Alapon

ভারতের আসন্ন গণহত্যার মৌসুমে আপনি কি করবেন?


প্রথমে ভাবছিলাম লেখার কিছু নাই। কারণ গত কয়েক মাসে আমি কাশ্মির নিয়ে বড় বড় কিছু পোষ্ট দিয়েছি। তখন যে বিষয়গুলোর দিকে মনযোগ দিয়েছিলাম, প্রেডিকক্ট করেছিলাম তা এতো দ্রুত ঘটতে দেখব ভাবতে পারি নাই। লম্বা লেখা না লিখে আজ প্রথমে একটা ছোট কিন্তু জরুরী খবর দিয়ে ২ টা পয়েন্টে কথা বলব :
১.
ছবিতে যে সংখ্যাটি দেখতে পাচ্ছেন তা আমি বাজার থেকে কিনেছি পরশু। আজ আবার ঐ দোকানে গিয়ে জিগাইলাম ভাই আমাকে ছেড়া পত্রিকা দিছেন কেন? সে হেসে দিয়ে বলে এটা ছেড়া হিসেবেই বাংলাদেশে ডুকেছে। মানে?
তিনি আরও কিছু কপি দেখালেন। দেখলাম সবগুলাতেই প্রথম ২টি পাতা কাটা। তার পরে বাসায় এসে এই পত্রিকাটার সেই ২টি পাতা পিডিফ কপিতে পড়ি। পড়ে দেখি 'রাম সত্য জগত মিথ্যা' -নামের সম্পাদকীয় ও প্রথম প্রতিবেদন, 'বিদ্রোহ আজ, বিদ্রোহ চারিদিকে' - নামক দুটি লেখা কেটে দেয়া হয়েছে বাংলাদেশের বাজারের জন্য। অথচ এই খবরটি কোথাও কেউ জানায়ও নি। কেন এমনটি করা হয়েছে? কি ছিল এই ২টি লেখাতে?

সম্পাদকীয়তে ধর্মবিশ্বাস নিয়ে খুব যুক্তিযুক্ত ভাবে কিছু কথা বলা হয়েছে
(কোন ধর্মের নাম না নিয়ে)। তাতে বাংলাদেশের মানুষ কিছু মনে করতো বলে আমার মনে হয় নাই। এ জন্য তো এই পাতা কেটে পত্রিকা দেয়ার কথা না। পরে মনে হল আসল কারণ তাইলে অন্যটা।
কিন্তু ছোট লেখাটিতে এমন তথ্য দেয়া হয়েছে যাতে ভারতের মুসলমানরা আসলে কি ধরণের বিপদের মধ্যে আছে তার চিত্র সহজেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
আর এটা বাংলাদেশের মুসলমানদের এভাবে জানানো বিপদের কারণ হতে পারে। তাই বাদ।
দুই নাম্বার যে লেখাটি বাদ দেয়া হয়েছে তাতে বিদ্রোহকে খুব আবেগি ও বিনোদিত ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। ফলে বাংলাদেশে যেন আবার ফেস্টীভ মুডে বা বিনোদনরুপে বিদ্রোহ ছড়িয়ে না পরে বা এটার জন্য কোন পরোক্ষ আগ্রহও যেন না ছড়ায় তাই এই প্রতিবেদনও বাদ দেয়া হয়েছে।

ফলে ভারতের ব্যাপারে তথাকথিত মূলধারার বড় বড় মিডিয়ার কোন খবরে বিশ্বাস করার অর্থ হল, মিথ্যাকে বিশ্বাস করা।

২.
ভারতে গনহত্যার সব প্রস্তুতি ব্যাপক জোরে এগিয়ে চলেছে। এটা যে ধারবাহিক ভাবে এতোটা দ্রুত গোটা ভারতে শুরু হবে তা না ভাবলেও এটাই যে হিন্দু-জায়নিস্ট প্রকল্প তা একাধিক লেখাতে বিস্তারিত বলেছি অনেক আগেই।

এবার একই কথা বলেছেন, জেনোসাইড ওয়াচের প্রতিষ্ঠাতা, ড. গ্রেগরি স্ট্যানটন। ডিসেম্বরের ১২ তারিখ, মার্কিন কংগ্রেস সদস্য ও সরকারী কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য করে ড. স্ট্যান্টন বলেছেন,
.
‘ভারতে নিশ্চিতভাবেই গণহত্যার প্রস্তুতি চলছে। কাশ্মীর ও আসামে এখন যা চলছে তা হল বিপুল আকারে হত্যা ও নির্মূলকরণ শুরুর আগের পর্ব। আর এই নির্মূলকরণ প্রকৃয়াকেই আমরা গণহত্যা বলে থাকি।‘

এখন এই অবস্থাকে আরও জোরদার করতে বাংলাদেশেকে মুসলিম ও জঙ্গি রাষ্ট্র প্রমাণের জন্য অনেক ধরণের ঘটনা আসবে। এবং বাংলাদেশেকে ভারত আর বন্ধু বলে স্বীকার করবে না। কাজেই সরকারী তামাশাতে অবাক হওয়ার দরকার নাই। বরং এই দেশটা সন্ত্রাসী মুসলমানের দেশ এবং এর নাগরিকদের ভিলেন আর ভারতের মুসলমাদের এই দেশের নাগরিক হিসেবে হাজির করে গণহতার দিকে ঠেলে দেয়া হবে। কাজেই সরকারের মিথ্যার জাবাবও দেওয়ার দরকার নাই। এটা এখন সবার সামনে এমন ভাবে প্রমাণিত হবে এবং জালেম এতোটা অপমানিত হবে মানুষ মনে করবে, ফেরাউনের কথা।

প্রশ্ন আসতে পারে এসব করে কি লাভ ভারতের?

প্রথম লক্ষ্য হলো- পাকিস্তানের সাথে যে কোন মূল্যে একটা যুদ্ধ শুরু করা এবং পারমানবিক স্বক্ষমতার ভিতটা নষ্ট করা। এটা নষ্ট না হলে, জায়নিস্ট সুপারপাওয়ার প্রকাশ্যে নিজেকে সামনে আনতে পারছে না। আর কত কাল আমেরকার আড়ালে থেকে খেলা যায়? এবার সময় হয়েছে সরাসরি খেলার মাঠে নামার। এটা জায়নিস্ট এসাইনমেন্ট। এর মধ্যদিয়ে দুনিয়ার বৃহত গণতন্ত্রের দেশে সংগঠিত হবে বৃহত গণকবর। আমেরিকার ও পশ্চিমের গণতন্ত্রের মডেল তো আগেই সাইজ করা হয়ে গেছে। ফলে সারা দুনিয়ার এই গণতন্ত্রহীনতার পরিবেশে মানুষ কেবল বিশ্বাস করবে মিথিক্যাল সুপার পাওয়ারকে। এবং বিপুল লোক চাইছেন, ইনসাফওলা আসল গণতন্ত্র না থাক, আমি বাঁচতে চাই। ভোগ করতে চাই। এখনই ত্রাণকর্তা (মেসিয়াহ) হিসেবে হাজির হওয়ার ভালো সময় প্যাক-ইসলায়েলের। এটাই তো এতোদিন, স্যাকুলারিজম, প্রগতি, প্রযুক্তি, আধুনিকতার নামে আসছে।

এটাই ইসরায়েলের সাথে ভারতের সব চেয়ে বড় ডিল। আর এরজন্য উপহার হিসেবে থাকছে, জায়নিস্ট ইহুদির আদলে হিন্দুরাষ্ট গঠনের জন্য যা দরকার সবই করা হবে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে। ফলে এই যুদ্ধের শিকড় অতি গভীরে। ফাও উত্তেজনায় ভুগবেন না দয়া করে।

ইমরান খান ১০০তে ১০০ পাওয়ার মতো কাজ করছেন। ফ্যানাটিকদের সাথে তাল না মিলিয়ে তিনি সব রকম ভাবে চেষ্টা করছেন এই যুদ্ধ এড়িয়ে যেতে। কাশ্মির নিয়ে তিনি নিয়ম তান্ত্রিক ভাবে যা করার করছেন। এর বাইরে কিছু হুজুগিকে দিয়ে নিজ দেশে তাকে বিপাকে ফেলে যাদের ক্ষমতায় আনার চেষ্টা চলছে এরা ক্ষমতায় এলে ১ মাসের মধ্যে ভারতের সাথে যুদ্ধ শুরু হবে। এই জন্য কিছু এজেস্ট পাকিস্তানে এ্যাকটিভ হচ্ছে। কিন্তু খান পাকিস্তানের জন্য এখন আল্লাহর রহমত। এটাকে জনগন রক্ষা করতে না পারলে পরিণতি হবে গণমৃত্য। সেন্টিমেন্ট উস্কে যুদ্ধের দিকে জনগনকে ঠেলে দিয়ে এরা বিদেশে চলে যাবে।

আর যুদ্ধে পাকিস্তান সব হারিয়ে যখনই মরণপন লড়াই মানে, গেরিলা যুদ্ধের দিকে যাবে তখন হাজির হবে ইউএন ( আকাশ পথ ও ভাড়ি অস্ত্রের যুদ্ধে পাকিস্তান পারবে না) শান্তি চুক্তির নামে অসম যুদ্ধে ফায়দা থাকবে ভারত-ইসরালের দিকে।
এই বিপদ টের পেয়ে খান রাশিয়ার-চায়নার দিকে শক্ত করে ঝুকেছেন। বাকিটা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

বাংলাদেশের অতিবিপ্লবী জনতাকে কিছু করতে হবে না। শুধু মনে রাখলেই হবে- এই দেশটারে কেউ গনায় ধরে না। আমাদের মাথা-মোটা ও শুয়র শ্রেণীর ক্ষমতার কুকুরদের জন্য অপেক্ষা করছে চরম লাঞ্চণা।
যেহেতু আপনারা কোন লুম্বাও ছিড়তে পারেন নাই এমন ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে, দয়া করে অতি জেহাদি জোস ছড়ায়ে ভারতের মুসলমানদের বিপদ আরও বৃদ্ধি করবেন না।
জামায়াতের সমর্থক ও কর্মিদের ধন্যবাদ তারা সংগ্রাম পত্রিকার ইস্যুতে কোন এ্যাকশনে যায় নাই। যেই পত্রিকা সবধরণের বিরোধী আমলে টিকে ছিল তার অফিসে সরাসরি হালাম ও ভাংচুর কোন চেতনার জোয়ার মাত্র না। এর চেয়ে অনেক ভয়াবহ চেতনা বিরোধী লেখা নিয়মিত সংগ্রামে ছাপা হয়। এটা সে তুলনায় কিছুই না। ফলে চেতনা, শহিদ শব্দ এগুলা নিয়ে যারা বুদ্ধিজিবিতা করছেন করেন। শিয়ালের দুধ খাইয়া বুদ্ধিজিবি না হলে এই ফাও জিনিস নিয়ে কেউ তর্ক করে না। এগুলাকে ইস্যু করে না। কারণ-

এটা কে/কারা করাইছে? তাদের এজেন্ডা কি ? তারা কার গরমে চলেন সবাই জানেন। কাজেই এটা মুক্তিযুদ্ধ আর রাজাকারের খেলার অংশ না।

সবকিছুতে বিনোদন নেয়ার নেশা শেষ করেন। এমন আরও অনেক ঘটনা এখন আসবে। এখন সব চেয়ে শান্তি প্রিয় ভূমিকা নিতে হবে।
হিন্দু প্রতিবেশিদের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। নিজ দেশের জনগনকে অতি আবেগ ও ফ্যানাটিক চেতনা প্রকাশ থেকে বিরত রাখতে হবে। হিন্দুদের বলতে হবে, রাজনৈতিক ভাবে যা খুশি হোক আমরা সামাজিক সম্পর্ক রক্ষা করবো। একজন অপরজনের জান-মালের হেফাজত করবো জিবন দিয়ে। এটা না করতে পারলে যুদ্ধ আপনার ঘরে ডুকবে। হিন্দুদের আতঙ্কিত হওয়া থেকে বিরত রাখুন।
সামাজিক সম্পর্ক দৃঢ় করুণ। ইসলামের শিক্ষামতো তাদের সাথে আচরণ করুণ। মোদির ঝাল তার উপর মিটাবেন না। পারলে মোদির সাথে ফাইট করেন গিয়া। কোন কাপুরুষের জন্য ইসলামের জেহাদ না।

আপনার রাজনৈতিক শত্রুকে রাজনৈতিক ভাবে মোকাবেলা করবেন। ধর্মের চেতনায় ফেটে পইড়েন না। সুধ-ঘুষ ও অপরের হক নষ্টের মত সব কবীরা গুনাহ মহা আমোদে করে চলছেন প্রতিনিয়ত। জালেম সরকারের বিরুদ্ধে কোন যুদ্ধ করেন নাই। কাজেই ধর্মের চেতনা জেগে ওঠার আগে নিজের পেটের দিকে তাকাবেন। হালাল খাবার কয় বেলা খান নিজেরে জিগাইবেন। তার পরে জোস দেখাবেন।
কোন পীর-মুফতির লাফালাফিতে কান দিবেন না। আল্লাহকে ভয় করুণ। ইনসাফ ও অন্যের উপর বিপদের দিনে জুলুম করবেন না। জালেম হওয়ার হাত থেকে যেন নিজে বাঁচতে পারেন সব সময় সেই চেষ্টা করতে হবে। কারণ জালেমের করুণ পরিণতি আপনারা অতীতে দেখেছেন। এবারও স্বচক্ষে দেখতে পারবেন। নিজেকে ঐ কাতারে নিবেন না। নিজের ধ্বংস নিজে করবেন না নগদ লাভ বা লোভে।

হিন্দু ধর্মের ভাই-বোনদের দায়িত্ব হল, জালেমের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া। তা না করে নিজেই জালেমের দোসর হলে আপনার পরিণতিও ধ্বংস। আপনার ধর্মও আপনাকে হত্যার আদর্শ শিক্ষা দেয় না। যারা আপনাকে দলে টানতে চান, নিজেদের জঘন্য স্বার্থের জন্য তাদের কাছেও আপনি নিরাপদ নন- এটা মনে রাখবেন। কাজেই জালেমের কোন ধর্ম থাকতে পারে না। আপনি কি করবেন এটা আপনার সীধান্ত।

মোট কথা আমি বলছি, আপনার ফালতু ইমোশনকে কাজে লাগিয়ে দক্ষিণ এশিয়াতে যে গনহত্যার মৌসুম আনার চেষ্টা চলছে তাকে সুযোগ দিবেন না। ফাও চিল্লায়ে কিছুই করতে পারবেন না। মনে রাখবেন, ভুল পদক্ষেপ নিয়ে শত্রুকে সুযোগ করে দেয়ার চেয়ে কিছু না করাই 'রাজনৈতিক' আচরণ।

আগে রাজনৈতিক আচরণ করা শিখেন তার পরে শত্রু চিনতে পারবেন। এবং লম্বা ও চূড়ান্ত যুদ্ধের জন্য নিজেকে যোগ্য কররে গড়ে তুলতে পারবেন। আমি লেখা লম্বা হওয়ার ভয়ে শেষ করছি। আশা করি কি বলতে চাইছি নিজ গুনে বুঝেছেন।
মহান প্রভু আমাদের চিরকালীন কল্যানের পথে কবুল করুণ।

লিখেছেন: রেজাউল করিম রনি

পঠিত : ৮১৪ বার

মন্তব্য: ০