Alapon

অন্তর যখন মরে যায়, চোখ তখন বহু পাপ সয়ে যায়...


একটা নির্লজ্জ সত্য কথা বলি- আমি যেদিন প্রথম ভার্সিটির নামকাওয়াস্তে এডমিশন টেস্ট দিতে যাই, সেদিন আশেপাশে অনেক সুন্দরীদের দেখে আমার "আতকা যৌবন" জেগে উঠেছিল, আর মনে হচ্ছিল, আর যাই হোক আমাকে এখানেই পড়তে হবে।

স্বাভাবিকভাবে মফস্বলের স্কুল কলেজে পড়ে আসা একটা ছেলে যে কিনা ১৮ বছর পর্যন্ত লাজুক ইন্ট্রোভার্ট স্বভাবের ছিল, সে অমন প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ইংরেজি সাহিত্য ডিপার্টমেন্টে এসে রীতিমত ধাক্কা খাওয়ার ই কথা। নামকরা প্রাইভেট ভার্সিটিগুলোর ছেলেমেয়েদের মধ্যকার ড্রেসাপ, জাস্ট ফ্রেন্ড রিলেশনশিপ, আড্ডা, গান, প্রেম এইসব অতো মারাত্মক মাত্রায় হয়তো ছিল না তবুও যা ছিল, আমার জন্য সেটা মানিয়ে নেয়া কষ্টকর ছিল বটে, আর এই ক্ষেত্রে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরাই ছিল অগ্রগামী! এক মেয়ে ক্লাসমেট তো এটা পর্যন্ত বলে আক্ষেপ করেছিল আমাদের ক্লাসের ছেলেদের লজ্জাভাব দেখে, "এই ক্লাসের ছেলেদের মাঝে যেনো কোন পুরুষ ই নাই" (এক্সাক্টলি এমন না, তবে ইংগিত এমন ই ছিল)

আমার মনে আছে, যখন ক্লাস টেনে ছিলাম, আমাদের জীব বিজ্ঞান ম্যাম একদিন বলেছিলেন ব্যাং এর মিলন টাইপ টপিক পড়ানোর সময়, এখন থেকে এক বেঞ্চে একজন ছেলে, আরেকজন মেয়ে পাশাপাশি বসতে হবে! এই কথা শুনে ছেলেরা পর্যন্ত লজ্জায় শেষ হয়ে গেসিলাম। এ কি করে সম্ভব! ম্যাম এক দুবার পাশাপাশি বসিয়ে ক্লাস করানোর ট্রাই করিয়ে দেখলেন তেমন ফায়দা হচ্ছেনা। দুজন যেনো বেঞ্চের দুই পাশে একদম কোনায় গিয়ে বসে আছে, আরেকটু হলেই পরে যাবে। আর ক্লাসে কি অস্বস্তি একেকজনের! এইসব দেখে ম্যাম ঐবারের মত তার এক্সপেরিমেন্ট ইস্তিফা দিয়েছিলেন বটে তবে, একটা কথা বলেছিলেন ঠিক ই- "তোমরা যখন ভার্সিটি তে পড়বা তখন এইসব কোন বিষয় ই মনে হবেনা, এখন তো বসতে এত সমস্যা, তখন তো ছেলেমেয়ে পাশাপাশি না বসলে যেনো ক্লাস করতেই মন চাইবে না!

ম্যাম এর কথা তখন বিশ্বাস হতোনা। এমন না যে, পোলাপাইনের তখন ফিজিক্যাল এট্রাকশন ছিল না, কিন্তু লজ্জা বলতে যেই জিনিসটা মানুষের ফিতরাতে থাকে সেটার এবিউজ হয়নি বা সেনসিটিভিটিটা তখন ও অনেকটা বজায় ছিল। সময়ের স্রোতে যখন ভার্সিটি পর্যন্ত আসলাম, কিছুদিন চারপাশের রঙ তামাশা দেখে বুঝতে পারলাম তখন, ম্যাডাম এর কথাটা যে আসলেই সত্য ছিল!

এক মুফতি সাহেব বলেন প্রায় ই যে, "বর্তমান সহশিক্ষা ব্যবস্থা ছেলেমেয়েদের লজ্জাহীন পশু বানানোর একটা সিস্টেমিক কাঠামো। আপনি মূলত সন্তানকে সেখানে টাকা দিয়ে এই জন্য পড়ান যেনো তার ভেতরের ফিতরাতে যা লজ্জা শরম ছিল তা যেনো ধীরে ধীরে গায়েব করে দেয়া যায়" বাস্তবতা আসলেই তাই ই।

ভার্সিটির লাস্ট ইয়ারে অনুভূতি ছিল পুরো উলটো। তখন মনে হতো কেনো চারপাশে এতো মেয়ে! বয়েজ ভার্সিটি হলে কতই না ভালো হতো! ৪ বছরের ভার্সিটি লাইফে টের পেলাম, কিভাবে লজ্জা সম্ভ্রম কে গুরুত্ব দেয়া মানুষটা ধীরে ধীরে লজ্জা সম্ভ্রমহীম পশুতে পরিণত হয়।

ছেলে মেয়ে একসাথে পড়াশোনা করানো উচিত না কথাটা তো নতুন কিছু না। এটাই স্বাভাবিক, এটাই ফিতরাহ এর ডিমান্ড। কারণ পজিটিভ নেগেটিভ চার্জ একত্রে হলে, সেখানে কোন ধর্মীয়, নৈতিক বাধা না থাকলে ঝামেলা হবেই হবে। ব্যভিচার হবে, ধর্ষণ হবে, চাইল্ড এবিউজের পর্যন্ত সুযোগ বাড়বে, গর্ভপাত ও বাদ থাকবেনা! এই যে তিলে তিলে ছেলেমেয়েদের মাঝে লজ্জার সংবেদনশীলতা ধ্বংস করে দেয়া এটাই তো চায় কুফর শিরকের ধারক বাহকরা! হাদিসে আছে যার লজ্জা নাই তার দ্বারা যা ইচ্ছা তাই করা সম্ভব। এখনকার যুগে এই লজ্জাহীনতার জন্য মূলত দায়ী এই সহশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো, এরাই লজ্জাহীনতার বীজ বপন করে। এখন মোবাইল ইন্টারনেটের পর্ণগ্রাফির সহজলভ্যতার যুগে, হাইপারসেক্সুয়ালাইজড সমাজে কেবল ভার্সিটি না, স্কুল কলেজ এমনকি প্রাইমারী শিক্ষার শিক্ষার্থীরা পর্যন্ত সেইফ না। ছেলেমেয়েরা হয়তো প্রাইমারি তে প্রেম ভালোবাসা বুঝেনা, কিন্তু সাম্প্রতিক পেডোফাইল ইন্সিডেন্টগুলো বিচার করলে তারা সেখানেও সেইফ না।

আমি নিজে জেনারেল সহশিক্ষায় পড়েছি, আর এ থেকে যেই শিক্ষা পেয়েছি তার জন্য অন্তত নিজের ছেলেমেয়েদের কখনোই এইসব সেক্যুলার সহশিক্ষায় পড়াবো না ইন শা আল্লাহ। আপনি আপনার ছেলেমেয়েকে যা খুশি তা বানানোর শিক্ষা দিতে পারেন আপনার ইচ্ছা। তবে এইটুক অন্তত জেনে রাখেন, পড়াশোনার এই ধাপগুলো পেড়োনোর পর লজ্জা নামক জিনিসটা তার মাঝে আপনি আর খুঁজে পাবেন না!

যতক্ষণ লজ্জা থাকে, ততক্ষণ শরীর মনের অনুভূতিগুলোর আনন্দ, বা মজাও হয় তীব্র, সেটিসফেক্টরি। লজ্জা শেষ হয়ে গেলে, অনুভূতিগুলো হয় রোবটিক, মানে নিষ্প্রাণ, সেখানে সম্পর্কের মায়াও আর বাকি থাকেনা, সামাজিকতা ব্যতীত আর কিছুই মানুষের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখেনা! আর লজ্জা যেখানে চলে যায়, সেখানে অন্তরাত্মা হয় শূণ্য। সেই শূণ্য অন্তরাত্মা নিয়ে বেঁচে থাকা আর না থাকা একই কথা! চারপাশে এই জন্যই যেনো চলন্ত ফিরন্ত জীবন্ত লাশের ছড়াছড়ি!

লিখেছেন: মাহফুয আলামিন

পঠিত : ১৩৫৮ বার

মন্তব্য: ০