Alapon

কে বেশি স্যাক্রিফাইস করছে বা করেছে; ডাকসু ভিপি নুর, ছাত্রদল নাকি শিবির?


উভয় পক্ষের, ইন ফ্যাক্ট তিন পক্ষের কথা শুনলামঃ কে বেশি স্যাক্রিফাইস করছে বা করেছে? ডাকসু ভিপি নুর নাকি ছাত্রদল, নাকি শিবির?

সবাই করেছে বা করে যাচ্ছে, তবে যে যার মতন।

তবে আমার মতে শিবির সবচেয়ে বেশি নৃশংস মার খেয়েছে, নেক্সট ছাত্রদল, আর এখন ভিপি নুরের সময়। এই যে নুর মার খেয়েও বেচে আছে কিংবা টিকে আছে, ইলিয়াস আলির মতন গুম, কিংবা নাসিরুদ্দিন পিন্টুর মতন কারাগারে মৃত্যু, কিংবা ডেভিডের মতন সড়ক পারে তার লাশ পড়ে থাকে নাই সেটা আম্মা হাসিনার কৃপা।

যেহেতু শিবির আর ছাত্রদলকে তাদের রাজনৈতিক দলের নীতি আর নিয়ম মাফিক কাজ করতে হয়, তাই তাদের উপর দলীয় রেস্ট্রিকশান অনেক, সেই জায়গায় নুরের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ স্বতন্ত্র। ছাত্রদল আর শিবিরকে তাদের প্যারেন্ট দলের নেতারা ভুলভাবে কেবল পরিচালিতি করে নাই, তাদের পটেনশিয়ালকে ভুল পথে পরিচালিত করে অকার্যকর করে রেখেছে।

এটা সত্য জামায়াত বরাবর ভারত বিরোধী। ডিজাইন করেই ভারত-হাসিনা জামায়াত ধ্বংস করেছে। এদেশে যত ভারত বিরোধী কণ্ঠস্বর আর সংগঠন আছে ভারত তা নিশ্চিহ্ন করেছে আর এখনও করে যাচ্ছে। সেই জন্যই জামায়াত নেতাদের ফাসি দেয়া হয়েছে। যুদ্ধাপরাধ কিংবা রাযাকার হচ্ছে কেবল নিশ্চিহ্ন করার উছিলা। সেই সুত্রে ভারত-হাসিনা এক্সিসের অত্যাচারের খড়গ নেমে এসেছে শিবিরের উপরেও।

নেক্সট বিএনপি আর ছাত্রদল। বিএনপি বিশাল জনসমর্থন পাওয়া বিরাট রাজনৈতিক দল। কিন্তু এদের দলীয় নেতারা অত্যন্ত প্রবীণ, ধির গতিতে চলে, হাসিনা-ভারত-'র' এক্সিসের সাথে পাল্লা দেয়ার মতন বুদ্ধিদীপ্ত একজন নেতাও এই দলে নাই। বয়স্ক নেতাগুলো নীতি নির্ধারক, তারা কোন স্যাক্রিফাইস করতে আর চান না। হয়তো দিন গুনে যাচ্ছেন মরনের। কিন্তু সেই সাথে যে দলের মরন ডেকে এনেছেন সেই ব্যাপার তারা বুঝলেও ভেবে যাচ্ছেন কিছু করার নেই। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন হাসিনার সামনে কাউকে তারা স্যাক্রিফাইস করবেন না। তাই ছাত্রদলকেও তারা অকেজো করে ফেলেছে। আপাতদৃষ্টিতে তাদের নীতি হচ্ছে কোন ক্রমে বেচে থাকো সবাই।

কিন্তু হাসিনা-ভারত-'র' এই কোনক্রমে বেচে থাকা বিএনপিকে ছাড় দিয়ে রাখার ফিলোসফিতে বিশ্বাস করে না। শেখ হাসিনা হচ্ছে ফ্যাসিস্ট নেত্রী, তাই বিএনপিকে ধুকে ধুকে বাচিয়ে রাখার পক্ষপাতীও নন হাসিনা। অতএব, খালেদা জিয়াকে কারাগারে পুরেছেন, ভারত বিরোধী নন-কম্প্রোমাইজিং সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ফাসিতে ঝুলিয়েছেন, যত পোটেনশিয়াল মাঠ গরম করার মতন নেতা-পাতিনেতা-উপনেতা বিএনপিতে আছে আর ছিল সবাইকে একে একে গুম খুন করে সরিয়ে দিয়েছেন।

বিএনপি বুঝে নাই তারা চুপচাপ থাকলেও তাদের বাঁচতে দিবে না হাসিনা। তারা এমনিতেই লীগের হাতে মরছে, আফসোস এই মরাটা দেশের জন্য কাজ করে মরলে নিজেদের সাথে সাথে দেশের কাজে আসত।

এবার আসি নুরুল হক নুরের বেলায়, আপাতত মনে হচ্ছে ছেলেটা দেশের জন্য লড়ছে। যেভাবেই হোক, যা বলার বলেই হোক সে মাঠে আছে বা থাকতে দেয়া হচ্ছে। সামহাঊ অডস আর অন হিজ সাইড। হাসিনা পিছনে খেলছে, খেলছেই তাত সন্দেহ নাই।

ফ্যাসিবাদী সরকার যখন তাদের প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রায় নিশ্চিহ্ন করে দেয়, মিডিয়া থেকে শুরু করে সুশিল সমাজকে নিজ কন্ট্রোলে নিয়ে আসে তখন দেশে অন্যায় আর অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য সমাজের সবচেয়ে বড় যেই সমাজ কাজ করে তারা হচ্ছে ছাত্রসমাজ। অতীতে তিউনিসিয়া, মিসর থেকে শুরু করে বর্তমানে হংকং , ইরাক, লেবাননে সবখানেই সরকার বিরোধী প্রতিবাদে লড়ছে সেইসব দেশের ছাত্রসমাজ। এখন ভারতেও তাই।

শেখ হাসিনা এই ফ্যাক্ট খুব ভালো করে জানে, আর জানে বলেই দেশের আপামর ছাত্রসমাজকে কাবু করে রাখতে তৈরি করেছে দানবীয় ছাত্রলীগ। আর এই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এখান থেকে ছাত্রলীগকে হটাতে পারলে সারা দেশে ছাত্রলীগ বসে পড়বে। তাই ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে লড়াইটা এখানেই করতে হবে, এখনই করতে হবে, সবাই মিলে করতে হবে।

কাউকে উঠাতে যেয়ে বাকিদের নামানোর দরকার দেখি না । ইস্যুটা ধরেন, ব্যাক্তিকে নয়। ইস্যু হচ্ছে ছাত্রদের কণ্ঠরোধ। যেভাবে পারেন কণ্ঠকে উন্মুক্ত করুন।

শেষ কথা, নিজেদের অধিকার আদায়ে সবসময় লড়তে হয়। কোন না কোন জেনারেশানকে আল্টিমেট স্যাক্রিফাইস করতে হয়, তার পরের কয়েক জেনারেশান সেই স্যাক্রিফাইসের ফল ভোগ করে। ৭১ এ আমাদের বাবামাদের জেনারেশান স্যাক্রিফাইস করেছিল, এখন আমাদের সন্তানদের চরম স্যাক্রিফাইস করার সময় এসেছে।

হাতে ধরে কেউ এসে আপনাআপনি অধিকার দিয়ে যাবে না। লড়েই অধিকার ছিনিয়ে নিতে হবে। এই ফিলোসফিতে বিশ্বাস না করলে সেই দলের বা সংগঠনের রাজনীতি করার প্রয়োজন নাই।

লিখেছেন: Sabina Ahmed

পঠিত : ৫৪৬ বার

মন্তব্য: ০