Alapon

ইতিহাস প্রত্যেক জাতির জন্য দর্পনস্বরূপ...


১৯৮২ সাল। সংবাদমাধ্যমের একটি খবর প্রথম হেডিংয়ে উঠে এল চীন ও জাপানের মুখামুখি অবস্থান। চীন কঠোর ভাষায় হুমকি দিল , জাপানের সাথে সবধরণের সম্পর্ক ছিন্ন করা হবে। আগের করা সমস্ত চুক্তি বাতিল করা হবে। কেননা , চীনের গোয়েন্দারা নাকি খবর পেয়েছে , জাপান স্কুলের ইতিহাস পাঠ্যবইয়ের একটা প্যারা সংশোধন করে নতুন তথ্য যোগ করেছে।

একটু পিছনে যেতে হবে। ১৯৪৫ সালের আগস্ট মাসে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমানবিক বোমা ফেলা হয়েছিল। আমেরিকা মুহূর্তেই প্রায় পুরাপুরি ধ্বংস করে দিয়েছিল দুইটা প্রাণবন্ত তরতাজা শহর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হল ও জাপান বাধ্য হয়ে আত্মসমর্পণ করল। মার্কিন সেনাপতি ম্যাক আর্থারের মাথায় তখন একটাই চিন্তা।

কিভাবে জাপানকে একেবারে দাবিয়ে ফেলা যায়! তাদের থেকে যুদ্ধের মানসিকতা সম্পূর্ণরূপে উপড়ে ফেলা যায়। সমাজ থেকে সামরিক চেতনা একেবারে দূর করা যায়।

জেনারেল আর্থার ২৭ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করলেন। সবাই শিক্ষাবিদ , সমাজবিদ। তাদেরকে বলা হল একটা সুদূরপ্রসারী শিক্ষানীতি তৈরি করো। যার আলোকে জাপানের ভবিষ্যত প্রজন্মকে মেরুদন্ডহীন নিরীহ ঢোঁড়াসাপ হিসেবে গড়ে তুলা যায়।

জেনারেল আর্থার জাপানের সবকিছু বদলে দিলেন। রাজাকে ঈশ্বরের সমতুল্য মনে করা , পূর্বসূরীদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ , সংবিধান , ইতিহাস গ্রন্থসহ সব বাদ দিলেন। পাঠ্য বইয়ে ছাত্ররা পড়তে শুরু করল, "জেনারেল টোগো (জাপানের বিখ্যাত সেনাপতি) ছিলেন একজন ডিটেক্টর , দখলদার , অপরাধী।

জাপান তাদের সামরিক স্বর্ণযুগে কোরিয়া , মাঞ্চুরিয়া ও চীনের প্রায় অর্ধেক অংশ দখল করেছিল। পাঠ্যবইয়ে এই সময়কালকে জাপানের কালো অধ্যায় বলে আখ্যায়িত করা হল।

আমেরিকার আক্রোশের কারণও ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান ছিল জার্মানির পক্ষে। হিটলারের পতনের পর আরও তিনমাস জাপান একাই যুদ্ধ টেনে নিয়েছিল। মার্কিন নৌঘাটি পার্ল হার্বারকে সম্পূর্ণ মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছিল।

জাপান সিদ্ধান্ত নিল তাদের পাঠ্যবইয়ের বিকৃত ইতিহাস শুধরাবে। এতটুকুতেই চীন হৈচৈ বাধিয়ে দিল। কারণ , এ সংশোধনীর পর চীনে আক্রমণ করা জাপানিদের কৃতিত্ব হিসেবে দেখানো হয়েছিল।

প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের হুমকিতে জাপান ভড়কে গেল। বাধ্য হলো চীনের সাথে আলোচনায় বসতে। প্রতিনিধি ছুটে গেল বেইজিংয়ে। চীন-জাপানের দ্বৈরথের ইতিহাস আমাদের আলোচ্য বিষয় নয়। বরং আমরা এই ইতিহাস থেকে দুটি শিক্ষণীয় বিষয় উপলব্ধি করতে পারি ।

প্রথমত , অতীত ইতিহাসই ভবিষ্যত প্রজন্মকে গড়ে তোলে। জাতিকে দিক নির্দেশনা দেয়। এই সত্যতা চীন ও জাপান ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছিল। জাপান চাচ্ছিল তাদের বিকৃত ইতিহাসকে বদলে ফেলতে। চীন চাচ্ছিল অতীত আগ্রাসনের ইতিহাস সম্পর্কে আগের তথ্যটাই বইতে থাকুক যা মার্কিনীরা প্রণয়ন করেছিল।

দ্বিতীয়ত , এই ঘটনায় দুই পক্ষেরই সূক্ষ্ম দৃষ্টি ফুটে ওঠে। সচেতনতা প্রকাশ পায়। বিশেষ করে চীনের। তারা কিভাবে জানতে পারল যে জাপান আগামী বছর সিলেবাস পরিবর্তন করতে যাচ্ছে ? বইতো তখনও ছাপাই হয়নি। তাহলে কী চীনা গোয়েন্দারা জাপানের সামরিক স্থাপনা , সচিবালয় , অস্ত্র-শস্ত্র , সেনাবাহিনী , শিল্প কারখানার ওপর নজর রাখার পাশাপাশি শিক্ষাবোর্ডের ওপরও গোয়েন্দাগীরি করতো!

চীনা গোয়েন্দাদের এই জ্ঞানও ছিল , সামরিক কর্তারা বেড়ে ওঠবে , পাঠ্যবইগুলো পড়ে। তাই পাঠ্যবইও তাদের আওতায় বাইরে রাখেনি। পাশাপাশি জাপানও নিজের ইতিহাস বিস্মৃত হয়ে বসে থাকে নি।

তাদের অবচেতনে ছিল পাঠ্যবইয়ের লাইন কয়টা বদলাতে হবে। শুধরাতে হবে বিকৃতি। জাপান ভেবেছিল , চীনের সাথে এখন সম্পর্ক ভালো। কিছু বলবে না। চুপি চুপি কাজটা সেরে ফেলা যাবে। এতদিন সুযোগের অপেক্ষায় ছিল।

আফ্রিকার প্রায় সবদেশের পাঠ্যবইয়ে আছে আরবের দাস ব্যবসায়ীদের কথা। আরবদের দাস ব্যবসার কথা।
ইউরোপীয় দাস ব্যবসায়ীর নির্মম দাস ব্যবসা সম্পর্কে একটা শব্দও সিলেবাসে নাই।

আফ্রিকার কালোরা কি অমানুষিক নির্যাতন সয়ে সাগর পাড়ি দিয়েছিল।বহু হতভাগার দেহ ঠাঁই পেয়েছিল মাঝ দরিয়ায় । যাদেরকে দাসত্বের বন্ধনে বেঁধে আমেরিকার নিয়ে গিয়েছিল রেড ইন্ডিয়ানদেরকে উচ্ছেদ করে নতুনভাবে আবাদ করতে।

সে সম্পর্কে কোন কথা নেই। আছে শুধু মুসলিমদের হিংস্র মনোভাবের কথা! ইউরোপ ঠিকই নিজেদেরকে সাধু সাজিয়ে রেখে গেছে আরবীয়দের পশু বানিয়ে। এ বিকৃত ইতিহাস পড়েই আফ্রিকার কালোমানিকেরা পড়ে বড় হচ্ছে। মুসলমানরা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে সেটা দেখছে।

"ইতিহাসের স্বর্ণরেনু "

পঠিত : ৫৭২ বার

মন্তব্য: ০