Alapon

শাইখ আবু বাকর যাকারিয়াঃ জাহালত নাকি ইলমের সাথে খেয়ানত?


শাইখ আবু বাকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া সাহেব একজন সালাফী আলেম। ঢাকা আলিয়া ও মদিনা ভার্সিটির প্রাক্তন ছাত্র। বর্তমান কর্মরত আছেন কুষ্টিয়া ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে। পাশাপাশি অফলাইন-অনলাইনে দাওয়ার কাজ করে যাচ্ছেন। শাইখ যে বিষয়ে দাওয়াহ দেন বা কথা বলেন এর মধ্যে অন্যতম একটা বিষয় হচ্ছে, বর্তমান বৈশ্বিক জিহাদ, জিহাদী সংগঠন ও মুজাহিদীনদের ব্যাপারে যুবকদেরকে সতর্ক করা। শাইখের ভাষায় “জঙ্গি ও জঙ্গিবাদের ফিতনা থেকে উম্মতকে বাঁচানো”। বিশেষ করে জেনারেল অনেক তরুণ এই আদর্শে প্রভাবিত হবার ফলে শাইখ খুব চিন্তিত-পেরেশান।

একাধিক স্ট্যাটাস ও লেকচার থেকে শাইখের মূল যে অভিযোগ প্রতীয়মান হয়, “বর্তমান বৈশ্বিক জিহাদে নেতৃত্বদানকারী মূল সংগঠন ও তার অনুসারীরা হচ্ছে খারিজী”। এটাই শাইখের মৌলিক অভিযোগ। এর সাথে আরও কিছু শাইখ যোগ করেন, যেগুলো মূলত এটার অনুগামী। এর কারণ হিসাবে শাইখ যেটা উল্লেখ করেন, ‘মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ যে সকল রাষ্ট্রের শাসক, আল্লাহ্‌ তাআলার বিধানের পরিবর্তে, স্বরচিত সংবিধান দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালনা করে, তাদেরকে এরা তাকফীর করে। তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে বৈধ বলে। আর মুসলিমকে তাকফীর করা খারিজীদের কাজ। তাই এরা খারিজী’।

শাইখ সালাফী মতাদর্শে বিশ্বাসী। যার ফলে তিনি সালাফী শাইখদেরকে নিজের আদর্শ মনে করেন। তাদের অনুসরণ করতে বলেন। ইলম ছাড়া নিজে নিজে কুরআন-সুন্নাহ থেকে ইজতেহাদ না করে তাদের ইত্তেবা করতে বলেন। শাইখের নিকট অনুসরণীয় বড় কয়েক জন সালাফী আলেম হচ্ছেন, মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম আলে শাইখ (রহঃ), শাইখ বিন বায রহঃ, শাইখ উছাইমীন রহঃ, শাইখ সলিহ আল-ফাওযান হাফিঃ। এ ছাড়াও গত শতাব্দীর ও বর্তমান শতাব্দীর বড় বড় আরব শাইখগণ আছেন।
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, এসকল বড় বড় প্রায় সকল শাইখ, উক্ত মাসআলার আল-কায়দার মতই বিশ্বাস করেন। এবং আল কায়দার ফাতওয়া ও তাদের ফাতওয়া এক। কিন্তু শাইখ কীভাবে তাদেরকে উম্মতের জন্য অনুসরণীয় উলামা বলেন, আবার তাদের দেয়া ফাতওয়ার উপর বিশ্বাস করার ফলে মুজাহিদীনদেরকে খারিজী বলেন। এই ডাবল স্ট্যান্ডার্ড আচরণ শুধু শাইখ জাকারিয়া করছেন না বরং আরও বেশ কিছু আহলে হাদীস আলেম এমন করে থাকেন। আবার এ ক্ষেত্রে নাম ব্যবহার করেন, সম্মানিত আরব শাইখদের। এবং তাদের অন্য ক্ষেত্রে দেয়া কিছু ফাতওয়ার অপপ্রয়োগ করেন। এটা তাদের জাহালত নাকি খেয়ানত সেটা আমি জানিনা। কিন্তু এর দ্বারা তারা একদিকে উম্মতের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদের বিরোধিতা করছে, অপরদিকে জেনারেল সাধারণ যুবকদেরকে পথ ভ্রষ্ট করছে।

আমি আবারও বলছি, যে মাসআলার ফলে এই আহলে হাদীস আলেমগণ বাংলাদেশের জিহাদ সমর্থকদেরকে খারিজী বলেন, সেই মাসআলায় আরবের প্রখ্যাত অধিকাংশ সালফী আলেমগণ আল-কায়দার মতই ব্যক্ত করেন, এ ক্ষেত্রে তাদের সাথে মুজাহিদীনদের কোন দ্বিমত নেই। সেই মাসআলাটি হচ্ছে- “যে শাসক রাষ্ট্রীয় সংবিধান থেকে শর’য়ী বিধান সমূহকে রহিত করে, মানব রচিত সংবিধান দ্বারা দেশ পরিচালনা করে, আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক প্রদত্ত হালালগুলোকে রাষ্ট্রীয়ভাবে অবৈধ ঘোষণা করে আর হারামগুলোকে বৈধ সাব্যস্ত করে, ইসলামী শরীয়াতের উপর ভিন্ন কোন মতবাদকে প্রাধান্য দান করে, সে ইসলাম থেকে বহিষ্কৃত কাফের ও মুরতাদ হয়ে যায়।”
হ্যাঁ আরবের কিছু আলেমদের সাথে আল-কাইদার যে দ্বিমত আছে বা কিছু আলেম বিরোধিতা করেছেন, সেটা এই মূল মাসআলায় নয় বরং এই মাসআলার সৌদি তৎকালীন শাসকের উপর প্রযোজ্য হবে কি হবে না সেটাই ছিল মূল মতানৈক্যর বিষয়। আর ইলমের একজন প্রাথমিক ছাত্র এই দুই বিষয়ের পার্থক্য সহজেই বোঝার কথা। যেহুতু সেই বিষয়টা আমদের দেশের সাথে সম্পৃক্ত নয় তাই সে দিকে এখন যাচ্ছি না।
বাংলাদেশের কিছু আহলে হাদীস আলেম এটাকেই সুযোগ হিসাবে গ্রহণ করেছেন। বাংলাদেশের মত সুস্পষ্ট কুফরি সংবিধানকে রক্ষা করতে আরব কিছু সম্মানিত আলেমকে ঢাল হিসাবে ব্যবাহার করছেন। অথচ আরবের গ্রহণযোগ্য প্রায় সকল সালাফী আলেমদের এটা সুস্পষ্ট কুফরির হওয়ার ফাতওয়া বিদ্যমান আছে। শুধু শাইখ আলবানী ও শাইখ বিন বায ব্যতিক্রম। আমি শাইখ বিন বাযের দুধরণের ফাতওয়াই পেয়েছি।

আমি আরবের গ্রহণযোগ্য কয়েজন শাইখের ফাতওয়া নিয়ে আসছি। এটা শুধু উদাহরণ সরূপ। অন্যথায় এ ব্যাপারে আলহামদুলিল্লাহ একশতর উপরে আরব শাইখের সুস্পষ্ট ফাতওয়া আমার কাছে বিদ্যমান আছে।
আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি,
শায়েখ মুহাম্মাদ বিন ইব্রাহীম আলে শেখ (রহঃ) বলেন:
لو قال من حكم القانون أنا أعتقد أنه باطل فهذا باطل لا أثر له ، بل هو عزل للشرع ، كما لو قال أحد أنا أعبد الأوثان واعتقد أنها باطل وأما إذا جعل قوانين بترتيب وتخضيع فهو كفر وأن قالوا أخطأنا وحكم الشرع أعدل
যদি বিধান প্রণয়নকারী বলে আমি বিশ্বাস রাখি এটা বাতিলযোগ্য, তার এ কথা ধর্তব্য হবে না। তার এই কাজ হবে শরীয়াতকে প্রত্যাখ্যান , তার কথাটি হবে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে মূর্তি পূজা করে, আর বলে আমি বিশ্বাস করি এটা বাতিল। আর যখন সে ধারাবাহিকভাবে একনিষ্ঠতার সাথে আইন প্রণয়ন করবে তখন সে কাফের হয়ে যাবে যদিও সে বলে, আমি (এই কাজটি) ভুল করছি আর শরীয়াতের বিধানই অধিক ইনসাফপূর্ণ। [আল-ফাতাওয়া, খন্ড:১২, পৃষ্ঠা:২৮০]

তাফসীরুল কুরআন বিল কুরআনের অন্যতম তাফসীর গ্রন্থ “আদওয়াউল বায়ান” প্রণেতা প্রখ্যাত মুফাস্‌সির শাইখ সলিহ আল ফাওজান সহ অনেক শাইখের উস্তায,
ইমাম মুহাম্মাদ আমীন আশ-শানক্বিতী (রহঃ)-
আল্লাহ তায়ালার বাণী:
وَلاَ يُشْرِكُ فِى حُكْمِهِ أَحَدًا ]الكهف [২৬ :
তিনি কাউকে নিজ বিধানের ক্ষেত্রে শরীক করেন না। [সূরা কাহাফ: ২৬]
এর ব্যাখ্যায় এ সমস্ত শাসকদের কুফরির ব্যাপারে একাধিক দলিল পেশ করার পর তিনি উল্লেখ করেন:
وبهذه النصوص السماوية التي ذكرنا يظهر غاية الظهور: أن الذين يتبعون القوانين الوضعية التي شرعها الشيطان على ألسنة أوليائه مخالفة لما شرعه الله جل وعلا على ألسنة رسله صلى الله عليهم وسلم، أنه لا يشك في كفرهم وشركهم إلا من طمس الله بصيرته، وأعماه عن نور الوحي مثلهم.
উপরে উল্লেখিত এ সমস্ত আসমানী দলিল-প্রমাণ দ্বারা পূর্ণরূপে স্পষ্ট হয়, নিশ্চয়ই যে সমস্ত ব্যক্তিরা ঐ প্রণীত সংবিধানের অনুসরণ করে যা শয়তান তার বন্ধুদের মাধ্যমে প্রণয়ন করেছে, যা আল্লাহ তাঁর রসূলের উপর যে সংবিধান অবতীর্ণ করেছেন তার বিপরীত, তাদের কুফরি ও শিরকের ব্যাপারে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। শুধু সেই ব্যক্তিই তাদের কুফরির ব্যাপারে সন্দেহ করতে পারে যার দৃষ্টিশক্তি আল্লাহ নষ্ট করে দিয়েছেন এবং যাকে ওহীর নূর থেকে অন্ধ করে রেখেছেন। [তাফসীরে আদওয়াউল বায়ান, খন্ড:৩, পৃষ্ঠা:২৫৯]

আরবের বিখ্যাত ফকীহ,
শায়েখ উসাইমীন (রহঃ) বলেন:
وهؤلاء المحكمون للقوانين لا يحكمونها في قضية معينة خالفوا فيها الكتاب والسنة لهوى أو لظلم ولكنهم استبدلوا الدين بهذه القوانين جعلوا هذا القانون يحل محل شريعة الله وهذا كفر حتى لو صلوا وصاموا وتصدقوا وحجوا فهم كفار ما داموا عدلوا عن حكم الله وهم يعلمون بحكم الله إلى هذه القوانين المخالفة له } فلا وربك لا يؤمنون حتى يحكموك فيما شجر بينهم ثم لا يجدوا في أنفسهم حرجا مما قضيت ويسلموا تسليما
এই সমস্ত বিধান প্রণয়নকারীরা তো এমন নয় যে তারা নির্দিষ্ট কোন একটি বিষয়ে অন্যায়ভাবে প্রবৃত্তির তাড়নায় কুরআন ও সুন্নাহর বিপরীত আইন প্রণয়ন করছে। এরা তো এই সমস্ত বিধান দ্বারা দ্বীনকে পরিবর্তন করছে। আল্লাহর শরীয়াতের স্থানে এই সমস্ত বিধান বাস্তবায়ন করছে। তাদের এই কাজ কুফরি যদিও বা তারা নামাজ পড়ে, রোজা রাখে, হজ্ব করে, যাকাত দেয়, তথাপি তারা কাফের, যতক্ষণ তারা আল্লাহর বিধান থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে। অথচ এরা আল্লাহর বিধানের বিপরীত বিধান সমূহের ব্যাপারে আল্লাহর হুকুম সম্পর্কে জ্ঞাত। [শরহু রিয়াদুস সলেহীন, অধ্যায়: ফিল আমরি বিল-মুহাফাজাতি আলাস্‌ সুন্নাহ্‌, খন্ড:১, পৃষ্ঠা:১৭৪]

আরবের সুপরিচিত দায়ী,
শায়েখ সলেহ আল মুনাজ্জিদ হাফেযাহুল্লাহু বলেন:
تشريع الأحكام الوضعية المخالفة لحكم الله ورسوله في الدماء والأعراض والأموال ، كفر أكبر مخرج عن ملة الإسلام ، لا شك في ذلك ولا ريب ، ولا خلاف فيه بين علماء الإسلام ، فإن هذا التشريع منازعة لله تعالى في حكمه ، ومضادة له في شرعه ، ......
وإذا كان هذا حكم الله فيمن أراد التحاكم إلى الطاغوت ، فكيف بالطاغوت نفسه الذي يشرع من دون الله . وكيف لا يكون التشريع المخالف لشرع الله كفرا ، وهو لابد يتضمن تحليل الحرام ، وتحريم الحلال ، أو إعطاء المشرعين الحق في ذلك ، فلهم أن يحلوا ما شاءوا ، وأن يحرموا ما أرادوا ، وما اتفق عليه أغلبيتهم كان واجب التنفيذ ، يعاقب ويجرّم من يخالفه ، وهذا غاية الكفر
জান, মাল ও ইজ্জতের ক্ষেত্রে আল্লাহ ও তাঁর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হুকুমের বিপরীত বিধান প্রণয়ন, যা ইসলাম থেকে খারিজ করে দেয়। এ ব্যাপারে কোন সংশয় বা সন্দেহের অবকাশ নেই। উম্মাতের উলামাদের মাঝে এ ব্যাপারে কোন ধরনের দ্বিমত নেই। কেননা বিধান প্রণয়ন আল্লাহ তায়ালার সাথে তার হুকুমের ক্ষেত্রে বিরোধিতা ও তার শরীয়াতের সাথে বৈপরীত্ব।
(অতঃপর এর পক্ষে কোরআন থেকে দলীল উল্লেখ করে বলেন)
যে তাগূতের কাছে বিচার প্রার্থনার ইচ্ছা পোষণ করে তার ব্যাপারে যদি আল্লাহর হুকুম এমনটি হয় তাহলে স্বয়ং ঐ তাগূতের ব্যাপারে তাঁর হুকুম কি হতে পারে যে আল্লাহ তায়ালার বিধানের বিপরীত বিধান রচনা করে?!!
আর আল্লাহর বিধানের বিপরীত বিধান রচনা কেনই বা কুফর হবে না?!! অথচ নিশ্চিতভাবে তার মাঝে অন্তর্ভূক্ত থাকে হালালকে হারাম আর হারামকে হালাল করা। অথবা আইনপ্রণেতাদেরকে উক্ত অধিকার প্রদান করা হয়। তারা যা চায় হালাল করে যা ইচ্ছা হারাম করে। তাদের অধিকাংশ যেটির পক্ষে মত প্রদান করে তাকেই বাস্তবায়ন করা আবশ্যক হয়। যে তার বিরোধিতা করে তাকে অপরাধী গণ্য করা হয়, শাস্তি প্রদান করা হয়। আর এগুলো তো কুফরের চূড়ান্ত পর্যায়! [আল-ইসলাম ওয়াস সুয়াল জাওয়াব, ফতওয়া নং: ১১৮১৩৫]

শাইখ ফাওযান সহ অনেক শাইখের উস্তায,
শাইখ আবদুর রায্‌যাক আফিফী (রহঃ) বলেনঃ
إن من كان منتسباً للإسلام عالماً بأحكامه ، ثم وضع للناس أحكاماً وهيأ لهم نظماً ليعلموا بها ويتحاكموا إليها ، وهو يعلم أنها تخالف أحكام الإسلام ، فهو كافر خارج من ملة الإسلام ، وكذا الحكم فيمن أمر بتشكيل لجنة أو لجان لذلك. ومن أمر الناس بالتحاكم إلي تلك النظم والقوانين أو حملهم على التحاكم إليها وهو يعلم أنها مخالفة لشريعة الإسلام ]شبهات حول السنة[
যে ব্যক্তি মুসলমান হিসেবে পরিচিত, ইসলামের বিধান সম্পর্কে জ্ঞাত, সে যদি জনগণের জন্য বিধান প্রণয়ন করে, সংবিধান রচনা করে যাতে মানুষ তা শিক্ষা করে, উক্ত সংবিধানের নিকট বিচার দায়ের করে, অথচ সে জানে এটা ইসলামের বিধানের বিপরীত, তাহলে সে ইসলাম থেকে খারিজ কাফের হয়ে যায়। একই বিধান প্রযোজ্য হবে ঐ ব্যক্তির উপরও যে এ সংবিধানের জন্য এক বা একাধিক আইন পরিষদ গঠনের আদেশ প্রদান করে, এবং যে উক্ত সংবিধান বা পরিষদের কাছে বিচার দায়ের করতে জনগণকে আদেশ প্রদান করে অথবা বাধ্য করে। অথচ সে জানে এটা ইসলামী শরীয়াতের বিপরীত। [শুবহা-তু হাওলাস সুন্নাহ]

এ ক্ষেত্রে শাইখ আল-বানী রহঃ শুধু ভিন্নমত পোষণ করেছেন, শাইখ বিন বায রহিমাহুল্লাহ এই মাসআলায় দু-ধরণের মত পাওয়া যায়, তবে শাইখ জাতিয়াতাবাদের ব্যাপারে যে সুস্পষ্ট ফাতওয়া দিয়েছেন সেটার ফলেই বাংলাদেশের মত রাষ্ট্র কুফরী রাষ্ট্র হিসাবে গণ্য হবে, শাইখ বলেনঃ
إن الدعوة إليها والتكتل حول رايتها يفضي بالمجتمع ولا بد إلى رفض حكم القرآن ، لأن القوميين غير المسلمين لن يرضوا تحكيم القرآن ، فيوجب ذلك لزعماء القومية أن يتخذوا أحكاما وضعية تخالف حكم القرآن حتى يستوي مجتمع القومية في تلك الأحكام ، وقد صرح الكثير منهم بذلك كما سلف ، وهذا هو الفساد العظيم ، والكفر المستبين والردة السافرة ، كما قال تعالى : { فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا } وقال تعالى : { أَفَحُكْمَ الْجَاهِلِيَّةِ يَبْغُونَ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ اللَّهِ حُكْمًا لِقَوْمٍ يُوقِنُونَ } وقال تعالى : { وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ } وقال تعالى : { وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ } وقال تعالى : { وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ } وكل دولة لا تحكم بشرع الله ، ولا تنصاع لحكم الله ولا ترضاه فهي دولة جاهلية كافرة ظالمة فاسقة بنص هذه الآيات المحكمات،
জাতীয়তাবাদের দিকে আহ্বান ও তার পতাকাতলে জোটবদ্ধতা নিশ্চিতভাবে সমাজকে কুরআনের বিধান প্রত্যাখানের দিকে ধাবিত করে। আর তা জাতীয়তাবাদের দাবীদারদের জন্য কুরআন বিরোধি মানব রচিত বিধি-বিধান গ্রহণকে আবশ্যক করে। এমনকি জাতীয়তাবাদীরা শেষ পর্যন্ত উক্ত বিধানগুলোকেই স্থির করে নেয়। যেমনটি পূর্বে তাদের অনেকের থেকেই তা প্রকাশ পেয়েছে। আর এটি মহা ভ্রান্তি, স্পষ্ট কুফর ও নিশ্চিত রিদ্দাহ (দ্বীন ত্যাগ)। ... (এরপর শায়েখ এ সংক্রান্ত দলিল উল্লেখ করে বলেন) যে রাষ্ট্রই আল্লাহর শরীয়াত দ্বারা দেশ পরিচালনা করে না, আল্লাহর বিধানের আনুগত্য করে না, আল্লাহর বিধানে সম্মত হয় না, সেটাই জাহিলী, কুফরি, ফিসকী ও জালিম রাষ্ট্র। উক্ত মুহকাম আয়াতগুলো তাই স্পষ্ট করে। [নাকদুল কউমিয়্যাতিল আরাবিয়্যাহ্‌, পৃষ্ঠা:৩৯]

শাইখ যাকারিয়া সহ যে সকল শাইখগণ আরবের সম্মানিত শাইখদের নাম ব্যবহার করে বাংলাদেশের মত কুফরী সংবিধানের পক্ষ নিচ্ছেন, এর প্রটেক্ট করছেন, যারা এর বিরোধিতা করে তাদেকে খারিজী পর্যন্ত বলছেন, এটা কি তাদের ইলমের সাথে খেয়ানত নয়? আপনারা জানার কথা, ‘আল-হুকমু বিগাইরি মা আনযাল্লাহ’ এর মাসআলা আর ‘তাহকীমুল কাওয়ানীনিল ওয়াদইয়্যার’ মাসআলা ভিন্ন। প্রথমটার ব্যাপারে নানা মত থাকলেও দ্বিতীয়টার ব্যাপারে জুমহুর ফুকাহার কোন দ্বিমত নেই। কেন আপনারা একটাকে আর একটার সাথে মিশ্রিত করছেন? উম্মতের সমানে সুস্পষ্ট একটা মাসআলাকে অস্পষ্ট করে জিহাদের পথ থেক ফিরিয়ে রাখছেন। উম্মতের শ্রেষ্ঠ সন্তানকে উম্মতের শত্রু হিসাবে তুলে ধরেছেন। কাফের-মুরতাদদের পক্ষ নিচ্ছেন?!

উম্মতের যুবকদেরকে অনুরোধ করছি, শুধু নাম আর পদবী শুনেই কারো অন্ধ অনুসরণ করবেন না। এসকল শাইখগণ নিজেরা সম্মানিত ইমামদের তাকলীদের বিরোধিতা করেন কিন্তু উম্মতকে নিজেদের অন্ধ মুকাল্লিদ বানান। তাই চোখ খুলুন। দেখে শুনে পথ চলুন। কারণ আপনার পরকালের জামিন কেউ হবে না। আল্লাহ্‌ রব্বুল ইযযাহ হককে হক হেসাবে চেনার ও সে অনুস্বারে আমাল করার তাউফীক দিন। আমীন।

সংগৃহিত...

পঠিত : ৭৩৫ বার

মন্তব্য: ০