Alapon

সৃজিত-মিথিলা টাইপের বিয়ে গুলোকে কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন?


ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ে কে আমরা তিন ভাগে ভাগ করতে পারি। (ক) ইসলাম সম্মত তথা হালাল বিয়ে (খ) হারাম বিয়ে (গ) অন্যান্য ধর্ম ও আদর্শের বিয়ে।

যিনি ইসলাম মানেন, ইসলামী বিধিনিষেধ মানেন তথা যিনি সর্বাঙ্গীণ মুসলমান তাঁর বিয়ের ক্ষেত্রে আমরা প্রশ্ন করবো বিয়েটা হালাল হল কি না। আর যিনি সেক্যুলার কিংবা অন্য ধর্মের বা আদর্শের অনুসরণ করেন তাঁর বিয়ের ক্ষেত্রে আমাদের প্রশ্ন হবে বিয়েটা লিগ্যাল হল কি না। অর্থাৎ এখানে ব্যক্তির বিশ্বাস ও জীবনাদর্শ ঠিক করে দিবে যে তাঁর বিয়ে সহ অন্যান্য কার্যকলাপ আমরা কিসের নিক্তিতে মাপবো।

বাকি কথা গুলো বলার আগে বিষয়ের ডেফিনিশন ঠিক করা জরুরী। সর্বাঙ্গীণ মুসলিম এবং সেক্যুলার- এই দুইটি বিষয়ের সুস্পষ্ট সংজ্ঞা না দিলে পরের আলোচনা বুঝতে ব্যাপক বেগ পেতে হবে। সর্বাঙ্গীণ তথা নির্ভেজাল মুসলিম তিনি যিনি জীবনাদর্শের ক্ষেত্রে অন্য কোনও মানব রচিত আদর্শকে গ্রহণ করেন না। আর সেক্যুলার তিনি যিনি আদর্শ হিসেবে সেক্যুলারিজমকে মনে প্রাণে মানেন। এ সেক্যুলাররা এবং অন্য সকল ধর্ম এমনকি নাস্তিকরা 'গ' ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত। তো, সেক্যুলারিজমকে বুঝতে হলে এটাও বুঝা জরুরী যে, অনেক মুসলিমও সেক্যুলার আদর্শে বিশ্বাস করেন। এই সেক্যুলার মুসলিমদের কাছে ইসলাম জীবনের বৃহদাংশে ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে বিবেচিত। হাতেগোনা কিছু রিচ্যুয়ালের বাইরে ইসলামের অধিকাংশ নীতি আদর্শকে (বিশেষত সামাজিক, লিগ্যাল, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক জীবনাচরণের ক্ষেত্রে) তারা সেকেলে, অমানবিক, সংকীর্ণ, মৌলবাদী, রিগ্রেসিভ (পশ্চাদপদ) হিসেবে জ্ঞান করেন। এরা হচ্ছেন ধর্মীয়-সামাজিক বাস্তবতার কারণে মুসলিম। মুসলিম দেশ গুলোতে দীর্ঘদিন ধরে ইসলামের প্রাকটিস থাকায়, মুসলমানদের সংখ্যাধিক্য থাকায় এবং ইসলাম সম্পর্কে মানুষের মনে ব্যাপক দরদ থাকায় একটা ধর্মীয়-সামাজিক বাস্তবতার সৃষ্টি হয়। এই ধর্মীয়-সামাজিক বাস্তবতা মুসলিম দেশ গুলোর সামাজিক, লিগ্যাল, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ও ডিসাইসিভ রোল প্লে করে। ফলে জীবনের অধিকাংশ আঙ্গিকে ইসলামকে রিজেক্ট করে দেয়া এসব সেক্যুলার মুসলিমরা নিজেদের মুসলিম নাম ও মুসলমানিত্বের দাবীকে অস্বীকার করেন না। তাদেরকে যদি সেরকম কোনও সুযোগ ও পরিবেশ দেয়া হয় তাহলে সেক্যুলার মুসলিমদের ৯০ শতাংশই ধীরে ধীরে ইসলাম ত্যাগ করবেন।

উপরের কথাগুলো যদি বুঝে থাকেন তাহলে আমরা একটা সিদ্ধান্তে আসতে পারি। সে সিদ্ধান্ত টা হল- সেক্যুলার মুসলিমদেরকে আমরা স্রেফ সেক্যুলার হিসেবেই ক্যাটাগরাইজ করবো। আমরা তাদেরকে কাফির বা মুশরিক বলবো না। কারণ তারা নিজ থেকে এটা দাবী করেন নাই। কিন্তু ইসলামী আইন ও নীতির আলোকে বিচার করতে গেলে তাদেরকে মুসলিম হিসেবে ক্যাটাগরাইজ না করে সেক্যুলার হিসেবে ক্যাটাগরাইজ করা বাঞ্ছনীয়। তা না হলে আমাদের সমূদয় সিদ্ধান্ত, বিশ্লেষণ ও বিচার বিবেচনা অকার্যকর হিসেবে পর্যবসিত হবে। তাহলে বুঝা গেল, অনেক রিচ্যুয়াল কালে ভদ্রে পালন করা সত্বেও একটা বড় সংখ্যক মুসলিম (নাম মাত্র মুসলিম অথবা সেক্যুলার মুসলিম) এখানে 'গ' ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত।

বিষয়টাকে সিস্টেমেটিকলি এবং মেথডলজিক্যালি সঠিক ভাবে বিবেচনা না করার কারণে সৃজিত ও মিথিলার বিয়ের পক্ষ ও বিপক্ষ নিয়ে এ পর্যন্ত যে কয়জন কথা বলেছেন তাঁদের প্রায় শতভাগ মানুষের কথা বার্তাগুলো ভুল ধারণা, স্টেরিও-টাইপ, প্রেজুডিস ও ইন্টারফেয়ারেন্স হিসেবে পর্যবসিত হয়েছে। ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকেও ঐসব কথা বার্তা লাহওয়াল হাদিস হিসেবে গণ্য হবে বলে আমি মনে করি। সৃজিত ও মিথিলার বিয়েকে আমরা ইসলামের দৃষ্টিকোণ বিচার করা মানে তাদেরকে নির্ভেজাল ও সর্বাঙ্গীণ মুসলমান হিসেবে সার্টিফিকেট দেয়া- অথচ তারা সেটা নন। তারা বুঝে শুনে ইসলামের অধিকাংশ নীতি-আদর্শ বর্জন করে সেক্যুলারিজমে ইমান এনেছেন। সুতরাং তারা না হিন্দু আর না মুসলিম। ফলে তাঁদের বিয়েকে আমরা দেশের প্রচলিত আইনের ভিত্তিতে বিবেচনা করবো। আর দেশের প্রচলিত আইনের ভিত্তিতে সৃজিত ও মিথিলার বিয়েতে কোনও সমস্যা নেই। এটি একটি বৈধ বিয়ে। এটা নিয়ে এতো মাথা ঘামানো, মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য করা এবং বিষদগার আর ঘৃণা ছড়ানো খুবই বাজে কাজ। মুসলমানদের উচিৎ নয় এসব নিয়ে পড়ে থাকা। এটা একটা ইউজলেস বিষয় ততক্ষণ না আপনি এটাকে বুদ্ধিবৃত্তিক ও জ্ঞানভিত্তিক উপায়ে এড্রেস করবেন।

একজন মুসলিমের জন্য (আবারও বলছি সেক্যুলারদের জন্য নয়) আহলে কিতাবের বাইরে কারও সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া জায়েজ নেই। মানে, আহলে কিতাবের নারীদের বিয়ে করা মুসলমানদের জন্য বৈধ বটে; কিন্তু আহলে কিতাবের অন্তর্ভুক্ত কোনও অমুসলিম পুরুষের সঙ্গে মুসলিম নারীদের বিয়ে বৈধ নয়। পাশাপাশি, আহলে কিতাব (খৃষ্টান ও ইয়াহুদি) ছাড়া অন্য ধর্মের অনুসারীদের সঙ্গে কোনও ধরনের বৈবাহিক সম্পর্ক বৈধ নয়। এই নিয়মটি শুধুমাত্র মুসলমানদের জন্য, সেক্যুলারদের জন্য নয়। সুতরাং সৃজিত ও মিথিলার ক্ষেত্রে এই বিধান প্রযোজ্য হবে না।

পাদটিকাঃ যেই লিগ্যাল বেসিসে মুসলিম ছেলেরা আহলে কিতাবের মেয়েদেরকে বিয়ে করতে পারবে সেই লিগ্যাল বেসিসের ভিত্তিতে বিশ্লেষণ করলে মুসলিম ছেলেরা সেক্যুলার মেয়েদেরকে বিয়ে করতে পারবে কিনা সেই আলোচনায় আরও নতুন কিছু দিক উঠে আসবে। কিন্তু সেটাও সৃজিত-মিথিলার ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক নয়।

ডিসক্লেইমারঃ এ বিষয়ে কথা বলতে আমি বিরক্ত বোধ করি বলে এতদিন এ নিয়ে কিছুই লিখিনি। কিন্তু এই কেইসটির আলোকে ওয়ার্ল্ডভিউ (জীবন দর্শন) ভিত্তিক গুরুত্বপূর্ন কিছু দৃষ্টিভঙ্গি দেয়ার আছে বলেই লিখলাম।

@ Jabal At Tariq

পঠিত : ৮৪১ বার

মন্তব্য: ০