Alapon

Wake up! be Salahuddin, They are back!


একটা বিষয় দেখে খুবই অবাক লাগে, তা হলো, সাহাবীদের যুগ শেষ হয়ে যাবার পরে আজ পর্যন্ত ইসলামের বিরুদ্ধে যত আক্রমণ আগ্রাসন ঘটেছে, তা মোকাবেলায় আরব মুসলমানদের তেমন কোনো ভুমিকা দেখা যায় নি! অথচ এর বিপরিতে অনারব মুসলমানরা এগিয়ে এসেছেন তাদের সর্বস্ব নিয়ে।

ইতিহাস ঘেঁটে দেখুন শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলে আসা ক্রুসেডারদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কোনো আরব নেতা, কোনো আরব শাসক বেরিয়ে আসেন নি। এসেছেন অনারব মুসলমানরা।

একমাত্র ব্যতিক্রম হলো সুদানের মাহদী। তিনি একজন আরব ছিলেন। তবে তার মাহদী হিসেবে আবির্ভূত হওয়া এবং ব্রিটিশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সফলভাবে নেতৃত্ব দেবার পেছনে সবচেয়ে বড় যে ব্যক্তির অবদান ও কৃতিত্ব, তিনি আর কেউ নন, তিনি হলেন ঐ জামালউদ্দীন আফগানী স্বয়ং।

ইমাদুদদ্দিন, নুরুদ্দীন এরা ছিলেন তুর্কি বংশোদ্ভূত। ইউসুফ তাশফীন ছিলেন একজন বার্বার। নিজামুল মুলক ছিলেন একজন পারসিক। জামালউদ্দীন আফগানী ছিলেন একজন আফগান! সাইয়্যেদ নুরসী ছিলেন তুর্কি। আর সালাহউদ্দীন ছিলেন একজন কুর্দী।

দীর্ঘ ৮৮ বৎসর বায়তুল মুকাদ্দাস ও মসজিদুল আকসা খৃষ্টানদের দখলে থাকার পরে গাজী সালাহউদ্দীন তা উদ্ধার করেন। তিনি সেদিনও আশে পাশের মুসলমান শাসকদের কাছ থেকে, বিশেষ করে আরব শাসকদের কাছ থেকে কোনো সহযোগীতা পান নি, বরং তারা সালাহউদ্দীনের বিরোধিতাই করেছে। তারা পদে পদে তাকে বাধাগ্রস্থ করেছে।

মুসলিম শাসকরাই সেদিন খৃষ্টান ক্রুসেডারদের সহযোগীতা করেছে! আলেপ্পোর / হালাব প্রদেশের জেলখানায় কট্টর মুসলিম বিদ্বেষী ফরাসী ক্রুসেডার Regiland De Chattilon বন্দী ছিলো। সিরিয়া ফিলিস্তিন ও তার আশে পাশে মুসলিম নারী পুরুষদের ধরে ধরে এই নরাধম হত্যা করতো, তবে তার আগে সে তাদের ব্যঙ্গভরে বলতো; তোমাদের আল্লাহ এখন তো তোমাদেরকে আমার তরবারী থেকে বাঁচাতে আসছে না!

মিশরের নুরুদ্দীন জিংকি তাকে ১৫ বসর ধরে আটকে রেখেছিলেন। তিনি বেঁচে থাকতে এই নরাধমকে মুক্তি দেননি মুসলমানদের জীবন বিপন্ন হবার ভয়ে। সেই কুখ্যাত মুসলিম বিরোধি খৃষ্টান সেনাপতিকেই সিরিয়ার মুসলিম শাসকরা জেল থেকে মুক্তি দিলো এই শর্তে, সে যেন সুলতান সালাহউদ্দীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামে!

এভাবেই মুসলিম শাসকরা সালাহউদ্দীনের বিরোধিতা করে গেছে। সালাহউদ্দীন তার জীবেন যতটা সামরিক অভিযান পরিচালনা করেছেন খৃষ্টানদের বিরুদ্ধে, তার চেয়ে বহুগুনে বেশী অভিযান পরিচালনা করেছেন মুসলিম নামধারী শাসকদের বিরুদ্ধে! বায়তুল মুকাদ্দাসকে মুক্ত করাটা তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। এ লক্ষ্য অর্জনে মুসলিম বা অমুসলিম যেই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, তিনি তার বিরুদ্ধেই লড়েছেন

এভাবে তিনি এক এক করে লড়ে গেছেন! ২১তম যুদ্ধে ১১৮৭ সালের ৪ঠা জুলাই, Battle of Hattin এর যুদ্ধে তিনি ক্রুসেডারদের মুখোমুখি হন। ইসলামের ইতিহাসে বদর, ইয়ারমুক ও মক্কা বিজয়ের যুদ্ধের পরে এই যুদ্ধটিই সম্ভবত সবচেয়ে বেশী তাৎপর্যপূর্ণ যুদ্ধ।

এই যুদ্ধ জয়ের মাধ্যমেই সালাহউদ্দীন ক্রুসেডারদের হাত থেকে ফিলিস্তিন মুক্ত করেন, উদ্ধার করেন বায়তুল মুকাদ্দাসকে।
বেটল অব হিট্টিন' এর ৭৩০ বৎসর পরে এসে ১৯১৭ সালে ইউরোপীয়রা তা আবার দখল করে নেয়। ইংরেজ সেনানায়ক general Allenby জেরুজালেমে ঢুকেই দীর্ঘ সাতশত বৎসর ধরে চেপে রাখা আক্রোশের বহি:প্রকাশ ঘটান, সালাহউদ্দীনের কবরে অবমননাকর ভাবে পা রেখে, বলে উঠেন; Wake up, Saladin! We are back! সালাহউদ্দীন, ওঠো, চেয়ে দেখো, আমরা আবারও ফিরে এসেছি!

সে ঘটনার পর আজ অব্দি ১০০টি বৎসর পেরিয়ে গেছে। আজ ওরা ফিরে এসে জেঁকেই বসেনি কেবল বরং মুসলমানদের শেষ চিহ্নটুকুও এ পবিত্র স্থান থেকে মিটিয়ে দিতে তৎপর। সমস্ত শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে তারা। আরব শাসকরা আজও সেই একই ভুমিকা নিয়েছে, যেমনটা তারা নিয়েছিল সে সেদিন।

আরবদের দিকে চেয়ে লাভ নেই। অনারব মুসলমানদের মধ্যে থেকেই উঠে আসবে আজ এই একবিংশ শতাব্দীর সালা্হউদ্দীন বা তার মত কেউ একজন। সেই অনাগত নেতার উদ্দেশ্যেই আমার এ আহ্বান; হে যুবক, তুমিই সালাহউদ্দীন হয়ে ওঠো, দেখ, ওরা আবার ফিরে এসেছে।

Ziaul Huq

পঠিত : ৭৬৪ বার

মন্তব্য: ০