Alapon

বিচক্ষণ ইরানের ব্যালাস্টিক গেইম

কেন ইরানের ব্যালিস্টিক মিসাইল এট্যাকে গতকাল একজন মার্কিন কিংবা ইরাকি সেনা নিহত হয় নাই আর এত কম ক্ষয়ক্ষতি হলো কেন?


১.১) ইরাকের প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছে হামলার অল্প আগে ( ১ ঘন্টা) ইরানিরা ইরাকিদের হামলার খবর জানিয়েছিল। অলমোস্ট একই সময়ে আমেরিকানরাও তাদের মিসাইল এক্টিভিটি ডিটেকশান সিস্টেম দিয়ে জানতে পেরেছিল, উভয়ে উভয়কে জানায় কি হতে যাচ্ছে আর সেনারা নিরাপদ অবস্থানে সরে পড়ে। ফলাফলে কেউ আহত কিংবা নিহত হয় নাই। এটলিস্ট দিস ইজ দ্যা অফিশিয়াল স্টরি ফ্রম ইরাক আর আমেরিকা।


১.২) ১৬ টি মিসাইলের মধ্যে এটলিস্ট ১ টা মিসাইলে কোন পে-লোড ছিলো না । ব্যালিস্টিক মিসাইলের পে-লোড হচ্ছে তার ওয়ারহেড বা এক্সপ্লোসিভ চার্জ, কোন কোন মিসাইলে একের অধিক পে-লোড যুক্ত করা যায়। অতএব যত কম পে-লোড তত কম ক্ষতি। [ভিতরের খবর, ডোন্ট আস্ক ফর সোর্স]


১.৩) কোন কোন মিসাইলে যেই পরিমান পে-লোড ইরানীরা রেখেছিল তা মিসাইলের ধারন ক্ষমতার চাইতে কম, অর্থাৎ খুব ক্যাল্কুলেশান করে ক্ষয় ক্ষতির পরিমান কম রেখেছিল ইরানীরা। হাজার হোক বন্ধু রাষ্ট্র ইরাকের নিজস্ব মিলিটারি বেইস বলে কথা। জ্বি, এই বেইস ইরাকি মিলিটারির যা আমেরিকান সেনারাও ব্যবহার করে।


১.৪) আসাদ এয়ার বেইসের ইম্প্যাক্ট পয়েন্ট এনালিসিস করলে বুঝা যায় ইরানীরা চুলচেরা হিসাব করে সঠিক মিলিটারি ক্যাপাবিলিটির পয়েন্টগুলোকে আঘাত করেছে। যেমন ইকুইপমেন্ট বিল্ডিং, স্টোরেজ বিল্ডিং ইত্যাদি। উলটাপালটা, এদিক সেদিক, রাস্তা ঘাট মিসাইল হিট করে নাই। অত্যন্ত নির্ভুল স্ট্রাইক।


এই মিসাইল হামলা দিয়ে ইরান এক সাথে কয়েকটা পাখি শিকার করেছেঃ


২.১) কাশেম সোলায়মানিকে কবরে নামানোর আগে তার হত্যার প্রতিশোধমূলক কিছু করা ইরানের জন্য জরুরী ছিল ফর পাবলিক সেন্টিমেন্ট।


২.২) বাইরে যদিও বলা হচ্ছে ইরানি মিসাইল হামলায় কোন হতাহত হয় নাই, কিন্তু ইরানের ইন্টার্নাল মিডিয়া বলেছে এতে কমপক্ষে হাজার খানেক আমেরিকান সেনা নিহত হয়েছে, এতে করে বুঝা যাচ্ছে ইরানে আভ্যন্তরীণ জনগণকে খুশি করা ইরানের জন্য জরুরী একটা ব্যাপার। গেলো মাসেই ইরানে সরকারবিরোধি বিক্ষোভ হয়েছে, যদিও আমি মনে করি সেখানে সহজে কোন বিপ্লব সফল হবে না।


২.৩ ) আমেরিকা সহ বিশ্বকে ইরান জানিয়ে রাখল যে ইরানকে হাল্কা ভাবে না নিতে, তারা নিজেদের রক্ষার্থে যে কোন পর্যায়ে যাওয়ার সক্ষমতা রাখে। যেখানে সবাই ভেবে রেখছিল ইরান প্রক্সি দিয়ে প্রতিশোধ নিবে, সেখানে তারা সোলায়মানির মৃত্যুর কয়েক দিনের মাঝেই নিজ মাটি থেকে আমেরিকান সেনারা যেই বেইসে আছে তাতে মিসাইল লঞ্চ করতে দ্বিধা করে নাই। দিস অয়াজ নো স্মল ম্যাটার। এই প্রথম ইরান আমেরিকার সেনাদের নিজ মাটি থেকে সরাসরি আক্রমন চালিয়েছে। যদিও আবার নিজেরাই তাদের বাচিয়ে দিয়েছে।


২.৪) ইরান আমেরিকাকে কেবল একটা মেসেজ দিতে চেয়েছে, আসল হতাহত করতে কোন হামলা নয়। তারা ইরাকের বড় কোন ক্ষতি হোক তাও চায় নাই। চাইলে হামলার আগে তাদের জানাতো না। ইরাক আগের চাইতেও এখন বেশি ইরানের আচলের তলে।


২.৫) এতদিন ইরানের মিসাইল ক্যাপাবিলিটি নিয়ে যেই স্পেকুলেশান ছিল তা শেষ হয়েছে, এখন সবাই জানে ইরানের মিসাইল ক্যাপাবিলিটি খুব প্রিসাইস আর সফস্টিকেটেড। এটা বাকি রিজিওনাল দেশগুলার জন্য অশনি সংকেত, কিন্তু ইরানের জন্য রক্ষাকবজ।


ইরান যে ইচ্ছাকৃত ভাবে কোন হতাহত ছাড়া ফেইস সেভিং আর ফোর্স শোইং মিসাইল আক্রমন করেছে তা একনোলেজ করে আমেরিকা এই যাত্রায় আর কোন প্রতিশোধ মুলক আক্রমন চালালো না। কিন্তু এদের এই আক্রমন-পাল্টা আক্রমণের কি এখানেই পরিসমাপ্তি? একেবারেই না।


দুই দেশই আগের থেকে বেশি অবিশ্বাস নিয়ে তাদের অয়েপন্স একে অপরের দিকে তাক করে রাখবে। দে আর গোইং টু বি অলওয়েজ লকড এন্ড লোডেড আর সদা এলার্মড। ইরানের এটা ছিল একটা হাল্কা প্রতিশোধ। আসল প্রতিশোধ আসবে ভিন্ন ভাবে, কভার্ট যুদ্ধে, প্রক্সি দিয়ে।


একটি জরুরী নোট। ইরানের ডমেস্টিক আর ফরেইন পলিসি অত্যন্ত ইন্সটিটিউশোনালাইজড, কেবল ব্যক্তি নির্ভর নয়। কাশেম সোলাইমানির মৃত্যুতে ইরানের ক্ষতি হলেও গতকালের একশানে প্রমানিত তাদের আরও অনেক মিলিটারি প্ল্যানার আছে যারা অত্যন্ত ক্যাপেবল আর ব্রিলিয়ান্ট। কাশেম সোলাইমানির জায়গায় অলরেডি তার ডেপুটি জেনারেল ইসমাইল কানি বসেছে যে সলাইমানির মতন ক্যারিস্ম্যাটিক না হলেও পলিসিগত ভাবে নাকি একই রকম। তেমন অনেক কানি জায়গায় জায়গায় বসে আছে যারা এভার রেডি টু কেরি অন দেয়ার রেস্পন্সিবিলিটিজ।


মিলিটারি ক্যাপাবিলিটিতে ইরান আমেরিকার ধারে কাছেও না। সম্মুখ যুদ্ধ শুরু হলে ইরান হেরে যাবে তাতে কোন সন্দেহ নাই। ইরান এও জানে একজন আমেরিকান সেনা মারা গেলে খ্যাপাটে ট্রাম্প মাঠে গরম করে নিজের ইগো রক্ষার্থে যে কোন কিছু করে বসতে পারে, তারপরেও তারা যেভাবে করেছে তা অলমোস্ট পারফেক্ট ছিল বলে আমার মনে হয়েছে। তারা পুরা ব্যাপারে আমেরিকা যেন রিটালিয়েট না করে তার জন্য দরজা খোলা রেখেছিল। যেই খোলা দরজার কারনে মধ্যপ্রাচ্য সম্ভাব্য এক বিশাল যুদ্ধ থেকে এই যাত্রায় রেহাই পেলো। টেম্পোরারিলি ওর নট।


ইরানকে আন্ডারেস্টিমেট করলে ভুল করবেন। গতকাল ইরান প্রমাণ করেছে কাসেম সোলাইমানি ছাড়াও তাদের গেইম অন। দে নো দেয়ার গেইম, হাউ টু প্লে ইট, হয়েন টু প্লে ইট, এন্ড হাউ ফার টু প্লে ইট।

- সাবিনা আহমেদ

পঠিত : ৬৬৩ বার

মন্তব্য: ০