেও চোখে দেখেনি, নাম জানে না, দিনের পর দিন তা বানাতে দেখে তারা অবাক হচ্ছিল আর ঠাট্টা করছিল।

আরও একটা কারণ ছিল, হযরত নুহ দীর্ঘ নয়শত বা সাড়ে নয়শত বসর এক নাগাড়ে ঐ সমাজে দাওয়াতি কাজ করেছেন, সমাজের লোকেরা এ নিয়ে তাকে ঠাট্টা বিদ্রুপ কম করেনি। সেই তারাই এখন দেখতে পাচ্ছে নুহ আ: তার দাওয়াত বা দিয়ে এখন কাঠ কেটে কেটে কি যেন একটা জিনিস বানাচ্ছিল! এটা আবার কোন পাগলামি ধরলো তাকে!

এরকম ভেবেও হতে পারে। অথবা উভয়টিই হতে পারে।
যা হোক, নুহ আ: কে আল কুরআনে নুহ বলেই সম্বোধন করা হয়েছে। আর নৌকাকে বলা হয়েছে 'ফুলকি'।

নুহ শব্দটি ইংরেজিতে ‘Noah’ (নোয়াহ বা নোয়া) হিসেবে লেখা হয়ে থাকে। আর হিব্রুতে এমনভাবে লেখে ইহুদিরা, যার ইংরেজি উচ্চারণ দাঁড়ায় ‘Noach’ ('নৌয়াক’ বা ‘নৌক' বা 'নৌখ')এর মত।

নুহ আ: এর সেই নৌকায় সকলেই নিশ্চিত নিরাপত্তার আশ্বাস পেয়েই উঠেছিলেন। দিন শেষে তারা নিরাপত্তা পেয়েছিলেনও।

সেই চেতনাকে, সেই আবেগকে কাজে লাগিয়েই এই একবিংশ শতাব্দিতে আপনার আশে পাশে সর্বাধুনিক যান্ত্রিক যান 'Noah' মাইক্রোবাস ছুটে বেড়াচ্ছে, চোখ মেললেই দেখতে পান প্রতিদিন।

ইহুদিদের হিব্রু ভাষার ব্যাপারে একটা বিষয় লক্ষণীয়, তারা আরবি 'হা' বর্ণটি ঠিকমত উচ্চারণ করতে পরে না, যেমন আরবরা 'প' উচ্চারণ করতে পারে না।

ইহুদিরা ‘হা’ বর্ণটিকে এমনভাবে উচ্চারণ করে যে তা শুনতে অনেকটা 'খা' বা তার কাছাকাছি কিছু একটা শোনায়। যে কেউ নেতিনিয়াহুর মুখে 'হামাস' খুব খেয়াল করে শুনে দেখলে দেখবেন, তার মুখে হামাসের নাম শুনে মনে হচ্ছে সে 'খামাস' বলছে।
ইহুদিরা তাই যখন 'নোয়াহ' উচ্চারণ করে, তা তখন শোনায় 'নৌয়াখ' এর মতো।

'নৌয়াখ'টাই বিকৃত হয়ে আমাদের ভাষার একটা অনুষংগ হয়ে গেছে । এই 'নৌয়াখ' বা 'নৌখ' থেকেই আমাদের আজকের 'নৌকা' শব্দটির উৎপত্তি। আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাহ নুহ আ: এর উপর রহম করুন।

@জিয়াউল হক

পঠিত : ১৬০৭ বার

মন্তব্য: ০