লেখকের ভিড়ে হারিয়ে গেছে মানসম্মত বই...
তারিখঃ ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১৬:৫১
বউ ফোন দিয়ে বললো, তুমি কই?
আমি বললাম, নীলক্ষেত।
কাছেই তো গাউছিয়া মার্কেট। আমার জন্য একটা নীল ড্রেস আনবে। আগামী সপ্তাহে পাশের বাড়ির বিয়েতে পরবো।
রাতে বাড়ি ফিরলাম। বউ দৌড়ে এসে হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে নিল।ব্যাগ খুলে অগ্নিশর্মা হয়ে বললো, ব্যাগ ভর্তি এগুলো কী?
আমি কাচুমাচু গলায় বললাম, বই।অতি সস্তায় পেয়েছি। অনেক নামকরা বই।
আমার নীল ড্রেস কই?
আনি নি।বাজেট ফেইল।
বউ রাগ করে ব্যাগ ফেলে চলে গেলো।
বই কেনা আমার শখ। আমি প্রচুর বই কিনি তবে সব বই পড়া হয় না।আমি বেশির ভাগ বই কিনি নীলক্ষেত থেকে। নীলক্ষেত গিয়েছি অথচ একটা বই কিনি নি এমনটা হবে না। নীলক্ষেত থেকে অতি সস্তায় নিজের মনের মতো বই কেনা যায়।অনেক দুস্পাপ্য বই আমি নীলক্ষেত থেকে কিনেছি।
বই মেলা চলে এসেছে। অনেকেই নতুন বই বের করবেন। নতুন লেখকদের জন্য রইলো শুভকামনা। আশা রাখতে চাই, সব নতুন লেখকদের বই ভালো যাবে। তবে কিছু কিছু নতুন লেখকের ব্যবহার আমাকে আহত করে।
হুমায়ূন আহমেদ তখন বেঁচে আছেন। মেলায় গেছি। হুমায়ূন আহমেদের বই কিনবো। স্টলে গিয়ে দেখি প্রচন্ড ভীড়। হুমায়ূন আহমেদ এসেছেন। অটোগ্রাফের জন্য লোকজন পাগল হয়ে গেছে। কমপক্ষে দশ জন লোক ভীড় সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হচ্ছেন।
আমি একঘন্টা অপেক্ষা করলাম, ভীড় কমলে বই কিনবো। কীভাবে সারা মেলায় রটে গেছে হুমায়ুন এসেছেন। আর যায় কোথায়? সারা মেলার লোকজন যেন ছুটে এলো তাকে দেখার জন্য। ভয়াবহ অবস্থা! আমার আর বই কেনা হলো না।
একটা সময় ছিল, সারা মেলায় সব লেখকের মোট যত বই বিক্রি হতো, অর্ধেকের বেশি বই শুধু হুমায়ুনের বিক্রি হতো। অকল্পনীয় ব্যাপার!
জাফর ইকবাল যখন বইমেলায় আসেন,তখনও অটোগ্রাফ শিকারির পাল্লায় পারেন। তিনি হাসি মুখে অটোগ্রাফ দিয়ে যান। এক সময় ইমদাদুল হক মিলন ভালো লিখতেন। তাকেও প্রচুর অটোগ্রাফ দিতে দেখেছি। লোকজন হন্যে হয়ে তাদের খুঁজতো অটোগ্রাফের আশায়। আর এখন?
এখন হয়েছে উল্টো। লেখক এখন পাঠকের পিছনে দৌড়াচ্ছে অটোগ্রাফ দেওয়ার আশায়। ব্যাপারটা দৃষ্টিকটু।
গত বারের বই মেলার কথা বলি।বই মেলায় গেছি, কিছু বই কিনবো। কিছু ভালো লেখক তৈরি হয়েছে নতুনদের মধ্যে। নতুনদের মধ্যে অনেকেই আছেন মেধাবী, নতুন আইডিয়া নিয়ে এসেছেন। তবে নতুন লেখকদের মধ্যে অনেক লেখকের লেখা অখাদ্য। পকেটে টাকা আছে তাই বই বের করে ফেলেছেন। ফেসবুকের প্রোফাইল ঘেটে দশটা গল্প কবিতা পাওয়া যাবে না এমন লোকজনও পয়সা খরচ করে বই বের করে ফেলেন। ভুল বানান, ব্যাকরন না জানা লোকজনের বই কিনে বিলাসিতা করা আমার রুচির পরিপন্থী।
মেলায় একজন পরিচিত নতুন লেখকের সাথে দেখা হয়ে গেল। কুশল বিনিময় শেষে জানালেন তার একটা নতুন বই বেড়িয়েছে।
আমি ভদ্রতার খাতিরে বললাম, দেখি সুযোগ পেলে আপনার বই কিনবো। আর যায় কোথায়? এ কথা বলেই ফেঁসে গেলাম। তিনি আর আমার পিছু ছাড়লেন না।সারাক্ষণ মেলায় আমার সাথে ঘুরঘুর করলেন। বাধ্য হয়ে তার একটা বই কিনলাম।
তিনি বললেন, ভাই একটা অটোগ্রাফ দেই?
আমি বললাম, ঠিক আছে অটোগ্রাফ দিয়ে দিন।
তিনি অটোগ্রাফ দিয়ে বললেন, ভাই আসেন একটা সেলফি তুলি।
আমি বললাম, ভাই, আমি সাধারণ মানুষ, আমার সাথে সেলফি তুলে আপনার কি হবে?
তিনি বললেন, ভাই আপনি আমার বইটা বুকে ধরে রাখেন।
আমি বাধ্য ছেলের মতো তার বই বুকে জড়িয়ে ধরে হাসি মুখে পোজ দিলাম। তিনি সেলফি উঠিয়ে আমাকে ধন্যবাদ দিলেন।
আমি মনে মনে বললাম, হায় রে লেখক!
সংগৃহিত...
মন্তব্য: ০