Alapon

বাঙ্গালী মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আর কত কল্প কাহিনী বানাবে?


ছবির পোস্টের লেখক অভিক রয়, বুয়েটের ছাত্র এখন আমেরিকার এক বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছে। সেই পোস্ট লাইক দিয়েছে ১ হাজারের উপর মানুষ। তারমানে কয়েক হাজার মানুষ তার এই পোস্ট পড়েছে, আর ১ হাজার মানুষ তা সত্য বলে মেনে নিয়েছে ।


অভিক লিখেছে পাকিস্তান মিলিটারিরা ১৯৭১ এর ১৪ ডিসেম্বর এ যত বেশি পিএইচডি স্কলার হত্যা করেছে তত বেশি পিএইচডি গত ৪৮ বছরে বাংলাদেশ প্রডিউস করে নাই। অভিক আরও লিখেছে ঐ এক ১৪ ই ডিসেম্বরে যত বেশি স্কলার হত্যা হয়েছে তত বেশি 'ট্রু' স্কলার নাকি এখন বাংলাদেশে জীবিত নাই।


তার মানে কি দাঁড়ালো?


মাত্র ২৪ বছরে ইস্ট পাকিস্তান মোটে ৫ টা ইউনিভার্সিটি থেকে ৭ কোটি জনগনের মাঝ থেকে যত বেশি পিএইচডি স্টুডেন্ট জন্ম দিয়েছে, তার ধার কাছে পিএইচডি স্কলার বের করতে পারে নাই স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। গত ৪৮ বছরে ১২ কোটি জনগন থেকে।


চলেন কিছু হিসাব করিঃ


১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত, ২৪বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাঃ ৬।
১৯৭০ সালে এই ভুখন্ড, তথা পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা ঃ ৭ কোটি।


১৯৭১ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত , ৪৮ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাঃ ১৩৪টি।
২০১৯ সালে এই ভুখন্ডের, তথা বাংলাদেশের জনসংখ্যা ঃ ১৭ কোটি।


বাংলাদেশের সরকারী হিসাবে ১৯৭১ এর ৯ মাস ব্যাপি যুদ্ধে পাক বাহিনীর হাতে নিহত বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা ১,১১১, যাদের মাঝে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অনলি ২১ জন, যাদের কেবল ১০ জন পিএইচডি ডিগ্রিধারী। বাদবাকি ৯৬৮ জন হচ্ছেন প্রাইমারি-মাধ্যমিক- উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষাবিদ। এই হিসাবগুলো বোঝা খুব জরুরী।


আবার বলি, কেবল ১৪ ডিসেম্বর নয় , পুরা ৯ মাসে পাক বাহিনীর হাতে নিহত হওয়া পিএইচডি স্কলারের সংখ্যা হচ্ছে ১০ জন।


কামন অভিক, হ্যাভ সাম রেস্পেক্ট ফর ইয়োর অউন ইন্সটিটিউশান।


বুয়েট গত প্রায় ৪০ বছর ধরে পিএইচডি দিয়ে আসছে, যদি ন্যুনতম ভাবে হিসাব করে বছরে ১ জন স্টুডেন্টকে এই পিএইচডি ডিগ্রি দেয়া ধরি, তাহলে কেবল বুয়েট থেকেই বের হয়েছে ৪০ এর অধিক পিএইচডি, আচ্ছা যান, কমিয়ে অর্ধেক করে দেই, তাহলেও সেই সংখ্যা ২০, যা ৭১ এর ৯ মাসের শহীদ পিএইচডির সংখ্যার দ্বিগুণ।


এর উপর যোগ করুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। কেবল ২০১৯ সালেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ২২ জনকে পিএইচডি দিয়েছে, প্রতিবছর যদি গড়ে ১০ জনও ধরি তাহলে গত ৪০ বছরেই বের হয়েছে ৪০০ পিএইচডি।


বাদবাকি ইউনিভার্সিটির হিসাব আর করলাম না। অভিকের পোস্টের হিসাব কেবল বুয়েট আর ঢাকা ইউনিভার্সিটি দিয়েই ফেল মেরে গেছে। এমন কথা বলাই বা কেন যা সহজে বাতিল বলে প্রমাণ করা যায়?


এর উপরে আছে আরেক হিসাব। অভিকেরা হচ্ছে আওয়ামী ধর্মের অনুসারী। গত ৪৮ বছরের মাঝে ১৯ বছর বাংলাদেশ আওয়ামী সরকারের প্রশাসনে চলছে, কেবল গত ১০ বছর ধরেই টানা এক চেটিয়া সরকার চালাচ্ছে শেখ হাসিনা, উন্নয়নের শিখরে নাকি দেশ, মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উড়ছে। কি করল শেখ হাসিনা যে ইয়াহিয়া-আইয়ুব দের শিক্ষা রেকর্ডই ভাঙতে পারে নাই?


অভিক আসলে পাকিস্তানকে পচাতে গিয়ে বাংলাদেশকে পচিয়ে ফেলছে, আইয়ুব-ইয়াহিয়া খানদের আমলকে বঙ্গবন্ধু-হাসিনার আমলের চাইতে অনেক বেশি জ্ঞানবিজ্ঞানে উন্নত বলে ফেলছে। একে সত্য অর্থে পাকিস্তানের দালাল বলাই যায়।


এসব আসলে চেতনার প্রভাব। যত বেশি চেতনা এরা তত বেশি পাক সেনাদের হাতে নিহত আর নির্যাতিত হওয়ার স্বপ্ন দেখে। এবার ঘটনা ঘটলে ঘটুক না ঘটলে নাই, সংখ্যা আর লজিক মিললে মিলুক না মিললে নাই। মুখ দিয়ে যখন বের করেছি, লিখে ফেলো পাথরে।

Sabuna Ahmed

পঠিত : ৫৮১ বার

মন্তব্য: ০