Alapon

মুনাফিক নেতা ইবেন উবাই ও এক বালক সাহাবীর ঘটনা...


ঘটনাটি ছিল মাত্র দুই ব্যক্তির মাঝে। হ্যাঁ, খারাপ কিছু ঘটেছে আর ঘটেছে মাত্র দুই ব্যক্তির মাঝে। কিন্তু কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আনসার এবং মুহাজিরদের দুই গ্রুপ ঘটনায় জড়িয়ে পড়লো। কত অল্প সময়ের মধ্যে ছোট্ট একটা বিষয় বিশাল এক ঘটনায় পরিণত হল! একজন এভাবে বলতে পারত - "ভাই আমি আজকে অনেক পরিশ্রম করেছি, আমি ক্লান্ত, ঠিকভাবে চিন্তা করতে পারিনি, তোমাকে আমার লাথি মারা ঠিক হয়নি। আমি ক্ষমা চাচ্ছি।" ঘটনা শেষ। ফিনিশ। এটাকে নিয়ে বিশাল এক কারবার বানানোর তো দরকার নেই।

কিন্তু এমন অনেক সুযোগ সন্ধানী আছে যারা ছোট্ট একটি ঘটনাকে বিশাল এক বিরোধের বিষয়ে পরিণত করতে চায়। অনেকেই আছে যারা আগুনের একটি স্ফুলিঙ্গ থেকে বিশাল এক দাবানল তৈরি করে ফেলতে পারে। এরা এমন সুযোগের প্রতীক্ষায় থাকে। এইরকম বাস্তবতা সব সময় থাকবে। এমন অনেক মানুষ আছে যারা মানসিকভাবে এতোটা অসুস্থ যে, এরা বিভিন্ন স্কলারের আলোচনা শুনবে তারপর কিছু বিষয়ে কয়েকজন আলেমের মাঝে মতানৈক্য খুঁজে পাবে। এরপর উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে একজনের কাছে গিয়ে আস্তে করে বলবে - ''জানেন? উনি তো আপনার অমুক কথার সাথে একমত নয়।" এরা এমনটা করে কারণ এরা চায় দুজনের মাঝে ঝগড়া বেঁধে যাক। এদের নিকট এটা এক ধরণের অসুস্থ বিনোদন। এরা বক্সিং খেলার ফাইট দেখে আনন্দ পায় না, এরা আনন্দ উপভোগ করে মুসলমানদের দুই দলের মাঝে, দুই আলেমের মাঝে বিতর্ক দেখে, ঝগড়া দেখে। এটাই তাদের খেলা। এটাই তাদের বিনোদন। এমন আচরণ বিকৃত রুচির পরিচয় বহন করে। এটা মানসিক অসুস্থতার পরিচয় বহন করে। (এর থেকে বিরত থাকুন।)

যখন এই মারামারি বেঁধে যাওয়ার উপক্রম হল, রাসুলুল্লাহ (স) মূলত পরিস্থিতি ঠাণ্ডা করার উপদেশ দিলেন। কিন্তু অন্যদিকে সুযোগ সন্ধানী মুনাফিক নেতা আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইও এই ঘটনার কথা জানতে পারলো। স্পষ্টত, সেও মুসলিম সৈন্যদলের অন্তর্ভুক্ত, তার শরীরে তো আর মুনাফিক লেখা নেই। সে এখানে সুযোগ দেখল। সে তার দল বলের সবাইকে একটি ক্যাম্পে আহবান করলো, রাসুলুল্লাহ (স) এর ক্যাম্প থেকে অনেক দূরে। সবাইকে ডাকল এবং বসতে বলল। ‘দেখো, তোমরা নিজেদের কেমন ক্ষতি করেছো!!" মক্কার এই ইমিগ্রেন্টগুলা আমাদের ভূমিতে এসে আমাদের টাকায় লালিত-পালিত হচ্ছে! আমাদের বাড়িতে থাকছে! আমরা তাদের সবকিছু দিয়েছি! দেখো! তারা এখন আমাদের সাথে কেমন আচরণ করছে! তোমরা কী পেয়েছ, দেখেছ? তাদের সকল মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু তোমাদের টাকা, তোমাদের বাসস্থান। এই মানুষগুলো ভিক্ষুক। জানো তো, যে ভিক্ষা করে সে অপমানিত আর যে দান করে সে সম্মানিত। এদের কোন সম্মান নেই, আমরাই সম্মানিত। তারা এখন আমাদের সাথে এমন আচরণ করবে? জানো? তারা আমাকে কী মনে করিয়ে দিচ্ছে - (سمن كلبك ياكلك) এভাবে সে বিশাল এক বক্তৃতা দিল - তারা আমাকে অতীত আরবদের একটি কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে - "কুকুরকে খাইয়ে মোটাতাজা করো, যেন একদিন তা তোমাকে কামড়িয়ে দেয়।" সে তার বক্তৃতায় মুহাজিরদের কুকুর বলে সম্বোধন করলো।
তার ক্যাম্পে।

পাপিষ্ঠ মুনাফিক নেতা এটা করল যেন সে এই ঘটনাকে কাজে লাগিয়ে মদিনার আনসারদেরকে মুহাজিরদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলতে পারে। তারপর সে শপথ করে বলল - لَئِن رَّجَعْنَا إِلَى الْمَدِينَةِ لَيُخْرِجَنَّ الْأَعَزُّ مِنْهَا الْأَذَلَّ - ‘আমরা যদি মাদীনায় প্রত্যাবর্তন করি, তাহলে সম্মানীরা অবশ্য অবশ্যই হীনদেরকে সেখানে থেকে বহিষ্কার করবে।’ (৬৩:৮)
সে আল্লাহর নামে শপথ করে বলল - তোমরা যদি এদেরকে টাকাপয়সা দেয়া বন্ধ করে দাও তাহলে দেখবে তারা অন্য কোথাও আশ্রয়স্থল খুঁজে নিবে। لَا تُنفِقُوا عَلَىٰ مَنْ عِندَ رَسُولِ اللَّهِ حَتَّىٰ يَنفَضُّوا - (৬৩:৭) তারা এখানে এসেছে শুধু তোমাদের টাকার জন্য। তারপর তোমাদের সাথে এভাবে ব্যবহার করে।

সে এই বিষাক্ত বক্তৃতা দিল। একদিকে রাসুল (স) বলেছেন, বাদ দাও এটা, এটা একটা দুর্গন্ধযুক্ত শব্দ। এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না। আর পক্ষান্তরে, এই লোকটা আগুনে তেল ঢালছে। সে চায় আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ুক।

কিন্তু সে জানতো না যে তার গোপন মিটিংএ একজন ছোট বালক বসে আছে। তিনি ছিলেন জায়েদ ইবনে আরকাম (রা)। দশ-বার বছর বয়স হবে তাঁর, তিনিও শ্রোতাদের মাঝে বসে আছেন। এই বিষাক্ত বক্তৃতার পুরোটা শুনলেন। তিনি তাঁর চাচার কাছে ফিরে গেলেন এবং আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই যা যা বলেছে সবকিছু তাঁর নিকট বর্ণনা করলেন। তাঁর চাচা রাসুলুল্লাহ (স) এর ক্যাম্পে গেলেন, হযরত উমর (রা)ও সেখানে বসা ছিলেন। তিনি বললেন, আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই অমুক অমুক কথা বলেছে। তোমাকে কে বলেছে? ১০/১১ বছর বয়সের জায়েদ। রাসুলুল্লাহ (স) বলতে পারতেন, "আচ্ছা, কিন্তু আমরা তো একটা বাচ্চার কথা বিশ্বাস করতে পারি না। শিশুরা যে কোন কিছু বানিয়ে বলতে পারে।" না, তিনি কোন প্রশ্ন করলেন না। জায়েদ বলেছে? ঠিকাছে। কোন প্রশ্ন নয়।

হজরত উমর বললেন, আমি আম্মার নামক একজনকে চিনি। সে গোপনে তাদের ক্যাম্পে গিয়ে ইবনে উবাইয়ের মাথা কেটে ফেলতে পারবে। আপনি শুধু অনুমতি দেন। আমি এটা সামলাবো। এই কাজের জন্য সঠিক লোককে আমি চিনি। রাসুলুল্লাহ (স) বললেনঃ 'লা ইয়া উমর!'' না, হে উমর। আমরা এমনটা করতে যাচ্ছি না। "কারণ মানুষ বলাবলি করবে, মুহাম্মাদ তাঁর নিজের লোকদের হত্যা করে।" আলোচনা সামনে এগোনোর পূর্বে একটি ব্যাপারে পরিষ্কার হওয়া জরুরি। হযরত উমর (রা) কেন তাকে হত্যা করার কথা বললেন? এটা কি বর্বর আচরণ নয়? যেমন খ্রিস্টানরা বলে থাকে - শারিয়া 'ল' মানুষকে খুন করার কথা বলে!!

একটি বিষয় এখানে বোঝার চেষ্টা করুন। সবাই একটি সেনাবাহিনীর অংশ। সবাই এখানে একটি সৈন্যবাহিনীর অংশ হয়ে অভিযানে যোগ দান করেছিল। যখন কোন সেনাবাহিনী অভিযানে যোগদান করে আর এমতাবস্থায় ভেতর থেকে কেউ বিভক্তি তৈরি করার প্রচেষ্টা চালায়, তখন তার কারজ্যকলাপকে বড় ধরণের বিশ্বাসঘাতকতা এবং গোয়েন্দাবৃত্তি হিসেবে গণ্য করা হয়। যার শাস্তি হল মৃত্যুদণ্ড। কারণ সে গোটা সেনাবাহিনীকে বিপদে ফেলছে। পৃথিবীর সব সেনাবাহিনীতে এই আইন মানা হয়, প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত। এমন আচরণকে বড় ধরণের বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে গণ্য করা হয়। তাই হযরত উমর যখন তাকে হত্যা করার কথা বলছেন, তিনি কোন ইসলামী আইন প্রয়োগের কথা বলছেন না; তিনি বলছেন বিশ্বাসঘাতকদের সাথে যেকোনো সেনাবাহিনীতে তো এমনই করা হয়।

কিন্তু রাসুলুল্লাহ (স) বলেছেনঃ "না, হে উমর! আমরা এটা করবো না।" যদিও সে এই শাস্তি পাওয়ার যোগ্য ছিল। এমন ঘটনা যদি পৃথিবীর অন্য কোন সেনাবাহিনীতে ঘটতো আর তাকে হত্যা করা হত, কেউ এতে কোন আপত্তি জানাতো না। অবশ্যই, এটাই তো করার কথা। কিন্তু রাসুলুল্লাহ (স) এমনটি করলেন না। তিনি ইবনে উবাইকে ডেকে পাঠালেন। তাকে ডাকো, দেখি সে কী বলে। ইবনে উবাই জানতো না যে রাসুলুল্লাহ (স) জেনে যাবেন। কিন্তু তিনি ব্যাপারটা জেনে গেলেন। ইবেন উবাই রাসুল (স) এর ক্যাম্পে আসল। আর বালক জায়েদ ইবনে আরকাম (রা) ছিলেন ক্যাম্পের বাহিরে। তিনি জানতেন না ভেতরে কী হচ্ছে। আপনাদের মনে আছে তো? তাঁর চাচা রাসুলুল্লাহ (স) এর কাছে গিয়ে ব্যাপারটা বলেছিল। বালক জায়েদ যান নি।

তো, আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই রাসুলুল্লাহ (স) এর কাছে গিয়ে উচ্চ আওয়াজে শপথের পর শপথ করে সবকিছু অস্বীকার করলো। " আল্লাহর শপথ! কে আমার বিরুদ্ধে এই মিথ্যা রটিয়েছে? আমি বিশ্বাস করি আপনি আল্লাহর রাসুল। কেন আমি আপনার বিরুদ্ধে এমন কিছু বলতে যাবো? আমি কেন আমার ভাইদের বিরুদ্ধে এমন কিছু বলতে যাবো? আমি কত ত্যাগ স্বীকার করেছি! আমি যুদ্ধ করতে এসেছি! আসিনি? আপনি কীভাবে আমাকে এমন প্রশ্ন করতে পারেন? আমার কথার উপর কার কথাকে আপনি প্রাধান্য দিচ্ছেন? আমি কি নিজেকে প্রমাণ করিনি?" এভাবে সে রাসুলুল্লাহ (স) কে লেকচার দিতে লাগল। তার গলার স্বর উঁচু করে। রাসুলুল্লাহ (স) বললেন - "তুমি যেতে পারো।" আমি আর কোন ননসেন্স শুনতে চাই না, তুমি চলে যেতে পারো। তিনি তাঁর সাথে তর্কে গেলেন না।

আমরা এখানে অন্য কিছু শিখছি। এমন অনেক মানুষের সন্ধান পাবেন যারা সমস্যা তৈরি করবে। তারপর আপনি যখন তাদের এ ব্যাপারে প্রশ্ন করতে যাবেন, তারা চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করবে, খুবই উচ্চ স্বরে জবাব দিবে। আর যখন কেউ এভাবে উচ্চ স্বরে কথা বলবে, তখন রাসুল (স) এর সুন্নাহ কি? "ঠিকাছে, তুমি যেতে পারো। থ্যাংক ইউ।" কিছু মানুষ আছে যারা কথা বলার যোগ্য নয়। যোগ্য নয় তারা। এটাই সুন্নাহ। তাকে যেতে দাও।

যখন রাসুলুল্লাহ (স) তাকে চলে যেতে দিলেন, জায়েদ ইবনে আরকাম ছিলেন ক্যাম্পের বাহিরে। ইবনে উবাইকে চলে যেতে দেখে ভাবলেন - কি? তার কিছুই হয়নি! আমি তো তার ব্যাপারে বলেছি! তারপরেও তার কিছুই হয়নি! জায়েদ বর্ণনা করেনঃ " আসা-বানি হাম্মুন লাম ইউসীবনী কাত" "অভূতপূর্ব এক দুঃখ আমাকে আক্রান্ত করলো।" আমি সেই দিনের মত জীবনে আর কোনদিন এতো দুঃখ ভারাক্রান্ত হইনি। তিনি বলেন - "সদ্দকাহু রাসুলুল্লাহ ওয়া কাজ্জাবানি - রাসুলুল্লাহ (স) তার কথাকে সত্য মনে করলেন আর আমাকে মনে করলেন আমি মিথ্যা বলছি।" কারণ আমি তো একটি বাচ্চা ছেলে মাত্র। তিনি আমাকে বিশ্বাস করেননি।

কিন্তু এখানে আসল ব্যাপার এটা নয়। আসল ব্যাপার হল - রাসুলুল্লাহ (স) জায়েদের কথা শুনা মাত্রই বিশ্বাস করেছিলেন। কিন্তু জায়েদ ব্যাপারটা জানতেন না। কারণ তিনি ছিলেন বাহিরে। এরপর তিনি বলেন - "আমি আমার তাঁবুতে ফিরে গেলাম এবং শুয়ে শুয়ে কাঁদতে লাগলাম।" শিশুটি শুয়ে শুয়ে কাঁদতে লাগলো। এদিকে জায়েদের মনে কী হচ্ছে রাসুলুল্লাহ (স) তা জানতেন না। আমরা এ ব্যাপারে পরে জানবো।

তারপর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা সুরাতুল মুনাফিকুন অবতীর্ণ করেন। আমি আপনাদের বলেছিলাম, এই খুৎবা সুরাতুল মুনাফিকুন নিয়ে। আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা সূরা মুনাফিকুনের দুই আয়াতে জায়েদের কথার হুবহু উদ্ধৃতি প্রদান করেন। জায়েদ তাঁর চাচার কাছে গিয়ে বলেন, আর তাঁর চাচা রাসুল (স) এর কাছে গিয়ে বলেন, তারা বলেছে - لَئِن رَّجَعْنَا إِلَى الْمَدِينَةِ لَيُخْرِجَنَّ الْأَعَزُّ مِنْهَا الْأَذَلَّ - এটা হল আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের কথা। এটাই সে বলেছে। “‘আমরা যদি মাদীনায় প্রত্যাবর্তন করি, তাহলে সম্মানীরা অবশ্য অবশ্যই হীনদেরকে সেখানে থেকে বহিষ্কার করবে।’” সে এটা বলেছে। আর কুরআন বলছে - يَقُولُونَ لَئِن رَّجَعْنَا إِلَى الْمَدِينَةِ لَيُخْرِجَنَّ الْأَعَزُّ مِنْهَا الْأَذَلَّ ۚ وَلِلَّهِ الْعِزَّةُ وَلِرَسُولِهِ وَلِلْمُؤْمِنِينَ - সুবহান আল্লাহ! হুবহু জায়েদের বর্ণিত কথা এখন কুরআনের অংশ। সে জানিয়েছিল, মুনাফিকরা আরও বলেছে - রসূলের সঙ্গী সাথীদের জন্য অর্থ ব্যয় করো না, শেষে তারা এমনিতেই সরে পড়বে।’ لَا تُنفِقُوا عَلَىٰ مَنْ عِندَ رَسُولِ اللَّهِ حَتَّىٰ يَنفَضُّوا - আয়াত এসে গেল। هُمُ الَّذِينَ يَقُولُونَ لَا تُنفِقُوا عَلَىٰ مَنْ عِندَ رَسُولِ اللَّهِ حَتَّىٰ يَنفَضُّوا - যখন রাসুলুল্লাহ (স) এর নিকট সূরাটি অবতীর্ণ হল, তিনি জায়েদকে ডাকতে বললেন। সে একা একা কাঁদছিল। তিনি জায়েদকে ডাকলেন, বসতে বললেন, তার হাঁটুর উপর হাত রাখলেন তারপর বললেন- "লাকাদ সদ্দাকাকাল্লাহ” অর্থাৎ আল্লাহ তোমাকে সত্যবাদী প্রমাণ করেছেন। তিনি জায়েদের নিকট সম্পূর্ণ সূরা তিলাওয়াত করে শুনালেন, ১১ বছরের এই বাচ্চার নিকট। অন্য কেউ এই সূরা শোনার পূর্বে জায়েদ শুনল।

এই সূরার অসংখ্য উদ্দেশ্য রয়েছে, এর অন্যতম একটি অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য হল, এই শিশুর মন ভালো করে দেয়া। এই শিশু, যে ঘটনার কথা জানিয়েছিল। সুবহানাল্লাহ! এই সূরার ভেতরে শিক্ষার পর শিক্ষা, শিক্ষার পর শিক্ষা রয়েছে। এবং এই গভীর তাৎপর্যপূর্ণ ছোট্ট ঘটনার ভেতর। আর সূরার আয়াত সংখ্যা মাত্র এগার।

উপসংহারে এসে যে বিষয়টার উপর জোর দিতে চাই তা হল - এই সম্পূর্ণ ঘটনাটি একটি বিষয়বস্তু দ্বারা সংযুক্ত আর তা হল, অন্তরের কোমলতা। বিশ্বাসীদের ভাই ভাই হয়ে থাকার কথা। আমরা এটা জানি, "ইন্নামাল মু'মিনুনা ইখওয়াহ।" কিন্তু এই ভ্রাতৃত্ববোধ ধ্বংস করে দেয়া খুবই সহজ। খুব সহজ। বেশি কিছু লাগে না। কখনও কখনও এমনকি গালি দেয়ারও দরকার হয় না, ভালো শব্দও যদি খারাপ ইঙ্গিতে বলা হয় সেটাই ভ্রাতৃত্ববোধ নষ্ট করার জন্য যথেষ্ট।

আল্লাহ আমাদের অন্তরে যে জিনিসটি দিয়েছেন, "ফাআল্লাফা বাইনা কুলুউবিকুম" আমাদের পরস্পরের অন্তরে তিনি যে ভালবাসা তৈরি করে দিয়েছেন, এটা খুবই কোমল। অনেক যত্ন দিয়ে এর সংরক্ষণ করতে হবে। বিশেষ করে এই কথা তাদের জন্য অনেক বেশি প্রযোজ্য যারা যেকোনভাবে দীনের সেবা করে যাচ্ছেন। আপনি হয়তো স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ করছেন, কোন ইসলামি সংগঠনের সদস্য হয়ে কাজ করছেন, কোন মাদ্রাসা বা মসজিদের সদস্য হয়ে কাজ করছেন, তখন আপনাকে অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে যেন আপনারা একটি গ্যাং এ পরিণত না হন। যারা অন্যদের সম্মানহানি করে কথা বলে। অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে হবে।

আপনি যদি এই কোমলতা উপলব্ধি করতে পারেন তাহলে পরবর্তী পর্যায়ের স্পর্শকাতর বিষয়টিও উপলব্ধি করতে পারবেন। আর তা হলো, শিশুদের প্রতি আচরণ। আমরা এমনকি শিশুদের কথাকেও ফেলে দেই না। আমরা তাদেরকে অবজ্ঞা করি না। তারা আল্লাহর এক আশীর্বাদ। বর্তমানে, কেউ বক্তব্য দেয়ার সময় শ্রোতাদের মাঝে যদি কোন শিশু থাকে আমরা বলে উঠি, "আপনারা কি একটু দয়া করে বাচ্চাদের নীরব রাখতে পারবেন? তাদেরকে কি অন্য কোন রুমে রাখা যায় না? সাউন্ড প্রুফ, বুলেটপ্রুফ, অক্সিজেনপ্রুফ কোন জায়াগায় কি তাদের রাখা যায় না?" এমনকি শ্রোতাদের মাঝে কোন শিশু থাকলে অনেক সময় বক্তাও বড়রা আলোচনা বুঝল কিনা তার চেয়েও বেশি উদ্বিগ্ন থাকে বাচ্চারা যেন কোন শব্দ না করে। এটাই নিয়েই তিনি চিন্তিত থাকেন।

আর এই সম্পূর্ণ ঘটনাটি ঘটেছে বালক জায়েদের অবদানের উপর নির্ভর করেই। তার অবদানের উপর। আমাদের শিশুদের অবদানকে ছোট করে দেখবেন না। তাদের মূল্য অস্বীকার করবেন না। তাদেরকে মসজিদে নিয়ে আসবেন এবং নিজের পাশে বসিয়ে খুৎবা শোনাবেন আর এটাকে ছোট করে দেখবেন না। বাচ্চাদের নিয়ে আসলে তাদের পাশে বসুন। তাদেরকে তাদের মত ছেড়ে দিবেন না। তাদের পাশে বসুন এবং তাদেরকে মসজিদে বসার আদব শিক্ষা দিন। কোন দারসে গেলে তাদের সাথে করে নিয়ে যান, এতে কোন সমস্যা নেই যদি তারা একবার দুইবার বিরক্ত হয়ে উঠে, হয়তো আলোচনার কিছু কিছু অংশ তাদের মাথায় জমা থাকবে এবং পনের বছর পরে তাদের জীবন বাঁচাবে। আপনি জানেন না কোনটা তার মাথায় থাকবে আর কোনটা থাকবে না।

আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা আমাদেরকে একে অন্যের প্রতি কোমল করে দিন এবং আমরা যেন অন্য ভাইয়ের সাথে পরিষ্কার মন নিয়ে আচরণ করতে পারি। আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা আমাদের তাদের অন্তর্ভুক্ত না করুন, যারা ভুলে যায় দীনের প্রতি সত্যিকারের অবদান হল আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা এর প্রতি আন্তরিকতা।

- উস্তাদ নোমান আলী খান

পঠিত : ১৪০৯ বার

মন্তব্য: ০