Alapon

উসমানী খিলাফতের সময় বিয়ে নিয়ে কিছু চমৎকার আইন...


আমার বয়স এখন ২৬। এই বয়সের ছেলেদের ক্ষেত্রে যা হয়, আমার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বন্ধুদের সাথে আড্ডায় বসলেই আলোচনার বিষয়বস্তু ঘুরে ফিরে সেই বিয়ের দিকেই চলে যায়। কিন্তু বর্তমান সময়ে বিয়ে যেন একটা অতি কঠিন কাজ।

চারদিকে এতো মেয়ে অথচ বিয়ে করতে গেলেই আর মেয়ে পাওয়া যায় না। মেয়ে পাওয়া গেলেও পরিবারের পছন্দ হয় না। আবার পরিবারের পছন্দ হলে মেয়ের পরিবারের ছেলে পছন্দ হয় না। আবার সবকিছু মিলে গেলেও মোহরানা এবং আনুসাঙ্গিক বিষয়-আশয় নিয়ে বনিবনা হয় না। অথচ উসমানী খিলাফতের সময় বিয়ে কী চমৎকার আইন ছিল। চলুন সেই আইনগুলো জেনে নেই...

(এক) ঐচ্ছিক বিয়ের বয়েস শুরু হতো আঠার থেকে। শেষ হতো পঁচিশে। এর মধ্যে বিয়ে না করলে, তাকে বাধ্য করে বিয়ে করানো হতো।

(দুই) যদি কেউ অসুস্থতার অজুহাত দেখাতো, তদন্ত করে দেখা হতো, বক্তব্যটা সঠিক কি না। রোগটা নিরাময়যোগ্য হলে, সুস্থ্য হওয়া পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় চাপ স্থগিত রাখা হতো। আর দুরারোগ্য ব্যধি হলে, রাষ্ট্রের পক্ষ থেকেই বিয়ে করতে বাধা দেয়া হতো।

(তিন) পঁচিশ হয়ে যাওয়ার পরও যদি কেউ বিনা কারণে বিয়ে না করে থাকতো, তার আয়/ব্যবসা বা সম্পদের এক চতুর্থাংশ কেটে রাখা হতো। জব্দকৃত অর্থ নিয়ে বিবাহোচ্ছুক গরীবদের বিয়ের বন্দোবস্ত করা হতো।

(চার) পঁচিশের পরও বিয়ে না করলে, তাকে রাষ্ট্রীয় কোনও চাকুরিতে নেয়া হতো না। কোনও সংগঠনেও ভুক্তি দেয়া হতো না। আর চাকুরিতে থাকলে, ইস্তেফা দেয়া হতো।

(পাঁচ) কোনও ব্যক্তির বয়েস যদি পঞ্চাশ হয়ে যায়, ঘরে বিবি থাকে একটা, কিন্তু তার আর্থিক সংগতি ভালো, তখন তাকে সামাজিক কোন কাজে অর্থ দিয়ে অংশগ্রহণ করতে বলা হতো। গ্রহণযোগ্য কোনও কারণ দেখিয়ে অপারগতা প্রকাশ করলে, সামর্থ্য অনুসারে অন্তত এক থেকে তিনজন এতীমের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়ে বাধ্য করা হতো।

(ছয়) আঠার থেকে পঁচিশের মধ্যে যদি কোনও গরীব যুবা বিয়ে করতো, তাকে হুকুমতের পক্ষ থেকে ১৫৯ থেকে শুরু করে ৩০০ দুনমা পরিমাণের জমির বন্দোবস্তি দেয়া হতো। চেষ্টা করা হতো জমিটা যেন তার বাড়ির কাছাকাছি কোথাও হয়। এক দুনমা সমান: ৯০০ মিটার।

(সাত) গরীব বর যদি কারিগর বা ব্যবসায়ী হয়, তাকে পূঁজিপাট্টা দেয়া হতো। কোনও বিনিময় ছাড়াই। তিন বছর মেয়াদে।

(আট) ছেলে বিয়ে করার পর, বাবা মায়ের সেবা করার জন্যে আর কোনও ভাই না থাকলে, বরকে বাধ্যতামূলক সেনাকার্যক্রম থেকে রেহাই দেয়া হতো। তদ্রƒপ মেয়ের বিয়ের যদি বাবা মায়ের সেবার জন্যে ঘরে কেউ না থাকে, মেয়ের জামাইকেও বাধ্যতামূলক সেনা কার্যক্রম থেকে রেহাই দেয়া হতো।

(নয়) পঁচিশের আগেই বিয়ে করে তিনসন্তানের বাবা হলে, নৈশস্কুলে বিনামূল্যে তাদের লেখাপড়ার ব্যবস্থা করে দেয়া হতো। সন্তান তিনজনের বেশি হলে, তিনজনের লেখাপড়ার ব্যবস্থা বিনামূল্যে করা হতো। বাকী সন্তানদের জন্যে দশ টাকা করে বরাদ্দ করা হতো। তের বছর বয়েস হওয়া পর্যন্ত।

কোনও মহিলার ঘরে চার বা তার চেয়ে বেশি ছেলে সন্তান থাকতো, তাকে মাথাপিছু ২০ টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হতো।

(দশ) কোন ছাত্র লেখাপড়ার কাজে ব্যস্ত থাকলে, লেখাপড়া শেষ হওয়া পর্যন্ত বিয়ে স্থগিত রাখার অনুমতি দেয়া হতো।

(এগার) কোনও কারণে স্বামীকে অন্য এলাকায় থাকতে হলে, বাধ্য করা হতো সাথে করে স্ত্রীকেও নিয়ে যেতে! যুক্তিসঙ্গত কোনও কারণে স্ত্রীকে সাথে নিতে না পারলে, স্বামীর যদি আরেক বিয়ে করার সামর্থ থাকতো, তাকে কর্মস্থলে আরেক বিয়ে করতে বাধ্য করা হতো। তারপর চাকুরি শেষে নিজের এলাকায় ফিরলে, দুই স্ত্রীকেই সমান অধিকারে রাখতে বাধ্য করা হতো।

বর্তমানের প্রেক্ষাপটে আইনগুলো হয়তো বেখাপ্পা শোনাবে, কিন্তু সমাজে প্রচলিত সব ধরনের অনাচার রোধে, আইনগুলো বেশ কার্যকর বলেই মনে হয়।

তথ্যগুলো ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।

পঠিত : ৬৮৩ বার

মন্তব্য: ০