Alapon

ডিভোর্সের মহামারি এবং কিছু কথা...


বর্তমান সমাজের প্রতিটি মানুষই ডিভোর্সের সাথে জড়িত। কেউ ডিভোর্স দিচ্ছে, কেউ ডিভোর্স চাচ্ছে, কেউ ডিভোর্স নিয়ে চিন্তা করছে। ডিভোর্স যেন সমাজের একটি জনপ্রিয় প্রচলন (ট্রেন্ড)। এখন তো সংসার ভাঙার প্রতিযোগিতা চলছে। হ্যাঁ ইসলামে ডিভোর্স নিষেধ নয়। অনুমোদন আছে। কিন্তু সকল প্রচেষ্টা চালানোর পর ব্যর্থ হয়ে গেলে তখন ডিভোর্সের চিন্তা করা যেতে পারে।

কিছু লোকের ডিভোর্স প্রয়োজন হয়, কারণ তার সঙ্গী মারাত্মক মাদকাসক্ত। আচরণ অস্বাভাবিক। এরকম (যৌক্তিক) ডিভোর্স নিয়ে আমি কথা বলব না। আমি কথা বলব অন্য টপিকে। আমি কথা বলব যারা কিছুটা সমস্যা হলেই ডিভোর্সকে সমাধান মনে করে তাদের ব্যাপারে। কিন্তু এভাবে সমস্যার সমাধান হয় না। জীবনটা এত সহজ নয়। কেউ কেউ বিয়ের এক সপ্তাহ পর ডিভোর্স দিয়ে দিচ্ছে। কেউ এক বছরের মাথায় ডিভোর্স নিয়ে নিচ্ছে। একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়েই। কোলে শিশু থাকা অবস্থায়ই। অনেক সময় দেখা যায় ইদ্দতের (ডিভোর্স পরবর্তী মেয়েদের তিনমাস অবকাশকাল) সময়কাল বিবাহের সময়কালের চেয়ে বেশি। আমরা এ কোন সময় অতিবাহিত করছি!

ডিভোর্স কোনো লোকাল গাড়িতে চড়ার মতো ব্যাপার নয়, যখন ইচ্ছা ঘটিয়ে ফেলবেন। রাত-দিন যখন ইচ্ছা ডিভোর্সের হুমকি দিতে থাকবেন। ব্রাদারস এন্ড সিস্টারস! বিয়ে আকাশে রঙধনু দেখার মতো কোনো আনন্দদায়ক বিষয় নয়। কিংবা বিয়ে কোনো বাচ্চাদের ললিপপ খাওয়ার মত বিষয়ও নয়।

তাই বলবো, আপনার মোবাইল (কেন্দ্রিক ব্যস্ততা) রাখুন। ফেইসবুক রাখুন। অন্য লোকের চাকচিক্যময় বিয়ে, বৈবাহিক জীবন দেখা থেকে বিরত থাকুন। এবং তাদের জীবনের সাথে নিজের জীবন মেলানো, নিজের সমস্যার সমাধান খুঁজতে যাওয়া বন্ধ করুন।
আপনারা ইমাম আহমদের নাম শুনে থাকবেন। তিনি ছিলেন ইসলামের একজন মহান ইমাম। ত্রিশ বছর নির্বিবাদী সংসার যাপনের পর এক প্রেক্ষাপটে তিনি বলেন—“যখন আমি রেগে যেতাম আমার স্ত্রী চুপ থাকতেন, আবার আমার স্ত্রী যখন রেগে যেত আমি চুপ থাকতাম।”

কিভাবে এটা সম্ভব?
সাহায্য চাইতে লজ্জাবোধ করবেন না। কোনো ক্ষতি নেই। আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া খারাপ কিছু না। কারো কাছে এ ব্যাপারে পরামর্শ চাওয়াও খারাপ কিছু না। সবাই বিশ্বাসঘাতকতা করবে না। কেউ কেউ ভাল পরামর্শও দেয়। নিজের আত্মীয়দের কারো সাথে, বা তার (স্ত্রীর) আত্মীয়দের কারো সাথে অথবা কমিউনিটির (সমাজের) উত্তম কারো সাথে কথা বলুন। পরামর্শ চাওয়া মানে এই নয় আপনি খারাপ। পরামর্শ চান। পরামর্শ নিন।
ভাই ও বোনেরা, চেষ্টার সকল দরজায় করাঘাত করার পরও যদি সমাধান না পান, তবে ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, তবে আমার অনুরোধ থাকবে, সেটা করুন, যতটা সম্ভব শান্তিপূর্ণভাবে করা যায়। কোনো হিংসা, বিদ্বেষ, হানাহানির মাধ্যমে নয়।
আমরা জানি, তালাক হলো সবচে’ নিকৃষ্ট বৈধ সমাধান।

আমি চিন্তা করি শিশুদের কথা। ডিভোর্সের কারণে ওই পরিবারের শিশুরা আক্ষরিক অর্থে পঙ্গু হয়ে যায়। কিন্তু কেউই এটা ভেবে দেখে না। তাদের কথা ভেবে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করুন। সকল খারাপ পরিস্থিতি সত্ত্বেও শুধুমাত্র সন্তানদের কথা চিন্তা করে ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসুন।

এরকম পরিস্থিতিতে আপনি ভাল হোন। আপনি একজন ভাল পুরুষ হয়ে যান। সে যা প্রাপ্য তারচে’ বেশি উদারতা দেখান। আপনি একজন ভাল নারী হয়ে যান। নিজে সম্মানিতা হোন। আপনার সাথে যে আচরণ করা হয়েছে আপনি তারচে’ ভাল আচরণ করুন।

যখন বিয়ে করেছিলেন তখনতো মসজিদে অনেক লোক সাক্ষী রেখে করেছিলেন। সেখানে ইমাম সাহেব ছিলেন। সবাই মিলে দু’আ করেছেন। এটা ওটা অনেক কিছু করেছেন। কিন্তু যখন ডিভোর্স দিলেন বা নিলেন সবকিছু ভুলে গেলেন। সেই মসজিদ, সেই ইমাম সাহেব আর সেইসব মানুষের দু’আর নিকুচি করলেন!

এখন বিষয়টা কোর্টে ঠুকে দিলেন। সেখানে কথা বলে আমার আইনজীবী বনাম আপনার আইনজীবী। এখন আমি যতভাবে সম্ভব আপনার টুটি চেপে ধরার চেষ্টা করছি, আর আপনিও একইভাবে আমাকে নাস্তানাবুদ করার সকল চেষ্টা করে যান। এসব কী? এসব কী?
মানুষ বিচারকের এজলাসে দাঁড়িয়ে সত্য বলার শপথ করে মিথ্যা বলে। সেখানে ভরা মজলিসে মিথ্যা নাটক করা হয়। মিথ্যা কথা বলানো হয় ভাড়া করা লোক দিয়ে। একজন সন্তান দেখে তার বাবা একজন মিথ্যুক, ভয়ংকর। তার মা একজন মিথ্যুক, ভয়ংকর। কেন আপনি মিথ্যা বলছেন?

সে হতে পারে একজন খারাপ স্ত্রী, কিন্তু আপনি জানেন সে একজন ভাল মা। সে হতে পারে একজন খারাপ স্বামী, কিন্তু আপনি জানেন সে একজন ভাল বাবা। তাহলে কেন আপনি মিথ্যা নাটক করছেন? আপনি সন্তানকে মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত করতে চান? বোনদের বেলায়ও একই কথা। আপনি কি আপনার সন্তানকে বাবার আদর পাওয়া থেকে বঞ্চিত করতে চান? এটা দ্বীন নয় ভাই! এটা দ্বীন নয় বোন! আল্লাহর কসম করে বলছি! এটা দ্বীন নয়। যে অন্যের প্রতি দয়া দেখায় না সে আল্লাহর দয়া পায় না।

শাইখ আহমাদ মুসা জিবরীল ও মোহাম্মাদ হোবলস-এর লেকচার অবলম্বনে

পঠিত : ৬৪৪ বার

মন্তব্য: ০