Alapon

আদৌ কি মুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকারদের তালিকা তৈরি করা সম্ভব...?


সব মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধা নয়,আবার সব রাজাকার রাজাকার নয়।

কথাটা আমার নয়,আমার দাদার।আমার দাদা আমাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনাতেন। ছোটবেলায় দাদার মুখে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শুনেছি,মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসিকতার গল্প শুনেছি। রাজাকারদের ভয়াবহতার গল্পও শুনেছি। রাজাকারই আমাদের দেশের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে। আমাদের দেশের সূর্য সন্তানদের হত্যার পিছনে রাজাকারদের ভূমিকা ছিল সবচেয়ে বেশি। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী কাউকে চিনতো নাকি? ওরা চিনিয়ে দিয়েছে।

একবার দাদাকে প্রশ্ন করেছিলাম, সব মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধা নয়, কথাটার মানে কী? দাদা বললেন, বেশির ভাগ মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিল দেশের টানে, দেশকে শত্রুর হাত থেকে বাঁচানোর জন্য। মা বোনের ইজ্জত রক্ষা করার জন্য। কিছু কিছু কুলাঙ্গার যুদ্ধে গেছে লুটপাট করার জন্য। সেই সব কুলাঙ্গাররা দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও অনেকে অস্ত্র জমা দেয়নি। দেশের ভিতরে লুটপাট করেছে। লুটপাট করা মুক্তিযোদ্ধা এখন অনেকেই আছেন হাজার কোটি টাকার মালিক। অথচ যুদ্ধের আগে এরা ছিল দিনমজুর!

যারা রাজাকার ছিল তারা অনেকেই অনিচ্ছায় বাধ্য হয়ে করেছিল।কেউ কেউ পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে সম্পর্ক রেখেছিল শুধু নিজেদের রক্ষার্থে। অনেক গ্রামের মোড়ল বা মেম্বার চেয়ারম্যান শান্তি বাহিনীতে নাম লিখিয়ে তার এলাকা রক্ষা করেছে। তারা মন থেকে করেনি।অনেকে নিজের পরিবার রক্ষার্থে, পরিবারের মহিলাদের ইজ্জত বাঁচাতেও পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক বজায় রেখেছে,তলে তলে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করেছে।

দাদার এক আত্মীয় নিয়মিত পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে উপঢৌকন পাঠাতেন, তাদেরকে ভুল তথ্য দিতেন।ফলে তার গ্রামে কখনো পাকিস্তানি বাহিনী ঢোকেনি এবং কারও কোন ক্ষতি করেনি।এইভাবে সে তার নিজ গ্রাম রক্ষা করেছে। প্রকৃতপক্ষে সেও ছিল একজন মুক্তিযোদ্ধা!

অনেকেই আছেন নিজের ছেলেকে মুক্তিযুদ্ধে পাঠিয়ে নিজে শান্তি বাহিনীতে নাম লিখিয়েছিলেন শুধুমাত্র নিজের দেশ এবং পরিবারের রক্ষার্থে। তাকে কি বলা হবে? মুক্তিযোদ্ধা নাকি রাজাকার?

স্বাধীনতার পন্ঞাশ বছর পর কে মুক্তিযোদ্ধা আর কে রাজকার তা নির্নয় করা কঠিন। এটা করাও এক ধরনের বোকামি। কখনোই সরকারের পক্ষে সঠিক তালিকা করা সম্ভব নয়। নাম না জানা অনেক মুক্তিযোদ্ধা যেমন হারিয়ে গেছে তেমনি গাপটি মেরে থাকা অনেক রাজাকার মুক্তিযুদ্ধের নাম ভেঙে খেয়ে মুক্তিযোদ্ধা হয়ে গেছে।

ধর্মের দোহাই দিয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে হিন্দুদের। অনেক হিন্দু প্রতাপশালী লোক বাধ্য হয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে তাল মিলিয়ে চলেছে কিন্তু তারা রাজাকার নয়।

দাদা বললেন, মুক্তিযুদ্ধের নাম ভেঙে খেয়ে কত লোক মন্ত্রী এমপি হয়ে গেল। অথচ যুদ্ধের সময় এদের অনেকের নাম কেউ শুনিনি। সব দলের সব বড় নেতারাই এখন মুক্তিযোদ্ধা!

মুক্তিযুদ্ধের তালিকা করতে যেয়ে সরকার দেশে আরও বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে। কাজের কাজ কিছুই হবে না।

Hanif Wahid

পঠিত : ৮২৫ বার

মন্তব্য: ০