Alapon

ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর প্ল্যান; পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ...


আর কে যাদভ (R.K.Yadav) ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর একজন প্রাক্তন ইন্টালিজেন্স অফিসার। তিনি গত বছর ১৫ই অগাস্টে প্রধানমন্ত্রী মোদীর কাছে ‘র’ এর প্রতিষ্ঠাতা প্রধান আর এন কাও (R. N. Kao) কে ভারত রত্ন পদক দেয়ার জন্য আবেদন করেন। সেই আবেদন পত্রে এমন সব ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে যার মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ সৃষ্টিতে ‘র’ আর ইন্দিরা সরকারের প্ল্যান। তার লেখায়ঃ

১৯৭০ সালের মাঝামাঝি পাকিস্তানে নিযুক্ত ‘র’ এর এজেন্টরা কাওকে রিপোর্ট করে যে পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক হস্তক্ষেপ আসন্ন। কাও এইসব রিপোর্ট ইন্দিরা গান্ধিকে দেখান। ইন্দিরা গান্ধী পাকিস্তানের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনার করে পূর্ব পাকিস্তানের ব্যাপারে একটি নীল নকশা চূড়ান্ত করতে কাওকে নির্দেশ দেন। এর পরপরই কাও পূর্ব পাকিস্তানের সীমান্তে গোপন অপারেশনে তৎপর হয়ে উঠেন।

তখন পাকিস্তানের আর্মিতে পেনিট্রেট করার জন্য ‘র’ এ অনেক নতুন পোস্ট ওপেন করা হয়। ‘র’ এর টেকনিক্যাল কর্মীরা পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও বেসামরিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যকার বিভিন্ন বার্তা নিরীক্ষণ করার নির্দেশ পেয়ে কাজে নেমে পড়ে। ‘র’ পূর্ব পাকিস্তানের সব অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে তার মূল্যায়ন প্রদান করার সক্ষমতা লাভ করে। আর এই সক্ষমতা লাভ করে ১৯৭০ এ পাকিস্তানের সাধারন নির্বাচনের আগেই। কাও পূর্ব পাকিস্তানে শেখ মুজিবুর রহমানের নিরঙ্কুশ বিজয় লাভের পূর্বাভাস ইন্দিরাকে দেন, কিন্তু ওনার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ব্যাপারে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। ইন্দিরা গান্ধী তখন কাওকে জানান শেখ মুজিবকে যদি পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতা না দেয়া হয়, তাহলে তিনি জোর পূর্বক পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন করে দিবেন। এসব ঘটনা আর ডিসিশান নেয়া হয় ৭০ এর নির্বাচনের আগেই।

সেই লক্ষ্যে ইন্দিরা গান্ধী কাওকে অগ্রসর হতে নির্দেশ দেন। কাও তখন ভারতের আকাশ অতিক্রম করে পাকিস্তানের কোন সামরিক বিমান যেন পূর্বে আস্তে না পারে তার এক পরিকল্পনা হাতে নেন। ১৯৭১ সালের ৩০ শে জানুয়ারি ‘র’ এর এজেন্টেরা শ্রীনগর থেকে লাহোরে ভারতীয় এয়ারলাইন্সের ‘ফকার ফ্রেন্ডশিপ গঙ্গা’ হাইজ্যাক করে। এই এজেন্টদের সাজানো হয় পাকিস্তান অকুপাইড কাশ্মীরের ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্টের সদস্য, নাম দেয়া হয় হাশিম কুরেশি আর আশরাফ বাট। ‘র’ এর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী হাইজ্যাকের পর বিমানের সব যাত্রী আর ক্রুদের ভারতের অমৃতসরে পাঠিয়ে দিয়ে বিমানটিকে সারা বিশ্বের মিডিয়ার সামনে বোমা দিয়ে উড়িয়ে দেয়। আর এই ঘটনা দেখিয়ে ভারত কাওয়ের পরিকল্পনা অনুযায়ী ভারতীয় ভূখণ্ডের ওপর পাকিস্তানের বিমান চলাচল সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। যার কারনে তদানীন্তন পাকিস্তানের সামরিক সরকার পূর্ব পাকিস্তানে আকাশ পথে এবং সামগ্রিক ভাবে পশ্চিম থেকে পূর্বে সেনাদের যাতায়াতে প্রচণ্ড ভাবে বাঁধাগ্রস্থ হয়।

কাও ২৫ শে মার্চের আগেই শেখ মুজিবকে জানিয়ে রাখেন একবার সেখানে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে মুজিব যেন তার সব ক্লোজ রাজনীতিবিদদের কলকাতায় পাঠিয়ে দেন। সেখানে ‘র’ আগের থেকেই তাদের থাকার জন্য জায়গা ঠিক করে রাখে।

২৫শে মার্চের পর সীমান্ত ক্রস করে রেফিউজি আশা শুরু হয়ে গেলে ভারত তাদের পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী রিফিউজিদের কোনরূপ বাধা না দিয়ে নিজ ভূমিতে জায়গা দেয়। (উল্লেখ্য এই রেফিউজি ক্রাইসিসকে ইন্দিরা গান্ধী হাতের এক্কা হিসাবে ব্যবহার করে যুদ্ধ থেকে তার সব ফায়দা তুলে নেয়। সেই আলোচনার জন্য ভিন্ন পোস্ট লাগবে।)

এদিকে ইন্দিরা গান্ধী মানেকশ এর সাথে কিছু গোপন বৈঠক করেন। এসব বৈঠকে তিনি মানেকশকে জিজ্ঞাসা করেন পুরদস্তুর যুদ্ধে যেতে ভারতের সেনাদের প্রস্তুতির জন্য আর কত সময়ের প্রয়োজন, মানেকশ ৬ মাস সময় চেয়ে নেন। তিনি মানেকশকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে আদেশ দেন।

ইন্দিরা গান্ধী কাও কে বাংলাদেশী মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং দিয়ে এই ছয় মাস পাকিস্তান বাহিনীকে হয়রান আর নাস্তানাবুদ করে ফেলার জন্য নির্দেশ দেন। মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং দেয় বিএসএফ (‘র’ এর পরিকল্পনা অনুযায়ী) আর কাদের বাহিনী আর মুজিব বাহিনীকে ‘র’ এর কম্যান্ডোরা এক্সক্লুসিভলি ট্রেনিং দিয়ে যুদ্ধে পাঠায়। (তাজউদ্দিন সরকারের অধীনে থাকে মুক্তিবাহিনী, আর শেখ মনির অধীনে থাকে মুজিব বাহিনী। যুদ্ধ চলাকালীন পুরা সময় শেখ মনি তাজউদ্দিন সরকারকে মেনে নেয়নি)।

মুজিবনগর অস্থায়ী সরকারের সার্বিক দায়িত্বে থাকেন কলকাতায় অবস্থানরত ‘র’ এর যুগ্ম সচিব পি.এন.ব্যানার্জী। বাংলাদেশের এই নির্বাসিত সরকারকে গোপন ও প্রকাশ্যে ব্যানার্জী সকল প্রকার সাহায্য আর সহযোগিতা প্রদান করেন।

এরপরের সব ইতিহাস আমাদের জানা।

লিখেছেন: সাবিনা আহমেদ

পঠিত : ৭৩৪ বার

মন্তব্য: ০