Alapon

আপনি কি হারাম সম্পর্ক থেকে বের হতে পারছেন না...?


আমি মুসলিম। কিন্তু আমার দ্বারা একটা বড় পাপ হয়ে গেছে। আমি ভাবিনি এই পাপের এতো বড় শাস্তি। আমাকে জাহান্নামের আগুনে উলঙ্গ অবস্থায় পুড়তে হবে! এখন আমি কি করবো? আল্লাহ কি আমাকে ক্ষমা করবেন না? হ্যাঁ কেনো করবেন না? অবশ্যই করবেন। তুমি তো মরে যাওনি। বেঁচে আছো এখনো। তাহলে ঝটপট আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে নাও। আচ্ছা কিভাবে ক্ষমা চাইবে? “আল্লাহ আমি হারাম সম্পর্কে জড়িয়েছি, তাই আমাকে ক্ষমা করে দেন” এভাবে? হাহাহা ভুলেও এই কাজ করিয়ো না।

যেহেতু আমরা সবাই মানুষ রোবোট না, আমাদের রক্তে আবেগ আর ভুল করার অভ্যাস দুটোই মিশে আছে। তাই একজন আরেকজন কে ছাড়া বেঁচে থাকা প্রায় অসম্ভব এমন অবস্থা হয়ে গেছে এই তো? আচ্ছা প্রথমে যেই বিষয়টা গুরুত্বপুর্ণ তা হলো তোমার সম্পর্ক কতটুকু গভীর। আর তোমার বয়স কত।

বয়স কম হলে যা হবে, বিয়ে করা প্রায় অসম্ভব। কারন এই যুগে পরিবার থেকে এত অল্প বয়সে বিয়ে কখনো মেনে নিবে না। আর অন্যদিকে পালিয়ে বিয়ে করবা? এই চিন্তা সবার আগে বাদ দাও। কারন বিয়েতে মেয়ের বাবা মা কিংবা পরিবারের সম্মতি না থাকলে সেই বিয়ে বৈধ হবে না। বিয়ে করার মতন বয়স সেই পর্যায়ে থাকলে দুই পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে করে ফেলাই ভালো। আর বসে থেকে পাপ কামানো চলবে না।

সম্পর্ক গভীর এর কথায় যদি আসো, কেউ মনে করে সম্পর্ক ৭-৮ বছর ধরে আছে, তার মানে তাদের সম্পর্ক গভীর। আবার কেউ মনে করে দুজোনের মধ্যে গভীর কিছু হয়ে গেছে তার মানে সেই সম্পর্ক গভীর, এই ক্ষেত্রে মাস কিংবা বছর বিবেচ্য বিষয় না।

সঠিকটা তাহলে কোনটা? সঠিকটা হলো, তোমাদের মধ্যে ভালোবাসার প্রস্তাব আদান প্রদান হয়েছে এবং তোমরা একে অপরকে প্রেমিক প্রেমিকা হিসেবে দাবী করছো, ব্যস! এতটুকু মানেই তোমাদের সম্পর্ক গভীর। তোমরা যিনা করে ফেলেছো। তোমরা ইসলামের দৃষ্টিতে এবং আল্লাহর চোখে পাপী।

তাই সম্পর্ক কত গভীর, কত দিনের প্রেম, বয়স কত, কোনোকিছুর অযুহাতে তুমি নিজের পাপকে ঢেকে রাখতে পারবে না। বিয়ে করে ফেললেও যা পাপ কামিয়েছো তা রয়ে যাবে তোমার অন্তরে। তাই বিয়ে করো কিংবা না করো তোমাকে খাঁটি মনে তওবা করাই লাগবে। বিয়ে করে নিজের প্রেমিকা কিংবা প্রেমিককে যখন জীবনসঙ্গী হিসেবে কাছে পাবা তখন কি আদৌ পূর্বের পাপের প্রতি ঘৃণা জন্মাবে? অথবা মনে হবে যে তুমি পাপ করেছো? স্বাভাবিকভাবেই না। আর যদি তা না হয় অবশ্যই তুমি খাঁটি মনে তওবা করতে পারবে না।

তাই যদি ফিরে আসতে চাও নিজের রবের কাছে, পাপ গুলো মুছে ফেলতে চাও, সৃষ্টির চেয়ে স্রষ্টাকেই বেশি ভালোবাসতে চাও এবং খাঁটি মুমিন হয়ে মরে জান্নাত লাভ করতে চাও তাহলে তোমার অবশ্যই উচিত আল্লাহর ওয়াস্তে সেই ভালোবাসা নামক জাহান্নামটাকে চিরতরে বিদায় করে দেওয়া।

কিভাবে বিদায় করবে? তুমি তো তাকে ভুলে থাকতে পারছো না। দুদিন পর পর কথা বলছো, খোঁজ খবর নিচ্ছ।

তাহলে শুনো, সম্পর্ক ভেঙ্গে ফেলা ছিল তোমার জন্য আল্লাহর পথে ফিরে আসার প্রথম ধাপ। তাই ভালো কাজের শুরুতেই শয়তান তোমাকে বাঁধা দেওয়া শুরু করে দেবে। তুমি ভাববে, সম্পর্ক তো নেই, দুদিন পর পর একটু কথা বললে তাতে এমন কি যায় আসে? যদি কথা বলাই লাগে তাহলে সম্পর্ক ভাঙ্গার উদ্দেশ্য কি রইলো? পাপ তো করেই যাচ্ছো।

তাই যত মাধ্যম রয়েছে কথা বলার, সব মাধ্যম বন্ধ করে ফেলতে হবে। একটা মাধ্যম খোলা রাখছো মানে শয়তান এর কথা অনুযায়ী একটা সুযোগ করে ফেললে পাপ কামানোর জন্য।

যার প্রতি তুমি দুর্বল তার থেকে বেশি বেশি দূরে থাকা লাগবে। নাহয় তুমি তোমার দুর্বলতা প্রকাশ করতে বার বার সেই পাপের দিকেই ছুটে যাবে। দিন শেষে তোমার আর রবের পথে ফিরে আসা হবেনা।

ধরো, তোমার বাবা অনেক রাগী মানুষ। তোমাকে প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার আগে অংক করতে দিয়ে যান। এসেই আগে চেক করেন অংক করেছো কিনা। তখন তুমি কি করো? বাবা আসার আগেই অংক গুলো করে রাখো। সামনে ফোন থাকলে হয়তো একটু ফেইসবুক স্ক্রোল করতে ইচ্ছে হয়, কিন্তু পরমুহুর্তেই নিজেকে মনে করিয়ে দাও যে তোমার অংক করা লাগবে। আর যখন ফোনটাকে নিজের কাছেই রাখো না তখন? ফোন ধরার মত কোনো সুযোগই থাকে না, তখন তো বিষয়টা আরো সহজ হয়ে যায়। এখানে তোমার দুর্বলতা হলো তোমার ফোন।

ঠিক সেরকম তোমার সম্পর্কের ক্ষেত্রে তোমার দুর্বলতা হলো সেই মানুষ যার সাথে থেকে তুমি পাপ কামাচ্ছো। আর এই দুর্বল জায়গাতেই হাত দিচ্ছে শয়তান। এখন কি করা উচিত তোমার? ফোনের মতন তাকেও দূরে সরিয়ে রাখো, এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করে নাও যেন সে তোমার সাথে কিংবা তুমি তার সাথে কথা বলারও কোনো সুযোগ না থাকে। যতটানা এই দুনিয়ার মানুষ গুলোকে ভয় কর তার চেয়েও কোটি কোটি গুন বেশি নিজের রবকে ভয় করো আর চিন্তা করো যে তোমাকে তোমার রবের সামনে দাড়িয়ে জবাবদিহি করা লাগবে। তোমার বাবা মা তোমার উপর অস্তুষ্ট হলে যতটা না রেগে যান তার থেকেও কোটি কোটি গুন বেশি রেগে আছেন তোমার রব। কারন তুমি নিজের প্রতি জুলুম করেছো।

নিজেদের মধ্যে কোনো উপহার বিলানো হলে হয় সেগুলো পুড়ে ফেলো নাহয় সেগুলো ফেলে দাও। এমন কোনো উপহার যা ফালানো কিংবা পুরানো সম্ভব না তাহলে অন্য কাউকে দিয়ে দাও। নিজেদের মধ্যকার মুহূর্তের ছবি তোলা থাকলে সব জায়গা থেকেই ডিলিট করে দাও। শয়তান কে কোনো সু্যোগ দিয়ো না নিজেকে মানসিক ভাবে উত্যক্ত করার জন্য। কারন তোমার মনে রাখতে হবে তোমার মধ্যে যতক্ষন পর্যন্ত তোমার পাপের প্রতি ঘৃণা কাজ করছে না বরং তুমি প্রতিবার তোমার দুর্বলতাই প্রকাশ করছো তুমি বুঝে নিবে শয়তানের কাছে হেরে যাওয়ার আশঙ্কা এখনো অনেক বেশি। এখনো তুমি আল্লাহর কাছে ফিরে যাওয়ার মতন অবস্থাতে নেই।

সম্পর্ক ভেঙ্গে সাথে সাথে ভুলে গিয়ে নিজের মতন থাকা, এই কাজ কোনো মানুষের ক্ষেত্রেই সম্ভব না। তাই সর্বপ্রথমেই নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করা যাবে না। দুর্বল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে এমন সব ধরনের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া লাগবে। আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও এই বিষয়ে, এর থেকে ভালো সমাধান আর নেই। আল্লাহ তোমাকে একমাত্র মানসিক ভাবে সাহায্য করতে পারবেন। আর কেউ না।

তোমার করা পাপগুলোকে এরপর মন থেকে ঘৃণা করো। অনুতপ্তবোধ করো, জাহান্নামের আগুনকে ভয় করো। আল্লাহকে ভয় করো। এরপর আল্লাহর কাছে মনে প্রানে তওবা করো। তবে হ্যাঁ, তওবা করে আবার সেই একই ভুল করলে আল্লাহ পুর্বের গোনাহএর জন্য ক্ষমা করবেন না। এইজন্যই সবার আগে তোমার নিজেকে এবং আল্লাহকে ওয়াদা করতে হবে যে তুমি আর এই পাপের ধারের কাছেও যাবে না।

মনে রাখবে, ভালো একজন প্রেমিকা নয় বরং বেশি গুরুতপুর্ণ হলো ভালো একজন জীবন সঙ্গী। যাকে নিয়ে তুমি জান্নাতেও থাকতে পারবে। একজন ভালো জীবন সঙ্গী পাওয়া এবং সংসার জীবন সুখী হয় আল্লাহর বরকত আর রহমতের মাধ্যমে। তাছাড়া কোনোভাবেই সেই সুখ পাওয়া সম্ভব না। যদি তুমি তোমার রবকে রাগিয়ে বিয়ের পিরিতে বসে যাও, তোমার চেয়ে অভাগা আর কে হতে পারে? কিভাবে তুমি আল্লাহর রহমত এর আশা করো?

জীবনে আবেগ, মায়া, মমতা, ভালোলাগা ত্যাগ করে যখন রবের কাছে ফিরে আসবে, তোমার ঐ হারাম সম্পর্ক শেষ করে ফেলবে, তখন দেখবে তুমি যা আল্লাহর জন্য ছেড়ে দিয়েছো আল্লাহ খুশি হয়ে তোমাকে এর চেয়েও বেশি দামি কিছু দিয়েছেন যা তোমার কল্পনার বাইরে ছিল।

আল্লাহর জন্য নিজের ভালো লাগা গুলোকে ত্যাগ করে দেখোই না কত শান্তি? মন আপনা আপনিই জেনে যাবে যে তোমার রব তোমাকে শীঘ্রই এতো বেশি দিবেন যে তুমি তাতে অনেক খুশি হয়ে যাবে।
আর অন্যদিকে নিজের চাওয়া পাওয়াকে আল্লাহর হুকুম অমান্য করে পূরণ করার আশায় জানপ্রান দিয়ে দিলেও যে তোমার অন্তর কোনো ভাবেই প্রশান্তি লাভ করবে না। অন্তরে শূণ্য স্থান রয়ে যাবে, মনে শান্তি খুজে পাবে না।

নিজের সৃষ্টিকর্তার থেকে বেশি যদি সৃষ্টিকর্তার তৈরি কিছু সৃষ্টিকেই বেশি ভালোবেসে ফেলো, তাহলে তোমার থেকে অকৃতজ্ঞ আর কে হতে পারে? তুমি ভাবছো সেটা ভালোবাসা? না তো! সেটা তো দুনিয়াতে বসেই জাহান্নামের ঠিকানা বেঁছে নেওয়া।

আর যে তোমাকে ভালোবাসার কথা বলছে, সেগুলোও তার ভালোবাসা না কারন সে তো তার নিজের রবকেই ভালোবাসতে জানে না। ভালোবাসি বলে আজকে যে তোমার জন্য পাগল, মরে গেলে কালকে সেই তোমার জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। যে ভালবাসে তোমাকে সে চাচ্ছে তুমি মরে গেলে আগুনে পুড়ো, দ্বাও দ্বাও করে জ্বলো, কষ্ট পাও আর চিৎকার করো। হায়! এ কেমন ভালোবাসা?

আল্লাহকে ভালোবাসো সবকিছুর আগে। নিজের জীবন আল্লাহর পথে আবদ্ধ রাখো যেন আল্লাহর পথে থেকেই মরন হয়। আল্লাহর কাছে বেশি বেশি আশ্রয় চাও, সাহায্য চাও, যেনো শয়তান তোমাকে আবেগের বসে পাপের রাস্তায় ধাক্কা না মারে। আল্লাহ তোমার জীবন অনেক সুন্দর আর শান্তিময় করে দিবেন, শুধু আল্লাহ কে খুশি করতে থাকো, আর সেই সাথে বেশি করে চাইতে থাকো। প্রতিদিনের করা ছোট ছোট ভুলগুলোর জন্য ক্ষমা চেয়ে নাও। আর খুব বেশি কষ্টের মধ্যে থাকলে কিংবা মন থেকে কোনো কিছু চাইলে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করো।

আল্লাহর উপর ভরসা রাখো, আল্লাহকে ভালোবাসো, মৃত্যুকে ভয় করো, মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নাও।
(সংগৃহীত)

পঠিত : ১৪৫৩ বার

মন্তব্য: ০