Alapon

ওয়াজের ময়দানে নার্সিসাসদের উল্লাস...


১.
এই বংগদেশে ওয়াজ মাহফিল একসময় ছিল আধ্যাত্মিকতার খোরাক। শীত ঋতুতে বৃষ্টিহীনতার সুযোগে ধর্মপ্রাণ মানুষ ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করতো বিদগ্ধ উলামায়ে মাশায়েখদের নিয়ে।

সে দিন বাঘে খেয়েছে।

এখন সবাই "দেখাইয়া দেয়"। আসর জমায়। পাব্লিকরে নাচায়, ক্ষেপায়....

ধর্মের ছায়াবৃত এক একটা নার্সিসাস দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মাহফিল প্যান্ডেলে।

২.
নার্সিসিজম শব্দটি এসেছে গ্রীক পুরাণের (Myth) এক গল্প থেকে যেখানে নার্সিসাস নামের এক অপূর্ব সুন্দর বালকের কথা বলা হয়, যে কিনা নিজের রূপের প্রতি নিজেই আকর্ষিত ছিল। তার এই অপূর্ব সুন্দর রূপ এবং নিজের প্রতি আকর্ষণই তার মৃত্যু ডেকে আনে, গল্পানুসারে। সেই থেকে মনোবিজ্ঞানীরা নার্সিসিজম টার্মটি দিয়ে সেসব মানুষদের চিহ্নিত করেছেন যাদের রয়েছে নিজের প্রতি প্রবল আকর্ষণ।

হার্ভার্ড মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক Craig Malkin একটি আর্টিকেলে বলেছেন, দুই ধরণের নার্সিসিস্ট সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এদের ২য় দলটি হলো যারা সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না। সর্বক্ষণ নিজের প্রতি যাতে অন্যদের দৃষ্টি থাকে, সেটা নিয়ে তারা চিন্তিত থাকেন। দৃষ্টি নিজের দিকে রাখার জন্য কখনো হিন্দি গানের সূরে গান গায় কিংবা হেলিকপ্টার এ উঠে কিংবা লক্ষ টাকার চুক্তি করে মার্কেট ডিমান্ড বাড়ায়।

Joseph Burgo একজন মনোবিজ্ঞানী এবং The Narcissist You Know বইয়ের লেখক নার্সিসিজম সম্পর্কে বলেছেন, একজন নার্সিসিস্ট হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো, যেকোনো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে চাওয়া। আমাদের নার্সিসাসেরা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকার জন্য "চা খায়", 'ঢেলে দেয়', ভারতীয় টিভি সিরিয়ালের নাম মুখস্ত বলে কিংবা বলে "ওরে বাটপার "!

৩.
সাইকোথেরাপিস্ট ‘Kathleen Schafler’ বলেছেন, বাড়তি প্রশংসা একজন নার্সিসিস্টের পছন্দনীয়। তিনি আরো বলেছেন, নার্সিসিস্ট ব্যক্তিরা সর্বদা মধ্যমণি হয়ে থাকতে পছন্দ করে। তাদের আগমনেই যেন সকলের টনক নড়ে উঠবে, এমনটাই তাদের চাহিদা। সবাই উঠে দাড়াবে, আল্লামা বলবে, কুতুবুল আফতাব বলে সম্মোধন করবে.....

এদিকে স্বনামধন্য মার্কিন মনোচিকিৎসক এবং মনোবিশ্লেষক ডক্টর স্যান্ডি হচ্‌কিস নার্সিসিস্ট-এর সাত ধরণের আচরণগত বৈশিষ্ট্যকে, ‘ডেড্‌লি সিন্‌স’ বা ভয়াবহ পাপ নামে অভিহিত করেছেন। এগুলো হলোঃ

লজ্জাশূণ্যতা
অধিভৌতিক ভাবনা
ঔদ্ধত্য
হিংসা
বশ্যতা প্রাপ্তির উচ্চাভিলাস
ঠকবাজি
সীমাহীন অধিকারবোধ

কষ্ট করে মিলিয়ে নেন ওয়াজ ব্যাবসায়ীদের আচরনের সাথে। অন্তত পাঁচটির ডেডলি সিনের সন্ধান আপনি পাবেন এই নার্সিসিস্ট ওয়ায়েজদের মধ্যে। এদের ভাবসাব দেখলে বুঝতে পারি না তাদের কি হেদায়েতের দাওয়াত নিয়ে বয়ান করছেন, নাকি এটা দেখাচ্ছেন তিনি কত কাবিল! অবশ্যই সবাই এইদলে নয়। অনেকেই ধরে রেখেছেন ওয়াজের ক্লাসিকাল ধারা। কিন্তু বেশিরভাগই নার্সিসাস সিন্ড্রোমে আক্রান্ত। এদের দিয়ে আর যাইহোক হেদায়েত হবেনা। তাইতো তারা অবচেতন মনে বলে উঠে...

ওরে বাটপার! ওরে বাটপার!
খাবো? আপনারা খাবেন? ঢেলে দেই?
ব্রিল গেট!
মদিনার ও ভিসা আমায় দেহহহহহহহ!
ওরে মমতাজ আপারেএএএএএএ, তুই যে এই গান গাইলি!
কুতিস কারেএএএএ!
চিল্লাইয়া মার্কেট পাওন যাইবো?

Mohammad Kaosar Ahmed

পঠিত : ১১৮৯ বার

মন্তব্য: ০