Alapon

বর্তমানের ইহুদীরা কি সেই বনী ইসরাইল?


বর্তমানের ইহুদিরা আর পবিত্র কুর’আন ও বাইবেলে বর্ণিত ইহুদিরা একই বংশদ্ভূত নয়। আমরা জানি যে হযরত ইব্রাহিমের (আ) দুইটি ছেলে ছিল, একজন হযরত ইসমাইল (আ) ও অন্যজন হযরত ইসহাক (আ)।

দুই জনেই আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা’য়ালার প্রেরিত নবী ছিলেন। দারুন মজার! পিতা ও পুত্রদ্বয়, একই পরিবারের তিনজনই আল্লাহর প্রেরিত নবী! কথার শেষ এখানেই না, হযরত ইসহাকের (আ) ছেলে হযরত ইয়াকুবও (আ) আল্লাহর একজন নবী।

আরও মজার হল, হযরত ইয়াকুবের ছেলে হযরত ইউসুফও (আ) নবী!! মাত্র তিন জেনারেশনের মধ্যে ৫ জন নবী!!
হযরত ইয়াকুবের (আ) বার জন পুত্র ছিল। ইয়াকুবের (আ) অন্য নাম ইসরাইল।

এই বারোজন পুত্র থেকে বারটি গোত্রের সূচনা হয়। সেই গোত্রগুলোকেই আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা’য়ালার অশেষ কুদরতে হযরত মুসা (আ) মিসর থেকে লোহিত সাগর পার হয়ে সিনাই উপত্যাকায় নিয়ে আসেন।
পরে তারা ফিলিস্তিনে প্রতিষ্ঠিত হয়। বুঝতেই পারছেন যে বনী ইসরাইল হল হযরত ইব্রাহিমের (আ) বংশধর। ৭৪০ খৃষ্টাব্দের আগে ইহুদিদের বড় একটা অংশই ছিল এই বংশধরের মধ্যে।

কিন্তু বর্তমানের বেশিরভাগ ইহুদিই (> ৯৩%) ইহুদি হযরত ইব্রাহিমের (আ) বংশধর না! তাদের সাথে মধ্যপ্রাচ্যেরও কোন সম্পর্ক নেই!! তাদের পূর্বপুরুষদেরও কেউ কোন কালেই মধ্যপ্রাচ্যে ছিল না! তাদের সাথে মধ্যপ্রাচ্যের কারোরই রক্তের কোন সম্পর্ক নেই!!

তিন ধরণের ইহুদি বর্তমানে আছে,
১. আশকেনাজি (Ashkenazi Jews): ইহুদি বর্তমান ইহুদিদের ৯৩% ই এরা, এদের পূর্বপুরুষরা খাজারিয়া অঞ্চলে বসবাস করতো, এরা ককেশাস অঞ্চলের লোক, মধ্যেপ্রাচ্যের নয়!

২. সেফারডিম ইহুদি (Sephardic Jews): স্পেনের ইহুদিরা, যারা খৃষ্টাব্দ ৭৩ সালে রোমানসৈন্য কতৃক Temple of Solomon ভেঙ্গে দেয়ার ফলে স্পেন ও গ্রীসে অভিবাসী হয়।

৩. মিজরাহিম ইহুদি (Mizrahi Jews): একইভাবে, তারাও আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের ইহুদি, যারা ৭৩ খৃষ্টাব্দে রোমানসৈন্য কর্তৃক Temple of Solomon ভেঙ্গে দেয়ার ফলে আরব, ইরান, ইরাক, উত্তর আফ্রিকায় অভিবাসী হয়, যাদের পূর্বের ইহুদিদের সাথে সত্যিকারের রক্তের সম্পর্ক আছে!

৭০০ খৃষ্টাব্দের পর সারা পৃথিবীতে তিনটি সুপারপাওয়ার সাম্রাজ্য ছিল।
১. রোমান এম্পায়ার: খৃষ্টানদের,
২. মুসলিম খিলাফত: মুসলিমদের ও
৩. খাজার সাম্রাজ্য : Pagan বা প্রকৃতি পূজকদের, এই খাজাররা খুবই শক্তিশালী ছিল, তাদের প্রতিরোধের কারণে মুসলিমরা ইউরোপে যেতে পারেনি, নতুবা ইউরোপ হয়তো আজ মুসলিমদের দখলে থাকতো!!

খাজার সাম্রাজ্যের প্রধান যে তাকে বলা হত কাগান (Kagan)। সে চিন্তা করে দেখলো যে তারা ছাড়া অন্য যে দুটি সুপার পাওয়ার সাম্রাজ্য আছে তারা ঐশ্বরিক ধর্মের অনুসারী অথচ আমরা এত শক্তিশালী হয়ে প্রকৃতির পূজা করে বেড়ায়!!

তারপর সে সিদ্ধান্ত নিলেন যে তারাও একটি ঐশ্বরিক ধর্মের অনুসারী হবে!! সে চিন্তা করে দেখলো যে যদি তারা খৃষ্টান ধর্ম গ্রহণ করে তবে তারা রোমান চার্চের অধীনে থাকতে হবে! আর যদি ইসলাম গ্রহণ করে তবে খলিফার অধীনে থাকতে হবে।

সুতরাং সে সিদ্ধান্ত নিলে যে সে এবং তার প্রজারা সবাই একযোগে ইহুদি ধর্ম গ্রহণ করবে!! সে সারা রাজ্য এই ঘোষণা দেয়ার পর সারা রাজ্যের অধিবাসীরা একত্রে ইহুদি ধর্ম গ্রহণ করে।
ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ধর্মের পরিবর্তনের উদহারণ এটি!! পুরো রাজ্য একযোগে ইহুদি হয়ে যায়!! এরা সবাই ককেশাস অঞ্চলের, বর্তমানে এটা প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে।

কাজেই বুঝতেই পারছেন তাদের পূর্বপুরুদের মধ্যপ্রাচ্যের সাথে কোনই সম্পর্ক নেই! যখন রাশিয়ানরা ১৩০০ শতকে খাজার সাম্রাজ্যকে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে দখল করে নিল তখন খাজারের ইহুদিরা পশ্চিমের দিকে রওনা দিল। তাদের বেশিরভাগই গেল রাশিয়া ও পোল্যান্ডে।

তারপর তারা আস্তে আস্তে জার্মানীতে ছড়িয়ে পড়লো। জার্মানীতে যখন তারা গেল তখন তাদের বলা হত আশকেনাজি (ইউরোপের ইহুদি (জার্মান শব্দ))!! এই ইহুদিরাই পরবর্তীতে সমগ্র ইউরোপে ও পরে যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়ে!!

আর্থার কোস্টলার (Arthur Koestler), তিনি নিজেই একজন আশকেনাজি ইহুদি, তিনি এই সংক্রান্ত গবেষণা করেন এবং এর উপর একটা বই লেখেন। বইটির নাম ‘The Thirteenth Tribe। আসল ইহুদিরা বনী ইসরাইলের ১২ টি গোত্রের, বর্তমান ইহুদিরা মধ্যপ্রাচ্য নয় বরং ককেশাস (ইউরোপ) থেকে এসেছে বলে তিনি উপহাস করে বলেছেন ১৩তম গোত্র!

শুধু আর্থার কোস্টলার নয় ইসরাইলের অনেক ইহুদি ইতিহাসবিদ স্বীকার করেন যে তাদের পূর্বপূরুষগণ ককেশাস অঞ্চলের, খাজার সম্রাজ্যের, ফিলিস্তিনের নয়!

Rajib

পঠিত : ১২৪৬ বার

মন্তব্য: ০