Alapon

রাসূলের উপমা সূর্যের মত...


অনেক সময় আমরা দায়িত্বটি ভালভাবে পালন করতে পারি না, আমাদের কাজ কর্ম পূর্ণ চাঁদের মত নয়। মাঝে মাঝে এটি খুবই দুর্বল। আর দুর্বল মানে হারিয়ে যাওয়া নয়। কারণ আল্লাহ চাঁদকে এমনভাবে স্থাপন করেছেন যে চাঁদ যখন একেবারে দুর্বল হয়ে পড়ে ঠিক তখনি এর পুনর্জাগরণের সময় হয়। আমাদের মহানবী (স) বিশ্বাসীদের সম্পর্কে বলেছেন, "তাদের ঈমানের হ্রাস বৃদ্ধি ঘটবে, সময়ে সময়ে।" আপনি সবসময় একই রকম উৎসাহ উদ্দীপনা অনুভব করবেন না। কিন্তু রাসূল (স) এর সাথে আমাদের সম্পর্ক আমাদের ঈমানকে বার বার সবল করে তুলবে। ইয়া রব! রাসূলুল্লাহ (স) এর সাথে আমাদের সম্পর্কের স্বরূপটা এমনই। তিনি আমাদের নিকট এমনই একজন।

এই প্রজ্ঞা আমার আপনার জন্য আর কি কি বার্তা বহন করে? রাসূলুল্লাহ (স) এর বার্তা অব্যাহত রাখার জন্য আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা আমাদেরকে পছন্দ করেছেন। রাসূলুল্লাহ (স) যখন আমাদের মাঝে আর থাকবেন না, যেভাবে তিনি সাহাবাদের সাথে ছিলেন - তখন এমন মনে হবে যেন সূর্য ডুবে গিয়েছে এবং রাতের আগমন ঘটেছে। আর যখন রাতের আগমন ঘটেছে তখন চারদিকে হতাশা শুরু হয়ে গিয়েছে। অন্ধকার, ভয়, উদ্বেগ, অজ্ঞতা পৃথিবীকে আবার ঢেকে ফেলেছে। অজ্ঞতা দ্বারা আমি কী বুঝাচ্ছি? দিনের আলোতে আপনি সহজেই পথ খুঁজে পাবেন কিন্তু রাতের অন্ধকারে সহজেই হারিয়ে যেতে পারেন। দিনের আলোতে যে পথটি নিরাপদ, রাতের বেলা সে পথটিই ভয়ংকর। দিনের বেলা চারিদিকে জীবনের চাঞ্চল্য আর রাতের বেলা চারিদিকে মৃত্যুর নীরবতা।

এমন ঘোর তমসায় আলোর একমাত্র উৎস হিসেবে আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা এই উম্মাহকে পছন্দ করেছেন। সবাই যখন চার দিক থেকে অন্ধকার দ্বারা বেষ্টিত, তখন চাঁদ হয়ে চারদিকে আলো ছড়িয়ে দিতে তিনি আমাদেরকে পছন্দ করলেন। মানুষ যেন কিছুটা আশার আলো খুঁজে পায় সেজন্য তিনি আমাদেরকে পছন্দ করলেন। তাই, অন্যরা যখন আমাদের দিকে তাকায় তখন তারা আমাদের মাঝে হাবিবুনা (স) এর আলোর কিছুটা আভাস দেখতে পায়। আমাদের তো এমনই হওয়ার কথা। আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা আমাদের ঠিক এমনই একটি দায়িত্ব দিয়েছেন।

ইনশাআল্লাহ, পরের বার যখন রাসূলুল্লাহ (স) সম্পর্কে কথা বলব, তখন কুরআনের অন্যতম শক্তিশালী একটি আয়াত নিয়ে আলোচনা করবো। যে আয়াতে আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা নিজে রাসূলুল্লাহ (স) এর প্রতি সালাওয়াত প্রেরণ করেছেন। যা এই পাঠের সাথে সম্পর্কযুক্ত। আমরা অন্য কোন সময় এ সম্পর্কে আলোচনা করবো। কিন্তু এখন, আমি চাই আপনারা এই ব্যাপারগুলো নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করুন। আল্লাহ যে নিদর্শনগুলো আমাদের দিয়েছেন চাঁদ, সূর্য, বাতাস, গাছপালা ...এই সবগুলো নিদর্শনের পেছনে আমাদের জন্য শিক্ষা রয়েছে। তাই, এই শিক্ষা পাওয়ার পর একজন বিশ্বাসী সূর্যকে কখনো আর আগের দৃষ্টিতে দেখবে না। একজন বিশ্বাসী চাঁদের দিকেও আর কখনো আগের দৃষ্টিতে তাকাবে না।

এখন আল্লাহর রাসূলের উপর দরুদ পড়ার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য আপনাকে আর খুৎবা শুনতে হবে না, আপনি সূর্যের দিকে তাকালেই রাসূলের কথা মনে করে পড়বেন - সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এখন সূর্যকে দেখলেই আমাদের রাসূলুল্লাহ (স) এর কথা মনে পড়বে। এটাই কুরআনের সৌন্দর্য। যদি সর্বদা কুরআনের দৃষ্টিতে চারপাশের বাস্তবতা পর্যবেক্ষণ করেন, তাহলে রিমাইন্ডার এড়াতে পারবেন না। অর্থাৎ, সবকিছু আপনাকে আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূলের কথা মনে করিয়ে দিবে বা চরম সত্য সম্পর্কে আপনাকে কোন না কোন জ্ঞান দান করবে।

আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা আমাদের সকলকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন যারা রাসূলুল্লাহ (স) এর আলো ধারণ করে এবং সে আলো চারদিকে ছড়িয়ে দিতে প্রাণপণ চেষ্টা করে যায়, যেন অন্যরাও সেই সূর্যের দিকে তাদের পথ খুঁজে পায়। বারাকাল্লাহু লিই ওয়ালাকুম।

- উস্তাদ নোমান আলী খান

পঠিত : ৫৭৫ বার

মন্তব্য: ০