Alapon

কাফের...! কাফের...! কাফের...!


বর্তমান সময়ে মুসলমানেরা কতটা নাজুক পরিস্থিতি এবং বিভাজনের মধ্যে রয়েছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে ইরানী জেনারেল কাসেম সোলাইমানির হত্যাকান্ড পরবর্তী ঘটনাগুলে পর্যালোচনা করলেই তা পরিস্কার বুঝা যায়।

এঘটনাকে সামনে রেখে বাংলাদেশের জামায়াত,আহলে হাদীস,কাওমী এবং বেদয়াদপন্থী নির্বিশেষে প্রায় প্রতিটি ইসলামী দল-উপদলের ভিতরেই ইরানের পক্ষে বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন অনেকে। এমনকি আওয়ামীলীগ-বিএনপির মতো দলগুলোর মধ্যেও রয়েছে ইরানের পক্ষে বিপক্ষে অবস্থানকারী। সোজা কথায় বলা যায় মুসলমানেরা মিশ্র দ্বিধা বিভক্ত।

ইরানের বিপক্ষে অবস্থানকারীদের দাবি হলো, ইরানীরা শিয়া আর শিয়ারা কাফের। সুতরাং কাফেরকে মেরে ট্রাম্প উত্তম কাজটি করেছেন। তাদের অনেকে আরো একধাপ এগিয়ে বলছেন, যারা ইরানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, শিয়াদেরকে কাফের মনে করেননা, তারাও কাফের এবং প্রত্যেক মুসলিম দেশের সরকারের উচিৎ এসব কাফেরকে হত্যা করা।

এখন প্রশ্ন হলো, শিয়ারা সামগ্রীকভাবে কাফের কি না? তারা যদি সামগ্রীকভাবে কাফের হয়ে থাকেন তাহলে সৌদি আরবসহ সমগ্র মুসলিম দুনিয়া কেন তাদেরকে কাফের ফতোয়া দিচ্ছেন না?

সৌদি আরব একদিকে তাঁদেরকে মুসলিম স্বীকৃতি দিয়ে হজ্জ ওমরাহ করার সুযোগ দিচ্ছেন। আবার অন্যদিকে গোপনে যায়গায় যায়গায় লোক নিয়োগ করে রেখেছেন তাঁদেরকে কাফের ফতোয়া দেয়ার জন্য। এটি একটি চরম বিভ্রান্তি ছড়ানো ছাড়া আর কিছুই নয়। শিয়ারা যদি সামগ্রীকভাবে বাস্তবে কাফের হয়ে থাকেন তাহলে পবিত্র মক্কা এবং মদীনার হারাম এলাকায় এসব কাফেরদেরকে প্রবেশাধীকার দেয়ার কারণে সৌদি রাজ পরিবারের বিচার হওয়া উচিৎ। আবার সুক্ষ্ণ বিচারে তারা সামগ্রীকভাবে কাফের বিবেচিত না হলেও বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য সৌদি রাজ পরিবারকে বিচারের সম্মুখীন করা প্রয়োজন।

শিয়াদেরকে কাফের মনে করার উপাদানগুলো হচ্ছে; নামাযের পাঁচটি ওয়াক্তের প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে সবগুলো নামাজ সন্ধ্যায় পড়া বা তিন ওয়াক্তে পড়া, হযর আলী (রাঃ) কে মৌলা মনে করা, হযরত আলী ছাড়া খোলাফায়ে রাশেদীনের অন্যান্য খলিফাদেরকে ঘৃণা করা, হযরত আয়শা (রা)কে অপবাদ দেয়া, সুন্নীদেরকে ঘৃনা করা ইত্যাদি ইত্যাদি এবং বিষয়গুলো সঠিক।

কিন্তু মোটাদাগে ঈমানে মুফাসসালের আলোকে বিচার করলে তাঁদেরকে কাফের বলা যাবে কি না, তা ভেবে দেখা জরুরী।
‘ইমানে মুফাসসাল মানে হলো ইমান ও ইসলামের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ। এটি হলো: ‘আমানতু বিল্লাহি, ওয়া মালায়িকাতিহি, ওয়া কুতুবিহি, ওয়া রাসুলিহি, ওয়াল ইয়াওমিল আখিরি, ওয়াল কদরি খয়রিহি ওয়া শাররিহি মিনাল্লাহি তাআলা, ওয়াল বাআছি বাদাল মাউত।’ অর্থাৎ: আমি বিশ্বাস আনলাম আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাগণের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি, তাঁর রাসুলগণের প্রতি, কিয়ামতের দিনের প্রতি; তাকদিরের প্রতি, ভাগ্যের ভালো-মন্দ আল্লাহর পক্ষ থেকে; মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের প্রতি।’

প্রিয় বন্ধুগণ, যেখানে শিয়াদেরকে সামগ্রীকভাবে কাফের ঘোষণা দিতে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলো, মিশর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, তুরস্কের গ্রান্ড মুফতিগণ সাহস করছেন না। সেখানে আপনি আমি দুই পাতা বই পড়ে, কয়েকটি ফেইসবুক স্ট্যটাস পড়ে তাঁদেরকে সামগ্রীকভাবে ফাফের ঘোষণা দেওয়ার দায়দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিচ্ছি। যদি সুক্ষ্ণ বিচারে তারা সামগ্রীকভাবে কাফের না হয়, তাহলে হাশরের ময়দানে আমাদের অবস্থাটা কী দাঁড়াবে একটু ভেবে দেখা উচিৎ।

তবে হ্যাঁ, শিয়াদেরকে দীর্ঘ ২৫/৩০ বছর খুব নিকট থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে, আমাদের সুন্নীদের অনেকেই যেমন না বুঝে বা গাদ্দারী করে নানারকমের কুফরী করে যাচ্ছেন, ঠিক তাঁদের মধ্যেও তেমনটি আছেন। তবে সামগ্রীকভাবে সব শিয়া নয়।

বন্ধুদেরকে একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কথা বলি; সৌদি আরবের ইরান বিরোধীতা মোটেই ইসলামের জন্য নয়। শুধুমাত্র তাঁদের রাজতন্ত্র নিরাপদ রাখার জন্য। আর ইরানের সৌদি বিরোধীতাও ইসলামের জন্য নয়, তাঁদের মতবাদ সম্প্রসারণের জন্য।

Lokman

পঠিত : ৯৭৯ বার

মন্তব্য: ০