Alapon

ইসলামের দৃষ্টিতে নারী কি অচ্ছুত, অপবিত্র...?


গত জুম্মাবারে বইমেলায় পাঠক ও প্রকাশকদের সামনে কিছু কথা বলেছিলাম।
আমি বলেছিলাম, কিছু শরয়ী হুকুম আহকামের বাইরে, ইসলাম যে একটা সভ্যতা, ইসলাম যে একটা জীবনব্যবস্থা, সেটা পুরুষদের ভেতর যতটা তুলে ধরা সম্ভব হয়েছে মেয়েদের ভেতর ততটা তুলে ধরা সম্ভব হয় নাই। কারন আদর্শ হিসেবে যারা ইসলামকে এই শতাব্দীতে প্রচার করছেন তাদের সাথে স্বাভাবিকভাবেই মেয়েদের এক্সপোজার একেবারেই কম।

কিন্তু আমার ধারনা, একটা সভ্যতা বা জীবনব্যবস্থা হিসেবে ইসলামকে গ্রহন করতে মেয়েদের মধ্যে আগ্রহ ছেলেদের চেয়ে কোন অংশে কম নেই। কেবল তাদের মধ্যেকার অনুভুতিকে জাগিয়ে তোলা যাচ্ছে না। এর প্রধান কারন, উপমহাদেশে ইসলামকে ব্যাপকভাবে আরিয়ানাইজড ও প্রোটেস্ট্যান্টাইজড করা হয়েছে, এই কাজটা করেছে এই উপমহাদেশেরই মুসলিম সমাজের একটা অংশ। ইসলাম নারীকে কোথাও অচ্ছুৎ বা অপবিত্র বানায় নাই, কিন্তু সমাজের অংশবিশেষ, যাদের কাঠমোল্লা বলা হয়, তারা নারাইকে অচ্ছুৎ জ্ঞান করে তাদেরকে প্রথমে মসজিদ থেকে বিতাড়িত করেছে এবং তারপর বিতাড়িত করেছে সব ধরনের জমায়েত থেকে। ফলে উপমহাদেশীয় মুসলিম নারী হারিয়েছে তার আসাবিয়্যাত এবং রাজনৈতিক বোধ। আকাশ সংস্কৃতির বিস্তারের সাথে সাথে আসাবিয়্যাত হারানো মুসলিম নারীকে খুব সহজেই গ্রাস করেছে ভোগবাদ, কারন মুসলিম পুরুষ আশ্রয়ের জন্য খোদার ঘরে যেতে পারলেও নারী পারে না। সমাজের একটা অংশ যারা ইসলামের সোল এজেন্সি দাবী করে তাদের চাপের কারনে এখন অবস্থা এমন হয়ে দাড়িয়েছে যে কোন প্রকার মজলিস বা জমায়েত যেখানে ইসলাম সংশ্লিষ্ট থাকে সেখানে আর মেয়েরা যেতে পারে না।

এর মাধ্যমে এরা এমন মায়েদের প্রজন্ম তৈরি করেছে যারা বাচ্চার একটা আরবী নাম রাখা, মরা মানুষের জানাযা পড়ানো আর কবর দেয়া ছাড়া ইসলামের কোন বিষয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।

আবার, একটা বাচ্চার কাছে তার মা তার জগতের অন্তত চারভাগের তিনভাগ। আপনি যখন বাচ্চার মায়েদের ইসলাম থেকে দুরে সরিয়ে দেবেন তখন স্বাভাবিকভাবে বাচ্চারাও ইসলাম থেকে দুরে সরে যাবে।

যে দেশে মেয়েরা শপিং মল থেকে তরকারির কাচাবাজার সবখানে যাচ্ছে কিন্তু কারো কোন অসুবিধা হচ্ছে না সেদেশে ইসলামী বইমেলায় মেয়েরা গেলে যখন কেউ গেল গেল রব তোলে তখন আমাদের বুঝে নিতে হবে এরা হল আরিয়ানাইজড, ক্রিশ্চিয়ানাইজড মুসলিম। ব্রাক্ষণ্যবাদী ও খ্রিস্টবাদী মুসলমান। বিশ্বাসের দিক দিয়ে মুসলমান হলেও নির্যাস ও চর্চায় এরা ব্রাক্ষণ্যবাদ ও খ্রিস্টবাদের অনুরুপ৷ এরা নারীকে অপবিত্র মনে করে এবং নারী এদের কাছে ভোগের বস্তু ছাড়া কিছুই নয়। এই রিডাকশনালিস্ট ইবলীসেরা একজন মানুষকে তার লিঙ্গপরিচয়ের ওপর ভিত্তি করে একটা বস্তুতে নামিয়ে আনে, ফলে ভোগ ও প্রজনন ছাড়া তার আর কোন ফাংশনালিটি থাকে না।

আমরা এই থিওক্রেটিক রিডাকশনালিজমকে ধিক্কার দেই।
আমরা মনে করি মেয়েরা ইসলামী বইমেলায় আসলে সেটা ভবিষ্যতে সুন্দর পরিবার নির্মানে কাজে আসবে।
আমরা মনে করি দেশের মসজিদগুলোর ডিজাইন ধীরে ধীরে পর্যালোচনা করে নারী ও শিশুবান্ধব আদর্শ মসজিদ তৈরির দিকে এগিয়ে যেতে হবে।

কাঠমোল্লাদের কথায় প্রভাবিত হবেন না। সিনেমা হলে বা শপিং মলের বদলে আপনার স্ত্রীকে নিয়ে বইমেলায় আসুন। তাদেরকে মানসিকতায় বড় হওয়ার সুযোগ করে দিন।

@মুহাম্মাদ সজল

পঠিত : ৭৫৫ বার

মন্তব্য: ০