Alapon

সুন্দর হলেই উপকারী হয় না...


কথিত আছে, কচুরিপানার নীলাভ বাদামী বর্ণের মনোমুগ্ধকর ফুল দেখে, সৌখিন ব্রিটিশ রমণী সুদূর ব্রাজিল থেকে বহন করে নিয়ে আসে বাংলাদেশে। দেশীয় সুস্বাদু পানির পলি মিশ্রিত খাদ্য পেয়ে কচুরিপানা তর তর করে বাড়তে থাকে। প্রথম দিনে কোথাও দশ বর্গফুট জায়গায় ছড়ানো দেখা গেল তো তৃতীয় দিনে সেটা এক'শ বর্গফুট জায়গা দখল করে! এমন তার বংশবিস্তারের গতি। এক সর্বনাশা প্লাবনের স্রোতে এই কচুরিপানা ছড়িয়ে পড়ে দেশের সর্বত্র। শুরু হয় বিপর্যয়কর অবস্থা। নদীমাতৃক দেশের সকল নদীতে এর উপস্থিতি বড় মুসিবত হয়ে দাঁড়ায়। নৌকা চলাচলে বাধা, মাছ ধরায় সমস্যা, খালে-বিলে ছড়িয়ে কৃষকের দুর্গতিকে শতগুণ বাড়িয়ে তুলে। অনাবাদী পুকুর-ডোবা বহু আগেই কচুরিপানার দখলে চলে যায়। কচুরি পানায় শোলার মত একটি পেট আছে, যারা সাহায্যে সে ভেসে থাকে। এটি শুকালেও জীবিত থাকে, নতুন করে বংশবৃদ্ধির জন্য তার একটি শিকড়ই যথেষ্ট। বলতে গেলে, ১৯২০ সালের দিকে সারা দেশের সর্বত্র কচুরিপানার আধিপত্যে ভড়ে উঠে। এটার মোকাবেলায় সাধারণ মানুষ তো বটেই সরকারকে পর্যন্ত হিমসিম খেতে হয়! পরবর্তীতে ব্রিটিশ সরকার বাধ্য হয়েই ১৯৩৬ সালে রচনা করেন 'কচুরিপানা আইন'। যাতে করে দেশের সবাই একসাথে এটাকে মোকাবেলা করে, দেশের পরিবেশ, প্রকৃতি ও কৃষিকে রক্ষা করতে পারে।

বাংলার বাঘ তথা শেরে বাংলা একে ফজলুল হক ১৯৩৭ সালের ব্রিটিশ ভারতের এসেম্বলি নির্বাচনে জনগণের কাছে ওয়াদা করেছিলেন যে, তিনি নির্বাচিত হলে কচুরিপানার বংশ ধ্বংস করবেন। সাধারণ জনগণের কাছে এই নির্বাচনী ওয়াদা ভালই কাজ দেয়। তিনি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন। শুধু তাই নয় সেই নির্বাচনের সকল রাজনৈতিক দলের ইশতেহারে কুচরিপানা উচ্ছেদের এজেণ্ডা ছিল! জাতীয় জীবন কতটুকু বেকায়দা পূর্ণ হলে একটি উদ্ভিদ নিধনে এভাবে আন্দোলন সংগ্রাম করতে হয়! পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর আজম খান আইন জারি করেছিলেন যে, যার জমিতে কিংবা বাড়ীর পাশের ডোবা-নালায় কচুরিপানার জঞ্জাল পাওয়া যাবে তাকে দণ্ড দেওয়া হবে। তিনি নিজে হেলিকপ্টারে চড়ে সারা বাংলা তল্লাশি করবেন। এই ঘোষণায় মানুষের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে পড়ে, গ্রামে-গঞ্জে সাজ সাজ রব পড়ে, দলে দলে মানুষ ডোবা-নালা পরিষ্কার করে ফেলে। বলতে গেলে প্রায় সর্বত্র এই ঘোষণা কার্যকরী হয়েছিল। তবুও আজ ২০২০ সালের প্রাক্ষালেও দেখতে হচ্ছে কুচুরিপানা ধ্বংস হয় নাই, এমনকি মরেও নাই। দিব্যি বহাল তবিয়তে বাংলার জলাশয় তাদের দখলে রয়েছে।

আল্লাহ প্রকৃতি সৃষ্টি করেছেন। সে প্রকৃতির জলবায়ু, মৌসুমি বায়ু, পানির পর্যাপ্ততা, মাটির ধরণের উপর নির্ভর করে তার উপযোগী করে গাছ-পালা, তরু-লতা, বন্য জানোয়ার, পাখি সহ নানাবিধ প্রাণীও বানিয়েছেন। যার জন্ম যেখানে, সেখানেই তার জন্য উত্তম জীবিকার ব্যবস্থা করেছেন। আল্লাহ যে অঞ্চলে যাকে সৃষ্টি করেন, তার সেখানেই থাকা উত্তম। তার জন্য সে পরিবেশই উপযোগী এবং সেখানেই সে মানানসই হয়। সেখানেই তার নিরাপত্তা পাবার সুযোগ থাকে। কচুরিপানার জন্ম ব্রাজিলে কিন্তু ভারতীয় উপমহাদেশে এটা মানুষকে যে পরিমাণ জ্বালাতন করে, ব্রাজিলে সে সমস্যা নাই। কেননা এসব কচুরিপানা খাবার জন্য ব্রাজিলে প্রাণীও রয়েছে। সে দেশে অনেকটা শুকরের মত এক প্রকার ভোঁদড় রয়েছে যারা পানিতে ভেসে ভেসে কচুরিপানার লতা-পাতা-শিকড় চিবায়। কিছু মহিষ আছে যাদের প্রিয় খাদ্য কচুরিপানা। তাই কচুরিপানা সেদেশে নিয়ন্ত্রণে থাকে। এই উদ্ভিদ আমাদের দেশে কোন কাজে লাগেনা। যদিও মানুষ ভেবে চলছে সেটা দিয়ে কিছু করা যায় কিনা! বরিশাল অঞ্চলে কচুরিপানার জঙ্গলের উপরে মাটি ফেলে, ভাসমান চাষের মাধ্যমে সেটাকে কাজে লাগালোর চেষ্টা আছে। এটা হচ্ছে মুসিবতকে সম্ভাবনাময় করার ব্যর্থ প্রচেষ্টা মাত্র। আমাদেরকে নিজেদের জলবায়ু অনুযায়ী চিন্তা করতে হবে।

কচুরিপানার ঘটনা তো আগে থেকেই সৃষ্ট। ইউক্যালিপটাস নিয়ে আগের পর্বে দেখিয়েছিলাম কি সর্বনাশ টাই না আমরা করেছি। তাই গাছ সুন্দর দেখলেই তাকে বহন করে নিয়ে এসে দেশে আবাদ করলে তার সুফল নাও পেতে পারে। এটা শুধুমাত্র গাছের ক্ষেত্রে নয়, মাছের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এক তেলাপিয়ার কারণে বাংলাদেশের বহু প্রজাতির মাছ নিঃশেষ হয়েছে। শত শত ক্ষুদ্র প্রজাতির মাছের কোন নমুনাই আর নাই। পিরানহা আর আফ্রিকান মাগুর এসে অপেক্ষাকৃত মাঝারী ও বড় মাছের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলেছে। তাই পরিবেশ রক্ষার্থে ধনী-দরিদ্র, শিক্ষিত অশিক্ষিত সবাইকে সজাগ থাকতে হয়। এসব নিয়ে গবেষণা থাকা চাই। কিছু মানুষ শুধুমাত্র তাদের পকেট তাজা করতে এ ধরনের জাতি বিনাশী কাজ-কারবার করে। সেটা বন্ধ করা উচিত। কঠোর আইন প্রণয়ন ও সেটা বাস্তবায়নে কড়া নীতি অবলম্বন করা সরকারের নৈতিক দায়িত্ব।

কথিত আছে, কচুরিপানার নীলাভ বাদামী বর্ণের মনোমুগ্ধকর ফুল দেখে, সৌখিন ব্রিটিশ রমণী সুদূর ব্রাজিল থেকে বহন করে নিয়ে আসে বাংলাদেশে। দেশীয় সুস্বাদু পানির পলি মিশ্রিত খাদ্য পেয়ে কচুরিপানা তর তর করে বাড়তে থাকে। প্রথম দিনে কোথাও দশ বর্গফুট জায়গায় ছড়ানো দেখা গেল তো তৃতীয় দিনে সেটা এক'শ বর্গফুট জায়গা দখল করে! এমন তার বংশবিস্তারের গতি। এক সর্বনাশা প্লাবনের স্রোতে এই কচুরিপানা ছড়িয়ে পড়ে দেশের সর্বত্র। শুরু হয় বিপর্যয়কর অবস্থা। নদীমাতৃক দেশের সকল নদীতে এর উপস্থিতি বড় মুসিবত হয়ে দাঁড়ায়। নৌকা চলাচলে বাধা, মাছ ধরায় সমস্যা, খালে-বিলে ছড়িয়ে কৃষকের দুর্গতিকে শতগুণ বাড়িয়ে তুলে। অনাবাদী পুকুর-ডোবা বহু আগেই কচুরিপানার দখলে চলে যায়। কচুরি পানায় শোলার মত একটি পেট আছে, যারা সাহায্যে সে ভেসে থাকে। এটি শুকালেও জীবিত থাকে, নতুন করে বংশবৃদ্ধির জন্য তার একটি শিকড়ই যথেষ্ট। বলতে গেলে, ১৯২০ সালের দিকে সারা দেশের সর্বত্র কচুরিপানার আধিপত্যে ভড়ে উঠে। এটার মোকাবেলায় সাধারণ মানুষ তো বটেই সরকারকে পর্যন্ত হিমসিম খেতে হয়! পরবর্তীতে ব্রিটিশ সরকার বাধ্য হয়েই ১৯৩৬ সালে রচনা করেন 'কচুরিপানা আইন'। যাতে করে দেশের সবাই একসাথে এটাকে মোকাবেলা করে, দেশের পরিবেশ, প্রকৃতি ও কৃষিকে রক্ষা করতে পারে।

বাংলার বাঘ তথা শেরে বাংলা একে ফজলুল হক ১৯৩৭ সালের ব্রিটিশ ভারতের এসেম্বলি নির্বাচনে জনগণের কাছে ওয়াদা করেছিলেন যে, তিনি নির্বাচিত হলে কচুরিপানার বংশ ধ্বংস করবেন। সাধারণ জনগণের কাছে এই নির্বাচনী ওয়াদা ভালই কাজ দেয়। তিনি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন। শুধু তাই নয় সেই নির্বাচনের সকল রাজনৈতিক দলের ইশতেহারে কুচরিপানা উচ্ছেদের এজেণ্ডা ছিল! জাতীয় জীবন কতটুকু বেকায়দা পূর্ণ হলে একটি উদ্ভিদ নিধনে এভাবে আন্দোলন সংগ্রাম করতে হয়! পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর আজম খান আইন জারি করেছিলেন যে, যার জমিতে কিংবা বাড়ীর পাশের ডোবা-নালায় কচুরিপানার জঞ্জাল পাওয়া যাবে তাকে দণ্ড দেওয়া হবে। তিনি নিজে হেলিকপ্টারে চড়ে সারা বাংলা তল্লাশি করবেন। এই ঘোষণায় মানুষের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে পড়ে, গ্রামে-গঞ্জে সাজ সাজ রব পড়ে, দলে দলে মানুষ ডোবা-নালা পরিষ্কার করে ফেলে। বলতে গেলে প্রায় সর্বত্র এই ঘোষণা কার্যকরী হয়েছিল। তবুও আজ ২০২০ সালের প্রাক্ষালেও দেখতে হচ্ছে কুচুরিপানা ধ্বংস হয় নাই, এমনকি মরেও নাই। দিব্যি বহাল তবিয়তে বাংলার জলাশয় তাদের দখলে রয়েছে।

আল্লাহ প্রকৃতি সৃষ্টি করেছেন। সে প্রকৃতির জলবায়ু, মৌসুমি বায়ু, পানির পর্যাপ্ততা, মাটির ধরণের উপর নির্ভর করে তার উপযোগী করে গাছ-পালা, তরু-লতা, বন্য জানোয়ার, পাখি সহ নানাবিধ প্রাণীও বানিয়েছেন। যার জন্ম যেখানে, সেখানেই তার জন্য উত্তম জীবিকার ব্যবস্থা করেছেন। আল্লাহ যে অঞ্চলে যাকে সৃষ্টি করেন, তার সেখানেই থাকা উত্তম। তার জন্য সে পরিবেশই উপযোগী এবং সেখানেই সে মানানসই হয়। সেখানেই তার নিরাপত্তা পাবার সুযোগ থাকে। কচুরিপানার জন্ম ব্রাজিলে কিন্তু ভারতীয় উপমহাদেশে এটা মানুষকে যে পরিমাণ জ্বালাতন করে, ব্রাজিলে সে সমস্যা নাই। কেননা এসব কচুরিপানা খাবার জন্য ব্রাজিলে প্রাণীও রয়েছে। সে দেশে অনেকটা শুকরের মত এক প্রকার ভোঁদড় রয়েছে যারা পানিতে ভেসে ভেসে কচুরিপানার লতা-পাতা-শিকড় চিবায়। কিছু মহিষ আছে যাদের প্রিয় খাদ্য কচুরিপানা। তাই কচুরিপানা সেদেশে নিয়ন্ত্রণে থাকে। এই উদ্ভিদ আমাদের দেশে কোন কাজে লাগেনা। যদিও মানুষ ভেবে চলছে সেটা দিয়ে কিছু করা যায় কিনা! বরিশাল অঞ্চলে কচুরিপানার জঙ্গলের উপরে মাটি ফেলে, ভাসমান চাষের মাধ্যমে সেটাকে কাজে লাগালোর চেষ্টা আছে। এটা হচ্ছে মুসিবতকে সম্ভাবনাময় করার ব্যর্থ প্রচেষ্টা মাত্র। আমাদেরকে নিজেদের জলবায়ু অনুযায়ী চিন্তা করতে হবে।

কচুরিপানার ঘটনা তো আগে থেকেই সৃষ্ট। ইউক্যালিপটাস নিয়ে আগের পর্বে দেখিয়েছিলাম কি সর্বনাশ টাই না আমরা করেছি। তাই গাছ সুন্দর দেখলেই তাকে বহন করে নিয়ে এসে দেশে আবাদ করলে তার সুফল নাও পেতে পারে। এটা শুধুমাত্র গাছের ক্ষেত্রে নয়, মাছের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এক তেলাপিয়ার কারণে বাংলাদেশের বহু প্রজাতির মাছ নিঃশেষ হয়েছে। শত শত ক্ষুদ্র প্রজাতির মাছের কোন নমুনাই আর নাই। পিরানহা আর আফ্রিকান মাগুর এসে অপেক্ষাকৃত মাঝারী ও বড় মাছের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলেছে। তাই পরিবেশ রক্ষার্থে ধনী-দরিদ্র, শিক্ষিত অশিক্ষিত সবাইকে সজাগ থাকতে হয়। এসব নিয়ে গবেষণা থাকা চাই। কিছু মানুষ শুধুমাত্র তাদের পকেট তাজা করতে এ ধরনের জাতি বিনাশী কাজ-কারবার করে। সেটা বন্ধ করা উচিত। কঠোর আইন প্রণয়ন ও সেটা বাস্তবায়নে কড়া নীতি অবলম্বন করা সরকারের নৈতিক দায়িত্ব।

লিখেছেন: নজরুল ইসলাম টিপু

পঠিত : ৭৩৭ বার

মন্তব্য: ০