Alapon

মিজানুর রহমান আজহারী এবং কিছু কথা...


দেশের বড় একটি কওমি মাদ্রাসার মুহতামিম বয়ান করছিলেন। এরই মধ্যে মঞ্চে এলেন মিজানুর রহমান আজহারী। হুজুরের পায়ের কাছে বসলেন। হুজুর বয়ান শেষেই চলে যাচ্ছিলেন। মিজানুর রহমান আজহারী হুজুরের পেছনে পেছনে গিয়ে অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে হুজুরের সঙ্গে সালাম-মুসাফাহা করলেন। সেদিন তার বিনয় দেখে তার প্রতি অনুরাগ বেড়ে গিয়েছিল। তিনি এতটা জনপ্রিয় হয়ে ওঠার আগে ও জনপ্রিয় হওয়ার পরেও বেশ মাহফিলে একই মঞ্চে বক্তব্য রাখার সুযোগ আমার হয়েছে। যোগ্য ও বিনয়ী মানুষ।

সমকালীন বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় যুবক আলোচক মিজানুর রহমান আজহারী ভাই। দেশের মাদ্রাসা শিক্ষা শেষে মিশরের বিশ্ববিখ্যাত আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে মালয়েশিয়ার ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক উইনিভার্সিটিতে পিএইচডি করছেন। আমি আল্লামা মামুনুল হক, হাসান জামীল ও মুফতি ফয়জুল করীম সাহেবদের পর তাকেও ভালোবাসি। অনেক ভালোবাসি। মিজানুর রহমান আজহারী বেঁচে থাকুন হাজার বছর।

কাজ করলে ভুল হয়। যে কাজ করে না তার ভুল নেই। মানুষ হিসেবে মিজান আজহারী ভাই ভুলের উর্ধ্বে নন। কয়েকটি বক্তব্য সিক্সপ্যাকসহ বিশেষ কিছু শব্দ প্রয়োগ আমার পছন্দ হয়নি। ওয়াজে ধর্মীয় পরিভাষা, ইসলামী ভাবধারার শব্দগুলো ব্যবহার করা উচিৎ। তবে দুএকটা শব্দ প্রয়োগের পর এ ব্যাপারে ভুল স্বীকারের পরও তাঁকে আমরা ডিনাই করব, ব্যাপারটা বোধহয় এত জটিল না। মিজানুর রহমান আজহারী বাংলাদেশের সম্পদ। ৪০ বছরের কম বয়সী মানুষদের মধ্যে দেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় মানুষ। এমনকি দেশের কোনো তারকা অভিনেতাও বোধহয় এত জনপ্রিয় হতে পারেনি।

তিনি ইংরেজি বলেন এটা কি তার দোষ? আমরা বয়ানের ভেতর ফার্সি যদি বলতে পারি, তাহলে তার ইংরেজি কোটেশন দিতে সমস্যা কোথায়। তিনি ইংরেজি একটু বেশিই বলেন। এটাও আমার কাছে অপছন্দের নয়। তার বক্তব্যের সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দেয়। তার বক্তব্য নুসুস ও কম থাকে না। আমাদের মুরব্বিদের ছাড়া বাকি আমাদের বড় বড় মাদ্রাসায় দাওয়াত পায় এমন অনেক বক্তাই আছেন যারা মিজানুর রহমান আজহারির অর্ধেকও কোরআন-হাদিস বলেন না।

বিশেষ কোনো ঘরানা দিয়ে তাকে মূল্যায়ন করার পক্ষে আমি না। কওমি, দেওবন্দি, আহলে হাদিস, জামাতি, কিয়ামী কি-না এগুলো দেখে তাকে মূল্যায়ন না করে তিনি কোরআন-হাদিসের ওপর আছেন কি-না তা দিয়ে তাকে মূল্যায়ন করা উচিত।

আমাদের মুরব্বিদের প্রতি আমার মতো নগন্য ও ছোট মানুষের একটি বিনীত অনুরোধ, আমার ক্ষুদ্র দৃষ্টিতে মনে হয় মিজানুর রহমান আজহারী আমাদের সম্পদ। আমরা তাঁকে কাছে রাখি। যুবকদের মধ্যে জনপ্রিয়তায় তিনি শীর্ষে। এখন তাঁকে পরামর্শ দিয়ে, কখনো কোনো ভুল করলে দূরে ঠেলে না দিয়ে, আমাদের বিপরীতে তাঁকে দাঁড় না করিয়ে আদর করে কাছে ডেকে ভুলগুলো ধরিয়ে দিলেই আশা করি ইসলামের বেশি ফায়দা হবে না।

তার ব্যাপারে মাজারব্যবসায়ীদের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ করছি। সম্প্রতি প্রশাসনিক কারণে নয়, বরং মাজারপন্থীদের বিরোধিতার ফলে তার কিছু প্রোগ্রাম বন্ধ হয়েছে। 'ঈদে মিলাদুন্নবী'র মতো যেসব কারণে ভন্ডরা মিজান আজহারীর মাজারপন্থীরা বিরোধিতা করছে সে কারণ কিন্তু আমাদের মধ্যেও আছে। এসব কারণে মিজান আজহারীর বিরোধিতা করা মানে আল্লামা নুরুল ইসলাম ওলিপুরী সাহেবেরও বিরোধিতা করা। কারণ, ঈদে মিলাদুন্নবী ও বিভিন্ন বিদআত প্রশ্নে ওলীপুরী ও আজহারীর অবস্থান একই।

প্রিয় ও শ্রদ্ধেয় এ মানুষটির প্রতি অনুরোধ, ফিকহী বিতর্কিত মাসায়েল ও ভাষা প্রয়োগের ক্ষেত্রে একটু সতর্কতা অবলম্বন করবেন। বিশেষ কোনো দল বা ঘরানার এজেন্ট না হয়ে আপনি হোন ইসলামের! সবার! ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) স্যারের মতো। আল্লাহ কবুল করুন!

সংগৃহিত...

পঠিত : ১৩৩২ বার

মন্তব্য: ০