Alapon

মিউজিক ও আমাদের হিপোক্রেসি...


মিউজিক সম্পর্কিত হাদীস গুলোতে বিভিন্ন শব্দ এসেছে বিভিন্ন সময়, যেমন এই হাদীসে এসেছে কুওবাত (الْكُوبَةُ), অন্য কোথাও এসেছে লাহু, মাযামির, মাযাইফ, গিনা, সামিদুউন... ইত্যাদি। এই শব্দগুলোর কোন কোনটী কোন একটি নির্দিরষ্ট মিউজিক্যাল ইনস্ট্রুমেন্ট, আবার কোন কোনটি মিউজিক সম্পর্কিত কোন আংশিক শব্দ। এব্যাপারে প্রাক্তন জেনুইন স্কলাররা মুল টেক্সট ধরে ধরে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তারা নিজেদের মধ্যে এহাদীসগুলোর শুদ্ধতা নিয়ে মতানৈক্য করেছেন এবং শব্দগুলোর অর্থ নিয়েও মতানৈক্য করেছেন।

মনে রাখা দরকার এব্যাপারে কুরআনের সরাসরি কোন আয়াতও নেই। এজাতীয় শব্দগুলোর ক্ষেত্রে অনেক সময়ই অনুবাদকগন নিজ নিজ মুরুব্বী স্কলারদের মতামত অনুযায়ী ভাবানুবাদ করেন। একটি হাদীসের বঙ্গানুবাদে কুওবাত শব্দটির যে বাংলা অর্থ করা হয়েছে এটা সিমিলার অর্থ আমি অনেক লম্বা সময় সার্চ করেও কোথাও খুঁজে পাইনি। অর্থাৎ কুওবাত মানে বাদ্যযন্ত্র, এটা আমি কোথাও খুঁজে পাইনি। এমনকি এই ফর্মেটে হাদীসটি আমি কোন স্কলারলি লেখায় উদ্ধৃতি দিতেও দেখিনি, যদি সে লেখাগুলো আরো ভেগ হাদীসকে এব্যাপারে সামনে এনেছে প্রমান হিসেবে। এমনকি সে লেখাগুলো বায়হাকীকেই রেফার করেছে। মিউজিকের ব্যাপারে এই বিষয়গুলোকে শিক্ষিত মুসলিমদের মাঝে এক্সট্রিমাইজ করেছে সালাফিস্ট প্রোপাগান্ডা মেশিনগুলো। তাই ইসলামের একজন ছাত্র হিসেবে এই বিষয়টা আলেমদের উপরে ছেড়ে দিয়ে সযতনে এড়িয়ে যাওয়া ভালো।

ব্যক্তিগতভাবে মিউজিকের বিরুদ্ধে মুসলমানদের সময়দান এবং ফাইটকে আমি খুবই আনপ্রোডাক্টিভ হিসেবে পেয়েছি। হাজার বছর থেকে পুরো মুসলিম ওয়ার্ল্ডে মিউজিক প্রচলিত আছে, আর এটা মানবজীবনের একটা গুরুত্বপুর্ন অংশও বটে। এটা মুলত আর্ট, এবং এটা মানবীয় সদগুনের বিকাশে সহায়ক। ছোটবেলা থেকে আর্টের ছোয়ামুক্ত মানুষকে দেখুন, বুঝতে পারবেন উগ্রতার বীজ কোথায়।

যদি আমি ধরে নিই মিউজিক হারাম, পৃথিবীর সবচেয়ে বেশী মুসলিম যদি এককভাবে আপাত কোন হারাম কাজে জড়িত থাকে, তাহলে তা হতে পারে মিউজিক। আর আশ্চর্যের বিষয় হলো যে কুরয়ানে মশামাছির কথাও আছে, যে হাদীসের টয়লেটের বর্ণনাও বিস্তারিত পরিস্কারভাবে আছে, যে ইসলাম সম্পর্কে রাসুল (স) বলেছেন হালাল ও হারাম সুষ্পষ্ট, সে কুরআনে আর লক্ষ লক্ষ হাদীসে চেপে চেপে নিংড়ানো ব্যতিত মিউজিক হারামের কথা বের করে আনতে কয়েক পৃষ্ঠা ব্যাখ্যা দিয়ে প্যাচাতে হয়। কুরআন বা হাদীসে সরাসরি এর একটা বাক্যও কেন নেই এটা এখনো পর্যন্ত আমার কাছে রহস্যাবৃত। অথচ এযুগের সবচেয়ে বড় ফেতনাগুলোর একটা রাস্তায় বেরুলে সবার কানে গুজে থাকা এয়ারফোন এবং মাল্টি বিলিয়ন ডলারের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি দেখলে বুঝা যায়। কিন্তু আল্লাহ ও তাঁর রাসুল এটাকে হারাম করার জন্য একটা বাক্যও সরাসরি খরচ করেননি।

বিপরীতে যারা অশ্লীলতা এবং খোদাদ্রোহীতা থাকলেই কেবল মিউজিক হারাম বলেছেন, তাদের মতকে আমার কাছে যথেষ্ট মানসম্পন্ন, প্রোডাক্টিভ মনে হয়েছে। মিউজিক হারাম বলে বলে প্রতিটী মুসলিম আজ নিজেকে সিম্পলি হিপোক্রেট বানিয়ে রেখেছে। যে হুজুর মিউজিক হারামের ফতোয়া দিচ্ছেন তার ফোনের রিংটোনও কোন না কোন মিউজিক, তার বাচ্চার দেখা কার্টুনটাও মিউজিক সমেত, আর তার বক্তৃতার মানসম্পন্ন মাউথপিচটাও তৈরি করা কোন মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির প্রয়োজনে। অথচ আমরা হারাম ফতোয়া দিয়ে যাচ্ছি। আফসোস। তাই বিষয়টাতে দ্বীনের ছাত্রদের জড়িয়ে পড়ে সময় দেয়া লক্ষকোটী মুসলিমের আনপ্রোডাক্টিভ জীবনযাপনের আরেকটা বিস্তৃত ডাইমেনশন মাত্র। এই স্ট্যাটাস দেয়ার মাধ্যমে আমি নিজেও এর শিকার।

আপনার কুরআন পড়তে মনে চাইলে কুরআন পড়ুন, অন্যকে উদবুদ্ধ করুন। মিউজিক শুনতে মনে না চাইলে না শুনুন। অবশ্যোই কুরআন পাঠ উত্তম এবং অনেকের মিউজিক শোনার চাহিদাও মেটায়। কিন্তু নির্দোষ অশ্লীলতা ও খোদাদ্রোহীতা মুক্ত মিউজিকও শোনার আগ্রহ সবার কুরআন পাঠ করেই নিবৃত হবে না এটা বুঝার বিষয়।

সংগৃহিত...

পঠিত : ৫৯৫ বার

মন্তব্য: ০