Alapon

আইনসংগত সব কিছুই বৈধ, কিন্তু তার মানে এই নয় যে আইনত মানেই ন্যায্য।


আইন করে এক সময় দাসপ্রথাকে ন্যায্য করা হয়েছিল যেমন করা হয়েছিল বর্ণবাদ, উপনিবেশবাদ, আর হলোকস্টকে। কিন্তু তাই বলে সেসবের কোন কিছুই মোরাল কিংবা এথিক্যাল ছিল না। ধীরে ধীরে সেসব আইনের পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে একবিংশ শতাব্দীর সব আইন সব দেশে জাস্টিফাইড।


চীনে আইন করে এক মিলিয়নের উপর উইঘুর মুসলমানদের কন্সেনট্রেশান ক্যাম্পে বন্দী করে মগজ ধোলাই চলছে। চীনে এটা বৈধ, কিন্তু ইনহিউম্যান আর মানবতা বিরোধী এই আইন কোন এঙ্গেলেই জাস্টিফাইড নয়।


আমেরিকার সীমান্তে আইন দেখিয়ে দক্ষিন আমেরিকা থেকে আগত এসাইলাম সিকার পরিবারগুলো থেকে হাজারো বাচ্চাদের আলাদা করে পরিবারগুলোকে সেপারেট করা হয়েছে। অত্যন্ত মানবতা বিরোধী এই আইন প্রয়োগকে প্রশাসন মনে করে বাইবেল সম্মত আর জাস্টিফাইড। বেশ কিছু আইন আছে, যার এমন ফাঁকফোকর আছে যা একজন সাদার উপরে যেভাবে অর্পিত হয় ডিফেন্সলেস কালোদের উপর তার অর্পণ হাজারগুন বেশি। ফলাফলে কারাগারগুলোতে কালোদের মাত্রাতিরক্ত আদিক্ষ্য। আমেরিকায় ব্ল্যাক লাইফ মুভমেন্ট এর মুল কারন এদের কালারড পিপলের বিরুদ্ধে আনযাস্টিফাইড আইনের বলপ্রয়োগ।


সৌদি আরবে হিউম্যান রাইটস এক্টিভিস্টদের সৌদি আইন দেখিয়ে রাষ্ট্র বিরোধী তকমায় বছরের পর বছর কারাগারে বন্দী করে রাখছে। কারাগারে তাদের উপর চলছে নানান রকম টর্চার। কেউ সৌদি রাজপরিবারের বিরুদ্ধে কিছু বললেই সে রাষ্ট্রদ্রোহিতার আইনে কারাগার, অনেকে সেখান থেকে সোজা ফাশিকাষ্ঠে। এমবিএস জলজ্যান্ত একজন নামকরা সাংবাদিককে খুন করে বিশ্ব তোলপাড় করে ফেললেও সৌদি আইন তাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে রেখেছে। বিশ্বও তাকে মেনে নিয়েছে, তার প্রেস্ক্রাইবড সৌদি লিবারিজমে বিশ্ব মুগ্ধ, আগামি জি২০ সামিটও হবে রিয়াদে। একজন খুনি এখন মক্কা-মদিনার কেয়ারটেকার। কারো কিছু করার নাই। সৌদি আইন তার পক্ষে।


ইসরায়েল আইন বানিয়ে হাজার বছর ধরে ফিলিস্তিনি পরিবারের আয়ত্তে থাকা জায়গা জমি ফিলিস্তিনিদের জন্য অবৈধ বানিয়ে বৈধ ভাবে সেটেলারদের দিয়ে দিচ্ছে। আইন দেখিয়ে ফিলিস্তিনিদের বৈধ সম্পত্তিকে অবৈধ ঘোষণা করে বুলডজার দিয়ে গুড়িয়ে দিচ্ছে। হাজারো ফিলিস্তিনিদের বছরের পর বছর কারাগারে বন্দী রাখছে। সেখানে তাদের মৃত্যু হচ্ছে। আরব ইজরায়িলিরা আইনত ইজরায়েলের সেকেন্ড ক্লাস নাগরিক। আইন ইজরায়েল রাষ্ট্রের পক্ষে, এই রাষ্ট্রের কেউ সমালোচনা করলেই সে এন্টাই-সেমাইট, ইজরায়েলের রাষ্ট্র থেকে তাদের বের করে দেয়া হচ্ছে।


ভারতের সুপ্রিম কোর্ট অন্যায় ভাবে এক সম্প্রদায়ের সম্পত্তি অন্য সম্প্রদায়কে দিতে আজ দ্বিধা করে না। খুনের দায়ে অভিযুক্ত আসামিকে স্বাধীন ভাবে নির্বাচনে লড়তে পারমিট দেয়, মানুষ আবার তাদের ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসায়।


মিসর, রাশিয়া, ইরানের মানবতা বিরোধী আইনের উদাহরণ দেয়া শুরু করলে কলামের পর কলাম লেখা যাবে। আর বাংলাদেশ? সবার চোখের সামনে ঘটছে নতুন করে বলার কিছু নাই।


যেখানে আইন বানিয়ে নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধি করা যায় সেখানে ডেমোক্রেসি কোন কাজের? কাদের জন্য? কতদিন এভাবে চলবে? সেই প্রাচিনকালে রোম আর গ্রিসে ডেমোক্রেসি ছিল, এক জুলিয়াস সিজার অয়াজ এনাফ টু কিল দ্যাট ডেমক্রেসি, এরপর হাজার হাজার বছর ধরে চলেছে রাজতন্ত্র। বর্তমান ডেমোক্রেসির বয়স কিন্তু বেশি না , কতো হবে? কয়েকশ শাল। টিকবে কি হাজারো শাল? ডেমোক্রেসিকে টিকতে হলে জাস্টিসকে টিকে থাকতে হবে। কিন্তু জাস্টিস ইজ ডায়িং।


যেহেতু বর্তমান বিশ্বে একচুয়াল জাস্টিস আর মুখ্য নয়, তাই ডেমোক্রেসি ইজ ডায়িং। আমেরিকায় ট্রাম্পের মতন রেসিস্ট বিগটকে খোদা প্রদত্ত মনে করছে বিশাল একদল মানুষ। হয়ত আবারও পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচিত হবেন। হাজার মুসলমানদের রক্তে রঞ্জিত মোদীকে পরপর দুইবার ভারত ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে, ফ্রি এন্ড ফেয়ার ইলেকশান হচ্ছে এসব। চীনের শি জিং পিং আইন করে এখন আজিবনের জন্য চীনের প্রেসিডেন্ট। এরাই এই যুগের জুলিয়াস সিজার।


আবারও বলছি কোন কিছু আইনসংগত তার মানে এই নয় যে তা ন্যায় সংগত। আইন বানায় ক্ষমতাধরেরা তাদের স্বার্থে, আইন বদলায় ক্ষমতাধরেরা তাদের স্বার্থে। ক্ষমতা যার আইন তার । আইন যার ক্ষমতা তার।


So, do not tell me about law and the legality of a matter if at the same time you can't show me that the law has justice in it. Lawful doesn't mean it is justified.

@সাবিনা আহমেদ

পঠিত : ৭৭৩ বার

মন্তব্য: ০