Alapon

পরাজয় আপনার ললাট লিখন নয়...


যারা জীবন সন্মন্ধ্যে হতাশ, তাদের বলি, নিজেকে জানুন, নিজের ভেতরে অফুরাণ শক্তি আর সীমাহীন সম্ভাবনার কথা ভাবুন, উপলব্ধী করুন। আপনার জন্ম পরাজয় মেনে নেবার জন্য হয়নি। আপনি সফলদেরই একজন! একেবারে শুরু থেকেই সফল একজন!

মাতৃগর্ভে আসার একেবারে সূচনালগ্নে পচিশ কোটি শ্রুক্রকীটের মধ্যে আপনিও একজন! নিক্ষিপ্ত হবার পরে আপনারা এই পচিশ কোটি জন ম্যা্রাথন রেসে মা'র ডিম্বানূ পানে ছুটেছিলেন । আপনিও ছিলেন এই পচিশ কোটি জনের মধ্যে।

কল্পনা করতে পারেন? পচিশ কোটি জনের মধ্যে আপনিও উর্দ্ধশ্বাসে ছুটে চলেছেন! সেই প্রতিযোগিতায় চব্বিশ কোটি নিরানব্বই লক্ষ নিরানব্বই হাজার নয়শত নিরানব্বই জনকে পেছনে ফেলে এই আপনি, হ্যাঁ, আপনি প্রথম মা'র ডিম্বাশয়ে পৌছে গেছেন! পচিশ কোটির মধ্যে আপনিই একমাত্র সফল ব্যক্তি, আপনার সফলতার যাত্রাতো সেদিন থেকেই শুরু হয়েছে।

সেই মহা চটকদার, চিত্তাকর্ষক, বিষ্ময়কর সফলতার সুত্র ধরেই আপনার এই জীবন প্রাপ্তি! এ জীবনতো গৌরবময় বিজয়টাকে উদযাপন করার জন্যই! সফলতা দিয়ে শুরু যার, সে পথে কেন আবার ব্যর্থতা আসবে?

আপনি পৃথিবীতে এসেছেন এক পরিবর্তিত পরিবেশে। এই পরিবেশের জন্য প্রয়োজনীয় সকল উপাদান আপনাকে দেয়া হয়েছে। শরীর, মন, শক্তি, বুদ্ধি-বিবেক, জ্ঞান-প্রজ্ঞা- বিচক্ষণতা, সব। যিনি পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন সেই তিনিই ভালো মন্দ, উচিৎ- অনুচিৎ বোঝার ক্ষমতাও দিয়েছেন, (কুরআন-৯১:৮) । অতএব আপনার ব্যর্থ হবার কোনো কারণই নেই।

আপনি কী হ্যারি পটার পড়েছেন? বইটির লেখিকা লেখা নিয়ে প্রকাশকের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন, এক এক করে বারোজন প্রকাশক তার লেখা ফিরিয়ে দিয়েছেন এই বলে যে, লেখাটি প্রকাশযোগ্য হয় নি, বাজারে বিকোবে না। তের নম্বর প্রকাশকও লেখাটি ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু প্রকাশকের কিশোরী কন্যা ঘটনাক্রমে বই এর পান্ডুলীপিটা পড়ে বাবার কাছে জেদ করে বসে; ঐ পানডুলীপিটাকে বই বানিয়ে দিতে হবে! কন্যার আব্দার রাখতেই প্রকাশক শেষ পর্যন্ত অনিচ্ছা সত্তেও জে কে রোউলিং এর লেখাটা বই আকারে প্রকাশ করে।

আর এর পরে যেটা ঘটেছে, সেটা অবিশ্বাস্য, কেবলই ইতিহাস! দ্যা ভিন্সি কোড এর পরে বিশ্বের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যায় বিক্রিত বই; ৪৫ কোটি কপি বিক্রি হয়েছে! পর পর বারো জন প্রকাশকের কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে মিসেস রোউলিংস যদি হাল ছেড়ে দিতেন তা হলে কী আজ তিনি এই ইতিহাস রচনা করতে পারতেন?

বিশ্বের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ও খ্যাতিমান বাস্কেটবল খেলোয়াড় মাইকেল জর্ডান জীবনে নয় হাজার বার লক্ষ্যভেদে ব্যর্থ হয়েছেন, তিনশত ম্যাচ হেরেছেন, দলকে অন্তত ছাব্বিশ বার নিশ্চত জয় থেকে বঞ্চিত করেছেন। বার বার হেরেছেন, কিন্তু হাল ছাড়েননি। আজ তিনি বিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাস্কেটবল খেলোয়াড়।

স্কুলে ভর্তির তিন মাস পরেই প্রধান শিক্ষক এডিসনের মা'কে ডেকে আনিয়ে তার হাতে ছেলেকে তুলে দেন, বলেন, আপনার ছেলের মাথায় কিচ্ছু নেই! ওকে দিয়ে লেখা পড়া হবে না, বাড়ি নিয়ে যান। মা অপমানিতা হয়ে ছেলেসহ ফিরে আসেন, বাড়িতে নিজের ত্বত্তাবধানে ছেলেকে লেখা পড়া করাতে থাকেন। আর এই এডিসনই কিনা বিদ্যূৎ আবিস্কার করে বিশ্বকে আলোকিত করেছেন! হয়েছেন জগৎজোড়া বিখ্যাত বিজ্ঞানী!

জানেন কী, এডিসন দুই হাজার বার চেষ্টা করেও বাতি জ্বালাতে ব্যর্থ হন। বিরক্ত হয়ে তার সহকারী বলে উঠেন, আমরা এত চেষ্টা করেও কিছুই করতে পারলাম না! কিছুই শিখলাম না! এডিসন জবাব দিলেন, আমরা কিছু শিখি নাই, তা নয়। আমরা দুই হাজারটা পথ শিখেছি, এই দুই হাজার পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ বাতী জ্বালানো সম্ভব নয়। হতাশ সহকারী হাল ছেড়ে দিলেও প্রচন্ড আত্মবিশ্বাসী এডিসন কিন্তু ছাড়েন নি, পরের বারেই তিনি সফল হন। আজ তিনি ইতিহাস! আপনি কী এডিসনের চেয়েও স্বল্পবুদ্ধিসম্পন্ন? অবশ্যই তা নন। তা হলে কেন হেরে যাবেন? কেন ব্যর্থ হবেন?

জার্মান সুরসম্রাট বিটোফেন জীবনের একটা পর্যায়ে তার শ্রবণক্ষমতা হারিয়ে কিছুই শুনতে পেতেন না। অথচ তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ চারটি সূর এই সময়টাতেই করেছেন! বধিরতা তার সৃষ্টিশীলতাকে আটকাতে পারে নি। আপনি তো বিটোফেন এর মত বধির নন! তবে কেন ব্যর্থ হবেন?

আইনস্টাইনের চার বৎসর বয়স পর্যন্ত কথাই ফোটেনি মুখে! সাত বৎসর বয়স না হওয়া পর্যন্ত তিনি পড়্তেই পারতেন না! শিক্ষকরা ভেবেছিলেন ছেলেটা বোধ হয় মানসিক প্রতিবন্ধী! সেই ছেলেই কি না হয়ে উঠলো জগৎবিখ্যাত বিজ্ঞানী! আপনাকে কী কেউ আজ পর্যন্ত মানসিক প্রতিবন্ধী ভেবেছে? ভাবে নি। তার মানে হলো, আপনি আইনস্টাইনের চেয়েও বুদ্ধিমান ! তা হলে আপনি কেন সফল হবেন না?

একটা গল্প বলেই শেষ করি। এক লোকের এক গাধা ছিল, গাধাটা বুড়ো হবার কারণে সে আর আগের মত বোঝা টানাতে পারতো না, স্বাভাবিকভাবেই তার প্রতি মালিকের খুব একটা খেয়ালও ছিল না।

একবার গাধাটা অসাবধানবশত বাড়ির পাশে একটা পরিত্যক্ত কুয়োর মধ্যে পড়ে চেঁচামেচি করতে থাকে। মালিক তার অবস্থা দেখে ভাবলো, গাধাটাকে তুলে এনে লাভ নেই। ওতো এমনিতেই মরেছে, অতএব ওখানেই কবর দিলেই হলো। কয়েকজনকে ডেকে সকলে মিলে কুয়োর মধ্যে মাটি ফেলতে থাকে।

গাধা ব্যপারটা বুঝতে পেরে মৃত্যু আতংকে আতংকিত হয়ে আরও বেশি চিৎকার শুরু করে। তার চিৎকারে অতিষ্ঠ বুড়ো ও তার দল বল আরও জোরে মাটি ফেলতে থাকে। কিছুক্ষণ পরে মালিককে অবাক করে দিয়ে গাধাটা আর কোনো চেঁচামেচি করছে না দেখে মালিক ভাবলো গাধাটা বোধ হয় মাটি চাপা পড়েছে!

আসলে মালিকের উদ্দেশ্য বুঝতে পারার পর গাধাটা চিৎকার চেঁচামেচি না করে সেখান থেকে উঠে আসার পথ খুঁজতে লাগলো এবং অচিরেই সে তো পেয়েও গেল! প্রতিবার নিক্ষিপ্ত মাটি কুয়োর মধ্যে পড়ছিল, আর গাধা চুপ চাপ তারই উপর উঠে দাঁড়াচ্ছিল। এভাবে মাটি যত উঁচুতে উঠে আসছিলো, সে সাথে গাধাটাও! কূয়ো ভরাট হবার মত অবস্থায় এলো, গাধাটা সবাইকে অবাক করে এক লাফে কুয়ো থেকে উঠে আসলো!

গল্পটার শিক্ষাটা হলো, আপনার জীবনে যে সব বিপদ-আপদ আসে সে সবে ধৈর্য না হারিয়ে ঠান্ডা মাথায় তা মোকাবেলা করতে হয়। মনে রাখতে হয়, বিপদ আপদ ভেঙ্গে ফেলতে আসে নি, তা এসেছে আপনাকে আরও শক্ত, আরও দক্ষ, আরও যোগ্য হিসেবে গড়তে। একবার ভাবুনতো আইনস্টাইন, এডিসন, জে কে রোউলিং এরা যদি ব্যর্থতা দেখে হতাশ হয়ে পড়তেন তা হল কী আজ ইতিহাস রচনা হতো?

ইতিহাস সৃষ্টিকারী অত্যন্ত সফল ঐ সব ব্যক্তিবর্গের চেয়ে আপনি কোনো অংশেই কম নন। হ্যাঁ, বিশ্বাস করুন, আপনি ভীষণ বুদ্ধিমান। আইনস্টাইনের হাতে যে সুযোগ ও সম্পদ ছিল না, এই একবিংশ শতাব্দীতে আপনার হাতে তা আছে। আপনার এখন দরকার একাগ্রতা আর লেগে থাকার মত ধৈর্য। আপনি লেগে থাকুন, সফলতাই আপনার ভাগ্য লিখন, কেননা সফলতা দিয়েই আপনার জীবন শুরু, পরাজয় আপনার বিধিলীপি নয়।

লিখেছেন: জিয়াউল হক

পঠিত : ৭১৩ বার

মন্তব্য: ০