Alapon

দঃ আফ্রিকান ক্রিকেট দলকে প্রোটিয়াস নামে ডাকা হয় কেন?


২০১৮ এর আগষ্টে আবুধাবির অর্থ মন্ত্রণালয়ে গিয়েছিলাম। রিসিপশন বসে আছি, এমন সময় একজন আফ্রিকান কৃষাঙ্গ ভদ্রমহিলাও সেখানে আসলেন। হাতে শুভেচ্ছা জানানোর একটি ফুলের ঝুড়ি।

তাতে একগুচ্ছ আইভি লতার সাথে ইকিবানা করা কয়েক রকমের ফুল। তারই একটি বড় ফুল আমাকে আকৃষ্ট করে।
পাশের সোফায় বসে অপেক্ষমান ভদ্র মহিলার সাথে হাই হ্যালো করলাম। মন শুধু আকুবাকু করছে ফুলটির নাম জানার জন্য।

এক সময় বলেই ফেললাম, ভেরি বিউটিফুল ফ্লাওয়ার!
ঃ ইয়েস ইট ইজ! প্রোটিয়াস ফ্লাওয়ার, কামস ফ্রম এসএ!
ব্যাস্....,
তারপর আমার অনুসন্ধান শুরু.....

দঃ আফ্রিকায় একটি গাছ পাওয়া যায়, গাছটির নাম প্রোটিয়াস এবং এই গাছের ফুলকে বলে প্রোটিয়াস ফুল। বৈজ্ঞানিক নাম Protea cynaroides , জেনাস Protea (ছবিতে দেখুন)

সব গাছ গাছালিরই নিজস্ব কিছু চমকপ্রদ বৈশিষ্ট্য আছে , কিন্তু আমার কাছে এই ফুল গাছটির বৈশিষ্ট্য গুলো একটু অন্য রকম মনে হয়। যেমন- এই গাছ গুলো দঃ আফ্রিকায় ৫ হাজার ফুট এ্যাল্টিচুডেও (সমুদ্র সমতল থেকে উঁচুতে) দেখা যায়। এই জাতের গাছে সর্বোচ্চ ১২ ইঞ্চি ব্যাসের বা একটি ছোট আকারের থালার (Half Plate) সমান আকারের ফুল ফুটে।

এতো উচ্চতায় অন্যান্য সকল উদ্ভিদের অবস্থা যেখানে "আপনি বাঁচলে বাপের নাম" সেখানে এতো বড় ফুল দেওয়া আশ্চর্যজনক নয় কি? তাও আবার অনেকটুকু মধু থাকে। সূর্যমূখী ফুলের মতো বীজ গুলো এক ধরনের সুস্বাদু বাদাম বিশিষ্ট, যেগুলো পাখি ও ইঁদুরের প্রিয় খাবার। বিভিন্ন রংয়ের ফুলটির মোট ৮১টি জাত আছে।

সবচেয়ে বড় এবং সুন্দর জাতটির নাম কিং প্রোটিয়া। গাছের পাতাগুলো গাড় সবুজ এবং নরম চামড়ার মতো (চামড়ার মোজা ধরলে যেমন অনুভূতি হয়)। এই পাতা গুলো দিয়েই গাছটি বাতাস এবং কুয়াশা থেকে আর্দ্রতা ধরে খায়! অর্থাৎ পানি সংগ্রহের জন্য অন্যান্য উদ্ভিদের মতো শুধু শিকড়ের উপরই নির্ভরশীল নয়। পুষ্টি সমৃদ্ধ এই পাতা গুলো চা'য়ের মতো খাওয়া যায়।

সবচেয়ে সুন্দর ফুলগুলো তখনই ফুটে যখন বছরের সবচেয়ে বেশি গরম সময়টা চলে। ফলে এই প্রোটিয়া ফুল দেখেই সবাই বুঝতে পারে গরমের আগমনী ও বিদায়ী বার্তা। গরমের মাসগুলো ব্যতিত এই গাছে ভালো ফুল ফুটেনা!

যদি কখনো বনে বা ঝোপঝাড়ে আগুন লাগে আর সব গাছ পুড়ে ছাই হয়ে যায় অন্যান্য সব গাছের আগে পূর্বের চেয়েও বেশি তরতাজা হয়ে গাছগুলো বেড়ে ওঠে। যারা বাণিজ্যিক ভাবে এই ফুলের চাষ করে তাদের অনেকেই গাছ গুলো একটু বড় হলেই আগুনে পুড়িয়ে দেয়। কিছুদিন পর গোড়া থেকে মাটি ফুঁড়ে শক্তিশালী গাছ বের হয়।

১৭৩৫ সালে ফুলটি বা গাছটিকে প্রোটিয়াস (Proteus) নামকরণ করা হয়েছে প্রাচীন গ্রীকদের এক দেবতার নামে। এর অর্থ হলো একসাথে অনেক জায়গায় অনেক রুপে দেখা দেওয়ার সামর্থ্য আছে যার।

গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ হলেও গাছটি দেড় মিটার লম্বা হতে পারে এবং সর্বোচ্চ পনের বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। এটি দঃ আফ্রিকার জাতীয় ফুল।

আর এই ফুলের বৈশিষ্ট্য গুলোর সাথে মিলিয়ে এবং নামানুসারেই তাদের জাতীয় ক্রিকেট দলকে প্রোটিয়াস ডাকা হয়। কারণটা এখানেই শেষ নয় , ক্রিকেট দলটির দক্ষতা , দলীয় নিয়ম শৃঙ্খলা , খেলোয়াড় নির্বাচন , পেশাদারিত্ব , বর্ণ বৈচিত ্র, পারফরম্যান্স..... সব কিছুই ফুলটির সাথে মিলিয়ে দেখতে পারেন!

মাসুদ আলম

পঠিত : ১৫৩৫ বার

মন্তব্য: ০