Alapon

ঢাবি সমাচার! গরুর মাংশই যার সুচনা।

সালটা ছিল ১৯০৫। বাংলার মানুষদের সামাজিক অর্থনৈতিক উন্নতির নিমিত্ত করা হল বঙ্গভঙ্গ। কিন্তু হিন্দু সাম্প্রদায়িক কবি-সাহিত্যিক এবং কংগ্রেস এক যোগে এর প্রবল বিরোধীতা করতে লাগল। শুরু হল স্বদেশীয় আন্দোলনের নামে মুসলিম বৈরিতা এবং হিংসাত্ত্বক সন্ত্রাসী কর্মকান্ড। (এই সংক্রান্ত একটি লেখা দেয়ার ইচ্ছা আছে) বাধ্য হয়ে ইংরেজ সরকার বঙ্গভঙ্গ রদ করেন। তারা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন যে হিন্দুদের দাবি অযৌক্তিক এবং অন্যায্য। রাজনৈতিক সন্ত্রাসীদের কাছে ছিল তারা একেবারেই অসহায়।
 
সে অনেক পানি গড়িয়ে ইংরেজ সরকার মুসল্মানদের জন্য মন্দের ভাল হিসেবে বাংলাতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার ঘোষনা দেয়। যদিও বঙ্গভঙ্গ রদের ফলে হারানো সুযোগ সুবিধার বিপরীতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ঘোষনা ছিল খুব নগন্য। তারপরেও এ কে ফজলুল হক এক বক্তূতায় বলেন,
"বঙ্গভঙ্গ রদের বিপরীতে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষনা শুনতে পেয়েছি। কিন্তু আমি অবশ্যই বলব যে আমারা যা আশা করেছিলাম সেদিক দিয়ে এ অতি তুচ্ছ। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বকে ছোট করতে চাই না। কারন পূর্ব বাংলার শিক্ষার উন্নয়নে যে অন্তরায় সৃষ্টি হয়েছিল তা এর দ্বারা বিদূরিত হবে।"
 
কিন্তু হিন্দু পন্ডিত , রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় পুরহিতরা চাননি যে এখানে এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয় হোক। তারা আশংকা করেছিল যে এখানে এই মানের একটি প্রতিষ্ঠান হলে মুসলমানরা সুশিক্ষিত হয়ে রাজনৈতিক এবং সামাজিক ভাবে সচেতন হবে। এতে করে তাদের মুসলমানদের পদানত করার প্রক্রিয়ায় ভাটা পড়বে। তাই সরকার কর্তিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যায় প্রতিষ্ঠার ঘোষনায় তাদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। কতিপয় কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ অগ্নিশর্মা হয়ে এ সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ করল। আর সংগে সংগে আন্দোলনে নেমে পড়ল হিন্দুরা। তারা ১৯১২ সালের ২৮ শে মার্চ কলকাতা গড়ের মাঠে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্তে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে। আশ্চার্য জনক ব্যাপার হল যে সেই সভার সভাপতিত্ত্ব করেন আমাদের! রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর বাবু। অথচ বিস্ময়কর ব্যাপার যে পূর্ববঙ্গে রবিন্দ্রনাথের বিশাল জমিদারি ছিল। তারপরেও তিনি চাননি যে তার মুসলমান প্রজারা শিক্ষিত হোক। এর মাধ্যমে রবিন্দ্রনাথ চরম ফ্যাসিষ্ট পারসন এবং সাম্প্রদায়িক কবি হিসেবে নিজেকে প্রমান দেন। যদিও এই ঘটনার বিপরীতে পরবর্তিকালে রবিন্দ্রনাথ কোন প্রকার ক্ষমা কিংবা ভুল স্বীকার করেননি। তৎকালিন হিন্দু পত্রিকাগুলোও এর বিরুদ্ধে প্রচন্ড লেখালেখি করেছিল। হিন্দু বুদ্ধিজীবি ও নেতৃস্থানীয়রা মিটিং করে এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে সরকারের কাছে স্বারকলিপি পাঠাতে লাগলেন।
 
বাবু গিরীশচন্দ্র ব্যানার্জি, ডঃ রাসবিহারী ঘোষ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর আশুতোষ মুখার্জি নেতৃত্বে বাংলার এলিট হিন্দুরা তদানন্দিন ভাইসয়ের লর্ড হার্ডিঞ্জ এর উপর চাপ প্রয়োগ করার জন্য মোট ১৮ বার স্বারকলিপি দিলেন।
(সুত্রঃ কলকাতা ইউনিভার্সিটি কমিশন রিপোর্ট, ভলিউম ৪)
তাদের যুক্তি ছিল খুবেই ছিলি এবং হাস্যকর। যুক্তি শুনলে তাদের হিংসাত্বক মানসিকতার প্রমান মেলে। যেমন তারা বলল, "যেহেতু পূর্ব বাংলার মুসলমানরা অধিকাংশই কৃষক তাই বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করলে তাদের কোন উপকার হবে না।" বঙ্গভঙ্গের সময় যেমন সব হিন্দু একাট্টা হয়েছিল তেমনি এবারও তাই ঘটল। পূর্ববঙ্গের হিন্দুতো বটেই ঢাকার হিন্দুরা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে বাধা দেবার জন্য এগিয়ে এল। যেমন,
"এ হিস্টোরি অফ ফ্রিডম মুভমেন্ট" বইয়ে বলা হয়েছে,
'পূর্ববাংলার প্রায় দুইশত গন্যমান্য হিন্দু ঢাকার প্রখ্যাত উকিল বাবু আনন্দ চন্দ্র রায়ের নেতৃত্বে ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের তীব্র বিরোধীতা করে ভাইসয়র কে একটি স্বারকলিপি দিয়েছিল।' এভাবেই প্রতিক্রিয়াশীল হিন্দুদের তীব্র বিরোধীতার মধ্যে দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল আজকের ঢাকা বিশ্বদ্যালয়। প্রতিষ্ঠিত হবার দীর্ঘদিন পর্যন্তা হিন্দুরা ঢাবি কে মজা করে "মক্কা বিশ্ববিদ্যালয়" বলে ডাকত। এমন কি মোহিতলাল মজুমদারের মতো পন্ডিত ঢাবিতে বাংলা সাহিত্যের ক্লাসে পাঠদানের সময় বিদ্রুপ করে বলতেন,
"মুসলমানদের কালচার হচ্ছে এগ্রিকালচার। তাদের হাতে সাহিত্য মানায় না।"
 
সেই ঢাবিতে চারুকলার কেন্টিনে গরুর মাংশ থাকার অপরাধে তান্ডব চালনো হয়। আবার গরুর মাংশ রাখার জন্য শাস্তি দাবি করা হয়। কত হীন নীচ হলে পরে এমন করতে পারে। আমাদের পন্ডিত বোদ্ধারা রাজনৈতিক এবং স্বার্থান্বেশী মুর্খ। তারা বাংলার ইতিহাসকে বিচার করে ১৯৪৭ সালের পর থেকে। অবশ্য তারা ঐ মাপের এবং মানের ইতিহাসবিদ। এদের কারনে ঢাবি হারিয়েছে তার প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামক খেতাবটি।
 

পঠিত : ১০৬৭ বার

মন্তব্য: ০