Alapon

আক্বীদা প্রেমী ভাইদের শানে আকুল আবেদন !


একটা জিনিস খেয়াল করলাম, বিভিন্ন সময় চরমোনাই ঘরানার কিছু লোক এবং কওমীদের মধ্যে কিছু বক্তা তাদের বয়ান, বিবৃতি, স্যোশাল মিডিয়ার পোস্টে খুব আদরের সাথে বলে থাকেন, ওহে জামায়াত শিবিরের ভাইরা, আপনাদের সাথে আমাদের কোন শত্রুতা নেই, আপনাদের আক্বীদা পরিশুদ্ধ করুন আমরা আপনাদের বন্ধু হয়ে যাবো। কথাগুলো শুনতে খুব মজাদার, রসালো লাগে কিন্তু এর ভিতরে বড় ভয়ঙ্কর চক্রান্ত রয়েছে সেটা ভক্তকূলও বুঝতে পারেন না। যেমন-

আপনার বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ উত্থাপন করলো যে, আপনি জিনা করেছেন। এক্ষেত্রে শরীয়াতের হুকুম হলো যিনি অভিযোগ আনবেন তাকেই স্বাক্ষ্য প্রমাণ হাজির করতে হবে। তাকে প্রমাণ করতে হবে যে তিনি তার দাবিতে সত্যবাদী। এটা না করে যদি বলা হয়, তুমি প্রমাণ করো যে তোমার দ্বারা জিনা হয়নি তাহলে এটাকে আপনি কীভাবে নেবেন ? আমি তো এটাকে ফেরাউনী জুলম নীতি, অধুনা শাহবাগী নীতি হিসেবে আখ্যায়িত করবো।

এভাবেই যদি আমি আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনি যে, আপনার আক্বীদা খারাপ, সেক্ষেত্রে আমাকে সুস্পষ্ট ভাবে প্রমাণ করতে হবে যে, আপনার আক্বীদার এই এই অংশ সত্যিই গলদে ভরপুর। এটা না করে আমি যদি এরকম বলে দেই, ভাই তুমি তোমার আক্বীদা শুদ্ধ করে আমাকে দেখাও, তাহলে আমি তোমার ওপর অভিযোগ প্রত্যাহার করবো, তাহলে তাকে কোন কিসিমের জালিম বলবেন ? এদের কে শাহবাগী বললে বেচারা শাহবাগীদের ওপর সীমাহিন অবিচার হয়ে যাবে।

এরকম গুনে গুনাম্বিত ব্যক্তিরাই আজকাল জামায়াতের নেতাকর্মীদের সামনে এরকম বর্ণচোরা টাইপের আব্দার ছুড়ে দিয়ে বলে, ভাই, তোমার আক্বীদা ঠিক করলে আমার কোন শত্রুতা নেই। আচ্ছা, ভাই আক্বীদার কোন অংশ আপনার মনোপুত হয়নি ? উত্তর সেই গদ বাধা। কেন ভাই, আমাদের মুরব্বিরা বহু কিতাব লিখেছেন। সেগুলো খুলে দেখো। আচ্ছা, ভাই আমি তো আমার আক্বীদা বিচ্যুতি নিয়ে কথা বলছি, আপনি কোন কিতাবের কথা বলছেন ? আপনি আমাকে বেঈমান প্রমাণ করতে হলে তো আমার আক্বীদা, বিশ্বাস বা আমলের ওপরে কেয়াস করবেন ? আপনি কিতাবের চক্কর খাচ্ছেন কেন ?

ধরেও নিলাম আপনাদের দাবিকৃত, লিখিত অভিযোগ সম্বলিত কিতাবের সাথে আমার আক্বীদার ফারাক আছে।আপনার আক্বীদা বিরুদ্ধে যেসব কিতাব রচিত হয়েছে সেগুলো আমলে নিয়ে আপনি কয়টা আক্বীদার পরিবর্তন ঘটিয়েছেন ? নাকি আপনার মতটাই শরীয়াত ? আচ্ছা, একটা প্রশ্নের উত্তর দিন। যেসব বিষয়কে আপনি আক্বায়েদ সাভ্যস্ত করছেন সেগুলো আদৌ আক্বায়েদ বলে কোন ফকীহ, স্কলার মতামত দিয়েছেন ? প্রায় সময় দেখা যায়, ফিকহী কোন মতবিরোধপূর্ণ মতামতকেও আপনারা আক্বীদা হিসেবে ঘোষনা করেন। যেসব অভিযোগ, সন্দেহ সংশয় আপনি আমাদের বিষয়ে করছেন সেগুলোর যথার্থতা নিজ জিম্মায় যাছাই করেছেন ? যেসব অভিযোগ আপনি করছেন তার ওপরে সত্যিকারের শুনানী যদি কেয়ামতের ময়দানে অনুষ্টিত হয় তাহলে আপনার আনিত অভিযোগের পক্ষে কারো কিতাব থেকে হাওলা দিলে সেটা গ্রহনযোগ হবে নাকি যার কথা , কাজ বা আমলের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনলেন সেখানে থেকেই প্রমাণ করতে হবে ?

ঠান্ডা মাথায় ভাবুন, একটু মাথা খাটান। যারা এসব আক্বীদার চক্করে ফেলে আপনার আমলগুলোকে অন্যের সম্পদ বানাচ্ছে তাদের কে কেয়ামতের ময়দানে খুজে পাবেন ? তারা আপনার পক্ষে সাফাই গাইতে আসবে না। যদিও তারা দাবি করে যে, কেয়ামতের ময়দানে বড় বড় জাহাজ নিয়ে হাজির হবে, আসলে এগুলো সব মিথ্যা, প্রতারণা। এরকম ডাহা মিথ্যা প্রবঞ্চনার মাধ্যমে যারা আপনার বিশ্বাস জিততে চায় তারা যে আপনার সমর্থন পেতে আপনাকে ভূয়া আক্বীদার চক্করে ফেলে দেয়নি সেটা কীভাবে বুঝলেন ?

এবার আসি আমাদের আক্বীদা বিশ্বাসের কথায় !
আপনি দাবি করছেন আমরা নবীদের মাসুম মনে করি না। তো ভাই কিসের দলিলে এরকম ভয়াবহ দাবি করলেন ? আমরা তো জোর দিয়ে বলি, গায়রে নবী ছাড়া কাউকে নিস্পাপ মনে করে তার অন্ধ আনুগত্য করা শীয়াদের আক্বীদা। এসব আক্বীদার কারণেই আমরা নবী রাসুল (আ) ছাড়া সকলের কথা ও কাজকে কিতাবুল্লাহ ও সুন্নাতের রাসুলুল্লাহর (স) মিয়ারে পরিমাপ করতে চাই। ফলে রেজাল্ট কী দাড়ালো ? আপনারা অবান্তর অভিযোগ আনলেন, আমরা সাহাবাদের (রা)ও যাছাই বাছাইর তুল্য মনে করে তাদের সমালোচনার দ্বার খুলে দিয়েছি।

কি অদ্ভুদ অভিযোগ তাই না ? কাউকে যাছাই বাছাই করে মানতে হবে বললে তাকে সমালোচনা করতে হবে বুঝানো হয়েছে, এরকম ঢাহা মিথ্যা তোহমদ দেওয়ার ক্ষমতা তো ঐ ব্যক্তির আছে যে কারো অন্তরের খবর জানার দাবি করে। ইলম ওলায়ালা হলে তো এটা বুঝে নিতেন যে, এরকম বলার ভিতরে যে গুঢ় রহস্য রয়েছে সেটা তো ইসমতে আম্বিয়ার সাথে সম্পর্কিত বিষয়। এর ভিতরে কাউকে সমালোচনার পাত্র বানানোর মশলা আবিস্কার করতে গেলেন কোন ক্ষমতা বলে ? আপনারা কী মানুষের দিলের খবরও জানার দাবি করেন নাকি ? এটা তো আল্লাহর পাকের খাছ ক্ষমতা।

আদালতে সাহাবা রা সম্পর্কি অভিযোগ আনলেন সেই সূত্র ধরে যে, আমরা সাহাবাদের আদালত স্বীকার করি না। কীভাবে, কেন স্বীকার করি না ,এই অভিযোগের কোন দলিল পেশ না করে নিজের রায় পেশ করে লিখে দিলেন, ওরা সাহাবাদের সত্যের মাপকাঠি মানে না ? তা ভাই আদালতে সাহাবা আর মিয়ারে হক, দুটোকে এক পাল্লায় আনছেন কেন ? দুটো তো ভিন্ন বিষয়। আদালত বলতে তো এটাই বুঝায় যে, হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রে সকল সাহাবারা আদেল ছিলেন। এর মানে কী এই যে, আদেল থাকার কারণে সকল প্রকার গোনাহ থেকে তারা মাসুম হয়ে গেছেন ? সাহাবাদের শ্রেনী বিণ্যাশ কেন, কীভাবে হয়েছে, এ সম্পর্কিত শত বর্ণনাকে গোপন করে কথিত সাহাবা প্রেম কেন দেখাচ্ছেন ?

আচ্ছা, আপনারা কী শীয়াদের মতো সাহাবাদের রা মধ্যে কাউকে কাউকে নিস্পাপ মনে করেন ? যদি তারা নিস্পাপ না হবে তাহলে তাদের কে সত্যের মানদন্ড স্থীর করে কেন ? আপনারাই তো দাবি করেন, সাহাবাদের (রা) মধ্যে সবাই মুজতাহিদ ছিলো না, তারাও অন্য সাহাবার ব্যক্তিগত মাজহাব মেনে আমল করেছেন। যদি তাই হয় তাহলে এটা কীভাবে সম্ভব যে যিনি মুজতাহিদ নন, অন্যের কিয়াস, রায়ের ওপরে আস্থাশীল হয়ে পথ চলেন, তিনিই আবার সত্যের মাপকাঠি হয়ে যাবেন ? বিষয়টি কেমন দ্বিমুখী হয়ে গেলো না ? সত্যের মাপকাঠি বলতে আদতে কী বুঝায় সেটা ঠিক না করেই আপনি ধরে নিলেন আমরা সাহাবা বিরোধী হয়েছি। আচ্ছা, সাহাবাদের বিরোধী হলে আমরা তাদের জন্য প্রত্যেক খুতবায়, বক্তব্য, বিবৃতিতে দোয়া করতাম ?

কাউকে সত্যের মাপকাঠি না মানার মানে এই নয় যে, তাকে হেয় করতে হবে, তার সমালোচনা জায়েজ হয়ে গেলো, যেটা আপনাদের তরফ থেকে সন্দেহের বলে বলে প্রচার করা হচ্ছে। বরং এটা এজন্য করা যে, কোন ব্যক্তিই যেন কাউকে নবীদের মতো নিস্পাপ মনে করে তাকেই সত্য মিথ্যার মানদন্ড বানিয়ে না ফেলে। আমরা সাহাবাদের (রা) থেকে দলিল নেওয়ার আগে অন্য সাহাবার মতামতও যাছাই করে থাকি, এমনকি যিনি দলিল পেশ করছেন তার জীবনে সেটার আমল দেখি এবং অন্যান্য বর্ণনার সাথে তার তূলনামূলক পর্যালোচনা করি। কারণ উসূলে ফিকহের অন্যতম বৈশিষ্ট হচ্ছে, রাবীর জীবনে যে রেওয়াতের বিপরিত কোন আমল খুজে পাওয়া যায় তখন সেই বর্ণনা আর আমলযোগ্য থাকে না। এটা যদি হয় তাহলে রাবীর সেই বর্ণাকে বাতিল করার মানদন্ড কী ? নিশ্চয় পরবর্তি হাদিসের বর্ণনা। তাহলে বাতিল করার মানদন্ড কী দাড়ালো ? ব্যক্তি সাহাবীর কওল কে বাতিল করার দুঃসাহস কখনোই দেখাতে পারতেন না যদি হাদিসকেই মানদন্ড না মানতেন!

সাহাবায়ের কেরামকে ভালোবাসতে হবে, তাদের শান মানকে, শিক্ষাকে সামনে নিয়ে এ জন্য পথ চলতে হবে যে, তারা রাসুলের স জীবন থেকে সরাসরি শিক্ষা নিয়েছেন। কিন্তু কোন ফকীহ কখনো এ কথা বলেছেন যে, সাহাবাদের কওল রাসুলের স কওলের মতোই শরঈ মর্যাদা লাভ করে ! সুবহানাল্লাহ, রাসুল স যেটা বলেন সেটা আইন। আর অন্যরা যেটা বলেন সেটা তাহকীক। তাহকীক, শরাহ কে আইনের মর্যাদা দিচ্ছেন কাকে খুশি করতে ? কাকে ভুল প্রমাণে এত বড় ভুল কাধে তুলে নিলেন ? ধরেও নিলাম যে, সত্যের মাপকাঠি নির্ধারনে আপনি হকের খুব নিকটে, তাই বলে অন্যকে কটাক্ষ করে ভূয়া অভিযোগ আনার সাহস পান কী করে ? এটা করতে হলে তো আপনাকে অন্তরজামী হতে হবে। আপনী কি অন্তরজামী ?

এরকম শত অভিযোগের বিপক্ষে শত প্রশ্ন উত্থাপীত হতে থাকবে যদি আপনি আপনার বুঝকে অন্যের কওল, মত বা নিয়ত বলে প্রচার করতে থাকেন ! আপনি আক্বীদার যে ফিরিস্তি তুলে ধরেন তার সাথে অন্যের ঐক্যমত হতে হবে, না হলে সে আপনরা দুশমন, তাকে দমন করা আপনার ওপর ফরজে আইন, এই শিক্ষা আপনাকে কে দিলো ? আমি বিশ্বাস করি, যারা যারা আক্বীদার এই ভূয়া তথ্য পেশ করেন তারা ঐসব জালেমদের কাতারেই হাশর করবেন যারা অন্যের ওপরে অভিযোগ আরোপ করে নিজের আকল দিয়ে, দলিল দিয়ে নয় এবং ফয়সালাও করে এক তরফা। অতপর, নিজেদের বিজয়ী ঘোষনো করে পৈশাচিক আনন্দ লাভ করে।

লেখা দির্ঘ্য হয়ে গেলো। কষ্ট করে এতটুকো পড়ার জন্য আপনাকে মোবারকবাদ। আমি আপনার প্রতি অনুরোধ করবো, আপনার মতের বিপরিত মতগুলোকে সম্মান করতে শিখুন। আল্লাহর ওয়াস্তে কারো সম্পর্কে সম্পুর্ণ স্টাডী না করে, ভালো ভাবে না জেনে অন্যের হাওলায়, অন্যের অন্ধ ভক্তিতে কোন তথ্য শেয়ার করে নিজের আখেরাত নষ্ট করবেন না। আপনার কবরে কোন মুরব্বি যাবে না। আমি বিশ্বাস করি, উম্মাহর কল্যানে আমাদের এই অনুরোধটুকো আপনি রাখবেন। আর অভিযোগ, অনুযোগ যদি করতেই হয়, নিজে স্বাক্ষ্য দেওয়ার জিম্মা নিয়ে অভিযোগ করুন। এমন অভিযোগ করুন যেটার পক্ষে উপযুক্ত প্রমাণ দুনিয়া এবং আখেরাতে পেশ করতে পারবেন। আশা করছি এই আব্দারটুকো রক্ষা করবেন।

Apu Ahmed

পঠিত : ৭৪৯ বার

মন্তব্য: ০