Alapon

হতাশা দূর করার ওষুধ এবং কিছু কথা...


আমাদের মাঝে অধিকাংশ মানুষকেই এই কথাটা বলতে শুনি যে,ডিপ্রেশন,অস্থিরতা,মন খারাপ,একাকিত্ব এবং অসম্পূর্ণতার কোন ঔষধ দুনিয়াতে নেই বা আবিষ্কৃত হয়নি।

আসলেই কি এই রোগ গুলোর কোন ঔষধ নেই?
নাকি ঔষধ আছে ঠিকই কিন্ত,আমরা এই রোগ গুলো থেকে আরোগ্য লাভের জন্য অন্য রোগের ঔষধ সেবন করছি??
আসুন একটু বিবেচনা করা যাক!!

মনে করেন,আপনার রোগ হচ্ছে জ্বর।এখন এই জ্বর থেকে মুক্তি লাভের জন্য আপনি যদি গ্যাস্ট্রিক এর ঔষধ সেবন করেন,তাহলে কি আপনি সুস্থতার আশা করতে পারবেন??
বা আপনার রোগ হচ্ছে হার্টে সমস্যা,এখন আপনি যদি হার্টের চিকিৎসা না করে,জন্ডিস এর চিকিৎসা করেন,তাহলে কি আপনার হার্টের সমস্যার সমাধান হবে??
কখনওই না।বরং সমস্যা আরো বেড়ে যাবে।

উপরের এই উদাহরণ গুলো এই জন্য দিলাম যে,আপনার রোগ হচ্ছে একটা আর আপনি এই রোগ থেকে আরোগ্য লাভের জন্য ঔষধ ব্যবহার করছেন আরেকটা।

যেমন:
আপনার রোগ হচ্ছে,আপনি হতাশায়,মন খারাপে,একাকিত্বে ও অস্থিরতায় ভোগছেন।আর আপনি এই রোগের ঔষধ হিসাবে ব্যবহার করছেন।

গান,মুভি,ট্রাভেলিং,আড্ডা বা কোন খারাপ নেশা উপভোগ করেন,যাতে করে এই অন্তরের রোগ বা দুর্বলতা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।কিন্ত আপনি সারাদিন এই গুলো নিয়ে পরে থাকেন না,তাই আবার আপনি অস্থিরতায় ভোগেন।
চারদিক অন্ধকার লাগে।কোন কিছুইতেই মন বসেনা।
তাই ভাবেন আপনার এই প্রবলেম গুলোর কোন মেডিসিনই দুনিয়াতে নেই।শুধু শারীরিক রোগের মেডিসিনই দুনিয়াতে আছে বা আবিষ্কার হয়েছে।

কিন্ত আপনার ধারণা ভুল।আমি আপনাকে চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারবো,আপনি আপনার এই অন্তর রোগ গুলো থেকে আরোগ্য লাভের জন্য সারাজীবন ও যদি এই ঔষধ গুলো সেবন করেন,গান বাজনা,মুভি দেখা,আড্ডা দেওয়া বা খারাপ নেশা করা,তাহলে সারাজীবনই আপনি হতাশায়,অস্থিরতায়,একাকিত্বে বা মন খারাপে ভোগবেন।কেননা আপনি আপনার প্রবলেম একটা আর মেডিসিন ব্যবহার করেছেন আরেকটা প্রবলেম এর।

আসুন জেনে নেই তাহলে আপনি কি করলে বা কি মেডিসিন ব্যবহার করলে এই প্রবলেম গুলো থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

ইমাম ইবনুল কায়িয়ুম বলেছেন:
"প্রত্যেক অন্তরেই রয়েছে,অস্থিরতা যা আল্লাহর আছে ফিরে গেলেই কাটানো সম্ভব। প্রত্যেক অন্তরেই রয়েছে শূন্যতা যা কেবল আল্লাহর কাছে ফিরে গেলেই কাটানো সম্ভব।প্রত্যেক অন্তরেই রয়েছে হতাশা,ভয় এবং উৎকন্ঠা যা কেবল আল্লাহর নিকট প্রত্যাবর্তন এর মাধ্যমেই কাটানো সম্ভব।"

ড.বিল্লাল ফিলিপ্স বলেছেন:
"যতক্ষন আপনি আল্লাহর উপর নির্ভর করবেন,ততোক্ষণ আপনার কষ্টের মুহূর্তগুলো আপনাকে হতাশার দিকে নিয়ে যাবেনা।"

আল্লাহ সুবহানাহু তা'য়ালা কোরআন মাজিদে বলেছেন:

"জেনে রাখো আল্লাহর স্মরণেই অন্তর প্রশান্তি লাভ করে"
সূরা:আর রাদ:২৮

আপনি একজন মুসলিম হলে অবশ্যই এই আয়াতটাই আপনার জন্য যথেষ্ট যে,আপনার রব বলছে শুধু ওনার স্মরণেই অন্তর প্রশান্ত হবে।ওনার কাছে প্রত্যাবর্তন এর মাধ্যমেই আপনি পূর্ণতা লাভ করবেন।দুনিয়াতে এমন কোন বস্তু নেই যে আপনার অন্তরে প্রশান্তি এনে আপনাকে পূর্ণতা দাণ করবে।শুধু মাত্র আপনার প্রেমময় পালনকর্তাই পারে আপনার অন্তরে প্রশান্তি এনে দিতে।এবং আপনার হতাশা ও কষ্ট গুলো লাঘব করতে।
আপনাকে যখন এই অন্তর রোগ গুলো স্পর্শ করবে,আপনি আপনার প্রেমময় পালনকর্তাকে স্মরণ করুন,ক্ষমা চান এবং দোয়া করুন।

আসুন জেনে নেই,আপনার এই অন্তর রোগ গুলো চলাকালীন সময় আল্লাহকে স্মরণ এর পাশাপাশি আর করতে হবে।

"আর আমি কোরআনে এমন বিষয় নাযিল করেছি যা রোগের সুচিকিৎসা এবং মুমিনের জন্য হেদায়ত ও রহমত;গোনাহগারদের তো এতে ক্ষতিই বেড়ে যায়।"
সূরা:বনী ইসরাইল:৮২

"হে মানবজাতি!তোমাদের কাছে উপদেশবানী এসেছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে এবং অন্তরের রোগের নিরাময়;মুসলিমদের জন্য হেদায়ত ও রহমত। "
সূরা:ইউনুস :৫৭

নিচের দুইটা আয়াত অন্তরের সেই রোগ গুলোর দিকেই বেশি ইংগিত করেছে।যেমন:সন্দেহ,নিফাক,মতবিরোধ বা ঝগড়াবিবাদ।যেই গুলোর চিকিৎসার ঔষধ এই কোরআনে রয়েছে।এই রোগের ঔষধ এর পাশাপাশি কোরআন আপনাকে প্রশান্তি দেওয়ার ও বড় ঔষধ।

মন খারাপের সময় গুলাতে মনযোগী হয়ে কোরআন তেলাওয়াত করতে পারলে আপনার একাকিত্ব বা অস্থিরতা অনেকটাই কেটে যাবে।আর যথাসাধ্য অর্থসহ কোরআন পড়ার চেষ্টা করবেন।কোরআন কে আঁকড়ে ধরবেন তাহলে কোরআনের প্রশান্তিময় আয়াতগুলো আপনাকে আনন্দিত করবে এবং আল্লাহর উপর ভরষা করার শক্তি দিবে।ইনশাআল্লাহ!!

তাহলে বুঝা যাচ্ছে আপনার রোগ গুলো থেকে মুক্তি লাভের একমাত্র ঔষধ হচ্চে,আল্লাহর নিকট আত্নসমর্পন এর মাধ্যমে ওনার নিকট প্রত্যাবর্তন করে,ওনার আনুগত্য করা,জিকির করা,মনোযোগী হয়ে সালাত আদায় করা,কোরআন তেলাওয়াত করা এবং আল্লাহর উপর তাওয়াককুল করা।

আর আল্লাহর সাথে বন্ধুত্ব করার চেষ্টা করুন,আল্লাহর কাছেই আপনার সব,দু:খ বেদনা,আশা আকাঙ্ক্ষার কথা মন খুলে বলতে পারবেন।ওনিই একমাত্র মালিক বা এবং শ্রবণকারী যিনি আপনার সব দুক্ষের কথা গুলো শুনবেন এবং আপনাকে আলোর পথ দেখাতে পারেন।

ইসলামি একমাত্র জীবন বিধান,যা আমরা ভালোভাবে আঁকড়ে ধরে থাকলে আমরা ভালো থাকবো প্রশান্তিতে থাকবো।

আর আপনি যদি ইসলামকে রেখে আল্লাহকে রেখে দুনিয়াবি জিনিশে শান্তি খুজঁতে যান,তাহলে জেনে রাখুন,আপনি ধোকা আর মরিচীকার পিছনে ছুটছেন,যেখান থেকে আপনি অন্ধকার জীবন আর ধোকা-হতাশা খরিদ করছেন।

তাই আসুন,আল্লাহর পথে চলে নিজের জীবনকে আলোকিত করি এবং প্রশান্তিতে থাকি!!

জাযাকুমুল্লাহ খায়রান!

পঠিত : ১২১৭ বার

মন্তব্য: ০