Alapon

হিন্দি চ্যানেলের উপকারিতা...!


মাঝপথে থামলাম, চারিদিকে তাকালাম, খানিকটা ভাবলাম; এই মুহূর্তে ফার্মেসীতে বসা ব্যক্তিদের মত গণ্য-মান্য, শিক্ষিত-মার্জিত, ভদ্র এতগুলো মানুষ একসাথে কোথাও পাওয়া যাবেনা। সিদ্ধান্ত নিলাম তাদের সাথেই বসি। জনা তিনেক স্কুলের শিক্ষক, লাইব্রেরিয়ান, ঔষধ কোম্পানির এম-আর এবং সদ্য বিদেশ ফেরত বিদ্যোৎসাহী সিনিয়র বন্ধুকে দেখলাম। হেড মাষ্টার মশাই আমারই শিক্ষক, হাই স্কুলে গণিত শিখেছিলাম।

প্রবাস জীবন থেকে বাজারে যাওয়া; সবাই পরিচিত, চেনা জানা। তাদের সাথে দোকানে বসে এক কাপ গরম চা খাওয়ার আবদার জানাল। এতগুলো জ্ঞানী মানুষকে অকুস্থলে দেখায় চায়ের লোভ প্রত্যাখ্যাত করতে পারলাম না। প্রাথমিক সৌজন্য পর্বের শেষে আরাম দায়ক চেয়ারটিতে বসলাম। তাদের মধ্যে আগে থেকে চলে আসা কথার আদি-অন্ত না জেনে, শুধু শোনাটাকেই প্রাধান্য দিলাম।

রতন স্যার (ছপ্দনাম) গণিতের শিক্ষক, সদ্য বি, এস, সি পাশ করে স্থানীয় ছেলে হিসেবে এলাকার স্কুলে যোগ দিয়েছিলেন। আমিও ক্লাস এইটে তার ছাত্র ছিলাম। এখনও তিনি একই পেশায় একই স্কুলে বহাল রয়েছেন, বয়সও হয়েছে। আগে ফ্রি সময়ে গণিতের টিউশনি করতেন। এখন টিউশনির ইনকামে সন্তুষ্ট নন; আরো বেশী আয় দরকার। তাই পার্টটাইম টিউশনি ছেড়ে, স্বল্প ব্যয়ে ভাল আয় আহরণের লক্ষ্যে, ডিশ ব্যবসা শুরু করেছেন! বাজারের পাশেই, কয়েকটি ডিশ বসিয়ে, ন্যুনতম যন্ত্রপাতি সহযোগে তিনি এই আধুনিক ব্যবসার গোড়াপত্তন করেন। দুই জন ছোকরা মেকানিক রেখেছেন; তারা সারাদিন এ বাড়ী ও বাড়ী ঘুরে নতুন সংযোগ দেন এবং পুরাতন সংযোগের মেরামত করেন। এভাবে রতন স্যার, আশে পাশের কয়েক গ্রাম ও স্থানীয় বাজার তার ডিশ নেটওয়ার্কের আওতায় আনেন। যেহেতু তিনি শিক্ষক মানুষ, তাই সম্মানার্থে স্কুলের সহপাঠী শিক্ষকদের বিনা খরচে সংযোগ দিয়েছেন! তবে তাদের নিকট থেকে প্রতিমাসে অর্ধেক ভাড়া আদায় করা হয়, অর্ধেক মাফ! এলাকার মেম্বার, দাপুটে মুরুব্বী, স্থানীয় বিচারক, ক্ষমতাশীলদের টিভির তার, সংযোগ ব্যয় সহ সব ফ্রি চার্জে করে দিয়েছেন। মূলত রতন স্যারের কাষ্টমার হল, বাজারের দোকানদার, ক্ষমতাহীন মধ্যবিত্ত, ট্যাক্সিওয়ালা এবং তার অতি আদরের প্রাণপ্রিয় স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের পরিবার!

বৈঠকে তারা কি বিষয় নিয়ে কথা বলছিল, সেটা ব্যাখা না করে; সরাসরি তাদের মুখের ভাষায় শুনতে পারলে, কথাগুলো সহজে পাঠকের হৃদয়ঙ্গম হবে। তাই জ্ঞানীদের আলোচনা শুনতে পাঠকদের সবিনয়ে আহবান করছি।

হাশমত স্যার: (প্রাইমারী হেড মাষ্টার রিটায়ারের পথে, আমিও তার ছাত্র)। রতন বাবু আপনাকে কতবার অনুরোধ করলাম আরেকটি হিন্দি চ্যানেল বাড়াতে। আপনি কথাটি গ্রাহ্যই করছেন না। তাই আজকে এর একটা বিহিত করতেই হবে, আপনাকে পাকড়াও করেছি, সমাধান না হওয়া অবধি আপনাকে ছাড়ছি না, বৌদিকে খবরটি পৌঁছিয়ে দেন।

ডাক্তার: রতন স্যারকে একই অনুরোধ করতে করতে আমিও জিহ্বার পানি শুকিয়ে ফেলেছি!

রতন স্যার: (অট্টহাসি দিয়ে) দেখুন আমার কাছে মাত্র ১৫টি চ্যানেল আছে। সেই ১৫টি চ্যানেলের ১৩ টি আপনাদের দাবী মত দিলাম, মাত্র ২টিতে বাংলা চ্যানেল দিয়েছি। আপনাদের থেকে নামমাত্র লাইন চার্জ নিয়ে থাকি। অত চ্যানেল দেখাতে গেলে আমাকে আরো বেশী অর্থায়ন করতে হবে; বর্তমানে ব্যবসার যে গতি, সেটা মোটেও সম্ভব নয়।

হাশমত স্যার: সে জন্যই তো বললাম আরো একটি বাংলা চ্যানেল বাদ দিয়ে, সেখানে একটি হিন্দি চ্যানেল যোগ করে দিন! ল্যাটা চুকে যায়, নতুন অর্থায়নের দরকার নাই। আপনাকে সে পরামর্শ দিতেই তো এখানে ডেকেছি।

রতন স্যার: দেখুন আমিও আপনাদের মত কোন বাংলা চ্যানেল দেখিনা। তবে এটা করলে মানুষের চোখে পড়ে যাব। শুরুতে ৭টি বাংলা চ্যানেল ছিল, কমাতে কমাতে এখন ২টিতে এসে ঠেকেছে। এটাও কমাতে গেলে আমি সমস্যায় পড়ব। আপনারা কি আমার ব্যবসায়ের নিরাপত্তার দিকটি খেয়াল করবেন না? আমি চাই যেন কোন সমালোচনা না উঠুক!

হাশমত স্যার: বাংলা চ্যানেলগুলো কোন গরু-ছাগলেও দেখে না! পুরো দিন শুধু ব্যাঁ, ব্যাঁ করে, আর রাজনীতি নিয়ে গলাবাজি করে। তার চেয়ে বরং ঐ হিন্দি চ্যানেলটি যোগ করে দিন! সেটাতে নাচ, ফ্যাশন শো, সামাজিক নাটক, পারিবারিক নাটক এবং বিকেলে কিশোর-কিশোরীদের নাচ-গান শিখানোর প্রোগ্রামও আছে।

প্রবাসী বন্ধু: বাংলা চ্যানেলগুলো সর্বদা ব্যাঁ, ব্যাঁ করে কথাটি পুরোপুরি সত্যি না হলেও, একেবারে মিথ্যা নয়! এদের সব অনুষ্ঠান হিন্দির অনুকরণে সাজানো! এ মাসে যেটা হিন্দি চ্যানেলে দেখাবে, ছয়মাস পরে সেটা বাংলায় দেখানো হবে।

রতন স্যার: বাংলা চ্যানেল গুলোতে শিখার কিছু নাই। হিন্দি চ্যানেল আরো বেশী আসলে আমারও সমস্যা নাই বরং ভাল। চায়ের দোকানে হিন্দি চ্যানেল চালু করলে, তাদের নাকি কাস্টমর বেড়ে যায়। তবে আরো একটি বাংলা চ্যানেল বাদ দিয়ে সেখানে হিন্দি যোগ করলে আমার ডিশ ব্যবসা মানুষের কাছে প্রশ্নের মুখোমুখি হবে।

ঔষধ কোম্পানির এম, আর: জিওগ্রাফি অথবা এনিম্যাল প্ল্যানেট জাতীয় কোন চ্যানেল রাখেন নাই?

রতন স্যার: আরে সাহেব, গ্রামের মানুষেরা গরু-ছাগল, কুকুর-বিড়াল, হাঁস-মুরগী দেখতে দেখতে এমনিতেই ত্যক্ত বিরক্ত! তার উপর পকেটের টাকা খরচ করিয়ে যদি সেগুলো চ্যানেলে দেখাই; তাহলে আমার ব্যবসা লাটে উঠবে!

প্রবাসী বন্ধু: আপনারা তাহলে বাংলার কোন চ্যানেলটি বন্ধ করতে চান?

হাশমত স্যার: দেখ নাসিব, তোমরা বিদেশে থাক বলেই বাংলাদেশের চ্যানেল হয়ত ভাল লাগে। দেশের মানুষ ওগুলো খায় না, তাদের ভাল লাগেনা। তাছাড়া ঘরের মেয়েরা, বাচ্চারা ওগুলো পছন্দ করেনা। এই দেখ, চ্যানেল আই’তে ক্ষুদে গানরাজ, লাক্স সুপার স্টার, সহ যে প্রোগ্রাম গুলো আছে সেগুলো কি দেখার মত? হিন্দি চ্যানেলে এ জাতীয় যে পয়গামগুলো বানায় সেগুলো বহু উন্নত, উপস্থাপিকার উপস্থাপনার ধরনও দেখার মত। চ্যানেল আই সেখান থেকে এগুলো ধার করে এনে বানাচ্ছে। অবিকল তাদের মত করে বাংলা চ্যানেল সেগুলো বানায়, আর ওদের প্যান প্যানানী গায়। তাই এগুলো যদি দেখতেই হবে, তাহলে সরাসরি হিন্দি থেকে দেখতে অসুবিধা কোথায়? চ্যানেলগুলো আমাদের চাষা-ভূষা মনে করে, যখনই চ্যানেলে আই খুলবেন, নাঙল-মই হাতে শায়খ সিরাজকে দেখতে পাবেন, যত্তোসব!

আরেকটা ঘ্যান ঘ্যানানির চ্যানেল হল বাংলা ভীষণ! কি দেখায় এতে মাথায় কিছুই ঢোকে না। এরাও পুরো দেশের মানুষকে চাষা-মজুর মনে করে। সন্ধ্যা হলে নাটক দেখার জো আছে? বুড়ো ভিলেন এ, টি, এম শামশুজ্জমানকে দিয়ে নাটক চালায়। দেশের সব ভাঁড়গুলো বাংলা ভীষণে ঢুকে পড়েছে! এখন হল যুবকদের জয় জয়কার! দেশে এত খ্যাতিমান নতুন তারকা থাকতে, তাদের যেন শামশুজ্জমানের ভাঁড়ামি ছাড়া চলবে না। বুড়ো বয়সে তাকে টিভিতে ঢুকিয়েছে! মনে হয় সেটা তার নাতীর চ্যানেল! জ্ঞানীরা এসব না দেখে, চোখে চশমা লাগিয়ে ঘুমাতে চাইবে।

ডাক্তার: ঠিক বলছেন হাশমত সাহেব। আমি বরং রতন স্যারকে বলতে চাই। আপনার ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রীদের জিজ্ঞাসা করুন, কয়জনে বাংলা চ্যানেল দেখে? আমার শতভাগ বিশ্বাস তারা সবাই হিন্দি চ্যানেল পছন্দ করবে। কারণ হিন্দি চ্যানেলে তরুণ, যুবক, বুড়ো, খোকা সবার মনের উপযোগী প্রোগ্রাম পয়গাম রয়েছে। কি নাই হিন্দি চ্যানেল গুলোতে? আধুনিক নাচ, ক্লাসিক নাচ, গান, ছোটদের অনুষ্ঠান, হাঁসা-হাঁসির অনুষ্ঠান সহ কত প্রোগ্রামে ভরা!

প্রবাসী বন্ধু: সে জন্যই তো গৃহ বধূরা সবাই ঘরের দরজা বন্ধ করে রাখে। উঠানেই বের হয়না, মেহমান পছন্দ করেনা, আর প্রতিটি ঘরেই চাকরানী থাকে! চাকরানীরাই এখন গৃহস্থালির কাজ করে! বিদেশ থেকে অন্যবার যখন আসতাম, তখন আপনার ভাবীর রান্না-বান্না ও নাস্তা খেতেই খেতেই সময় চলে যেত। এখন চাকরানীর হাতের রান্না খাই! সবাই টিভি রুমে ব্যস্ত থাকে, চাকরানীও তরি তরকারী কাটার জন্য টিভির রুমটাকে আধা রান্না ঘর বানিয়েছে!

হাশমত স্যার: এবার আসল কথা এসে পড়েছ। ঘরে যদি হিন্দি চ্যানেল না থাকে, সে ঘরে চাকরানী কাজ করতে চায়না। সে ঘরের জন্য গৃহ শিক্ষক পাওয়া যায়না। আর ছেলে মেয়েরা অন্যের ঘরে ‘ঢুঁ’ মারে! কোন ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষের উঠতি বয়সী ছেলে-মেয়েরা অন্যের ঘরে এসব দেখতে ‘ঢূঁ’ মারলে, তাকে ফাঁস খেয়ে মরা ছাড়া উপায় থাকে কি? তাই আমার পরামর্শ গ্রহণ করুন, আমরাই মানুষদের কে বুঝাব। তাছাড়া ছাত্রদেরকে ক্লাসের ফাঁকে বুদ্ধি করে নতুন হিন্দি চ্যানেলের কথা একবার মাথায় ঢুকিয়ে দিলে, আপনার সমর্থনের অভাব থাকবেনা।......

কথা চলতে রইল, বাহিরে মুসল ধারায় বৃষ্টি শুরু হল। আরামদায়ক চেয়ারে তন্দ্রাও এসে গেল; এই ফাঁকে আমি নিকট অতীতে ফিরে গেলাম। চিন্তা করছিলাম তিরিশ বছর আগে এদের কাছে কত চরিত্র শিখেছি! তারা বেত হাতে নিয়ে স্কুলে, রাস্তায় এমনকি বাজারেও ছাত্রদের শাসন করতেন। সু-নাগরিক সৃষ্টির জন্য আদাজল খেয়ে লেগে থাকতেন। পড়া না পারলে ক্ষমার ব্যবস্থা ছিল, চারিত্রিক ত্রুটি পেলে শফাং শব্দে বেতের আওয়াজ উঠত। এই তিরিশ বছরে মানুষ গুলোর চিন্তার মাঝে এত পরিবর্তন এসে গেল!

আমিও এদের ছাত্র ছিলাম, প্রবাসে থাকি, এখনও তাদের শিক্ষক হিসেবে ইজ্জত করি। বেয়াদবি হবে বলে তাদের সামনে জড়সড় থাকি। তবে দেশে চাকুরী-ব্যবসা করে তদানীন্তন সহপাঠীদের সাথে স্যারদের কথা বলার ধরনও বদলে গেছে। আচরণে বুঝা দায়, একদা এই শিক্ষকেরা তাদেরকে পড়িয়েছিলেন। আর এ সমস্ত শিক্ষকদের কথা ও আচরণ থেকে বুঝা যায়, পচন মগজ থেকেই শুরু হয়েছে। জানি সকল শিক্ষক এদের মত এখনও পচেনি। তবে ভয় হল, অন্তত কিছু শিক্ষক সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায়ের তফাৎ করার ক্ষমতা হারিয়েছেন! হিন্দি চ্যানেলের মোহ শিক্ষককেও এভাবে কুপোকাত করতে পারে, সত্যিই অবিশ্বাস্য!

হাশমত স্যারের ক্লাস নাইন পড়ুয়া ছেলেটি, তাদের বাড়ীর এক চাকরের মেয়ের হাত ধরে পালিয়েছে। তিনি এখনও বুঝতে পারছেন না এই যুগে ছেলে-মেয়েরা কেন এভাবে নষ্ট হয়! রতন স্যারও বুঝে না, যে গরীবের ছেলেটিকে একদা ডিশ লাইনের কাজ শিখিয়ে, নিজের ঘরে রেখে, খাইয়ে, পড়িয়ে স্বাস্থ্যবান করেছিলেন। সে ছেলেটিই নিজের প্রতিবন্ধী বোনকে, নিজেদের ঘরে চরমভাবে লাঞ্ছিত করে পালিয়েছে! সাব রেজিস্টার ফয়জূল্লাহ সাহেবের মাথায় ঢুকেনা, কত কষ্ট করে মেয়েকে মানুষ করেছেন; কষ্ট কি জিনিষ যাকে বুঝতে দেয়নি। যে মেয়েটি ক্লাসের এত ভাল ছাত্রী, এত অধ্যবসায়ী। যে মেয়েটি এলাকার প্রথম মহিলা ডাক্তার হবে বলে মেডিক্যালে ভর্তি হয়েছিল! সেই কিনা তার বয়সের ছোট আপন ফুফাতো ভাইকে গোপনে বিয়ে করে। এলাকার নিঃসন্তান আনু মুন্সীও সে কথার উত্তর পায়না; বউয়ের একাকীত্ব কাটার জন্য টিভি-ডিশ-মোবাইল সবই দিয়েছিলেন। সুখের সাগরে ভেসে বেড়ানো, সেই বউ কিনা নিজের ছেলের বয়সী একজনের হাত ধরে উদাও হল! এই যুগে এসব কেন ঘটছে এর উত্তর তারা কেউ পায়না! সবাই যুগের উপর ক্ষ্যাপা, সকাল সন্ধ্যা যুগের চৌদ্দগোষ্টি উদ্ধার করেন এবং গালের ঝাল মিটিয়ে গালা-গালি করেন।

তন্দ্রায় চিন্তার জগতে আরো একটু পিছনে চলে গেলাম! ছোট্ট কালে একাকী বাজার থেকে হেঁটে বাড়ি আসছিলাম। সামনেই এক ভদ্রলোক সমান গতিতে হাঁটছেন। আনমনে হেঁটে চলছি এবং নিজের পায়ের স্যান্ডেল খানা, পায়ের আঙ্গুলে চেপে ধরে, সামনে ছুঁড়ে মারছি। এভাবেই সামনে চলছি এবং রাস্তার দূরত্ব কমাচ্ছি, আবারো স্যান্ডেল খানা পায়ে তুলে সামনে ছুড়ে মারলাম। কেন জানি, এবারে স্যান্ডেল খানা হঠাৎ গতি প্রাপ্ত হল, কিছু বুঝে উঠার আগেই সেটা অনেক উপরে উঠে গেল। স্যান্ডেল সামনের দিকে যাচ্ছে তো যাচ্ছেই! গিয়ে ঠিক সামনে চলমান ব্যক্তির টাক মাথার ঠিক চাঁদি বরাবর গিয়ে পড়ল। ভদ্রলোকের মাথায় হঠাৎ হালকা কিছুর পতনে, সাথে সাথেই ঘুরে দাঁড়ালেন, সামনেই স্যান্ডেল পড়ে আছে দেখতে পেলেন। ভদ্রলোককে পিছনের দিকে ফিরতেই দেখি! হায়! হায়! তিনি আমাদের স্কুলের নবাগত হাশমত স্যার! কি করব বুঝে উঠতে পারছিনা। মাফ চাইব, না দৌড় লাগাব, ভাবছি। ওদিকে হাশমত স্যার এ ঘটনা কেউ দেখল কিনা তড়িৎ গতিতে আশেপাশে চেয়ে ফেললেন। নাহ! কেউ দেখেনি; হুঙ্কার দিয়ে আমাকে ডেকে বললেন। আজ আমি তোমার চামড়া তুলে ফেলতাম, তবে মাফ করে দেব এক শর্তে। সেটা হল, একথা কাউকে বলা যাবেনা, যদি কাউকে বলি সেদিনই এই অপরাধের চরম শাস্তি দিয়ে দেবেন। আমি কান্না করে ওয়াদা করলাম, কখনও এই কাজ আবার করব না এবং কাউকে কথাটিও বলব না। চিরদিন আমি সেকথা রেখেছিলাম। হালকা তন্দ্রার ঘোরে তখনকার ঘটনাটি স্যারের রুদ্র মূর্তি সমেত, চোখে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম। আমি অসহায় ভাবে তার সামনে দাড়িয়ে!

এক ডাকে হঠাৎ তন্দ্রা ছুটে গেল। স্যার বললেন, তুমি তো চোখ বন্ধ করে আছ, আমরা একটি বাংলা চ্যানেল বন্ধ করার জন্য অবশেষে রতন স্যার কে রাজি করাতে পেরেছি; তোমার কি অভিমত? হঠাৎ তন্দ্রা হারিয়ে থতমত খেলাম। আমার মাথায় তখনও স্যারের মাথায় স্যান্ডেলের আঘাতের ভয়। মাথা ঘুরছিল, কিছুই মনে করতে পারছিলাম না। চিন্তা করলাম এতক্ষণ কোথায় বসেছিলাম, কি বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছিল? তাদের সিদ্ধান্ত পেলাম, সময় নিলাম, দাঁড়ালাম এবং তাদের উদ্দেশ্যে একটি কথাই বললাম, “আজই বুঝতে পারলাম এলাকার হাই স্কুলে কেন ছাত্ররা এ প্লাস পায়না এবং নিয়মিত ছাত্ররা ফেল করে”! কথাটি বলেই ফার্মেসী থেকে বের হয়ে গেলাম। সম্ভবত তারাও আমার গোঁড়ামিপূর্ণ ভাষার জন্য হাঁসা-হাঁসি করবে। আফসোস লাগছিল কেনই বা প্রথমে অশিক্ষিত-মূর্খ মানুষের চায়ের দাওয়াত নিলাম না।

Nazrul Islam Tipu

পঠিত : ৫৭৯ বার

মন্তব্য: ০