Alapon

'মল' কাণ্ডে চেয়ার ও হাল জমানার আধুনিকতা...


অশীতিপর বৃদ্ধরা বসলে উঠতে পারেনা আবার উঠলে বসতে পারে না। জীবনের এই সময়টা বড় কঠিন হলেও তাদের ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় কিংবা প্রয়োজনের তাগিদে দিনে-রাতে কদাচিৎ উঠতে-বসতে হয়। কারো পক্ষে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করা গেলেও, কোনভাবেই দাঁড়িয়ে মলত্যাগ সম্ভব নয়! আদর্শ উপভোগ্য মলত্যাগের জন্য চাই আদিম স্টাইলে বসা। মানুষের জন্য এই বসার প্রক্রিয়াটা দৈহিক ভাবে যুতসই, শারীরিক স্বস্তি-দায়ক ও আধুনিক বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে সাইন্টিফিক। বিজ্ঞানের দোহাই দিয়ে আদিম ভাবে বসার জন্য যতই বলি না কেন সেটার জন্য চাই মানুষের বসার সক্ষমতা ও হাঁটুর জোড়। কোন ব্যক্তিকে যদি বসার আগেই চিন্তা করতে হয় যে, 'বসলে দাঁড়াব কিভাবে'? তার জন্য উপরের সমুদয় সুযোগ বৃথা।

হাটুরে জোড়ের অভাবে বৃদ্ধরা উঠতে-বসতে না পারলেও, এই উঠা-বসার মাঝামাঝি একটা পর্যায় রয়েছে, যে পদ্ধতিতে অসহায় বৃদ্ধ বসতে পারে। যেটাকে সহজ বাংলায় বলা যায়, 'বদ্দা' পদ্ধতি। বাংলায় "বদ্দা" লিখতে যে 'দ্দ' আকৃতির আকার আছে বুড়োরা সহজেই সে আকারে হাঁটু-কোমর বাঁকা করে বসতে পারে। মানুষ সামাজিক জীব, সমস্যা থেকেই মানুষ সম্ভাবনার সৃষ্টি করে। তাই বৃদ্ধদের সহায়তায় বুদ্ধিমানের এগিয়ে এলো বিশেষায়িত চেয়ার নিয়ে। চেয়ারে তো বসতে পারবেই তার মাঝখানে ফুটো করে অতিরিক্ত সুবিধা বানিয়ে দেওয়া হল। যে ফুটো দিয়ে সময়-সুযোগ মত পয়ঃকর্ম সম্পাদন করবে। সে থেকে বুড়োদের জীবনে চেয়ারকে দু'ভাবে ব্যবহারের এক নতুন মাত্রা যোগ হল। ইউরোপে শিল্প বিপ্লবের শুরুতেই কিছু ব্যক্তি মানুষের এই সমস্যাটিকে স্থায়ী সমাধান দিতে তৈরি করল এমন চেয়ার যেটা বসার কাজে ও পয়ঃকর্ম সম্পাদন দুই কাজেই দারুণ উপযোগী। অতঃপর সেটা হাসপাতালেও ব্যবহার হতে থাকে।

পরবর্তীতে সেটা আরো পরিবর্তিত হয়ে একটি স্থায়ী রূপ গ্রহণ করে। সিরামিক সামগ্রীর নিত্য নতুন আবিষ্কারের ধারাবাহিকতায় এই চেয়ারের সুবিধা পরিবর্তন হয়ে নাম হয়ে যায় WC (Water Closet)। আধুনিক নাম ধারণ করে সেটা ধনী ও বিত্তশালীদের হাম্মাম খানায় স্থায়ী আসন দখল করে। প্রথমদিকে এটি বৃদ্ধ, অসুস্থ রোগীদের জন্য ব্যবহার হলেও কালক্রমে এটি আধুনিক রুচিশীল মানুষদের আভিজাত্যের প্রতিকে পরিণত হয়। ইউরোপে তো বটেই বর্তমান আমাদের দেশের হাম্মাম খানায়ও এটার ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। এটার সাথে করো শত্রুতা নেই তবে এটাকে আভিজাত্যের প্রতীক ভেবে অনবরত ব্যবহারের ফলে অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কিছু মানুষের বর্ণবাদী চিন্তা খুবই উগ্র। তারা কালো-সাদা, ধনী-দরিদ্র ভেদাভেদ তুলে অনেকেই সবার সাথে হ্যান্ড সেক করেনা। কিন্তু তারা নিজের অজান্তেই এই WC (Water Closet) ব্যবহার করে; হাজারো মানুষের চর্মের সাথে সংমিশ্রণ ঘটায়। এটাতে বসতে গেলে কেউ ডিটারজেন্ট, সাবান, শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে-মুছে না। উপরন্তু ইউরোপের টয়লেট গুলোতে পানির ব্যবস্থা অপ্রতুল। আছে টিস্যুর ব্যবস্থা। হাতে হাতে ঘষা লাগাবে এই কারণে অন্যকে ঘৃণা করলেও, এই WC তে বসার সময় সকল শ্রেণীর মানুষ নিচের পাছার চামড়া ঠিকই লাগিয়ে বসে! সারাদিনের সকল মানুষের চামড়ার ময়লা, ত্বক-নিঃসৃত তৈল, ঘাম, চর্ম-রোগীর রস একে অপরের গায়ে লাগতেই থাকে। এই পদ্ধতিতে নিজেদের অজান্তে এক জনের শরীর থেকে অন্যর শরীরে সংক্রমণ হবার ঝুঁকি থাকে বেশী।

এই পদ্ধতিতে পয়ঃকর্ম সারলে মল পরিপূর্ণ নির্গত হয়না। কিছু বাসি মল নিজেদের মলদ্বারে লুকিয়ে থাকে! একে তো মল, তার উপরে বাসি! এভাবে দীর্ঘদিনের অভ্যাসের ফলে পেটে নানা উপসর্গ দেখা দেয়। সবার অভিজ্ঞতা আছে উদরস্থ বায়ু দুর্গন্ধ যুক্ত, যথাসময়ে সঠিক ভাবে মলত্যাগ হলে দুর্গন্ধের পরিমাণ খুবই নগণ্য মাত্রায় চলে আসে। কিন্তু যে সব ব্যক্তির পেটে বাসি মল থেকে যায়, তাদের বায়ু চব্বিশ ঘণ্টাতেই দুর্গন্ধ ছড়ায়। উপরে স্মার্ট ভাব নিয়ে চাল চলন করলেও ভিতরে যে পরিবেশ বিপর্যয়কর গ্যাস নিয়ে ঘুরছে সেটা বাহিরের মানুষ ভুলেও বুঝতে পারেনা। তাদেরকে হর হামেশা একটি নিরিবিলি পরিবেশের জন্য তক্কে তক্কে থাকতে হয়। সুযোগে পেলেই যেন 'ফিস' করে ছেড়ে দেওয়া যায়। এ কারণেই মল গুলোতে আলাদা করে সুঘ্রাণ স্প্রে করার ব্যবস্থা থাকে। এই সৃষ্ট গ্যাসে নানাবিধ শারীরিক বৈকল্যতা দেখা দেয়। চলমান মাথা ব্যথা থাকে, বিশেষত যারা আমাশয়ের রোগী তাদের রোগ ভাল না হবার কারণও ঘটে।

যেসব শিশুরা বাল্যকাল থেকেই এই WC ব্যবহার করে, পরিণত বয়সে সে আর আদিম স্টাইলে বসতে পারে না। তাদের পায়ের পিছনের রগটি খাটো আকৃতির হয়ে যায়। অনভ্যাসে সেটা আর পরিমাণ অনুযায়ী লম্বা হয় না। যার কারণে এসব শিশু হাঁটু মুচড়িয়ে বসতে গেলে শিশুরা উল্টে পড়ে। জীবনের বড় গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এভাবে বসার দরকার হয়। মাঠে-ময়দানে, খালে-বিলে, শিল্প-কারখানায় এভাবে কদাচিৎ বসতে হয়। জীবন-প্রকৃতির সাথে মিশতে গেলে এভাবে বাসর অভ্যাস রপ্ত করা অপরিহার্য। রাসুল (সা) পায়খানার করার সময় এভাবেই বসতে বলেছেন। কখনও ডান পায়ের উপর ভর করে, কখনও বাম পায়ের উপর ভর দিয়ে বৃহদান্ত্রে চাপ সৃষ্টি করতে হয়। এতে করে মল-থলের মল তো বের হবেই উল্টো বৃহদান্ত্রে চাপ পড়ার কারণে যা আরো পরে আসার কথা, তাও বের হয়ে যাবে। এটা বিজ্ঞান সম্মত, স্বাস্থ্যর জন্য উপযোগী এবং রাসুল (সা) এর দেখিয়ে দেওয়া পদ্ধতি। তাছাড়া এটা আল্লাহর সৃষ্টি বিন্যাসের সাথে সামঞ্জস্য-শীল। তাই আসুন সবকিছুকে যেন অন্ধ অনুসরণ না করি। ধনী, বিত্তশালীরা করে বলেই যেন, সেটাকে যেন উত্তম মনে না করি। প্রকৃতির সাথে মিলিয়ে জীবনকে যেন সাজিয়ে তুলি। সেটাই মানব জীবনকে বেশী মাত্রায় নিরাপদ রাখবে।

লিখেছেন: নজরুল ইসলাম টিপু

পঠিত : ৭৮০ বার

মন্তব্য: ০