পাবলিক স্পিকিং এ ভালো করার উপায়...
তারিখঃ ২২ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১১:৩৫
গত সপ্তাহে স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্র ছাত্রীদের পাবলিক স্পিকিং এর একটা কোর্স পড়ানো শেষ করলাম| দুইটা সেকশন এর স্টুডেন্টদের সবাই আমেরিকান| মাত্র ১৪ সপ্তাহের কোর্স| এক সেমিস্টারে স্টুডেন্টদের উন্নতি দেখে অবাক হয়েছি| যে মেয়েটি প্রথম স্পিকিং এ কেঁদে ফেলেছিলো, সেই মেয়েটি ফাইনাল এ A পেয়েছে| ক্লাস চলার সময়ে প্ল্যান করেছিলাম, কিছু টিপস পাঠশালার বন্ধুদের জণ্য শেয়ার করবো| যদিও পাবলিক স্পিকিং এ ভালো করার টিপস এর অভাব নাই কারণ এই ডিসিপ্লিন সব চাইতে পুরুনো| ২০০০ বছর ধরে, চলে আসছে, এখনো কাউকে প্ররোচনা করার জন্য অ্যারিস্টট্ল এর - এথোস, পাথস, লোগোস--এর ব্যবহার হয় | আসল কথা গুলো পয়েন্ট আকারে দিলাম..
শুরু:
১. আমিসহ অনেক কে যে কাজটা করতে দেখিনা সেটা হলো, বক্তব্যের শুরুতে নিজেদের (বক্তাদের) গ্রহণযোগ্যতা (establishing credibility) প্রমান করা| এইটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও খুবই সহজ| শুরুতেই আপনি বলতে পারেন, এই বিষয়ে আপনি ৬ মাস ধরে লেখাপড়া করছেন, এইটা আপনার গবেষণার বিষয়, এইটা আপনি পড়ান, এইটা আপনার ইন্টারেস্ট এর বিষয়, এই বিষয়ে আপনার অভভিজ্ঞতা আছে, ইত্যাদি ইত্যাদি| এই বিষয়ে দুই তিনটা বাক্য বলে দিবে কেন আপনার কথা শ্রোতারা গুরুত্ব দিবে|
২. শুরুতেই, আর একটা জিনিস করা দরকার সেটা হলো শ্রোতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করার চেষ্টা করা| মনোযোগ আকর্ষণ করার কোনো ধারা বাধা নিয়ম নেই, এইটা আপনার ক্রিটিভিটির উপর নির্ভর করবে| কিসু না পারলে, আপনারা কেমন আছেন? আজকের খবর কে কে দেখেছেন? কে কে আজ নতুন বই পাড়া শুরু করলেন? পেছনের কারো দিকে ইঙ্গিত করে বলতে পারেন, পেছনের সাদা শার্ট পাড়া ভাই আপনি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন? এই ধরণের কথা বার্তা দিয়ে শুরু করতে পারেন, এর সাথে নিজের পরিচয় দেয়া|
মূল বক্তব্য:
১, আপনার বক্তব্যের ধরণ জানা| সাধারণত আমাদের বক্তব্য গুলো মূলত তিন ক্যাটেগরির মধ্যে পরেa) শিক্ষামূলক বা তথ্যমূলক b ) প্ররোচনা মূলক(persuasive ) মানে আপনি কাউকে আপনার মতে বা বিশ্বাস এ আনতে চাচ্ছেনc) বিশেষ ধরণের উদযাপন করা, যেমন ধরেন পুরুস্কার গ্রহণ বা প্রদান, বন্ধুর জন্মদিন, বাবার মৃত্যুর পর জানাজার আগ মুহূর্তে| প্রতিটা বক্তব্যের জন্য আলাদা আলাদা কাঠামো আছে, সেগুলো অন্য একদিন পোস্ট দিব|
২. গ্রহণ যোগ্য তথ্য সূত্র উল্লেখ করতে হবে| যেমন ধরেন, বলবেন হংকং এর ইমেজ ফটোগ্রাফিক সার্ভিসেস থেকে ১৯৭২ সালে প্রকাশিত কিশোর পারেখ এর "BANGLADESH A BRUTAL BIRTH " বই এ আমি এই ছবিটি দেখেছি| পারলে পৃষ্টা নম্বর ও উল্লেখ করবেন|
৩. ভাষা হতে হবে স্পষ্ট, ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ ও কাঠামো হবে সুন্দর ভাবে গুছানো|
৪. মাঝে মধ্যে শ্রোতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করা, যেমন ধরেন জিজ্ঞেস করতে পারেন এই বিষয়টাই আপনার কি মনে হয়? কম করে হলেও একজন শ্রোতার নাম লিখে রাখা ও তার নাম ধরে ডাক দিয়ে আলোচনায় অংশ গ্রহণ করতে বলা
শেষ:
আপনারা অনেকেই ভালো বক্তব্য দিয়ে কোনো উপসংহার না টেনেই শেষ করে দেন| পুরো বক্তব্যের একটা সারসংক্ষেপ দেয়া জরুরি| এর সাথে শেষ বাক্যটা এমন হাওয়া উচিত যেটা শ্রোতা অনেক সময় মনে রাখবে|
বিবিধ:
১. পুরো সময়টার জন্য একটা কাঠামো লিখে ফেলা, কোনটার পর কোনটা বলবেন, কোনটাই কতটুকু সময় দিবেন|
২. চেষ্টা করুন শ্রোতা ও আপনার মাঝে যেন কোনো প্রতিবন্ধকতা না থেকে, যেমন ধরুন, ডেস্ক বা টেবিল এর অন্য প্রান্তে না থেকে, সামনের দিতে আসুন|
৩. কোনো কিসুতে হেলান দিয়ে দাঁড়াবেন না| হাতের তালু খোলা রাখুন|
৪. আপনার শ্রোতা করা, এই সম্পর্কে ধারণা নিন|
৫. আলেমদের ওয়াজ শুনতে পারেন (আমার ব্যাক্তিগত মতামত)| আমি ৯টা ওয়াজ এনালাইসিস করেছিলাম, যার মধ্যে ভালো বক্তব্যের সবগুলো উপাদানই পরিপূর্ন ভাবে পেয়েছি|
উপরের এই টিপস গুলো মূলত Joshua Gunn এর Speech Craft বইয়ের সাহায্যে আমার করা একটা নমুনা(rubric) যার ভিত্তিতে আমি স্টুডেন্টদর স্পিচ গ্রেড করি| এই গ্রূপ এ আরও কয়েকজন আছেন যারা পাবলিক স্পিচ পড়ান বা ভালো বক্তা তারাও কিসু ইম্পুট দিলে লেখাটা পূর্ণতা পাবে| এই লেখায় বানানের শুদ্ধতা ও সঠিক বাংলা শব্দের প্রয়োগের ক্ষেত্রে অনেক দুর্বলতা আছে|
লিখেছেন: খাদিমুল ইসলাম
মন্তব্য: ০