Alapon

তবে কি আরও একটি জজ মিয়া নাটক মঞ্চস্থ হতে যাচ্ছে...?


দুপুরের দিকে হঠাৎ খেয়াল করলাম, ব্রেকিং নিউজ। টিভি খুলে দেখলাম, সব চ্যানেল একযোগে লাইভ সম্প্রচার করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সেই গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে র‌্যাবের কার্যালয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে।

আশা করেছিলাম, এমন একজন সুঠামদেহিকে দেখবো যার চেহারা কিনা ভিক্টিমের বর্ণনার সঙ্গে মিলে যাবে। নির্যাতিতা ছাত্রীটি পুলিশকে জানিয়েছিলেন- কয়েক দফা চিৎকার করার চেষ্টা করলেও যুবকটি তার মুখ জোর করে চেপে ধরে মারধর করে। হুমকিও দেয় অনেকবার। সুঠামদেহী যুবকের আচরণ দেখে মেয়েটির বেশ প্রভাবশালী মনে হয়েছিলো। এমনকি যুবকটি বারবার ছাত্রীর পরিচয়ও জানতে চাচ্ছিলো, এতে বেশ ভয় পেয়ে যান নির্যাতিতা মেয়েটি।

এবার অভিযুক্ত গাঁজাখোর লোকটির সাথে মেলান তো। সুঠামদেহী? যুবক? প্রভাবশালী? জোর করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে কেবল ধর্ষনই না, হুমকি দিয়ে পরিচয় জানতে চাইবার মত গুরুত্বপূর্ণ কেউ?

এই লোক তো গাঁজা খেয়েই কুল পায় না, ধর্ষন করবে কোন দিক দিয়ে? একটা মেয়েকে ধর্ষন করার মত প্রয়োজনীয় শক্তি-সামর্থ্যও এর আছে বলে মনে হয় না।

অফিসে লোকজন সবাই বলাবলি করছিল- এইটা সাজানো নাটক! এই লোকের চেহারাই বলে দিচ্ছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা ছাত্রীকে বিট করার মত দৈহিক বা মানসিক সক্ষমতা নেই। এটাও হয়তো কোনো জজ মিয়া নাটক!

প্রথমে আমি তাদের কথার সাথে দ্বিমত পোষণ করেছিলাম। বলেছিলাম, সিএনজি চালকরা এমনই হয়। মুখে গোবেচারা ভাব আর সুযোগ পেলে মহা শয়তানের ভাব। কিন্তু পরবর্তিতে ভিক্টিমের বয়ান পড়ে আমার মনে হচ্ছে- এটা হয়তো নতুন কোনো জজ মিয়া নাটক। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি হয়তো চিচকে চোর বা ছিনতাইকারী হতে পারে। কিংবা তার দ্বারা প্রতিবদ্ধি ফকিররা ধর্ষণেরও স্বীকার হতে পারে। কিন্তু এই ব্যক্তির শারীরিক ভাষা, দৈহিক শক্তির সামর্থ্য বলে দিচ্ছে, তার ঢাবির একটি মেয়ে ধর্ষণ করা এবং তার পরিচয় জানতে চাওয়ার মত নূন্যতম সামর্থ্যও নেই।

তাহলে কেন এই জজমিয়া নাটক?

দেশের মিডিয়াগুলোতে যখন সারাদিন স্বৈরাচার সরকারের গুনকীর্তন, উন্নয়নের সংবাদ আর পদ্মাসেতুরে প্যান বসানো উপলক্ষ্যে লাইভ দেখানোতে ব্যস্ত, তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ধর্ষণের সাথে জড়িত অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে সর্বোচ্চ শাস্তির মুখোমুখি করার জন্য আন্দোলন জোরদার হতে শুরু করেছে। এই আন্দোলন এখন আর শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই সীমাবদ্ধ নেই, ধীরে ধীরে তা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে। ‍এমনকি ঢাকা শহরের স্কুলের শিক্ষার্থীরাও কোথাও কোথাও আন্দোলন করছে।

এই সরকারের নিশ্চয়ই ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের কথা স্মরণ আছে। সেই আন্দোলনের পর থেকে সরকারের অবস্থা ঘরপোড়া গরুর মত। যে গরু আকাশে কালো মেঘ দেখলেই ভয়ে হাম্বা করে ওঠে। ঠিক তেমনই শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দেখলেই সরকার ভয়ে আৎকে ওঠে! ধর্ষণের পর আজ ৩ দিন অধিবাহিত হয়ে যাওয়ার পরও যখন কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছিল না, ঠিক তখনই আন্দোলন প্রশমিত করতে হয়তো এই জজ মিয়া নাটক সাজাতে পারে। আর এভাবেই ন্যায়বিচারের অভাবে দিনকে দিন দেশে ধর্ষণের সংখ্যা বেড়েই চলেছে! স্বৈরাচার এবং ভোটারবিহিন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা সরকারের কাছে এমন দায়িত্বজ্ঞানহীণ আচরনই কাম্য!

পঠিত : ৪৭৪ বার

মন্তব্য: ০