Alapon

একজন আবুল আসাদের অনেক অপরাধ...!


তিনি আবুল আসাদ। এক নামেই পরিচিত। প্রবীণ সাংবাদিক। কলমই তার অস্ত্র। লেখনিই তার শক্তি। সত্যের পথে ন্যায়ের পথে আপোষহীন দেশপ্রেমিক মুখপাত্র দৈনিক সংগ্রাম এর সংগ্রামী সম্পাদক ৷

তাকে গতকাল গুন্ডারা হেনস্তা করেছে। তার প্রিয় কর্মস্থল ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে। লুটে নিয়েছে তার অফিসের অনেক কিছুই। প্রশ্ন জাগতে পারে আবুল আসাদের অপরাধ কি?

উত্তরে বলবো, জনাব আবুল আসাদের অনেক অপরাধ।
তিনি একুশে টিভির বুলবুল কিংবা চিফ রিপোর্টার সেকান্দারের মত কাউকে কখনই যৌন হয়রানি করতে পারেননি।

কিংবা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, এটিএন বাংলার প্রভাষ আমিন, এটিএন নিউজের মুন্নী সাহা, সমকালের শাকিল ফারুক, একুশে টিভির মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, বাংলাদেশ প্রতিদিনের শাবান মাহমুদ, ইত্তেফাকের আবুল খায়ের, মেহেদী হাসান ও ফরাজী, সময় টিভির তুষার, দেশরুপান্তরের অমিত হাবিব, কালের কণ্ঠের মুস্তফা কামাল, অমাদের সময় ডটকমের নাইমুল ইসলাম খানদের মত ক্যাসিনো থেকে চাঁদাবাজি করেননি।

একাত্তর টিভির সামিয়া রহমানের মত মিশেল ফুকোর লেখা চুরি করে নিজের নামে চালিয়ে দেননি।

কখনই কোনো আমলেই স্বৈরাচারের দালালী করেননি। দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কখনই আপোস করেননি। যেমনটা বর্তমান অনেক সাংবাদিকই করছেন। জেনে বুঝেই করছেন। টাকার লোভে করছেন।

আর এসবই হলো আবুল আসাদের মূল অপরাধ। শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা রহিমাহুল্লাহকে আজ নতুন করে শহীদ বলা হয়নি। নতুন করে বলা হচ্ছেও না।

কিভাবে বিচারের নামে ‘খাড়াইয়া যামু বসাইয়া দেবেন’ টাইপের নাটক করা হয়েছে তা স্কাইপ কেলেঙ্কারির মাধ্যমে দেশের মানুষ অনেক আগে থেকেই জানেন।

দেশের মানুষ শুধু এতটুকুই জানতো না যে, ৭২- ৭৫ সালে আ. লীগ কতটা স্বৈরাচারী আর জালিম হয়ে এদেশের মানুষের বুকে চেপে বসেছিল।

তাই নতুন করে তাদের জানার সুযোগ হচ্ছে।

বিচারের মালিক আল্লাহ। তিনি জুলুম সহ্য করেন না। নিশ্চয়ই তিনি এ মজলুমদের আর্তনাদ শুনতে পান। নিশ্চয়ই তিনি একটু সুন্দর সমাপ্তি টানবেন। যেদিন জানাযার জন্য লোক মাইকিং করেও খুঁজে পাওয়া যাবে না ইনশাআল্লাহ ৷

আবুল আসাদ প্রিয় লেখক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী এবং কলামিস্ট......

আবুল আসাদ (জন্ম: ৫ আগস্ট ১৯৪২) একজন বাংলাদেশী সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট। তিনি দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার সম্পাদক।

তিনি ১৯৪২ সালে বাংলাদেশের রাজশাহী জেলার বাগমারা থানার নরসিংহপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা এ, কে, ছামছালুল হক ভারতের বেনারসের মাদ্রাসা থেকে শিক্ষা লাভকারী একজন আলেম ছিলেন। তার মাতার নাম মজিদা বেগম।
আবুল আসাদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএ পাশ করেন। ছাত্রজীবন থেকে তার লেখক ও সাংবাদিকতা জীবনের শুরু।
তিনি কয়েকটি দৈনিক ও সাপ্তাহিকে রাজশাহী সংবাদদাতা হিসাবে কাজ করেছেন।

১৯৭০ সালে ১৭ই জানুয়ারী দৈনিক সংগ্রামে সহকারী সম্পাদক হিসাবে যোগদানের মাধ্যমে তিনি সার্বক্ষণিক সাংবাদিক জীবনের শুরু করেন। ১৯৮১ সালে তিনি দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
তিনি একজন প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক।

এ পর্যন্ত প্রকাশিত তার গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ইতিহাস গ্রন্থ 'কালো পঁচিশের আগে ও পরে' এবং 'একশ' বছরের রাজনীতি', ঐতিহাসিক ঘটনার চিত্রধর্মী গল্প 'আমরা সেই সে জাতি' (তিন খন্ড) এবং প্রবন্ধ সংকলন 'একুশ শতকের এজেন্ডা'। তার সবচেয়ে সাড়া জাগানো সাহিত্যকর্ম হলো সাইমুম সিরিজ।

মামলা ও গ্রেফতারঃ-
দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ছাপাখানা সিলগালা হওয়ার পর দৈনিক সংগ্রামের ছাপাখানায় আমার দেশ মুদ্রণের অভিযোগে ১৫ এপ্রিল ২০১৩ তারিখে আবুল আসাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়।
এ মামলায় ছাপাখানার ১৯ কর্মচারী গ্রেফতার হয়। এছাড়া আবুল আসাদকে ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১১ তারিখে দৈনিক সংগ্রাম কার্যালয় থেকে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হন। পরে ঢাকার রমনা থানার রাজনৈতিক দলের মিছিলে অংশগ্রহণের মামলায় আদালত তাকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠায়। পুলিশের দায়ের করা এ মামলায় রাস্তায় মিছিল থেকে গাড়ি ভাংচুর ও বিশৃঙ্খলার অভিযোগ তোলা হয়।
আবুল আসাদ ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১১ তারিখে আদালত থেকে জামিন পেয়ে কারামুক্ত হন।

তাঁর লেখা বই সমূহঃ-
একুশ শতকের এজেন্ডা, সময়ের সাক্ষী, ওয়ান ইলেভেনের পূর্বাপর দৃশ্যপট, একাত্তর এবং অন্যান্য প্রবন্ধ, কালো পঁচিশের আগে ও পরে, যুগ সন্ধিক্ষণের পৃথিবী, একশ বছরের রাজনীতি, আমরা সেই সে জাতি।

সাইমুম সিরিজের পর্বগুলোঃ-
অপারেশন তেলআবিব-১
অপারেশন তেলআবিব-২
মিন্দানাওয়ের বন্দী
পামিরের আর্তনাদ
রক্তাক্ত পামির
রক্ত সাগর পেরিয়ে
তিয়েনশানের ওপারে
সিংকিয়াং থেকে ককেশাস
ককেশাসের পাহাড়ে
বলকানের কান্না
দানিয়ুবের দেশে
কর্ডোভার অশ্রু
আন্দালুসিয়ার প্রান্তরে
গোয়াদেলকুইভারে নতুন স্রোত
আবার সিংকিয়াং
মধ্য এশিয়ায় কালো মেঘ
ব্ল্যাক ক্রসের কবলে
ব্ল্যাক ক্রসের মুখোমুখি
ক্রস এবং ক্রিসেন্ট
অন্ধকার আফ্রিকায়
কঙ্গোর কালো বুকে
অদৃশ্য আতঙ্ক
রাজচক্র
জারের গুপ্তধন
আটলান্টিকের ওপারে
ক্যারিবিয়ানের দ্বীপদেশে
মিসিসিপির তীরে
আমেরিকার এক অন্ধকারে
আমেরিকায় আরেক যুদ্ধ
এক নিউ ওয়ার্ল্ড
ফ্রি আমেরিকা
অক্টোপাশের বিদায়
সুরিনামের সংকটে
সুরিনামে মাফিয়া
নতুন গুলাগ
গুলাগ অভিযান
গুলাগ থেকে টুইনটাওয়ার
ধ্বংস টাওয়ার
ধ্বংস টাওয়ারের নীচে
কালাপানির আন্দামানে
আন্দামান ষড়যন্ত্র
ডুবো পাহাড়
পাত্তানীর সবুজ অরণ্যে
ব্লাক ঈগলের সন্ত্রাস
বসফরাসের আহ্বান
রোমেলি দুর্গে
বসফরাসে বিস্ফোরণ
মাউন্ট আরারাতের আড়ালে
বিপদে আনাতোলিয়া
একটি দ্বীপের সন্ধানে
প্যাসেফিকের ভয়ঙ্কর দ্বীপে
ক্লোন ষড়যন্ত্র
রাইন থেকে অ্যারেন্ডসী
আবার আমেরিকায়
ডেথ ভ্যালী
আর্মেনিয়া সীমান্তে
আতঙ্কের দিভিন উপত্যকা
রত্ন দীপ
বিপন্ন রত্নদ্বীপ
হুই উইঘুরের হৃদয়ে (প্রকাশিতব্য)

আবুল আসাদ। মহাসাগরের মধ্যখানে শত ঝড় ঝঞ্ঝার পরেও যদি একটি বাতিঘরও টিকে থাকে, সেটি তিনিই।
দক্ষ নাবিকেরাও দিক হারিয়ে বিষম খেলে যে আলোটি জ্বল জ্বল করে সে আবুল আসাদই। তৃতীয় বিশ্বের অনুন্নত শহরের সেকেলে টেবিলে বসে, যেখানে বিদ্যুতের বাতিটাও মোমের আগুনের মতো গেলাম গেলাম অস্থিরতার প্যান পেনিয়ে জ্বলত- সেখানে বসেই কলমের ঘাড়ে সওয়ার হয়ে যিনি চলে যেতেন ককেশাসের সফেদ তুষারাচ্ছাদিত পাহাড়ের গায়ে, সেখান থেকে মিন্দানাওয়ের বন্দী হয়ে কখনও তিয়েনশান, সিংকিয়াং হয়ে বলকান এভাবে এক এক করে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মণিমুক্তা কুড়িয়ে কুড়িয়ে যিনি গড়ে তোলেন সাইমুম- ইনি সেই আবুল আসাদ।

যখন মাসুদ রানার লম্পট চরিত্র নিয়ে অন্য লেখকেরা এক নারী হতে অন্য নারীর শরীর চেখে বেড়ায় তখন আবুল আসাদ আহমদ মুসাকে নিয়ে আঁকতে থাকেন এক বিপ্লবী চরিত্রের ছবি।

কি এক অপরূপ সেই শিল্প কর্ম, যেন জলরঙে আঁকা একটি ছবিতেই দর্শন, ইতিহাস, যুক্তি, ক্লাইম্যাক্স, প্রেম, আধ্যাত্মিক পরিচয় ও বিশ্ব মুসলিম পরিচয়ের এক সুনিপুণ সম্মিলন তিনি ঘটাতেন সেখানে।

কেউ হিমু কে গড়েছেন, কেউ গড়েছেন মাসুদ রানা- এই সব চরিত্রকে এক পাল্লায় রেখে শুধু আহমদ মুসাকে যদি আরেক পাল্লায় রাখা হয়, নিঃসন্দেহে সাহিত্য সমালোচক আহমদ মুসা নামক চরিত্রটিকে তৈরি করার দক্ষতাকে শতগুণ বেশি ভারি হিসেবে দেখতে বাধ্য হবেন।
এ হচ্ছেন খুব সংক্ষেপে আবুল আসাদ।
যিনি ঝড়ে বক মারা দরবেশ নন, তিনি সুদীর্ঘ পোক্ত শিকড়ের পত্রপল্ববে সুশোভিত মহীরুহ।

এ পর্যন্ত এই সিরিজের ৬১ টি বই প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বর্তমানে সংগ্রামের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন ছাড়াও তাঁর বহুমুখী সাহিত্যকর্ম অব্যাহত রেখেছেন।

আল্লাহ তাকে হেফাজত ও হায়াতে তাইয়্যেবা দান করুন। আমিন।

সংগৃহিত...

পঠিত : ৬১৬ বার

মন্তব্য: ০