Alapon

অপ-প্রচারের মুকাবিলায় মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা)...


মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা) সকল শ্রেণীর মানুষের কাছেই যেতেন, মিষ্ট ভাষায় তাদেরকে সম্বোধন করতেন এবং তাদের সাথে সুন্দর আচরণ করতেন। এটিই ছিলো তাঁর কর্মনীতি, এটিই ছিলো তাঁর কর্ম-কৌশল। আর এটি ছিলো সম্পূর্ণরূপে ইতিবাচক, গঠনমূলক এবং শান্তিপূর্ণ কর্ম-কৌশল।

মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা) কোন ব্যক্তির প্রতি, কোন জেন্ডারের প্রতি, কোন বংশের প্রতি, কোন শ্রেণীর প্রতি, কোন বর্ণের প্রতি, কোন ভাষাভাষী মানুষের প্রতি এবং কোন ভূ -খণ্ডের মানুষের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করতেন না। তিনি ছিলেন সকল মানুষের কল্যাণকামী, সকলের সুহৃদ। তাঁর উপস্থাপিত বক্তব্যে ছিলো সুখ, শান্তি ও কল্যাণের বার্তা, সকল মানুষের মুক্তির নিশ্চয়তা।

যাঁরা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন তাঁর বক্তব্যের তাৎপর্য, তাঁরা তাঁর আহ্বানে সাড়া দেন। নতুন সমাজ ও সভ্যতা বিনির্মাণের স্বপ্ন নিয়ে তাঁর নেতৃত্বে সংগঠিত হন।
এটা তো নির্ভেজাল সত্য কথা যে অসংগঠিত অগণিত মানুষ কোন শক্তি নয়, কিন্তু সংগঠিত কিছু লোকও একটি শক্তি। প্রবৃত্তি পূজারী ক্ষমতাদর্পী কতোগুলো মানুষ এই সংগঠিত শক্তির উত্থানের মাঝে তাদের পতনের পূর্বাভাস দেখতে পায় এবং কোমর বেঁধে নেমে পড়ে এর বিরোধিতায়।

এই নবোত্থিত শক্তির বিরুদ্ধে বলার মতো কোন যুক্তিপূর্ণ কথা তাদের থলেতে
ছিলো না। তাই তারা ইনিয়ে-বিনিয়ে নানা কিছু প্রচার করে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা) এবং তাঁর অনুসারীদের প্রতি আম-জনতাকে বীতস্পৃহ করে তুলতে চেষ্টিত হয়।
তারা বলতে থাকে- অনেক দেবদেবীর সাথে আমাদের ভাগ্য বিজড়িত। মুহাম্মাদ কিনা আমাদেরকে একজন মাত্র ইলাহ মেনে নিতে বলছে। এটা তো কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না।
আমরা তো আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে প্রাপ্ত আকীদা বিশ্বাসের অনুসারী। মুহাম্মাদ আমাদের সেই আকীদা-বিশ্বাস নষ্ট করতে চায়। অতএব সাবধান।

মুহাম্মাদ আমাদেরকে আযাবের ভয় দেখায়। আযাবটা নিয়েই আসুক না।
মুহাম্মাদ বলে একদিন নাকি আসমান ও পৃথিবী ভেঙ্গে দেওয়া হবে। মৃত্যুর পরে আমাদেরকে জীবিত করে ওঠানো হবে। এইগুলো কোন যুক্তিগ্রাহ্য কথা নয়।
মুহাম্মাদ তো একজন মানুষ। মানুষ নবী হবে কেন? প্রয়োজন হলে আল্লাহ কোন ফেরেশতাকেই নবী করে পাঠাবেন।

মুহাম্মাদ কেমন নবী! সে খায়দায় এবং বাজারে চলাফেরা করে।
মুহাম্মাদ আসলে একজন গণক।
মুহাম্মাদ আসলে একজন কবি।
মুহাম্মাদ আসলে একজন যাদুকর।
মুহাম্মাদ আসলে জিনের আছরগ্রস্ত একজন মানুষ।
মুহাম্মাদ নিজেই কিছু কথা বানিয়ে নিয়ে আল্লাহর নামে চালাচ্ছে।

মুহাম্মাদ অন্যের কাছ থেকে কিছু কথা শিখে নিয়ে আল্লাহর কালাম বলে প্রচার করছে।
মুহাম্মাদ আল্লাহর কালাম বলে যা কিছু প্রচার করছে সেইগুলো তো অতীত কালের কিছু কিচ্ছা-কাহিনী ছাড়া আর কিছুই নয়। মুহাম্মাদ নবী হলে তো তার সাথে বিশাল ধন-ভাণ্ডার এবং সংগীরূপে ফেরেশতা থাকার কথা। মক্কা ও তায়িফের বড়ো বড়ো নেতাদেরকে বাদ দিয়ে আল্লাহ তাকে নবী বানাবেন, এটাতো স্বাভাবিক নয়।

মুহাম্মাদ নবী হলে তো তার রিসালাতে আমাদেরও অংশ থাকার কথা।
মুহাম্মাদের না আছে ধন-বল, না আছে জন-বল। তার চেয়ে আমাদের অবস্থা ঢের ভালো। তোমরা তার সাথে যাবে কোন দুঃখে! সাবধান, তোমরা তার কথায় কান দেবে না। তার দীন ভালো হলে তো আমরাই সবার আগে তা গ্রহণ করতাম। ইত্যাদি।

এইসব ঠুনকো কথাই ছিলো বেচারাদের অপ-প্রচারের সম্বল। এই কথাগুলোর পুনরাবৃত্তি করে তারা তাদের হীন উদ্দেশ্য হাছিল করতে চায়। আম-জনতাকে সত্য বিমুখ করে রাখতে চায়।

দুর্ভাগ্যের বিষয়, এরা নিজেরা তো চলার নির্র্ভুল পথ বেছে নিলোনা, আলোকিত পথে এগিয়ে আসার সুযোগ গ্রহণ করলো না, অন্যদিকে আম-জনতা যাতে এই পথে এগুতে না পারে তার জন্য প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ালো।

আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন ওহীর মাধ্যমে ইসলাম-বিদ্বেষীদের অপ-প্রচারের জওয়াব দেন-
• “সেই আল্লাহই তোমাদের রব। তাঁকে বাদ দিয়ে তোমরা যাদেরকে ডাক তারা একটি তৃণ খণ্ডেরও মালিক নয়। তারা তোমাদের ডাক শুনতে পায় না। তোমাদের ডাকে সাড়া দিতে পারে না।” [ফাতির]

“তাদেরকে বল : তোমরা কি চোখ খুলে দেখেছো, তোমরা এক আল্লাহকে ছাড়া যাদেরকে ডাক তারা আসলে কারা? আমাকে খানিকটা দেখাওনা ওরা পৃথিবীতে কী সৃষ্টি করেছে কিংবা আসমানের সৃষ্টি ও ব্যবস্থাপনায় তাদের কী অংশ রয়েছে?”
[আল আহকাফ]

“আল্লাহ পাক পবিত্র, বহু উচ্চ মহান সেই শিরক থেকে যা এই লোকেরা করে থাকে।”

[আল কাছাছ]

“তোমাদের ইলাহ তো একজনই যিনি আসমান ও পৃথিবীর এবং এই দুইয়ের মধ্যবর্তী সব কিছুর, আর সকল উদয় দিগন্তের রব।”

[আছ্ছা-ফফাত]
“আল্লাহ প্রকৃত সম্রাট। তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। তিনিই মর্যাদাবান আরশের মালিক। যেই কেউ আল্লাহর সাথে অপর কোন মা'বুদকে ডাকে- যার সমর্থনে কোন দলীল নেই- তার হিসাব তার রবের কাছে রয়েছে। কাফিরগণ কখনো কল্যাণ লাভ করতে পারে না।”

[আল মুমিনূন]

“এই লোকদেরকে যখন সুস্পষ্ট আয়াত শুনানো হয় তখন তারা বলে : এই ব্যক্তি তো তোমাদের সেই সব মা'বুদের প্রতি বীতশ্রদ্ধ করে তুলতে চায় যাদের উপাসনা তোমাদের বাপ-দাদারা করেছে।”

[সাবা]

“তারা বলে : আমরা তো মেনে চলবো সেই জিনিস যার ওপর আমাদের বাপ দাদাদেরকে দেখেছি। তারা কি সেই জিনিসের অনুসরণ করবে শাইতান তাদেরকে জ্বলন্ত আগুনের দিকে ডাকলেও?

[লোকমান]

“এই লোকেরা অবিলম্বে আযাব আনার জন্য তোমার নিকট দাবি জানাচ্ছে। সেই জন্য যদি একটি সময় নির্দিষ্ট না থাকতো তবে এদ্দিনে তাদের ওপর আযাব এসেই পড়তো।”

[আল ‘আনকাবুত]

“ফায়সালার দিন পূর্ব-নির্দিষ্ট না থাকলে এদ্দিনে তাদের ব্যাপারটি চূড়ান্ত করে দেওয়া হতো। অবশ্যই এই যালিমদের জন্য পীড়াদায়ক আযাব নির্ধারিত রয়েছে।”

[আশ্ শূরা]

“এইসব যালিম যখন আযাব দেখতে পাবে তখন বলবে ” ফিরে যাবার কোন পথ আছে কি? আর তোমরা দেখবে, এদেরকে যখন জাহান্নামের সামনে আনা হবে তখন লাঞ্ছনার আঘাতে তারা অবনত ও গোপন দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাচ্ছে।”

[আশ্ শূরা]

“এই লোকেরা বলে : কিয়ামাতের সময়টি কখন আসবে? তাদেরকে বলে দাও : এর জ্ঞান একমাত্র আমার রবের কাছে আছে। এটাকে তিনি তাঁর নির্দিষ্ট সময়ে প্রকাশ করবেন।”

[আল আ‘রাফ]

“মানুষ বলে : আমরা যখন মরে যাবো তখন কি আমাদেরকে পুনর্জীবিত করা হবে? তাদের কি এই কথা মনে পড়ে না যে আমি যখন তাদেরকে সৃষ্টি করি তখন তারা কিছুই ছিলো না।”

[মারইয়াম]

“এই লোকেরা বলে : ‘জীবন শুধু দুনিয়ার জীবন। আমাদের জীবন ও মৃত্যু সবই তো এখানে। আর কালের আবর্তন ছাড়া আমাদেরকে আর কিছুই ধ্বংস করে না।' আসলে এই ব্যাপারে তাদের কোন ইলম নেই। নিছক আন্দাজ অনুমানের ভিত্তিতে তারা এইসব বলছে।”

[আল জাসীয়া]
“এই সব লোক তাদের রবের সাথে সাক্ষাতের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করে। সাবধান, তিনি প্রত্যেকটি জিনিস পরিবেষ্টনকারী।”

[হামীম আস সাজদাহ]

“এই লোকদেরকে বলে দাও : আল্লাহই তোমাদেরকে জীবন দেন, তিনিই মৃত্যু দেন। তিনিই কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে একত্রিত করবেন সন্দেহাতীত যেই দিনের আগমন।”

[আল জাসীয়া]

“আল্লাহর এই রাহমাতের প্রভাব লক্ষ্য কর: মরে পড়ে থাকা যমীনকে তিনি কিভাবে জীবন্ত করে তোলেন। অবশ্যই তিনি মৃতদেরকে জীবনদানকারী এবং সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাবান।”

[আর রূম]

“তোমাদের রবের কথা মেনে নাও সেই দিন আসার পূর্বে যেই দিনটিকে ফিরিয়ে দেবার ব্যবস্থা নেই। সেই দিন তোমাদের জন্য কোন আশ্রয় জুটবে না। তোমাদের অবস্থা পরিবর্তনের চেষ্টাকারীও কেউ হবে না।"

[আশ্ শূরা]

“আমি তোমার পূর্বেও যখনি রাসূল পাঠিয়েছি তো মানুষই পাঠিয়েছি।”

[আন নাহল]

“তোমার পূর্বে আমি যেইসব রাসূল পাঠিয়েছি তারা সকলেই মানুষ ছিলো। জনপদের অধিবাসীই ছিলো।”

[ইউসূফ]

“তাদেরকে বলে দাও : আমি তোমাদের মতোই একজন মানুষ। আমার প্রতি ওহী আসে যাতে বলা হয়েছে, তোমাদের ইলাহ একজন মাত্র। অতএব তোমরা সোজা তাঁর মুখী হও। তাঁর নিকট ক্ষমা চাও।”

[হা-মীম আস সাজদাহ]

‘বলে দাও : আমি তো তোমাদের মতোই একজন মানুষ। আমার নিকট ওহী পাঠানো হয় যে তোমাদের ইলাহ এক ও অদ্বিতীয়। অতএব যেই ব্যক্তি নিজের রবের সাক্ষাত প্রত্যাশী সে যেন নেক আমল করে এবং তার রবের ইবাদাতে আর কাউকে শরীক না করে।”

[আল কাহফ]

“তোমার আগে আমি যাদেরকে রাসূল করে পাঠিয়েছি তারা সবাই খাওয়া-দাওয়া করতো এবং বাজারে চলাফেরা করতো।”

[আল ফুরকান]

“তুমি উপদেশ দিতে থাক। তোমার রবের অনুগ্রহে তুমি গণক নও, জিনের আছরগ্রস্তও নও।”
[আত তুর]

“আমি তাকে কবিত্ব শিখাইনি। না কবিত্ব তার পক্ষে শোভনীয় হতে পারে। এ তো নসীহাত ও পাঠযোগ্য কিতাব।”

[ইয়াসীন]

“যেই ব্যক্তি বলে এ তো যাদু যা পূর্ব থেকে চলে আসা। এতো মানুষের কালাম। খুব শিগগির আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবো।”

[আল মুদ্দাসসির]

“কাফিরদের সামনে যখন সত্য আসলো, তারা বললো : এ তো স্পষ্ট যাদু।... (অতীতে) তারা যখন আমার রাসূলদেরকে মিথ্যা মনে করলো তখন দেখ কেমন কঠিন ছিলো আমার আযাব।” [সাবা : ৪৪-৪৫]

“এরা বলে নাকি, এই ব্যক্তি আল কুরআন রচনা করে নিয়েছে? আসল কথা এরা ঈমান আনতে চায় না। এরা যদি সত্যবাদী হয়ে থাকে এই মর্যাদার একটি কালাম বানিয়ে আনুক না।” [আত্ তূর]

“এরা কি বলে যে নবী নিজে তা রচনা করেছে? বলে দাও : তোমরা যদি সত্যবাদী হয়ে থাক এর মতো একটি সূরা রচনা করে নিয়ে আস। আর এক আল্লাহকে ছাড়া আর যার যার সাহায্য নিতে চাও, নাও।” [ইউনুস]

“তুমি এর পূর্বে কোন কিতাব পড়তে না, নিজের হাতে কিছু লিখতে না। যদি তা হতো তবে বাতিলপন্থীরা সন্দেহে পড়ে যেতে পারতো। আসলে এইগুলো নিদর্শন সেই লোকদের জন্য যাদেরকে জ্ঞানদান করা হয়েছে। আমার আয়াতগুলো যালিম ছাড়া আর কেউ অস্বীকার করে না।” [আল আনকাবুত]

“এটি রাব্বুল ‘আলামীনের নিকট থেকে নাযিল হয়েছে।” [আল হাক্কাহ]
“এই কিতাব মহাপরাক্রমশালী, মহাবিজ্ঞ আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিল হয়েছে।”
[আয্ যুমার]

“আমি গোটা মানবগোষ্ঠীর জন্যই এই সত্য জ্ঞান সম্বলিত কিতাব তোমার নিকট নাযিল করেছি। এখন যেই লোক সোজা সঠিক পথ গ্রহণ করবে সে তা নিজের জন্যই করবে। আর যেই লোক বিভ্রান্ত হবে বিভ্রান্ত হওয়ার পরিণাম তাকেই ভোগ করতে হবে।”
[আয্ যুমার]

এরা বলে ‘এক ব্যক্তি তাকে শিখিয়ে দিয়ে থাকে।' অথচ তারা যেই লোকটির কথা বলে তার ভাষা আরবী নয়। আর এটি তো বিশুদ্ধ আরবী ভাষা।” [আন্ নাহল]
“এরা বলে : ‘এ তো অতীত কালের কিছ্ছা কাহিনী।' কক্ষনো নয়। তাদের দিলে রয়েছে পাপের মরিচা। [আল মুতাফফিফীন]

“অতীত কালের কিছ্ছা-কাহিনীতে জ্ঞান-বুদ্ধিসম্পন্ন লোকদের জন্য রয়েছে অনেক শিক্ষা। আল-কুরআনে যা বলা হচ্ছে তা মনগড়া বা কৃত্রিম কথাবার্তা নয় বরং যেইসব কিতাব পূর্বে এসেছে সেইগুলোর সত্যতার ঘোষণা এবং প্রত্যেক বিষয়ের বিস্তারিত বিবরণ। আর মুমিনদের জন্য হিদায়াত ও রাহমাত।” [ইউসুফ]

“লোকেরা বলে : এই ব্যক্তির প্রতি কোন ধন-ভাণ্ডার নাযিল হলো না কেন? অথবা বলে : এর সাথে কোন ফেরেশতা আসলো না কেন? আসলে তুমি তো শুধু সতর্ককারী। বাকি সব বিষয়ের দায়িত্বশীল তো আল্লাহ।” [হূদ]

“তারা বলে : এই নবীর (সংগীরূপে) ফেরেশতা নাযিল হয় না কেন? আমি যদি ফেরেশতাই নাযিল করতাম তাহলে যাবতীয় বিষয়ের চূড়ান্ত ফায়সালাও হয়ে যেতো।” তাদেরকে অবকাশ দেওয়া হতো না।” [আল আন'আম]

“তারা বলে : এই আল কুরআন উভয় শহরের [মাক্কা ও তায়িফ] বড়ো লোকদের মধ্য হতে কারো প্রতি নাযিল হলো না কেন? আল্লাহর রাহমাত বণ্টনের কাজ কি এরা করে? [আয্ যুখরুফ]

“তারা বলে : ‘আমরা মানবো না যতোক্ষণ না আল্লাহর রাসূলদেরকে যা দেয়া হয়েছে তা সরাসরি আমাদেরকে দেওয়া হয়।' ‘আল্লাহ তাঁর রিসালাতের দায়িত্ব কার দ্বারা পালন করাবেন এবং কিভাবে করাবেন তা তিনিই সবচে' বেশি ভালো জানেন। সেইদিন বেশী দূরে নয় যেইদিন এই অপরাধীরা নিজেদের প্রতারণা ও ষড়যন্ত্রের শাস্তিস্বরূপ আল্লাহর নিকট লাঞ্ছনা ও কঠিন আযাবের সম্মুখীন হবে।” [আল আন'আম]
“তোমাদের অর্থ-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তোমাদেরকে আমার নিকটবর্তী করে দেবেনা।” [সাবা]

“এই অর্থ-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি শুধু দুনিয়ার জীবনের সাময়িক চাকচিক্য। আসলে তো টিকে থাকা নেক আমলই তোমার রবের নিকট পরিণামের দৃষ্টিতে অতি উত্তম।”
[আল কাহফ]

“তোমাদেরকে যা কিছু দেওয়া হয়েছে তা তো দুনিয়ার কয়েক দিনের জীবন সামগ্রী মাত্র। আর যা কিছু আল্লাহর নিকট রয়েছে তা যেমনি উত্তম, তেমনি স্থায়ীও।”
[আশ্ শূরা]

এইগুলো হচ্ছে ইসলাম-বিরোধীদের অপ-প্রচারের কিছু জওয়াব, যা আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন তাঁর নবীকে শিখিয়েছেন।

লক্ষ্য করার বিষয়, এই জওয়াবগুলো খুবই সহজ-সরল। খুবই বোধগম্য। এইগুলোতে কোন জটিলতা নেই। দুর্বোধ্যতা নেই। কূটতর্ক নেই। সহজবোধ্য যুক্তিসহকারে তুলে ধরা হয়েছে সত্যকে।

আরো লক্ষ্য করার বিষয়, মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা) আল্লাহর শেখানো ভাষায় বিরুদ্ধবাদীদের অপ-প্রচারের জওয়াব দিচ্ছিলেন, কিন্তু ইতিবাচকভাবে ইসলামের মৌলিক শিক্ষাগুলো উপস্থাপনা করা বাদ দিয়ে নয়। মানুষের চিন্তার বিশুদ্ধি সাধনের জন্য ইসলামের মৌলিক শিক্ষাগুলোর সাথে তাদের সম্পৃক্তি ঘটানোর কোন বিকল্প নেই। কাজেই মৌলিক শিক্ষাগুলোও তিনি বারবার তাদের সামনে তুলে ধরছিলেন, অত্যন্ত স্পষ্টভাবে ও স্বচ্ছভাবে। বিরুদ্ধবাদীদের সাথে কূটতর্কে জড়িয়ে পড়ে তিনি তাঁর মূল্যবান সময়ের অপচয় করতে যাননি কখনো।

উল্লেখ্য যে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর (সা) বিরোধিতা করে ইসলাম-বিদ্বেষীরা মানুষের মনে ইসলাম সম্পর্কে জানার আগ্রহ সৃষ্টিতে অবদান রেখেছে। তাদের বিরোধিতার মাত্রা যতো বেড়েছে, মানুষের মনে ইসলাম সম্পর্কে জানার আগ্রহও ততো বেড়েছে। আর তাদের এই কৌতুহল নিবারণের জন্য পাশেই তো ছিলেন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা) এবং
তাঁর সাথীগণ।

আমরা দেখি, বিরুদ্ধবাদীরা নানা ধরনের উস্কানিমূলক কথা বলেছে, আচরণ করেছে। কিন্তু তারা মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর (সা) ধৈর্যে ফাটল ধরাতে পারেনি, তাঁকে হঠকারী ভূমিকায় নামাতে পারেনি, তাঁকে তাদের ফাঁদে ফেলতে পারেনি এবং তাঁর অনুসৃত কর্মনীতি ও কর্মকৌশল থেকে এক চুল পরিমাণও সরাতে পারেনি।

আমরা আরো দেখি, মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা) গভীর রাতে আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীনের একান্ত সান্নিধ্যে সময় কাটাচ্ছেন, আর দিনের বেলা সময় কাটাচ্ছেন গণ-সংযোগে।
মোট কথা, ছবর, ছালাত এবং দা'ওয়াত - এই তিনটিকে আঁকড়ে ধরে তিনি ইসলাম-বিদ্বেষীদের অপ-প্রচারের মুকাবিলা করেছেন। অপ-প্রচারের কী ভয়ানক ঝড়ই না সৃষ্টি করেছিলো ইসলামের দুশমনেরা। কিন্তু মাত্র তেরোটি বছরের মাথায় বৈরি শক্তির অপ-প্রচার সৃষ্ট ঝড় স্তিমিত হয়ে পড়ে এভং ঝড়ের রাতের শেষে উদিত সূর্যের সোনালী কিরণের মতো চার দিকে ছড়িয়ে পড়ে ইসলামের অতুজ্জ্বল আলো।

-এ. কে. এম. নাজির আহমদ

পঠিত : ৫৫২ বার

মন্তব্য: ০