Alapon

দক্ষিণ এশিয়ার বধ্যভূমি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত



২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি আকাশ পথে উড়ে যাওয়া কোন বিমান যাত্রী হয়তো জানালা দিয়ে লাল টুকটুকে বড় পাখি দেখে অবাক হয়েছে। এত উপর থেকে তো আর রক্ত দেখা যায় না। সকাল ছয়টায় গুলি বিদ্ধ হওয়ার পর প্রায় এগারটা পর্যন্ত মানুষের নিষ্ঠুরতার প্রতীক, জীবনের দায়, আর কাঁটাতার দিয়ে দম্ভ জানান দেওয়া রাষ্ট্রীয় বড়ত্বকে শ্লেষ করে ফেলানী ঝুলে ছিল কাঁটাতারে।

কিন্তু অবাক হন নি বিএসএফ এর সদস্যরা। হত্যাকারী বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ এর কোনও মানসিক বিক্ষেপ হয়েছিল কি না তাও জানা যায়না। এ যে রাষ্ট্র- রাষ্ট্র খেলা। অমিয় শুধু এক রাউন্ড গুলি ছুঁড়েছে এই আর কি! নব আবিষ্কৃত ভারতীয় 5.56mm ক্যালিবার এর INSAS রাইফেলের ফায়ার পাওয়ারের আরেকটি সফল পরীক্ষা হয়তো তাদের কাছে!

কিন্তু বিএসএফ সম্ভবত অধিকাংশ সময়ই ভুলে থাকে যে সীমান্ত রক্ষা একটি পুলিশি দায়িত্ব, কোন প্রকার যুদ্ধ তৎপরতা নয়। কিংবা এটাই তাদের নিয়ম- গুলি কর এবং হত্যা কর। বিএসএফ কোন সামরিক বাহিনী নয়, যেমনটি নয় পৃথিবীর কোন দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী। তাঁদের মুল পরিচয় তাঁরা সীমান্ত পুলিশ। তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন ভারতের সেন্ট্রাল আর্মড পুলিস ফোর্স (CAPF) এর পাঁচটি বাহিনীর মধ্যে একটি। সুতরাং তাদের পক্ষে একমাত্র নিজের প্রাণ রক্ষা বা সেলফ ডিফেন্স ছাড়া অন্য কোন কারণেই প্রাণঘাতি অস্ত্রের ব্যবহার কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। অকারণ ফৌজি উগ্র মানসিকতার প্রকাশ নিজেদের পেশাগত অদক্ষতা এবং নীতিহীনতাকেই প্রমাণ করে।

ফেলানীর মৃত্যুর অব্যবহিত পরেই ২০১১ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য ইকনমিস্ট (The Economist) এ Felani’s last steps শিরোনামে এক প্রতিবেদনে নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা Human Rights Watch এর বরাতে বলা হয়েছে- গত দশ বছরে বিএসএফ বাংলাদেশ-ভারত ২৫৫০ মাইল সীমান্ত জুড়ে প্রায় এক হাজার বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে। এতে প্রতি চার দিনে একজনকে হত্যা করা হয়েছে বলে বোঝা যায়। দ্য ইকনমিস্ট একই প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করেছে, এই হত্যার সংখ্যা স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালীন ‘ইনার জার্মান বর্ডার’ অতিক্রম কালে নিহত লোকের চেয়ে সংখ্যায় অনেক বেশি।

দ্য ইকনমিস্ট এর প্রতিবেদনের সমর্থন পাওয়া যায় ২৩জুলাই ২০১১ এ দ্য গার্ডিয়ান (The Guardian) এ ব্রাড অ্যাডামস এর প্রতিবেদনে। India’s shoot-to-kill policy on the Bangladesh border শিরোনামে লেখায় তিনি উল্লেখ করেন যে ‘ভারতের বিএসএফ’ সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে গুলি-করে-হত্যা-কর (shoot-to-kill) নীতি বজায় রেখেছে, এমন কি নিরস্ত্র গ্রামবাসীদের ক্ষেত্রেও। গত দশ বছরে ভারতীয় নিরাপত্তা রক্ষীরা প্রায় এক হাজার লোককে হত্যা করেছে, যার অধিকাংশই বাংলাদেশি। এতে করে সীমান্ত এলাকা পরিণত হয়েছে ‘দক্ষিণ এশিয়ার বধ্যভূমি’তে (south Asian killing fields)।

ব্রাড তাঁর প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করেন- “এইসব হত্যাকাণ্ডের জন্য কাউকে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়নি, যদিও প্রমাণ রয়েছে যে এগুলো ছিল ঠাণ্ডা মাথার হত্যাকাণ্ড এবং মানুষগুলো ছিল নিরস্ত্র এবং প্রতিরোধহীন।”

ব্রাড তাঁর লেখায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন যে, ভারতীয় কর্তারা এই ধরণের গুলি বর্ষণকে বৈধতা দিয়ে কথা বলছেন। এমনকি যদি সীমান্ত অতিক্রমকারী ব্যক্তি নিরস্ত্রও হয়ে থাকে। যেমনটি বলেছেন ফেলানী হত্যাকাণ্ডের সময়ের বিএসএফ প্রধান রমন শ্রীবাস্তব- “এইসব মানুষদের জন্য দুঃখ বোধ করার কিছু নেই। যেহেতু তারা রাতের বেলায়ও ভারতীয় সীমান্ত অতিক্রম করার চেষ্টা করে, তাদেরকে ঠিক নির্দোষ বলা যাবে না। সুতরাং তাদের প্রতি গুলি বর্ষণ বৈধ ছিল।”

ফেলানী ফিরছিল তার বাবার সাথে। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি থানার অনন্তপুর সীমান্ত দিয়ে। মা জাহানারা বেগম তখনো তাদের ভারতীয় নিবাসে, আসামের বনগাঁইগাঁও এ ।তার বাবার আদি বাড়ি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী থানার দক্ষিণ রামখানা গ্রামে। বাবা নুরুল ইসলাম এর ভাষ্য মতে ফেলানীর বিয়ে ঠিক হয়েছিল। তাই তার বিয়ে দেয়ার জন্য তাকে নিয়ে ফিরছিলেন তিনি ভারত থেকে।

‘ফেলানী’ নামটি বলে দেয় কতটা প্রান্তিক এই ছোট্ট কিশোরী। যেখানে প্রজন্মান্তের আমাদের বোনদের, সন্তানদের নামগুলো কথিত আধুনিকতার ছোঁয়া পাচ্ছে, সেখানে সে ‘ফেলানী’ ই রয়ে গেছে। অনুবাদে যার নামের অর্থ দাঁড়ায় ‘যে ফেলে দেওয়ার যোগ্য’।

মানবাধিকার সংগঠন এবং সংবাদ মাধ্যমের চাপে বিএসএফ তার কনস্টেবল অমিয় ঘোষের বিরুদ্ধে বিএসএফ আইনের (THE BORDER SECURITY FORCES ACT 1968) ৬৪ এবং ৬৫ ধারা মোতাবেক জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্ট (GSFC) গঠন করে এবং ২০১২ সালের অগাস্ট মাসে উক্ত কোর্টে চার্জশিট দেয়। তার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারায় হত্যা (culpable homicide not amounting to murder) এবং বিএসএফ বিধির (THE BORDER SECURITY FORCES RULES 1969) ১৪৬ ধারায় অভিযোগ আনা হয়।

১৩ অগাস্ট ২০১৩ তারিখে বিচার শুরু হয় কুচবিহার শহরের কাছে সোনারি ক্যাম্পে। ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখে বিএসএফ এর বিশেষ আদালত কনস্টেবল অমিয় ঘোষকে ‘সিদ্ধান্ত অযোগ্য ও অপর্যাপ্ত প্রমাণ’ (Inconclusive and Insufficient evidence) এই মর্মে নির্দোষ ঘোষণা করে। জিএসএফসি এর প্রধান ছিলেন আসাম-মেঘালয় ফ্রন্টিয়ার ডি আই জি এস পি ত্রিবেদী। সাথে ছিলেন আরও চারজন কর্মকর্তা। কিন্তু বাংলাদেশের আপত্তি এবং ভারতের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর চাপে ১৬ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে রিভিশন ট্রায়ালে বসে ওই একই আদালত এবং ২ জুলাই ২০১৫ তারিখে অমিয়কে আবারও নির্দোষ ঘোষণা করা হয়। ফোর্সেস কোর্টের রায়টি পাঠানো হয়েছে বিএসএফ এর ডিজি এর কাছে। তিনি অনুমোদন করলেই সেটিই চূড়ান্ত। ছাড় পেয়ে যাবেন অভিযুক্ত বিএসএফ কনস্টেবল অমিয় ঘোষ।

ইতিমধ্যে ভারতীয় মানবাধিকার কমিশন ফেলানীর পরিবারকে পাঁচ লক্ষ টাকা আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। এ বিষয়ে তারা ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের GSFC কোর্টের রায় চূড়ান্ত হওয়া পর্যন্ত সাময়িক স্থগিতাদেশের আপিল খারিজ করে দিয়েছে।

কমিশন তাঁর পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেছেন যে- “কমিশন এই বিষয়ে সচেতন যে নিরাপত্তারক্ষীরা সীমান্তে অত্যন্ত সংবেদনশীল কর্মে নিযুক্ত আছে। তারপরও তাদেরকে এই ধরণের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে অবশ্যই শৃঙ্খলা এবং কিছু মানদণ্ড বজায় রাখতে হবে।”

কমিশন তাঁর পর্যবেক্ষণে আরও উল্লেখ করেন, “উল্লেখিত ক্ষেত্রে ভিকটিম একটি নিরস্ত্র বালিকা। সুতরাং এই অভিযুক্ত কনস্টেবল বিএসএফ সদর দপ্তর এর নির্দেশনা লঙ্ঘন করেছে। এমনকি বিএসএফ এর স্টাফ কোর্ট অব এনকোয়ারী বলেছে যে উক্ত কনস্টেবল “আত্মরক্ষার অধিকার” বা RIGHT TO SELF DEFENCE এর সীমা লঙ্ঘন করেছে। একটি নিরস্ত্র বালিকাকে গুলি করার কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকতে পারেনা।”

ফেলানী হত্যাকাণ্ডের সুবিচার চেয়ে ভারতীয় মানবাধিকার কমিশনে লড়াই করেন পশ্চিমবঙ্গের মানবাধিকার সংগঠন MASUM। নিঃসন্দেহে তারা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য।ব্যক্তিগতভাবে ধন্যবাদ পেতে পারেন MASUM এর নির্বাহী প্রধান কিরীটী রায় এবং সংশ্লিষ্ট অন্যরা। MASUM এর নির্বাহী প্রধান কিরীটী রায় একে ‘নৈতিক বিজয়’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি আরও বলেন, “আর্থিক ক্ষতিপূরণ সন্তান হারানোর কোন সান্ত্বনা নয়। কিন্তু মানবাধিকার কমিশনের রায় প্রমাণ করেছে আমরা যে অভিযোগ করেছি তা সত্য এবং বিএসএফ যা করেছে তা অন্যায়।”

হয়তো এটুকুই ফেলানীর পরিবারের জন্য সুবিচারের সান্ত্বনা হয়ে থাকবে, যদি আইনের জটিলতায় আর কোন প্রতিকার নাও মেলে। আর বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশের শান্তিকামী এবং বন্ধুভাবাপন্ন মানুষেরা শান্তি পাবেন যেদিন সীমান্ত হত্যা সত্যিকারভাবেই শূন্যে নেমে আসবে।

কিন্তু সুবিচারের সবগুলো দরজা একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে একথা বলা যাবেনা। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে ফেলানীর বাবা ভারতীয় সংগঠন MASUM এবং বাংলাদেশী মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (ASK) এর সহযোগিতায় ভারতের ফেডারেল সুপ্রিম কোর্টে সুবিচার এর আবেদন করেন। রিট আবেদনকারী ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম এবং MASUM এর নির্বাহী পরিচালক কিরীটী রায়। ফেলানী’র গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুতে ভারতীয় সংবিধান স্বীকৃত ‘জীবনের নিরাপত্তার অধিকার’ লঙ্ঘিত হয়েছে।

কারণ এই অধিকার শুধু ভারতীয় নাগরিকের জন্যই প্রযোজ্য নয়, ভারতে অবস্থানকারী দেশি বিদেশি সব নাগরিকের জন্যই প্রযোজ্য। এই মর্মে রিট মামলা দায়ের করা হয়েছে। তারা সিবিআই এর মতো স্বাধীন সংস্থা দ্বারা এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তের আবেদন জানান, যাতে অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনা যায়। সেই মামলা বিচারাধীন আছে। সুপ্রিম কোর্ট বিএসএফ, পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে কারণ দর্শাও নোটিশ দিয়েছে এই বিষয়ে।

বিএসএফ এর নিজস্ব আদালত জিএসএফসি তাদের প্রথম রায়ে কনস্টেবল অমিয় ঘোষকে ‘সিদ্ধান্ত অযোগ্য ও অপর্যাপ্ত প্রমাণ’ এর কারণে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিলে ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতি এর প্রধান অ্যাডভোকেট সালমা আলী ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টে ২০১৩ সালেই আরেকটি রিট মামলা দায়ের করেছিলেন ভারতীয় একজন আইনজীবীর সহায়তায়।

এছাড়া ফেলানীর হত্যার বিষয়ে বিএসএফ এর নিজস্ব আলাদতের রায় নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে সে বিষয়ে পরিস্কার আইনি ব্যাখা চেয়ে আরেকটি রিট মামলা দায়ের করেছেন ভারতের মানবাধিকার সংস্থা অ্যামেনেস্টি ইন্ডিয়া।

আজ ৭ জানুয়ারি। ফেলানী হত্যার নয় বছর। ২০১১ সালের এই দিনে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ির রামখানা অনন্তপুর সীমান্তে ১৪ বছরের কিশোরী ফেলানীকে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)।

২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতের কোচবিহারে জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস আদালতে ফেলানী হত্যার বিচার কার্যক্রম শুরু করে ভারত সরকার। ওই আদালতে সাক্ষ্য দেন ফেলানীর বাবা নূর ইসলাম এবং মামা হানিফ। তবে একই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর আসামি অমিয় ঘোষকে খালাস দেয় বিএসএফ এর বিশেষ আদালত।

এরপর রায় প্রত্যাখ্যান করে পুনর্বিচারের দাবি জানান ফেলানীর বাবা। এর প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর আবারও বিচারকাজ শুরু হলে ১৭ নভেম্বর আদালতে সাক্ষ্য দেন ফেলানীর বাবা। কিন্তু ২০১৫ সালের ২ জুলাই আসামি অমিয় ঘোষকে পুনরায় খালাস দেন আদালত।

এই রায়ের পর একই বছরের ১৪ জুলাই ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ- ‘মাসুম’ ফেলানীর বাবার পক্ষে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে একটি রিট পিটিশন করে। ওই বছর ৬ অক্টোবর রিট শুনানি শুরু হয়। ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে কয়েক দফায় পিছিয়ে সর্বশেষ ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি শুনানির দিন ধার্য হলেও তা আজ পর্যন্ত হয়নি। এর ফলে থমকে গেছে ফেলানী খাতুন হত্যার বিচার প্রক্রিয়া।

ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার কার্যক্রম ঝুলে থাকায় হতাশা প্রকাশ করেছেন ফেলানীর পরিবার, স্বজন ও এলাকাবাসী। এটা শুধু বিচার ঝুলিয়ে রাখা নয়। এটি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত। যদিও এসব আঘাতে কিছুই আসে যায় না বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের।

যদি তাদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া হতো তাহলে নিশ্চয়ই আমাদের সীমান্ত পরিস্থিতির উন্নয়ন হতো। কিন্তু তা হয়নি। যে বছর ফেলানী খুন হয়েছে সে বছর আরো ৩৮ জুনকে খুন করেছে ভারতীয় বিএসএফ।

বলা হয়ে থাকে, প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সাথে মহাজোট সরকারের সুসম্পর্ক বিদ্যমান। আর ভারতও নাকি তাদের জন্য সুবিধাজনক হিসেবে আওয়ামীলীগকে বিবেচনা করে থাকে। তাই এই মহাজোট সরকার আসার পর সীমান্তবর্তী মানুষগুলোর আশা ছিলো এই সীমান্ত হত্যার একটা সুরাহা হবে। কিন্তু দেখতে দেখতে আওয়ামী সরকারের দুটি মেয়াদ পার হয়ে গেলো। আসক, অধিকার ও বিজিবি প্রদত্ত তথ্য অনুসারে, গত ১১ বছরে বিএসএফের হাতে নিহত হয়েছেন অন্তত ৪৫০ জন। আর আহত ও অপহরণের শিকার যথাক্রমে ২৫৪ ও ২৬৯। এসব ছাড়াও আরো ১৪২ জনকে অপহরণের পর সীমান্তে বিভিন্ন দফায় বৈঠকের পর ছেড়ে দেয়া হয়।

বছর মৃত্যু
২০১৯ ১৯
২০১৮ ১১
২০১৭ ২৫
২০১৬ ৩১
২০১৫ ৪৬
২০১৪ ৪০
২০১৩ ২৯
২০১২ ৩৮
২০১১ ৩৯
২০১০ ৭৪
২০০৯ ৯৮

গত এগারো বছরে বাংলাদেশ সীমান্ত পরিণত হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার বধ্যভূমিতে। আমরা কি স্বাধীন? আমাদের কি সার্বভৌমত্ব আছে? আমাদের কি সরকার আছে? থাকলে তো এমন হতো না।

পঠিত : ৬১৭ বার

মন্তব্য: ০