Alapon

জামায়াতকে দেয়া অপবাদ সম্পর্কে দু'টি কথা



বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ব্যানার স্বেচ্ছায় কপালে লাগিয়ে ওয়াজ করেছেন আল্লামা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদী। তিনি নিজে নিকাবের পক্ষে মত দিয়েছেন। জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদুদী (র) নিজেও শক্তভাবে নেকাবের পক্ষে মত দিয়েছেন। নেকাব সহ পর্দা করা ছাড়া জামায়াতের আওতাথীন ছাত্রী সংগঠন ইসলামী ছাত্রীসংস্থ্যার সদস্যা হওয়া যায় না। মহিলা জামায়াতের কোনও মহিলাকে আমি কখনও নেকাব ছাড়া দেখি নাই।

পক্ষান্তরে, মিজানুর রহমান আজহারী জামায়াতে ইসলামীর ব্যানার নিয়ে ওয়াজ করেন না। তিনি জামায়াতের সাংগঠনিক কোনও পদও ধারণ করেন না। এখন পর্যন্ত কোথাও তিনি জামায়াতকে নিজের রাজনৈতিক প্লাটফর্ম হিসেবে ঘোষণা করেন নাই। মিজান ভাই স্বতন্ত্র চিন্তা ও মিশন-ভিশন ভিত্তিক পরিকল্পনা নিয়েই ওয়াজের ময়দানে নেমেছেন। তিনি কোনও সংগঠনের অনুমতি, ইঙ্গিত কিংবা আশির্বাদে চলেন না। তাঁর নিজস্ব একটা স্বকীয়তা থেকেই তিনি কথা বলেন। ফলে, তিনি যদি জামায়াত সমর্থন করেও থাকেন- তাতেও তাঁর মত ও বক্তব্যের সাথে জামায়াতকে ঢালাও ভাবে মিলিয়ে ফেলা হচ্ছে বুদ্ধিবৃত্তিক চটুলতা। উনি সকল দল মত ও পথ কে সম্মান দিয়ে কথা বলেন। কাউকে গালাগালি, কারো বিরুদ্ধে অপপ্রচার, খেস্তিখেওর করা, ঘেউ ঘেউ করা- এগুলো তিনি করেন না। এইকারণে আমি তাঁকে পছন্দ করি। আমার মনে হয় জামায়াতের অনেকেই তাঁকে এই কারনেই পছন্দ করেন। এমনকি আল্লামা সাঈদী সাহেব প্রকাশ্যে জামায়াত করা ও জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় নেতা হওয়ার পরেও- উনার অনেক মতকে জামায়াত গ্রহণ করে নাই। সুতরাং ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গি, কাজের ধরণ ও প্ল্যান প্রোগ্রাম দলের অবস্থানের সাথে ভিন্নতা থাকতে পারে। আমার মনে হয় ব্যক্তি ও দলীয় অবস্থানের পার্থক্য বুঝার ক্ষেত্রে কওমীওয়ালাদের যেমন ঘাটতি আছে তেমন ঘাটতি আছে জামায়াতের লোকদের মধ্যেও। এটাকে যদি আমরা গুরুত্বের সাথে নিতে নাও চাই তবুও একথা বলা যায় যে- যেহেতু মিজান ভাই সাঈদী সাহেবের মতো স্বেচ্ছায় ও প্রকাশ্যে জামায়াতকে অউন করেন না সেহেতু তাঁর বক্তব্য ও মতামতকে জামায়াতের বক্তব্য ও মত হিসেবে আখ্যায়িত করা চরমতম দুইনাম্বারি।

উইথ ডিউ রিস্পেক্ট, আমি মনে করি, এই দুই নাম্বারি করেছেন মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীম শায়েখে চরমোনাই। তিনি মিজানুর রহমান আজহারীর মতামত ও বক্তব্য কে কোট করে জামায়াত ও মাওলানা মউদুদীকে চরম অসভ্য উপায়ে আক্রমণ করে কথা বলেছেন। উনি দাবী করেছেন যে- জামায়াত ফতোয়া দিয়ে বলছে "টুপি লাগে না", "দাড়ি লাগে না", "সুন্নতি পোষাক লাগে না"। এভাবে তারা নাকি ইসলাম অমান্য করছে। অথচ জামায়াতের মাদ্রাসা শিক্ষিত নেতা তো আছেই বরং সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত অধিকাংশ নেতারাও টুপি পরেন, সুন্নতি পোষাক পরেন এবং দাড়ি রাখেন। হুজুর এখানে নির্লজ্জ মিথ্যাচার করেছেন, ব্যক্তির মত একটি সংগঠনের উপর চাপিয়ে দিয়ে ইসলামের ইসলাহী আদবের লজ্জাজনক খেলাফ করেছেন।

মুখ খোলা রাখার কারণে ছাত্রীসংস্থ্যার অনেক ছাত্রীকে সদস্যা করা হয়নি বলে জামায়াতের সংস্কার পন্থীদের দ্বারা জামায়াতকে ইন্টার্নালি অনেক কথা ও চাপ সইতে হয়েছে। কিন্তু তবুও তারা এই জায়গায় ছাড় দেয় নাই। অন্যদিকে দাড়ি ও সুন্নতি পোশাকের ব্যাপারে জামায়াত উৎসাহিত করলেও শিবির ও জামায়াতের অনেক নেতাকর্মী সেটা পর্যাপ্ত হক আদায় করে পালন করেন না। এটা জামায়াতের কেউ কখনও অস্বীকার করে নাই। এই ব্যাপারে জামায়াত কাউকে জোর জবরদস্তিও করে না। কারণ সংগঠন হিসেবে জামায়াতের মধ্যে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে ভিন্নমত পোষনকারীদের নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি সংগ্রামী প্রচেষ্টার মডেল তৈরি হয়েছে। খালি মাদ্রাসা ও খানকা কেন্দ্রিক হয়ে গড়ে ওঠা একমতাদর্শি, একদেশদর্শি, এক্সক্লুসিভিস্ট ও রিজেকশনিস্ট দলগুলোর মতো জামায়াতের সৃষ্টি হয় নাই। এভাবেই জামায়াত একটি ডাইভার্স ইসলামী আত্মপরিচয়ের ঐক্যবদ্ধ মিলন মেলা। এক তরমুজ খেয়ে এক কুয়ার ব্যাং হয়ে থাকা দল জামায়াত হতে চায় নাই।

অনেকে দাবী করেন, জামায়াত যে সুদুর প্রসারী ইসলাহী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পদযাত্রা শুরু করেছিল সেই জায়গা থেকে কিছুটা সরে এসেছে। এটা হয়তো অনেক ক্ষেত্রে সত্যও। এই ইস্যুটা ডিবেটেবল একটা ইস্যু। এ সম্পর্কে আমি নিজেও ছাঁচাছোলা কথা বলে থাকি। কিন্তু জামায়াত সম্পর্কে সমালোচনা করতে গিয়ে এমন অনেক জ্ঞানী, শ্রদ্ধেয় ও বিদগ্ধ আলেমদেরকেই কমন সেন্স হারিয়ে ফেলতে দেখা যায়। মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীম শায়েখে চরমোনাই এবং উনার লেভেলের শ্রদ্ধেয় আলেমদের মুখ থেকে এমন অবিবেচনা প্রসূত বক্তব্য আমরা আশা করি না। কিন্তু যেহেতু পারিবারিক সিলসিলার বদৌলতে উনারা নেতৃত্বের আসনে বসেন, সেহেতু তাঁদের গঠনমূলক সমালোচনা করার যোগ্যতা, সমস্যাকে এর হক অনুযায়ী কন্টেক্সচুয়ালাইজ করার পারঙ্গমতা এবং বিভিন্ন ইস্যুর বাস্তবতা, সময় ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক মাত্রাভেদে মূল্যায়ন করার সক্ষমতা কে পরখ করে দেখার সুযোগ হয় না। ফলে চেয়ারের কারণে অনেকেই বিজ্ঞ আলেম বনে যান। কিন্তু তাঁদের ইসলাহী বক্তব্য শুনলে মুহুর্তেই তাঁদের এই পারঙ্গমতা গুলোর স্বল্পতা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়।

আসলে আমরা উনাদের সাথে ঐক্যের দুরাশাটা খুব কমই করি, উনারা যদি উনাদের মুখটা সামলাতেন তাহলেই মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের পথটা অনেক সুগম হত। মুফতি ও আলেম হিসেবে জনাব সৈয়দ ফয়জুল করীম শায়েখে চরমোনাই কে আমি সম্মানের জায়গাতেই রাখি। কিন্তু উনি যেখানে আদল, ইহসান ও আদবের খেলাফ করেছেন সেটা বলা আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য মনে হয়েছে। আল্লাহ তাঁকে দীর্ঘতম হায়াত দান করুণ, সফল করুণ এবং তাঁর অন্তরের ঘৃণাকে ভালোবাসা দিয়ে মুছে দিন। আমিন।

- জাবাল আত তারিক

পঠিত : ৭৯২ বার

মন্তব্য: ০