Alapon

আলো ঝলমলে এক নুরানি কবর...


আল্লাহর রাসূল ﷺতাঁর সচ্চরিত্র ও সুন্দর আচরণের মাধ্যমে সমাজের প্রত্যেক শ্রেণীকে সামাল দিতেন। ইসলাম ধর্মের খিদমত ও প্রচার-প্রসারের কাজ যে কেউই করুক তার একটা মর্যাদা ও অবস্থান রয়েছে। কোনো কোনো কাজকে মানুষ খুব একটা গুরুত্ব দেয় না। কিন্তু আল্লাহর রাসূল ﷺ দৃশ্যত সাধারণ বলে মনে হয়- এমন অনেক কাজকেও গুরুত্ব দিতেন এবং এমন কাজ যে করে তাকে স্মরণ রাখতেন। আসুন একটি চিত্তাকর্ষক ঘটনা পড়ি।

নববি যুগে এক কালো মুসলিম মহিলা ছিলেন। নাম খারকা। উপাধি ছিল উম্মে মিহজান(রাঃ)। মহিলাটি তেমন লেখাপড়াও জানতেন না; ধনীও ছিলেন না। তবে নিজ প্রভুকে রাজি-খুশি করার নিমিত্ত ইসলামের সেবায় ভূমিকা রাখার বাসনা রাখতেন। তিনি লক্ষ্য করলেন, অন্য কোনো কাজ তো তিনি করতে পারবেন না; তবে মসজিদ পরিস্কার করার মত একটা কাজ ছিল যা তিনি অনায়াসে করতে পারবেন।

উম্মে মিহজান(রাঃ) খেজুরের পাতা দিয়ে ঝাড়– তৈরি করেন এবং তা দিয়ে মসজিদে নববি পরিস্কার করা আরম্ভ করে দেন। যখনই দেখতেন, মসজিদে নববিতে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রয়োজন আছে, তিনি পরিস্কার করার জন্য পৌঁছে যেতেন। ওই মহিলার নিকট আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিল করার জন্য এটাও একটা পন্থা।
বাহ্যিকভাবে দেখা গেলে, এই কাজটা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। সমাজেও এধরনের কাজ যারা করে তাদেরকে বিশেষ কোনো গুরুত্ব দেয়া হয় না।

কিন্ত! রাসূলুল্লাহ ﷺএর উন্নত চরিত্র ছিল, তিনি সেই সাধারণ কাজের মহিলাটিকেও গুরুত্ব দিচ্ছেন। রাসূলুল্লাহ ﷺএর দৃষ্টিতেই ছিল ঐ মহিলা, তিনি তাকে চিনে ফেলেন। তার কাজের মূল্যায়ন করেন।
আবু হুরায়রা (রাঃ)বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন কিছুদিন তাকে মসজিদ পরিস্কার করতে দেখেননি, সাথীদের বললেন,
-যে মহিলাটি আমাদের মসজিদ পরিস্কার করত, ঝাড়ু লাগাত, সে কোথায গেল? কয়েকদিন ধরে দেখা যাচ্ছে না ?

সাহাবায়ে কেরাম উত্তরে জানালেন,
-ইয়া রাসূলুল্লাহ ﷺ! ঐ মহিলা তো ইনতিকাল করেছেন। (ইন্না নিল্লাহ ওয় ইন্না ইলাইহি রাজিউন)
সাহাবায়ে কেরাম রাসূলুল্লাহ ﷺ কে অবহিত করাটা প্রয়োজন মনে করেননি এ মনে করে যে, এক বৃদ্ধা মহিলা রাতের বেলা মৃত্যুবরণ করেছিলেন, তাই তারা নিজেরাই জানাযার নামায পড়িয়ে তাকে কবরস্থানে দাফন করে দেন।
রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন:
“তোমরা আমাকে সেই সংবাদ দাও নি কেন?”

উম্মে মিহজানের(রাঃ)সৌভাগ্য দেখুন, আল্লাহর রাসূল ﷺ বলেন:
“আমাকে বলো, তার কবর কোথায়? তাকে কোথায় দাফন করা হয়েছে?”
সাহাবায়ে কেরাম রাসূলুল্লাহ ﷺকে উম্মে মিহজানের কবর দেখিয়ে দেন।

এবার দেখুন, আল্লাহর রাসূল ﷺসাহাবায়ে কেরামকে সেই মহিলার গুরুত্ব, মান-মর্যাদা বলতে যাচ্ছেন। দুনিয়ার সবচেয়ে ব্যস্ত লোক, নবীকুল শিরোমণি, সাইয়েদুল মুরসালীন, উসওয়াতুন হাসানাহ রাসূল ﷺ তাঁর সকল ব্যস্ততা সত্ত্বেও পায়ে হেটে কবরস্থানে তাশরিফ নিয়ে যান। উম্মে মিহজানের কবরের উপর দাঁড়ান। সাহাবায়ে কেরামও সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ালেন।

ওহ! উম্মে মিহজান! তোমার কী ভাগ্য! আল্লাহর রাসূল ﷺ তোমার নামাযে জানাযা পড়ছেন। তোমার জন্য মাগফিরাতের দুআ করছেন। আল্লাহর রাসূল ﷺ পুনরায় জানাযা পড়ালেন। অত:পর সাহাবায়ে কেরামকে ইরশাদ করেন:
হে সাথীরা!
“নিঃসন্দেহে এসব কবর তার বাসিন্দাদের জন্য খুবই অন্ধকারচ্ছন্ন।”
“তাদের উপর আমার নামায পড়ার কারণে সেগুলোকে আল্লাহ তা‘আলা নিশ্চয়ই আলোকিত করে দেন।"

তথ্যসূত্রঃ
১। আল বিদায়া ওয়ন নিহায়া, ইমাম ইবনে কাসীর, ৫ম খন্ড, ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
২। আসহাবে রাসূলের জীবনকথা, ৫ম খন্ড, প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আবদুল মাবুদ, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার।

@মুহাম্মাদ সজল

পঠিত : ৬৮১ বার

মন্তব্য: ০