Alapon

বেকারের ভাত কথন...


ভাত আমাদের প্রধান খাদ্য। মানে বাঙ্গালিদের আদি ও আসল খাবার। ভাতের ইংরেজি boiled rice এবং এর কোনো বৈজ্ঞানিক নাম আছে কিনা সেটা আমার জানা নেই। তবে ভাত চাউল থেকে হয়। চাউলের ইংরেজি husked paddy এবং এইটারও কোনো নাম আছে কিনা সেটা আমার জানা নাই। চাউল হয় ধান থেকে। আর ধান ইংরেজি rice/grain/paddy এবং এর বৈজ্ঞানিক নাম ওরাইজা সেটাইভা (Oryza sativa)।

পরসংবাদ, আমাদের পারিপার্শ্বিক অবস্থার ভিত্তিতে নির্দ্বিধায় বলা যায়, ভাত ছাড়া আমরা অচল। এবং এই অচলায়তনে একমাত্র জিঞ্জির বা শিকল/ছির্কল পড়ে বসে থাকে বেকার ছেলেগুলো। ছির্কল বা শিকল পড়তে বেকারদের ভালো লাগে। ওদের কাজকর্ম নেই বলে। কিন্তু ওদের বাবা -মা- ভাই-বোন- চাচ্চু- মাম্মু- খালা-খালু- খালাতো ভাইবোন, মামাতো ভাই বোন, চাচাতো ভাই বোন- চাচীর ভাই- মামার ভাই- মসজিদ/মন্দির/গীর্জা কমিটির হর্তাকর্তারা - গার্লফ্রেন্ড এবং তার সম্পূর্ণ দুই বংশ(বাপ+মা)- বন্ধুবান্ধব এবং তার বংশ(বাবা+মা)- এবং পুরো একটি এলাকার লোকজন তাদের 'বেকারের ভাতঃ উৎস-উৎপত্তি' নিয়ে থিসিস লিখতে বসে যান৷

আশার দিক হচ্ছে, এই থিসিস অত্যন্ত দ্রুত গতিতে এবং সাবলীলভাবে শেষ হয়ে বেকার ছেলেদের তালকিন দেয়া হতে থাকে, বেকার ছেলেরা একাধারে ভাত- চাউল- ধানের যেহেতু উৎস- উৎপাদন -বিপনন- প্রস্তুত সম্পর্কে জানেনা, সেহেতু তারা এই গুরু দায়িত্ব পালন করতে চান সামাজিক দায়বদ্ধতা ও মানবিক সহানুভূতির সাথে। মানবিক ছাত্রনেতা রাব্বানী ভাইয়ের মতো। তবে রাব্বানি ভাই এই লেখার সাথে কোন দিক দিয়ে মিলে যায় তা বুঝা যাচ্ছেনা। হতে পারে উনার বর্তমান কন্ডিশন লেখক বুঝাতে চাইছেন। যাইহোক, এই এতোগুলো মানুষের চিন্তা জগতের একমাত্র চিন্তা এবং লক্ষ্যবস্তু থাকে বেকার ছেলেরা। এইটা বেকারদের জীবনের অন্যতম একটা নিঃস্বার্থ পাওয়া হিসেবে ধরতে হবে।

বেকার থাকা ছেলেরা তখন জীবনের সবকিছু ভাত দিয়ে হিসেব করতে থাকে। আগেকার দিনের নোকিয়ার বাটন মোবাইলগুলোতে গেমস খেলতে খেলতে ক্লান্ত হয়ে কনভার্টার টিপতে থাকার মতো।

এই যেমন, বিয়ে করবি? বউকে ভাত দিবি কোথা থেকে? আবার, জীবনে ভাত পাবিনা। অথবা ভাত যে খাও, এগুলা কই থেকে আসে? ভাত খাও শোধবোধ কিছু হয় না? প্রভৃতি প্রশ্ন উনারা উনাদের কষ্টার্জিত থিসিস থেকে করতে থাকেন। বেকার ছেলে যদি সঠিক প্রশ্নের উত্তর না দিতে পারেন, তবে একথা সত্য সত্য হয়ে প্রমাণিত হয়ে যায় যে, তার জীবন এবং তার পেছনে ব্যায় করা অর্থসমস্ত সব নদীর পানিতে ফেলা হয়েছে। শুধু তাই নয়, টাকাগুলো মন্ড বানিয়ে নদী থেকে প্রাগৈতিহাসিক কালের বোয়াল মাছ শিকারের ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। যা করা মোটেও উচিৎ হয়নি।

কিছু বেকার একটু গভীরে গিয়ে চিন্তা করে, নিজেকে প্রশ্ন করে, বিয়ে করলে বউ নামক জীবটা কি শুধু ভাত খায়? বউ প্রাণী টা এমন কেন? ভাত না খেয়ে রুটি -কলা বা বিরিয়ানি বার্গার খায় না কেন? মানুষ জানতাম সর্বভুক প্রাণী, তবে বউ কেন শুধু ভাত খাবে? উপরোক্ত থিসিসকারীরা এই প্রশ্ন যখন শুনেন তারা তখন আবারও আফসোস করেন, এ থিসিসগুলোর পেছনে তাদের দেয়া শ্রম ঘাম সময় সবই আবারও বিফলে গেলো। তারা এবার অত্যন্ত মর্মাহত হয়ে যান। যেই কাজটা বেকারদের করা অত্যন্ত অন্যায়।

বেকারেরা আরও প্রশ্ন করতে থাকে নিজেকে। জীবনে ভাত পাবেনা তারা শীর্ষক থিসিসের আলোকে। তারা জীবনে শুধু ভাত খেয়েছে, ব্যপারটা তো এমন না। ভাতের সাথে আলু, বেগুন, মাছ, মাংস, লাউ, লেবু, লবণ সব খেয়েছে। তবে ভাত না পেলেও অন্য সব পাওয়া যাওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা জিজ্ঞেস করতে চায়।

সর্বোপরি, ভাত আমাদের অস্তিত্বের প্রশ্ন। তাই বেকারদের উচিত হবে, যেকোনো ভাবে ভাতের যোগ্য করে নিজেকে গড়ে তোলা। নাহয় নিজেও খেতে পারবেনা, বউকে পালাও সম্ভব হবেনা। নিজেকে আজীবন বউ ছাড়া ফাস্টফুড খেয়ে বেঁচে থাকতে হবে।

সাদি সাদ

পঠিত : ৬৮৩ বার

মন্তব্য: ০